নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিস্তি :: ৮৭:: প্রিয় ক্যাম্পাস, শিক্ষক ও শিক্ষক রাজনীতি
আমার জীবনের যত প্রাপ্তি, যত আনন্দ, যত সুখ, যত ভালোবাসা, যত অর্জন- সব কিছুর পেছনেই আমার প্রিয় ক্যাম্পাস- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৭ বছরের ক্যাম্পাস জীবনে মানুষজন আর তাদের ভেতরকার মন সম্পর্কে জানার অফুরন্ত সুযোগ পেয়েছি! তার সবই ঠিক, এটা কোনোভাবেই আমি দাবি করবো না।
আমার এখনো মনে আছে, শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের সামনের পেপার বিক্রেতার হাতে ধরা জনকণ্ঠ পত্রিকার কথা, যার প্রথম পৃষ্ঠায় বড় একটি খবর- জ্ঞান তাপস আবদুর রাজ্জাক আর নেই। লেখাটা আমার বুকের ভেতর বিঁধলো। একটা বড় রকমের ধাক্কা খেলাম।
তখনো রাজ্জাক স্যার সম্পর্কে সেভাবে জানা হয়নি। ডিপার্টমেন্টে দু চারবার তার নাম শুনেছি। তার লেখা বই আছে কিনা সেটি জানার চেষ্টা করছিলাম, পাইনি। পরে জেনেছি তার কোনো বই বের হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বাংলাদেশের যে বিকাশ সেটির পেছনে যে মানুষটিকে কঠিনভাবে মানা হয় তিনি রাজ্জাক স্যার। আমার সবচেয়ে আনন্দের জায়গা ছিল- এই ক্যাম্পাসের 'মাস্টোর' কারা ছিলেন, তা জানার চেষ্টা করা।
সরদার ফজলুল করিম স্যারের সাথে আলাপে এবং রাজ্জাক স্যার সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখা থেকে জানার চেষ্টা করলাম- তাতে রাজ্জাক স্যার চেয়েছেন পণ্ডিত ব্যাক্তিরাই এ ক্যাম্পাসের 'মাস্টোর' হিসাবে কাজ করুক। সে জন্য তিনি 'মস্টোর' সংগ্রহ করে বেড়াতেন।
তার সে চাওয়ার কারণেই হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের বাইরে ভালো মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। সত্যেন বোস, গোবিন্দ দেব, রাজ্জাক কিম্বা শহীদুল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, দেওয়ান আজরফ স্যারের মত শিক্ষকরা এ ক্যাম্পাসে আলো ছড়িয়েছেন।
সেই ক্যাম্পাসে এখন যারা শিক্ষক তাদের নিয়ে অনেক তর্ক আছে। অনেক রকমের নেতিবাচক ভাবনা আছে। সেটি খোলাসা করে দেখার সুযোগ হয়েছে ক্যাম্পাস জীবনেই।
আমাদের শিক্ষকরা যতটা না গবেষণা, পড়াশোনার কাজে ব্যস্ত তার চেয়ে বেশি দলীয় কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। বঙ্গবন্ধু বড় না জিয়া বড় সে আলোচনাই এখানে মুখ্য। বাম রাজনীতির সাথে জড়িতরা গোলাপী শিক্ষকরা এখনো আছেন তাদের পুরনো থিওরিতে। মার্কস- অ্যাঙ্গেল-মাও-লেলিন নিয়েই তাদের রাজ্যের চিন্তা। চে কে নিয়ে তাদের ভানার অভাব। কারণ সম্ভবত চে পুরো মাত্রায় বিপ্লবী।
তবে এ সবের বাইরে একদল আছেন কেবল কামাগুনে পোড়ার মতলবে। এমন একটি ডিপার্টমেন্ট নেই যে ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষকও এ কাজটি করেননি। এটা খুবই হতাশার হলেও 'নেতিবাচক' বলে মন্তব্য করতে চাই না। এর কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার কয়েকটি তরিকার একটি সেক্সচুয়াল রিলেশন।
নারী পুরুষ দু রকমের শিক্ষকের মধ্যে এ প্রবণতা আছে। তবে পুরুষ শিক্ষকদের শিকার সম্পর্কে আমরা অনেক সময় জেনে থাকি। নারীদের সম্পর্কে জানা যায় না। কারণ বলা মুশকিল।
তবে এ সব জানাজানি হয়, সাধারণ 'সব দেওয়ার' পরে যদি কাঙ্খিত নম্বর না পাওয়া যায়। মানে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট না হওয়া যায়। এ রকম কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করেই আমার এ অনুসিদ্ধান্ত।
আবার ক্যাম্পাসে অনেক মেয়ে শিক্ষকদের স্ত্রী হয়ে ক্যাম্পাসের অংশ হয়ে থাকতে চান। এ অভিযোগ পুরনো। তবে সেটি অনেকে মানতে চান না। মিথিলা তাদের একজন। এখন বুয়েটের শিক্ষকতা করে। তাকে আমি প্রসঙ্গটা তুলে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে বলেছিল, নিজ যোগ্যতায় ক্যাম্পাসের অংশ হতে পারা উচিৎ। আমিও তার সাথে দ্বিমত করি না।
তবে জ্ঞানের এ অভয়ারণ্যে অনেক শিক্ষক জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি স্ত্রী-নারী সঙ্গ উপভোগ বঞ্চিত হয়ে হাতের কাছে যা পান; তা নিয়ে আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করে থাকেন, এ নিয়ে সঙ্কট চলে।
কেবল ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে অন্তত ১০ টি অভিযোগ লিখিতভাবে উত্থাপন করা হয়েছিল, এর সবই যৌন হয়রানির। এখানে উর্দু- ফারসি-বাংলা-ইতিহাসের শিক্ষক যেমন ছিলেন, তেমন সাংবাদিকতা, প্রাণীবিজ্ঞান কিম্বা রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষকও অভিযুক্ত হয়েছেন।
অনেকে শাস্তি ভোগ করেছেন। আমার সাংবাদিকতার একজন গুরু স্থানীয় মিলান ফারাবী। তিনি সব সময় একটা কথা বলতেন- প্রত্যেক প্রতিভার কোনো না কোনো বিকৃতি থাকে। সম্ভবত এটা তারই অংশ।
তবে শিক্ষক রাজনীতি, ভোট বৃদ্ধি এবং দলীয় কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য যে পরিমাণ শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছে আগে, এখনো পাচ্ছে সে জায়গা লজ্জার। অপমানের। কিন্তু আমরা সব সময় নিজেদের সুবিধা বিবেচনা করে বিরোধীতা-বর্জন বা গ্রহণের নীতি অনুসরণ করায় তার কোনো সমাধান হচ্ছে না।
একটা ঘটনা বলি- তাহলে রাজনীতির নোংরা রূপটা বোঝা সহজ হবে। ২০০৩ সালের ঘটনা, সম্ভবত। আইন বিভাগের একজন শিক্ষককের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে গেলো বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাস করে কেবল মাত্র সরকারি দলের হওয়ায় সে সময় নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে তার আচরণে নীল দলেরই অনেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই তিনি অনেকটা বিদ্রোহ করে বসলেন।
বাস মালিক ওই শিক্ষককে পরে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। এক সময় ছাত্র রাজনীতি করতেন, তাই সহজেই ক্যাম্পাসে কিছু গুটি চালাতে শুরু করলেন। আমাকে ফোন করে টিএসসি থেকে তুলে নিলেন। বললেন আলাপ আছে। গেলাম। দেখি গাড়ি কাকরাইল হয়ে শেরটানে ঢুকছে।
তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছি, কিন্তু নামটা তো পত্রিকায় এসেছে সে জন্য তিনি আমাকে খাওয়াতে চান। তার মতে আলোচনায় আছেন তিনি, এটাই বড় কথা।
রাতের খাবারের পর বললেন , 'আমি কাল ভিসি ফায়েজের কাছে যাবো, গিয়ে একটা লাত্থি মেরে তার চেয়ার সহ উল্টে দেবো। ' আমি হাসলাম। কারণ হলের ক্যাডারি ভাব এখনো তার যায়নি বলে মনে হয়েছে। তিনি বললেন হেসো না। সত্যি করবো।
তার পরে প্রায় ফোন করতেন, যা ঘটাতেন জানাতেন, আমরা রিপোর্ট করতাম। যেহেতু মানবজমিনে আমি তার পক্ষ নিয়ে কোনো রিপোর্ট করিনি, তাতে তিনি কিছু মন খারাপ করেছিলেন।
এরই মধ্যে একদিন রাতে আমরা সাংবাদিক সমিতির দোতলায় আরাম করে টিভি দেখছিলাম, হুট করে খবর এলো প্রফেসর আজাদ চৌধুরী স্যারের ওপর গুলি হয়েছে। কমার্স ফ্যাকাল্টিতে এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা ছুটলাম । আজাদ স্যার এ জন্য সরকার দলীয়দের অভিযুক্ত করলেন। কিন্তু ক্রস চেক করে দেখা গেলো স্যারের অভিযোগ ঠিক নয়। তবুও অফিসে খবরটি দেয়া হলো- যেহেতু আজাদ চৌধুরী স্যার বিদায়ী সরকারের আমলের শেষ ভিসি ছিলেন, তা গুরত্ব সহকারে ছাপাও হলো।
ফলোআপ রিপোর্ট করতে গিয়ে জানতে পারলাম, সেই শিক্ষকই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিস্মিত হলাম এবং নিজের দিকে আরেকবার তাকালাম, এ কোথায় বসত করছি। আজাদ স্যারও সম্ভবত সেটি পরে জানতে পরেছিলেন, তাই এ নিয়ে নীল দলের আন্দোলন আর হয়নি।
এ রকম আরো উন্নত রুচির পরিচয় অনেক শিক্ষক দিয়ে থাকেন। এটা একটা উদাহরণ মাত্র। আমরা এটাও দেখি কোনো কোনো শিক্ষক সরকারের আমল বুঝে মন্তব্য করেন।
তবে বরাবরই আমার কাছে একটা জিনিস মনে হয়েছে, তাহলো যারা শিক্ষকতা করবেন, পান্ডিত্য অর্জন করে তা বিতরণ করবেন বলে জীবনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের ঘর সংসার করা উচিৎ নয়। কারণ বৈষয়কি বিষয় আর জ্ঞানের চর্চা দুটোর এক সাথে চালানো খুবই কঠিন।
যদিও এটা একটি অস্বাভাবিক প্রস্তাব।
তবে দ্বিতীয় প্রস্তাব শিক্ষকদের যথেষ্ট বেতন ও সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে রাজণীতি, দলবাজি আর ফাও আড্ডায় সবাই মগ্ন থাকবেন। নিশ্চিত ভাবেই এটা হবে।
২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:২৫
মোরতাজা বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৫
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: একজন ভিসি সামনে পরেছেন অথচ তার ছাত্র তাকে সম্মান করা তো দূরের কথা তার দিকে তাকাচ্ছেন ও না। এটা দেখে অনেকের সেই ছাত্র সম্পর্কে খারাপ ধারণা হতে পারে। অথচ এই সমস্ত জ্ঞান পাপীদের করুনা করে অনেকে সম্মান করে থাকেন।দলবাজির কারণে তাদের জ্ঞান সাধনার সময় নেই ।এরা পা চাটা কুকুর এর চেয়ে বেশি কিছু নন। আর ছাত্ররাজনীতি করা চাটুকারেরাও অনেক সময় ধরাকে সরা জ্ঞান করে যাচ্ছে তাই করে থাকেন।
এমন শিক্ষকরা আর যাইহোক আদর্শ পুরুষ নন। আর এমন ছাত্রনেতারা আর যাই হোক জাতির কান্ডারী নয় কোন মতেই।