নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিরপেক্ষ নয়; সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে...

নিউরণের মুক্ত ক্যানভাসে স্বপ্ন আঁকতে ভালোবাসি...

নাহিদ শামস্‌ ইমু

ভীষণ কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ আমি। কল্পলোকের ক্যানভাসে ছবি এঁকে, মনোজগতের সুবিশাল হাইপার স্পেসে নিজের এক মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আমি হয়েছি ঈশ্বর। যখন প্রচন্ড কষ্টে কাঁদতে ইচ্ছে করে, তখন নিজের সৃজিত মহাবিশ্বের অসীম গ্যালাক্সিপুঞ্জ দেখে গর্বিত অনুভব করি। অতঃপর স্বপ্নীল জগতের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করি দৈব বাণী- "নিশ্চই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান। দুঃখ কিংবা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে না।"

নাহিদ শামস্‌ ইমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনোজগতের অসীম রহস্যময়তায় একজন অসংজ্ঞায়িত, অস্বীকৃত মানুষের গল্প!

০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫৫





ওর ডাকনাম পাখি। একজন মানুষই বটে। তবে ঠিক মূলধারার (main-stream) মানুষ নয়। পাখি একজন অসংজ্ঞায়িত মানুষ। কারণ ওর প্রকৃতি, অধিকার, দায়িত্ব, পরিচয় এই সভ্য সমাজ কখনো সংজ্ঞায়িত করে দেয় নি। কিংবা ও একজন অস্বীকৃত মানুষ। বছর পনেরো আগে মায়ের নিরাপদ জরায়ু ছেড়ে যেদিন ও নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেরিয়ে এসেছিলো, পাখির বাবা হাশেম আলী সেদিন ওর কানের কাছে সুর করে আযান দেন নি। সেই দিন সেই গৃহে কারো উল্লাস কিংবা আনন্দ-ধ্বনি শ্রুত হয় নি। দাদি সেদিন পাখির মা’র চুলের মুঠি ধরে বলেছিলো- “হারামজাদী, একটা কুত্তাও যদি পয়দা করতি, তাও বহুত খুশি হইতাম! এইডা পয়দা করসস্‌ ক্যান? খা*কী, মা*!!!!



দূর্গন্ধযুক্ত, ঘৃণ্য বর্জ্যপদার্থভর্তি পলিব্যাগ যেভাবে ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হয়, পাখি নামক এই মানুষটিকে ঠিক সেভাবেই মূল ধারার মানুষগুলো নিক্ষেপ করেছিলো এই শহরের একটি রহস্যময়, বিচ্ছিন্ন জনপদে, অস্বীকৃত একদল মানুষের ভিড়ে।

পাখি একটু একটু করে বেড়ে উঠতেই আবিষ্কার করে, তথাকথিত ভদ্র ও সভ্য সমাজ ব্যবস্থা ওকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। মূল ধারার মানুষগুলোর শিশুদের জন্য ‘শিশু দিবস’, ‘শিশু অধিকার সপ্তাহ’, নারীদের জন্য ‘নারী দিবস’ বরাদ্দ থাকলেও এই অবাঞ্চিত মানুষদের উৎসর্গ করে পৃথিবীবাসী একটা মিনিটও বরাদ্দ করতে রাজি হয় নি! বিভিন্ন পক্ষের, বিভিন্ন গোত্রের অধিকার বিষয়ে দেশে সুস্পষ্ট, সমৃদ্ধ, বলবৎযোগ্য আইন আছে। অসংজ্ঞায়িত এই মানুষদের জন্য খুব সম্প্রতি দেশের মন্ত্রীসভায় একটি আইন পাশ হলেও সেরকম কিছুর ব্যাপারে আদৌ কোন ধারণা নেই তাদের! ওদের অধিকার নিয়ে কখনো কেউ জ্বালাময়ী লেকচার দেয় নি, মানবাধিকার সংগঠনগুলো কোনদিন মানববন্ধন ডাকে নি, অবস্থান কর্মসূচী ঘোষনা করে নি!



এমনকি খোদ ঈশ্বরও যেন পাখির মত মানুষদের নির্বাসনে পাঠিয়েছেন! নারী-পুরুষ কে কিভাবে স্রষ্টাকে স্মরণ করবে, কে কী ধরণের কাপড়-চোপড় পরবে; মহল্লার ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব তাঁর আকর্ষনীয় ভাষনে সেসব কথা বলে ফেললেও পাখি হতবাক হয়ে আবিষ্কার করল যে, ওর মত মানুষেরা কিভাবে স্রষ্টাকে স্মরণ করবে এবং কী ধরণের কাপড়-চোপড় পরবে- সেসব কথা তিনি তাঁর ভাষনে উল্লেখ করেন নি! বাবার সম্পত্তিতে ছেলে এবং মেয়ে কতটুকু ভাগ পাবে তা নিয়ে নারীবাদী এবং মৌলবাদী শ্রেণিদ্বয় বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করেছেন, চুল ছেঁড়াছেড়ি করেছেন বটে- কিন্তু বাবার সম্পত্তিতে এই স্বীকৃতিহীন মানুষগুলো কতটুকু ভাগ পাবে তা নিয়ে কোন নারীবাদী কিংবা মৌলবাদী কেউ একটা মাথার চুলও ছেঁড়ে নি, একে অপরের প্রতি এক বিন্দু কাদাও ছোঁড়ে নি, একটা বাক্যও খরচ করে নি! কি বিস্ময়কর! ওদের নিয়ে কেউ কোনদিন রাজনীতি পর্যন্ত করে নি! কোন রাজনৈতিক নেতা রাস্তার কোন ‘পাখি’কে সালাম ঠুকে তার হাত ধরে বলে নি- “এবারের ভোটটা আমাকে দেবেন।“



বিজ্ঞানের মত একটি নিরপেক্ষ বিষয়ও কিনা তৃতীয় প্রকৃতির এই মানুষগুলোকে স্থান দেয় নি! উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান টেক্সটবইতে খুব যত্ন করে নারী শরীর এবং পুরুষ শরীরের খুঁটিনাটি বর্ননা দেয়া আছে বটে, কিন্তু অসংজ্ঞায়িত মানুষের শরীরের খুঁটিনাটির বর্ণনা কোথাও নেই! ‘পাখি’দের নিয়ে কোন প্রতিষ্ঠিত লেখক আজ অবধি রচনা করে নি একটি পরিপূর্ণ উপন্যাস, কোন অনন্য কথাসাহিত্যিক সৃষ্টি করে নি ছোটগল্প, কোন কবি কিংবা ছড়াকার উৎসর্গ করেন নি তাঁর কবিতার একটি অমূল্য পংক্তি!



পাখিকে নিয়ে নির্মিত হয় নি স্টার জলসা, স্টার প্লাসের সুদীর্ঘ সিরিয়ালের একটি এপিসোড, বানানো হয় নি কোন পূর্নদৈর্ঘ্য কিংবা স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি। আর বানানো হলেও সেসব ছবি এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো কখনো প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার সুযোগ পায় নি। দেখেছে যথারীতি ওই মূলধারার সভ্য মানুষরাই। অস্বীকৃতদের জন্য গাওয়া হয় নি কোন গান! কোন বেসরকারি সংস্থার কর্মী অস্বীকৃত এই মানুষদের কাছে এসে ১০০০টি টাকা ধরিয়ে বলে নি- “ঋণ দিলাম। একটা ব্যবসা কর!” দেয় নি! পাখি যখন শিশু ছিলো, কোন এন. জি. ও এসে ওকে বলে নি- "তোদের জন্য বিনা বেতনে একটা স্কুল খুলেছি। আয় পড়াশোনা শিখবি?"



পনেরো বছর বয়সী পাখি যখন মনোজগতের অসীম দোলাচল, রহস্যময়তা, গ্লানিকে সামলাতে না পেরে পৃথিবীকে প্রশ্ন করেছিলো- “আমি কে? আমার পরিচয় কি?”, পৃথিবীবাসী তখন ক্রুড় হাসি হেসে বলেছিলো- “তুই একটা নপুংশক! তুই একটা হিজড়া!”

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১২:১৪

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


:( :( :( ভাই কিছু মন্তব্য করতে পারছিনা

০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৫

নাহিদ শামস্‌ ইমু বলেছেন: আসলেই। মন্তব্য করার মত মাঝে মাঝে কিছুই যে খুঁজে পাওয়া যায় না। :(

শুভেচ্ছা নেবেন ভাই...

২| ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১২:৩৭

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: “হারামজাদী, একটা কুত্তাও যদি পয়দা করতি, তাও বহুত খুশি হইতাম! এইডা পয়দা করসস্‌ ক্যান? খা*কী, মা*!!!![/sb

-সত্যি তাদের মুল্য জন্তু-জানোয়ার থেকেও কম। :( :( :(


অনেক সুন্দর একটা লেখা।

অনেক ধন্যবাদ।

০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৮

নাহিদ শামস্‌ ইমু বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই......

শুভেচ্ছা রইলো......

৩| ০২ রা জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে লেখাটা । তবে নপুংশক আর ট্রান্সজেন্ডার সম্ভবত এক নয় ।

০২ রা জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

নাহিদ শামস্‌ ইমু বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
না, ধারণাটা আসলে ভুল। নপুংশক শব্দটি মূলতঃ এই ট্র্যান্সজেন্ডার বা তৃতীয় প্রকৃতির মানুষদেরই প্রতিশব্দ। এ ব্যাাপারে বেশ কিছু স্টাডি করেই নিশ্চিত হয়েছি।
শুভকামনা রইলো...

৪| ০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩১

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অনেক সুন্দর পোষ্ট ।

০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:০১

নাহিদ শামস্‌ ইমু বলেছেন: ধন্যবাদ...
শুভেচ্ছা রইলো...

৫| ২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:০৪

পল লিয়ান বলেছেন: Kichui bolar nei

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.