![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত্রির নির্জনতায় নিঃসঙ্গ কেঁদে কেঁদে, একদিন হয়তো তুই অজান্তেই মরে যাবি, তবুও তুই জানবি না পাষাণ এ বুকে কতটুকু ভালবাসা তোর জন্যে জমা রাখি।
ঢাকা কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাইফ। উসখুস ভঙ্গিতে এদিক অদিক তাকাচ্ছে আর পকেট থেকে বারবার মোবাইল বের করে সময় দেখছে। অপেক্ষার বিরক্তিকর সময় দ্রুত কাটানোর জন্যে সিগারেট টানছে। হঠাত্ লক্ষ্য করে হিজাবে মুখ ঢাকা একটা মেয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সাইফ নিশ্চিত হওয়ার জন্যে মিথিলাকে কল করে, হুম হিজাব পরা মেয়েটাই মিথিলা, শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে তার।
জনসমাগম থেকে নির্জনতার খোঁজে তারা ইডেন কলেজের সামনের ফুটপাতে বসল। বসার কিছু সময় পর মিথিলা হিজাবে ঢাকা মুখ অনাবৃত করল। সাইফ ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো, 'আপনি?'
'হুম আমিই মিথিলা, ঢাকা কলেজের সামনে তোমাকে দেখে ঠিক একই রকম আমিও চমকে উঠেছিলাম।'
২০১২ এর মাঝামাঝি একটা সময়ের কোন এক রাতে সাইফের সেলফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। রিসিভ করে শোনে একটি মিষ্টি কন্ঠের মেয়ে, কিন্তু হতাশ হয়, রং নাম্বার বলে কেটে দেয়। কয়েকদিন পর মেয়েটির আবার কল আসে, এভাবে আরও কয়েকদিন পর আবার, আস্তে আস্তে নিয়মিত আসা শুরু হয় ফোনকল। সাইফ প্রথম দিকে তেমন একটা পাত্তা না দিলেও আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মিথিলা নামের মেয়েটা জানায় সে ডিভোর্সী। সাইফের দিক দিয়ে বন্ধুত্ব অতিক্রম করে না কিন্তু মিথিলা বন্ধুত্ব অতিক্রম করে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। সাইফ সরাসরি জানিয়ে দেয় সে একজনকে ভালোবাসে কিন্তু সেই মেয়েটা বিবাহিত এবং ফেসবুকে তার সাথে যোগাযোগ আছে। সে দূর থেকেই ঐ মেয়েকে ভালোবেসে যাবে। কথাবার্তা আর বাড়াতে চায় না সাইফ তার সাথে, সিম বদলে ফেলে কয়েকদিনের মধ্যেই।
২০১১ সালের শেষের দিকের কথা। সাইফ পুরোপুরি বসত গড়ে ফেলেছে ফেসবুকে। 'একাকী রাজপুত্র' নামক এক আইডিতে নাম পরিচয় গোপন করে ফেসবুকময় তার বিচরণ। 'ভালোবাসা এবং আবেগের গল্প' পেইজটিতে একটা মেয়ের গল্প পড়ে সে, গল্পটা পড়ে তার খুব ভালো লেগে যায়। পরিবারের চাপে পড়ে একটা মেয়ে বাধ্য হয়ে বিয়ে করে, এবং তার বিয়ের পরবর্তী জীবন নিয়ে সে গল্পটা। গল্পের লেখককে খুঁজতে গিয়ে সে আবিষ্কার করে গল্পকার লেখক নন, লেখিকা। আর সে সেই লেখিকার উপরে ক্রাশ খায়। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেই লেখিকার সাথে তার খুব সখ্যতা গড়ে ওঠে। লেখিকার কাছ থেকে সে জানতে পারে ঐ গল্পটা লেখিকার নিজের জীবন থেকে নেয়া। লেখিকাকে নিয়ে মনের মধ্যে তিল তিল করে গড়ে উঠা তার আবেগ নিমেষেই ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়, যখন শুনে লেখিকা বিবাহিত। কিছুদিন পর আইডি পরিবর্তন করে ফেলে সাইফ, নতুন আইডি দিয়ে নতুন পরিচয় নিয়ে লেখিকার সামনে হাজির হয় সে।
কিছুদিন আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। একটা নতুন পরিবার ভাড়া আসে সাইফদের পাশের ফ্ল্যাটে। একদিন দরজা দিয়ে বের হতেই দেখা হয় সেই ফ্ল্যাটের মেয়েটির সাথে। মেয়েটিকে দেখে সে চমকে উঠে, মেয়েটির গালের ডানপাশটা পোড়া এবং বিকৃত। সে আর তাকায় না মেয়ের দিকে, সিঁড়িতে মাঝে মধ্যে চলার পথে মেয়েটির সাথে তার দেখা হতো কিন্তু সে তাকাত না, কেমন জানি একটা ভয় করত তার মেয়েটার চেহারায় তাকালে।
একদিন কি মনে করে যেন পুরোনো সিমটা আবার চালু করে সাইফ। ঠিক সন্ধ্যার পরই মিথিলার কাছ থেকে কল আসে, সাইফ অবাক হয়ে কলটা ধরে। মিথিলা তাকে দেখা করতে বলে খুবই করুণ সুরে, সাইফ রাজি হয়ে যায় সাতপাঁচ ভেবে। স্থান ঠিক হয় ঢাকা কলেজের সামনে।
বসার কিছুক্ষণ পরে সাধারণ কথাবার্তা হলো তাদের মধ্যে। মিথিলা বলছে তার জীবনের কথা আর সাইফ শুনছে আবার নতুন করে।
'সে সময়টা ২০০৯ এর, মিগে একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়, 'দ্যা এক্স ম্যান ০০৭' ছিল তার আইডি আর আমারটা 'ব্লু আইস ড্রীমস' ছিলো।' সাইফ আবারও চমকে উঠে।
'কিছুদিনের মধ্যে আমি ছেলেটার প্রেমে পড়ে যাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে কি জানো? আমি তাকে অনেক দিন পর বলি যে আমার আইডিটা মেয়ে আইডি।' সাইফের চোয়াল ঝুলে পড়েছে, মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
সেই ২০০৯ সালের কথা। 'দ্য এক্স ম্যান ০০৭' আইডি দিয়ে মিগ৩৩ চালায় সাইফ। 'ঢাকা হিটজ' নামের এক রুমের মড সে। ২১ লেভেলের আইডিটা নিয়ে বেশ ভালো অবস্থান তার মিগে। 'ব্লু আইস ড্রীমস' নামের এক আইডির সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সবচে মজার ব্যাপার হলো, কয়েক মাস চ্যাটিংয়ের পর সে জানতে পারে ঐ আইডি এক মেয়ের। মেয়েটা তার পরিচয় প্রকাশ করেনি। এদিকে সাইফের মেয়েটার সাথে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সে আর এগুতে পারেনি। কিছুদিনের মধ্যে দেখে যে মেয়েটা আর অনলাইন আসে না। আস্তে আস্তে সে মেয়েটার কথা ভুলে যায়। তবে মেয়েটা তাকে প্রায়ই প্রাইভেট চ্যাটে বলত, তার বাঁচার কোন ইচ্ছা নেই। কেন নেই জিজ্ঞেস করলে শুধু 'ফ্যামিলি প্রবলেম' বলে সটকে যেত।
মিথিলা বলতে থাকে, 'আমার পরিবার থেকে জোরে আমাকে বিয়ে দেওয়া হয় এক আধবুড়ো লোকের সাথে, কিন্তু মনে মনে ভালবাসতাম ঐ ছেলেটাকে, পরিচয় জানতে পারিনি তার। ইচ্ছে ছিলো বলবো তাকে সব কিন্তু তার আগেই আমার বিয়ে হয়ে যায়।'
সাইফের বুক ধরপড় করা শুরু হয়।
'বিয়ের একবছরের মধ্যে জীবনটা বিষাক্ত হয়ে ওঠে, স্বামীর অবহেলায় আর শ্বাশুড়ির কটূক্তিতে। আমাকে মারধর করা শুরু করে দেয়। মুখে যে পোড়া দাগটা দেখছো না? শ্বাশুড়ি আমাকে গরম ছ্যাঁক দিয়েছিলো। ঐসময়ে ফেসবুকে একটা গল্প লেখি আমার জীবনের কষ্ট নিয়ে। 'একাকী রাজপুত্র' নামের একটা ভালো বন্ধুও পেয়ে যাই ঐ সময়ে। ছেলেটার সাথে মিশতে মিশতে অনেক ভালো লেগে গিয়েছিল। হঠাত্ করে দেখি একদিন ছেলেটা নেই আর ফেসবুকে। আইডি ডিলিট করে দিয়েছে।'
সাইফের চোখে পানি টলমল করছে। বিস্ময়ে সে হতবাক, আবেগ যেন অনিয়ন্ত্রিত তার।
'কি ব্যাপার কাঁদছো কেন?'
'নাহ এমনি, খারাপ লাগছে।'
'তারপর তোমার সাথে ফোনে পরিচয়। তোমাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইলাম কিন্তু তুমি সিম বন্ধ করে পালিয়ে গেলে। সেদিন এমনিতেই কল করি তোমাকে। মাঝে মাঝে চেষ্টা করতাম তোমার ফোনে, চাইতাম একটু কথা বলি। আমার সৌভাগ্য সেদিন আমি তোমাকে পেয়ে যাই।'
সাইফ উঠে দাঁড়ালো, 'মিথিলা আমি চলে যাচ্ছি, ভালো লাগছে না। যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই, ফেসবুকে 'একাকী রাজপুত্র' আর মিগে 'দ্য এক্স ম্যান ০০৭' আইডি আমারই ছিলো।'
সাইফ চলে যাচ্ছে, ফিরেও তাকাচ্ছে না। মিথিলা হতবাক হয়ে বসে আছে ফুটপাতে। তার পায়ে যেন শক্তি নেই, অসাড় পা কিন্তু মন চাইছে দৌড়ে গিয়ে সাইফের হাত ধরে।
[পরিমার্জিত]
২০ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩০
আকিব আরিয়ান বলেছেন: গল্পটা হাস্যকর কাল্পনিক তাই হইছে
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:০৬
অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: এতটা কাকতালীয় হয় নাকি মানুষের জীবন?