![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভীষণ কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ আমি। কল্পলোকের ক্যানভাসে ছবি এঁকে, মনোজগতের সুবিশাল হাইপার স্পেসে নিজের এক মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আমি হয়েছি ঈশ্বর। যখন প্রচন্ড কষ্টে কাঁদতে ইচ্ছে করে, তখন নিজের সৃজিত মহাবিশ্বের অসীম গ্যালাক্সিপুঞ্জ দেখে গর্বিত অনুভব করি। অতঃপর স্বপ্নীল জগতের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করি দৈব বাণী- "নিশ্চই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান। দুঃখ কিংবা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে না।"
আমি এ যাবৎকালে যে কয়টি থ্রিলার বই পড়েছি, তার মধ্যে অবধারিতভাবেই প্রথম সারিতে স্থান করে নেবে জনপ্রিয় লেখক ড্যান ব্রাউনের রবার্ট ল্যাংডন সিরিজের ‘অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমন্স’ বইটি। বইটিতে কার্লোস ভেন্ত্রেসকা নামের খৃস্টান ধর্মযাজকের একটি চরিত্র আছে, যিনি হঠাৎই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে মানুষের ভেতরে ঈশ্বরভীতি ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তো ঈশ্বরের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে তিনি খুব জটিল এবং জঘন্য একটি চাল চালেন। এমন কিছু ঘটনার অবতারনা করেন যা আপাত দৃষ্টিতে মানুষের কাছে অলৌকিক বলে মনে হবে। বিশ্বমিডিয়ার সামনে এই কৃত্রিম অলৌকিকত্ব প্রতিষ্ঠা করে তিনি পুরো পৃথিবীর খৃস্টধর্মাবলম্বীদের ভেতর ধর্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা করেছিলেন। যদিও গল্পের নায়ক রবার্ট ল্যাংডনের বুদ্ধিমত্তা এবং পাণ্ডিত্যের কাছে শেষপর্যন্ত তাঁকে ধরা পড়ে যেতে হয়েছিলো।
ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে গিয়ে এ ধরণের শঠতা ও ভাঁওতাবাজির আশ্রয় নেবার ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে এসব ভাঁওতাবাজি আর মিথ্যাচার নতুন মাত্রায় উন্নিত হয়েছে। এখন আধুনিকতর সব উপায়ে মানুষকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। এসব ধোঁকাবাজির শিকার হচ্ছেন ধর্মপ্রাণ শিক্ষিত সাধারণ মানুষ। তবে এসবের আসল উদ্দেশ্য কি ধর্মের প্রচার নাকি ব্যক্তিগত প্রচার বা ফলোয়ার বাড়ানো কিংবা নির্দিষ্ট কোন ফ্যান পেজের লাইক ও শেয়ার বাড়ানো- সেটা অবশ্যই বিতর্কের দাবি রাখে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হওয়া তেমনই কিছু ধোঁকাবাজির নমুনা এখানে উপস্থাপন করা হল।
ক্বাবার ওপর ফেরেশতাঃ
দিন কয়েক আগে আমার ফেসবুক হোমপেজে একটা ছবি ভেসে উঠেছিলো। তো সেই ছবিতে দেখানো হয়েছে যে পবিত্র ক্বাবা শরিফের ওপরে ধবধবে সাদা কিছু একটা বসে আছে। সেটার আবার কয়েকটা ডানাও এঁকে দেয়া আছে! সঙ্গে ক্যাপশন জুড়ে দেয়া হয়েছে- “পবিত্র ক্বাবা শরিফের ওপর বসে আছে ফেরেশতা। সুবহানাল্লাহ, কি অপূর্ব সৃষ্টি! ছবিটি ক্বদরের রাতে তোলা। শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। যে ব্যক্তি এটা দেখেও শেয়ার করবে না, সে জ্বলজ্যান্ত কাফের।“
ফটোশপের কাজ, সন্দেহ নেই।
এখানে সমস্যা অনেকগুলো। প্রথমতঃ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ নবী-রাসুলগণ ছাড়া ফেরেশতাদের আসল আকৃতিতে কেউ কখনো দেখেছেন বলে শুনি নি, কোন ধর্মীয় বইতেও এসব পাই নি। আর এখন ক্যামেরার কল্যাণে (ফটোশপের কল্যাণে) সেই ফেরেশতাদের ডানাসহ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে! যারা এই ছবিটি দেখা মাত্র শেয়ার করেছেন, তারা কি একবারও ব্যাপারটি ভেবে দেখেন নি? দ্বিতীয়তঃ ক্বাবা শরিফের চারপাশে অসংখ্য মানুষকে তাওয়াফ করতে দেখা যাচ্ছে। তো এত এত মানুষ ফেরেশতাকে দেখলেন না কেন? শুধু ক্যামেরাম্যানই কেন দেখলেন? যদি সত্যি সত্যিই ক্বাবা শরিফে ফেরেশতাকে দেখা গিয়ে থাকে, তাহলে তো সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হবার কথা ছিলো। কই, তেমন কিছু তো ঘটে নি! তৃতীয়তঃ কে কাফের আর কে ঈমানদার সেই ফতোয়াও জুড়ে দেয়া আছে ছবিতে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ট্রিক্স। এতে করে সহজেই মানুষের ভেতর ভয় ঢুকিয়ে দেয়া সম্ভব। শেয়ার না করলেই কাফের হয়ে যাবার ভীতি। শিক্ষিত কিছু মানুষও এই ছবি দেখে শেয়ার করেছে। পাছে আবার ঈমান যায়!
মহাকাশ থেকে ক্বাবাঃ এই ছবিটি আমি গতবছর পেয়েছিলাম। দাবি করা হয়েছে যে এটি মহাকাশ থেকে পবিত্র ক্বাবা শরিফের ছবি। অনেক ওপর থেকে ক্বাবাকে নাকি এরকম উজ্জ্বল দেখা যায়। তাও আবার নাসা বিজ্ঞানসংস্থার মহাকাশচারীরা এই ছবিটি পাঠিয়েছেন!
মহাকাশ সংক্রান্ত বিষয়াবলি নিয়ে আমার আগ্রহের অন্ত নেই। সেই সুবাদে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ সম্বন্ধে বেশ কিছু জানি। জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে সামু ব্লগেও আমি লেখালেখি করেছি। যেকোন গ্যালাক্সির মাঝখানের অংশ বা কেন্দ্রটি স্বাভাবিকভাবেই খুব উজ্জ্বল দেখা যায়। একটি গ্যালাক্সি দেখতে কেমন হয় তা যে কেউ গুগলে সার্চ করেই বের করে ফেলতে পারেন। যারা ইতঃপূর্বে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ দেখেছেন, তারা নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে উপরে প্রদত্ত ছবিটি মূলতঃ একটি গ্যালাক্সির ছবি। কিন্তু ক’জনই বা সেটা জানেন? যারা কখনও গ্যালাক্সি দেখেন নি, তারা ততক্ষণে সরল বিশ্বাসে লাইক এবং শেয়ার করা শুরু করেছেন।
অ্যাপল বনাম মক্কাঃ গত বছরই একটা পোস্ট দেখেছিলাম, যাতে দাবি করা হয়েছে যে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল নাকি ক্বাবা শরিফের অনুকরণে একটা শোরুম বানিয়েছে, যেটি দেখতে হুবহু ক্বাবার মত কিউব আকৃতির এবং কালো রঙের। এর নামও নাকি 'Apple vs Mecca'। দাবির সপক্ষে তারা একটা ছবিও যোগ করেছে। নিচে সেটি হুবহু তুলে ধরা হল।
এসব অবস্থায় পণ্য বর্জনের আহবানও যে থাকবে, তা কি আর বলে দিতে হয়? এখানেও ছিলো অ্যাপলের পণ্য বর্জনের আহবান। ব্যাপারটি নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলাম। করার পর যা বেরুলো তা বেশ ইন্টারেস্টিং।
প্রথমতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপলের সব স্টোরই মূলতঃ কিউব আকৃতির। তবে সেগুলো কালো নয়, বরং স্বচ্ছ! এটা নতুন কিছু নয়। আপনারা চাইলে গুগলে সার্চ করে একটি অ্যাপল স্টোরের ছবি দেখে নিতে পারেন। পাঠকদের সুবিধার্থে আমি এখানে একটি অ্যাপল স্টোরের ছবি সংযুক্ত করলাম।
খেয়াল করুন, এটি কিন্তু কিউব আকৃতির। অ্যাপলের সব শোরুমই কিন্তু তাই! তাহলে প্রোপাগান্ডা প্রচারকারীরা যে ছবিটি ব্যবহার করেছিলো সেটা কালো কেন? ব্যাপারটি খুব সহজ। অ্যাপল স্টোর নির্মাণাধীন অবস্থায় একটি আচ্ছ্বাদন দিয়ে ঢাকা থাকে। যে কোন ভবন নির্মাণের সময় স্বাভাবিকভাবেই এই কাজটি করা হয়ে থাকে। ঘটনাবশতঃ এই স্টোরটি কালো আচ্ছ্বাদনে আবৃত ছিলো। সে অবস্থাতেই কেউ একজন তা দেখে ফেলেছে। তারপর পবিত্র ক্বাবা শরিফের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে গল্প ফেঁদেছে! সেই গল্পে যুক্ত করা হয়েছে কল্পিত ‘অ্যাপল ভার্সাস মক্কা’ নামটি, যেটি আদতে ওই অ্যাপল স্টোরের নামই নয়!
প্লেনের ওপর ইফতারিঃ এবার হাস্যরসের যোগান দেয়া নিচের এই ছবিটি একটু দেখি।
ক্যাপশনঃ “সুবহানাল্লাহ! মাগরিবের আযান হয়ে যাওয়াতে এই দুই মুসলিম ভাই অটো পাইলট দিয়ে ইফতার করতে বসে গেছে। আসুন আমরাও সময় মত ইফতার করি। শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন। এই পাইলট ভাইদের জন্য কয়টা লাইক?”
যে পেজটি এই ছবি শেয়ার করেছে সেটি আপাতদৃষ্টিতে একটি ইসলামি পেইজ। দেখা যাচ্ছে মোট শেয়ারকারীর সংখ্যা ১৪১। প্লেনের ওপরে বসে এভাবে ইফতার করা কতখানি সম্ভব, কতখানি যৌক্তিক, লুঙ্গি পরে দু’জন ছা-পোষা মানুষ প্লেনের ওপরে বসে ইফতার করছে- এই ব্যাপারটি কতখানি বিশ্বাসযোগ্য সেসব না ভেবেই অসংখ্য মানুষ এই ছবি দেখেই লাইক করেছে, শেয়ার করেছে! সম্ভবতঃ আমার আর কিছু না বললেও চলবে।
একটা সময় দেখতাম আকাশের গায়ে, মেঘে, মুরগীর কানে, গরুর শরীরে বিভিন্ন উপায়ে ‘আল্লাহু’ লেখা দেখিয়ে লাইক কামানো হত। সাধারণ মুসলিমরা যথারীতি ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়তে পড়তে সেসব শেয়ার করত। ধীরে ধীরে মানুষ সচেতন হয়ে উঠতে শুরু করে। যার ফলে লাইক ব্যবসায়ীরা এই ধান্দা বাদ দিয়ে নতুনসব ধান্দা হাতে নিয়েছেন। নবীজী (সাঃ)-কে ব্যাঙ্গ করে যে কার্টুনিস্ট কার্টুন এঁকেছিল, সে নাকি আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। আমি যদিও এই তথ্য অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেও কোথাও খুঁজে পাই নি। যারা ফেসবুকে এই তথ্যটি দিয়েছে, তারা কেউই তথ্যসূত্র উল্লেখ করে নি। যথারীতি এরা শেয়ার করেছে ফটোশপ করা ক্যাপশনযুক্ত একটি ছবি। মজার ব্যাপার হল, আমি এই নিয়ে মোট তিনটি ভিন্ন আগুনে পোড়া লাশ দেখেছি। একটির সঙ্গে অন্যটির কোন মিল নেই। অথচ দাবি কিন্তু একই! যারা প্রোপাগান্ডা ছড়ান, খেয়াল করে দেখবেন তাঁদের কাছে কখনও নির্ভরযোগ্য কোন তথ্যসূত্র থাকে না। এরা অধিকাংশই ক্যাপশনযুক্ত ইমেজ ব্যবহার করে। খুব বেশি হলে ব্যবহার করে ‘ব্লগস্পট’-এর কোন দেশী ব্লগারের অ্যাড্রেস।
ছোটবেলায় শত শত প্রোপাগান্ডা শুনে বিশ্বাস করেছি। একবার শুনেছিলাম আফ্রিকায় ৫ বছরের এক বাচ্চা নাকি অলৌকিক ক্ষমতায় কোরআনের হাফেজ হয়ে গেছে। তার নাকি স্পিরিচুয়াল লাইফ নিয়ে ব্যাপক জ্ঞান। কেউ কেউ তো আবার সেই ছেলেকে ইমাম মাহাদী বানিয়েও বসে ছিলেন। কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো, সেই ছেলে এখন কোথায়? 'অমুক নাস্তিক কার্টুনিস্ট ঝলসে অঙ্গার হয়ে গেছে' 'তমুক কোরআন বিরোধী মহিলার চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে'- ফেসবুক যুগ আসার পর থেকে এসব দেখতে দেখতে আমি অতিষ্ঠ!
প্রতিটি ধর্মই তো সত্যবাদী হবার নির্দেশ দেয়। তেমনই ইসলামী শরিয়াতের উৎস পবিত্র পবিত্র কোরআনেও স্পষ্ট করে বলা আছে- “তোমাদের কাছে যদি কোন ফাসিক ব্যক্তি কোন তথ্য নিয়ে আসে, তখন তোমরা সেই তথ্যটির সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নেবে।“
ভাঁওতাবাজি ছড়িয়ে ধর্ম প্রতিষ্ঠার আহবান জানানো হয়েছে এমন কথা তো কোথাও নেই। ধর্মকে মিথ্যা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে কেন? কেন ভাওতাবাজি দিয়ে ধর্ম ছড়াতে হবে? সেটা কি ধর্মেরই অপমান নয়?
১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২৯
নাহিদ শামস্ ইমু বলেছেন: ধন্যবাদ ডি মুন।
শুভকামনা রইলো...
২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৪
ইমরান আশফাক বলেছেন: ধন্যবাদ, চমতকার এবং কার্যকরী পোস্ট।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩
ডি মুন বলেছেন: প্রতিটি ধর্মই তো সত্যবাদী হবার নির্দেশ দেয়। তেমনই ইসলামী শরিয়াতের উৎস পবিত্র পবিত্র কোরআনেও স্পষ্ট করে বলা আছে- “তোমাদের কাছে যদি কোন ফাসিক ব্যক্তি কোন তথ্য নিয়ে আসে, তখন তোমরা সেই তথ্যটির সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নেবে।“
এটাই আসল কথা। আর মিথ্যা বা ভাঁওতাবাজি করে নিজ ধর্মানুভূতি অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে বুঝিনা।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার তুলে ধরেছেন।
সবার সচেতনতা আশা করছি।