![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন লেখক, সমাজ কর্মি , মা এবং মুক্তিযোদ্ধা
লন্ডনের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা ইস্ট লন্ডন যেখানে পাঁচ জন খুন হয়
জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ "প্রদীপের নিচে অন্ধকার" জ্যাক দি রিপার একজন 'সিরিয়াল কিলার', যে কিনা একের পর এক নারী হত্যা করে চলছিল
" জ্যাক দি রিপার" অনেকেই এই নারী হত্যা কারীর নাম শুনেছে। ১৮৮৮ সালে মধ্য রাতে মেয়েমানুষ দের কে হয় একাকী থাকা তার নিজ ঘরে লাশ হতে হয়ে ছিল আর কেউ কেউ খুন হতে হয় রাস্তায় । সব গুলো হত্যার ধরন একি রকম ,প্রথমে গলা কাটা পরে পেট থেকে নিচের দিকে কেটে সব কিছু বের করে রাখা এই ছিল হত্যার ধরন। এই নিষ্ঠুর হত্যা কাণ্ডের শিকার সবায় মেয়ে, বয়স প্রায় একি রকমের এবং সকলেই সমাজের আভাগা দরিদ্র নারী।
কত নিষ্ঠুরতার সাথে হত্যা করা হয়েছে বা তাকে কেন ধরা যায় নি, কেস কতদূর চলে ছিল ,সাক্ষী কে কে ছিল,কি বলেছিল সে সব হরার বা বীভৎস ভয়ঙ্কর ঘটনা আমার লেখার বিষয় নয় । আমার গবেষণার বিষয় এই পাঁচ জন নারী এবং তাদের পেছনের না বলা না জানা গল্প।
পলি
সর্ব প্রথম ভিকটিম । সে তার স্বামীর মারধোরের শিকার । ডিভোর্স দিতে চেয়ে ছিল । কিন্তু সে সময় ডিভোর্স ফী দিতে হতো ।যা একজন দরিদ্রে নারীর পক্ষে কঠিন । স্বামী মারধোর করলেও তা সহ্য করেই থাকছিল । তা ছাড়া বের হয়ে কোথায় থাকবে? সংগে আছে বাচ্চা কাচ্চা।
একদিন থাকতে না পেরে বের হয়ে যায় । আর একটা বিয়ে করলে আগের স্বামী তার সন্তানদের ভরন পোষণ আর দিবেনা এটাই ছিল নিয়ম। আবার নুতুন একটা বিয়ে সে যদি করেও, সে তো আগের স্বামীর ছেলে পেলের খরচ দিবে না ।
পালিয়ে এসে প্রথমে Trafalgar Square এর নিচে ছিল আর অনেক আশ্রয় হীনদের সাথে। সেখানে পুলিশ যোর পুর্বক সরিয়ে দিলে তারা প্রতিবাদ করেছিল এবং সেখানেই তার নাম পাওয়া যায়।
পরে এসে সবচেয়ে গরীব এলাকা হোয়াইট চ্যাপেল গরীব মানুষের থাকার স্থান যাকে বলা হয় "ওয়ার্ক হউস" সেখানে উঠে। এখানে এই গরীব মেয়ে গুলো কফিন বাক্সের মত বাক্সে বা মেঝেতে একটি লেপের নিচে দশ বারো জন গাদাগাদি করে থাকতে হতো বিনিময়ে কিছু ভাড়া দিয়ে। এই ভাড়া দিতে না পারলে বাইরে ফুটপাতে। এই আশ্রয়টির ভাড়া জোগাড় এবং ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে তাকে দেহ বিক্রির কাজে নামতে হয়। মেয়ে হয়ে জন্মানর জন্য তার যেমন একগাদা ছেলে মেয়ের মা হতে হয়েছে, না চাইলেও । আবার তাদের ক্ষুধা নিবারনের জন্য সিঙ্গেল মাদার হয়ে আবার সেই একই ভাবে ব্যাবহৃত হতে হচ্ছে। মেয়ে মানুষ হয়ে জন্মানই পাপ।
অ্যানি চাপম্যান (annie chapman)
দ্বিতীয় ভিকটিম । ১৮৮৮ সালে ৮ই সেপ্টেম্বের তাকে হত্যা করা হয় হোয়াইট চ্যাপেল এর ২৯ Hanbury স্ট্রীটে। জন্ম প্যাডিঙ্গটন এলাকায় । পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সে বড় ছিল। বাবা বাবা মিলিটারিতে কাজ করতো । বাবা ছিল এল্কাহলিক । মাও তাই। মা গর্ভাবস্থায় মদ খাওয়ার ফলে জন্মগত ভাবে অ্যান কে এফেক্ট করে । সেও অল্প বয়স থেকেই এদিক্টেড হয়। যা তার সারা জীবন কে ভুগায় । বিবাহিত জীবন এই জন্য টিকে নাই। ফুল বিক্রি ,হাতে বোনা ক্রচেটের টেবিল ক্লথ বিক্রি করে এবং মাঝে মাঝে পতিতা হয়ে ঘর ভাড়া এবং নিজের জীবন চালাত । অল্প বয়সে বাবা সুইসাইড করে । পরিবার ভেঙ্গে যায়। আর বাবামার মদের নেশা তার জীবন কে এফেক্ট করে। কোনদিন একটা ভালো পারিবারিক পরিবেশ সে পায়নি । যেখানে সন্তান সুস্থ ভাবে নিরাপত্তার সাথে বেড়ে উঠতে পারে।
এলিজাবেথ তৃতীয় ভিকটিম
এলিজাবেথ সুইডেনের দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেয়ে । কাজের আশায় লন্ডনে আসে। সুইডেনের চেয়ে মজুরী বেশি পাওয়া যায় তাই। সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে বিবাহিত স্বামী ছাড়া। কে বাবা কেউ জানে না। সমাজে এই রকম মেয়েদের মর্যাদা নাই এবং কেউ কাজও দায় না। রেজেস্ত্রি হতে হয় সিফিলিস না ছড়ানোর জন্য। তার শরীরে সিফিলিস না থাকলেও তাকে বার বার চেক আপ করতে যেতে হতো আইন মোতাবেক। সে প্রফেশনাল পতিতা না হলেও সেই ক্যাটাগরিতে পড়তে হয় কাজ এবং আশ্রয় দুটোই হারাতে হয়। শেষ মেশ এই হোয়াইট চ্যাপেল ওয়ার্ক হাউস তার ঠিকানা হয়। থাকার বিনিময়ে বিনা পয়সায় আশ্রয় পায়। পর পর দুইবার বিয়ে করলেও কোনও বিয়ে টিকেনি । তার সন্তানও ছিল না।
ক্যাথরিন (Cathrine Eddowes)
চতুর্থ ভিকটিমঃ
"ভিক্টোরিয়ান লন্ডন" সে সময়ের রিচেস্ট কান্ট্রির গ্রেটেস্ট সিটি। শিল্প বিপ্লব দেশটিকে পৃথিবীর সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে ছিল ।
কিন্তু তার সাথে ছিল চিন্তার বাইরে সাফারিং ,মানবিক অবনতি, নোংরা,বিপদ, দুঃখ,ছিনতায়,চুরি এবং তার সাথে মৃত্যু আর হত্যা। পাব গুলোতে মদ্যপ মাতাল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাফারিং ভুলতে ড্রিঙ্ক করতো । তার সাথে দারিদ্র ঘোচাতে দেহ ব্যাবসা । এই ছিল ইস্ট এন্ডের প্রাত্যহিক চিত্র ।
এলিজাবেথ কে হত্যার এক ঘণ্টার পরেই এই হত্যা কাণ্ড ঘটে। সময় টা ৩০ নভেম্বার ,১৮৮৮ । ক্যাথরিনের মৃতদেহ পড়েছিল ইস্ট এন্ডের রাস্তায় । তার এক ঘণ্টা আগেই এলিজাবেথ কে হত্যা করা হয় । চার দিকে পুলেসের রেড এল্যার্ট । সতর্কতার মাঝেই এই হত্যা।
হোমলেস সেন্টারে সে থাকতো । তার জীবনও ছিল আর পাঁচ টি মানুষের মতই । জন্ম, ছোটবেলা,বড় হয়ে যাওয়া, মাতৃত্ব, সম্পত্তি ,মদাসক্ত ,তারপরে মৃত্যু। সে মৃত্যু স্বাভাবিক নয় ।বীভৎস হত্যা।
তারও ছিল সন্তানের প্রতি ভালবাসা, দারিদ্র্যের গল্প,পাওয়া না পাওয়া , স্বাধীন ভাবে বাঁচার চেষ্টা, অদম্য ইচ্ছা, চেহারায় ছিল বিধ্বস্ত প্রতিকৃতি ।
কিন্তু সে ছিল মেয়ে ,পুরুষের মত শক্তি নেই শরীরে। সমাজে একটা পুরুষ যে ভাবে সাফার করে তার চেয়ে অনেক বেশি সাফার করে একটা মেয়ে। সাফারের কারন তার দেহ।
জেইন কেলিঃ
পঞ্চম ভিকটিমঃ
জেইন কেলি কে হত্যা করা হয় সবচেয়ে নিষ্ঠুর ভাবে। কারন তাকে হত্যা করা হয়ে ছিল তার নিজ ঘরে। সেখানে কেউ ছিলনা। একাকী তাকে পেয়ে দুই ঘণ্টা ধরে সময় নিয়ে তাকে বুচারের মত নাড়ি ভুড়ি , লিভার হার্ট সব বের করে রেখে গিয়েছিল হত্যা কারী। অল্প বয়সে তার বিয়ে হয় ডেভিস নামে একজন কোল মাইনারের সাথে। হটাৎ সে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরন করে।
স্বামী মারা যাওয়ার পর সে আর্থিক অনটনে পড়ে। কাজ না পাওয়ায় দেহ ব্যাবসায় লিপ্ত হয়। সে ছিল আইরিশ। বাবা মা সহ ওয়েলসে মুভ করে যখন সে শিশু ছিল । স্বামী মারা গেলে লন্ডনে কাজের আশায় আসে। এই দেহ ব্যাবসা করতে গিয়েই তাদের হাতেই সে নিহত হয়। নভেম্বরের নয় তারিখ ১৮৮৮ সালে,মিলার কোর্টে ,ডোরসেট স্ট্রীটে , london
"পতিতা" শব্দ টি "পতন" থেকে এসেছে । ইংলিশে যারাকে বলা হয় "Fallen women" বা যাষ্ট "fallen" বলা হয়।
মধ্যবিত্ত পরিবারে এদেরকে বলে এদের মরালীটি নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের দুর্ভ্যাগ্য ওয়ার্কিং ক্লাস পরিবারে জন্ম । এরা দরিদ্র
সবচেয়ে বড় কথা এরা নারী হয়ে জন্ম হয়েছে। তাদের বিবাহিত স্বামীর কোনও ইনকাম ছিলনা। গ্রিহকর্মী হওয়া ছাড়া তাদের কোনো কাজের যোগ্যতা ছিল না । কাজও পেতনা ।
বিবাহিত জীবনে তাদের কাজ ছিল স্বামীকে সেবা করা ,বাচ্চা উৎপাদন, ঘর সামলানো ,যা করতে হবে নিখুঁত ভাবে।
এই অপ্রতিরোধ্য চরিত্র পালন করতে গিয়ে একজন নারী তার নিজ জীবন কে ধ্বংস করে দায় ।
ভিক্টোরিয়ান সময়ে ওয়ার্কিং ক্লাস এবং নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়েদের কাজ পাওয়ার সুযোগ ছিল সীমিত ।
খুন হওয়া এই পাঁচ জন নারী একেক জনের একেক রকমের ব্যাক্তিগত জীবন যুদ্ধ ছিল। আর সেই ডিফারেন্ট যুদ্ধের সাথে তাদের বেঁচে থাকতে হয়েছে ।
এই পাঁচ জন নারীর জন্ম লন্ডনের দরিদ্র এলাকা হোয়াইট চ্যাপেলে নয়। কিন্তু জীবন তারাকে টেনে এনেছে "হোমলেস হোস্টেলে" ।
'পলি' সরে গেছে তার বিশ্বাস করা যায়না সেই স্বামীর কাছ থেকে ,সরে গিয়ে একাকী সংগ্রাম জীবন বেছে নিয়েছে।
এলিজাবেথ কে বেছে নিতে হয়েছে ভণ্ড লোকের হাত থেকে রেহায় পেতে । দুইবার বিয়ে ভেঙ্গে গিয়ে সে আঘাত পায়।
কেটের স্বামী ছিল ভায়োলেন্ট ,অত্যাচারী সে নিজেও মদাসক্ত ছিল।
"মেরী জেন" ছিল একমাত্র প্রফেশনাল পতিতা । যাকে সভ্য সমাজে বলা হতো "Disgusting" বা "ঘৃণিত" বা "ঘৃণার পাত্র"।
১৮৮৮ সালের নভেম্বর মাসে কিছুদিন পর পর নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়েছে এই পাঁচ জন নারীকে। "জ্যাক দি রিপার" আলোচিত হয়ে থাকবে মানুষের মাঝে । এই মেয়ে গুলোকে বলা হবে পতিতা । কিন্তু খুব কম মানুষ জানবে তাদের জীবন সংগ্রাম।
হুসনুন নাহার নার্গিস, নারী ও শিশু অধিকার কর্মী , লন্ডন
তথ্য সূত্রঃ
Grim Realities Victorian time, Etiquette Rulls how stuff works
The Victorian class system
The five: The untold story of the women killed By Jack the Ripper , History Association
5 things you did not know about the women killed by Jack the Ripper
ছবিঃ উইকিপিডিয়া ছবিঃ নিচে ১) ইস্ট লন্ডনের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা হোয়াইট চ্যাপেলের "ব্রীক লেন" । যার আসে পাশে খুন গুলো হয়ে ছিল ,দেখা যাচ্ছে হ্যানবারি স্ট্রীট ,এই দরজার সামনে এক জন খুন হয়। ২) এই ভাবে এক লেপের নিচে গাদা গাদি করে মানুষ কে রাত কাটাতে হত ।
২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:৩৭
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: 1) Political Science, Rajshahi University , 2) Counselling and Personal development ,City University , London. 3) Domestic Violence , The reason behind It , 4) Public Speaking , 5) Women and child Development 6) Mental Health 7) Child Abuse and How to Recognise it .
সঠিক কথা বলেছেন আপু। ভালো থাকবেন
৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০১
প্রত্যাবর্তন@ বলেছেন: অনেক কিছু জানা হলো।
৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:২৯
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া ।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৩৮
শায়মা বলেছেন: সর্বযুগে সর্ব সমাজেই ছিলো অসহায় নারীরা।
আপু কোন বিষয়ে পড়ালেখা করেছো?