নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সম্পাদক, শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক ত্রৈমাসিক \'মেঘফুল\'। প্রতিষ্ঠাতা স্বেচ্ছাসেবী মানবিক সংগঠন \'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি\'।

নীলসাধু

আমি খুব সহজ এবং তার চেয়েও বেশী সাধারন একজন মানুষ । আইটি প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করছি। টুকটাক ছাইপাশ কিছু লেখালেখির অভ্যাস আছে। মানুষকে ভালবাসি। বই সঙ্গে থাকলে আমার আর কিছু না হলেও হয়। ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে। ভালবাসি প্রকৃতি; অবারিত সবুজ প্রান্তর। বর্ষায় থৈ থৈ পানিতে দুকুল উপচেপরা নদী আমাকে টানে খুব। ব্যাক্তিগতভাবে বাউল, সাধক, সাধুদের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। তাই নামের শেষে সাধু। এই নামেই আমি লেখালেখি করি। আমার ব্লগে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো। ভালো থাকুন সবসময়। শুভ ব্লগিং। ই-মেইলঃ [email protected]

নীলসাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজিমপুর ও আমার সোনালী শৈশব

০৫ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৩



১৯৮২-৮৩ সালের কথা।
আমাদের একটি অন্যরকম শৈশব ছিল।
ঢাকা ছিল ছিমছাম একটি শহর। আমরা তখন থাকতাম আজিমপুরে।
ছাপড়া মসজিদের পেছনের গলি; এই গলিটার অন্য প্রান্তের নাম ছিল বিখ্যাত ‘চায়না বিল্ডিং গলি’!!
গলির মোড়ে রেশন শপ ছিল। তার পেছনে খালি জায়গা ছিল আমাদের খেলাধুলার স্থান। বিকেলে অনেক সময় কলোনির মাঠে না গেলে সেখানেই আমরা অনেকে মিলে খেলতাম।
রেশন শপের পরেই ছিল আমাদের টিনের বাসা।
সেই টিনের বাসার ছাদে উঠেই বিকালবেলা চলতো ঘুড়ি উড়ানো!

আমি তখন পড়তাম আজিমপুর লিটল এঞ্জেলস স্কুলে।
বিকেলে ওয়েস্ট এন্ড স্কুলের পাশ থেকে সাইকেল ভাড়া করে কলোনির মাঠে চালাতে যেতাম।
দেবাশীষ নামের এক বন্ধু ছিল যাকে নিয়ে চলত সাইকেল চালানো। সেই শৈশবেই কলোনির ঢালে সাইকেল ছেড়ে দিয়ে শিখেছিলাম সাইকেল চালানো। তারপর কেমন নেশার মতন হয়ে গেলো। বাসার সবাইকে ফাকি দিয়ে দুপুর নাই বিকাল নাই সাইকেল চালানো ছিল একটা নিয়মিত কাজ।
এমনই দুরন্ত শিশু কিশোরদের কথা নিয়েই বাংলাদেশের পপ সম্রাট আজম খান হয়তো ‘আলাল ও দুলাল’ গানটি গেয়েছিলেন!

আলাল যদি ডাইনে যায়
দুলাল যায় বায়ে
তাদের বাবা সারাদিন খুঁজে খুঁজে মরে ।।
আলাল কই
দুলাল কই
নাইরে নাইরে নাইরে নাই
আলাল ও দুলাল, আলাল ও দুলাল
তাদের বাবা হাজি চান
চানখার পুলে প্যাডেল মেরে পৌঁছে বাড়ী
আলাল ও দুলাল


আমাদের বাসায় তখনো টিভি ছিলনা।
সাদা কালো টিভিতে তখন 'টারজান' দেখাতো। সপ্তাহে একদিনই দেখাতো।
আমরা চায়না বিল্ডিঙে এক আত্মীয়ের বাসায় টারজান দেখতে যেতাম। টারজান শুরু হবার অনেক আগেই হা করে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতন সেই টিভি দেখা। আহা! মনে হলে মায়া লাগে সেই সময়টার জন্য।



কিছুদিন পর আমাদের বাসায় টিভি কেনা হল।
আমাদের সেকি উৎসাহ। ছোটদের মহলে খুব ভাব বেড়ে গেল। তখনই শুরু হয়েছিল 'ম্যাকগাইভার' সিরিজটি। ১৯৮৫-১৯৮৬ সালে হয়তো। আমরা চোখ বড় বড় করে তার কাণ্ডকারখানা দেখতাম।
নিজেকে ভাবতাম ম্যাকগাইভার!

মনে আছে বয়স্করা ‘ছায়া-ছন্দ’ নামের বাংলা জনপ্রিয় সিনেমার গান নিয়ে অনুষ্ঠানটির জন্য অপেক্ষা করতো।
মাঝে মাঝে পাড়ায় কারো বাসায় ভিসিআর বলে একটি বস্তুকে ভাড়া আনতে দেখতাম।
সেটার মধ্যে ছিল আরেক কাহিনী। কি নাচ গান।
আমরা যেন স্বপ্ন পুরীর মতন কিছু দেখছি এই হতো অবস্থা। হা করে গিলতাম।
কি দেখতাম কে জানে!!

আমার এক নানা একদিন সবাইকে সিনেমা দেখাবেন ঠিক হল।
হৈচৈ করে সবাই রাজী।
আমরা সেজে গুজে রওয়ানা দিলাম। নিউ মার্কেটের ‘বলাকা’ হলে গেলাম।
‘দূরদেশ’ নামের সেই সিনেমা ছিল আমার দেখা প্রথম বাংলা সিনেমা।
এখনো স্পষ্ট চোখে ভাসে সেই দিনটির কথা। কি উত্তেজনা নিয়ে বড় পর্দায় সে সব দেখেছিলাম! ববিতার বিপরীতে নাদিমের সেই বিখ্যাত গান ‘দুশমনি কোরো না প্রিয়তম’ শর্মিলা ঠাকুর আর শশী কাপুরের ‘যেওনা সাথী’ আহা। কি ভাব।
আমরা তখন নায়ক নায়িকা কাউকেই চিনি না।

পুরো এলাকার কোন জায়গার নাম কি তা জানিনা, চিনিনা কিন্তু সবখানে টো টো করি।
ঘুরি ফিরি। আর দুষ্টামি বাঁদরামি – এই করেই সেই সময়টা কেটেছে।
১৯৮৬ সনে আমরা সেই এলাকা ছেড়ে চলে আসি।

এখনো আজিমপুরে গেলে আমি একা একা সে সব জায়গায় ঘুরি।
অনেক কিছু বদলে গেছে। দু একটা চিহ্ন চোখ পড়ে যা অবিকৃত রয়েছে যা একেবারেই আমার শৈশবে দেখার মতন করে। বেশির ভাগই নতুন স্থাপনা। আমার সোনালী শৈশবের কোন কিছুকেই আর চেনা মনে হয় না। সেই ছিমছাম শহর, সেই চেনা মানুষগুলো- সেই পরিবেশ।
সেই শান্ত নগরী আর ফিরে পাবার নয়!
সে সময় আর ফিরে আসবে না!



মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০২৩ রাত ৮:১২

শাওন আহমাদ বলেছেন: আমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের আশেপাশের জমা করা স্মৃতিরাও নতুনের প্রলেপে ঢেকে যায়!

০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:১৯

নীলসাধু বলেছেন: হু। স্মৃতি। বড়ই আদুরে আর মন খারাপের

২| ০৫ ই জুন, ২০২৩ রাত ৮:১৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার স্মৃতিকথা। চায়না বিল্ডিংয়ে একটা চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সম্ভবত অনেক আগে ১৯৭০ সালে বা তারপরে। পেপার পত্রিকায় এসেছিল তখন। আমার একটা বন্ধুর বাসা ছিল চায়না বিল্ডিংয়ে। আমি কখনও যাই নাই তবে নাম শুনেছি।

ম্যাকগাইভার সিরিজটা বেশ ভালো ছিল। আমি ১৯৮০ সালের দিকে প্রথম টারজান টিভি সিরিজ দেখি। টারজান বই পড়ি ১৯৮১ সালে।

দূরদেশ সিনেমার কথা মনে আছে। এছাড়া ঐ সময় হীরামন বলে একটা টিভি অনুষ্ঠান হত যেটাতে লোক কথা অভিনয় করে দেখানো হত।

০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:২০

নীলসাধু বলেছেন: আমরা আজিমপুর ছিলাম ৮০ সালের পর হতে। চায়না বিল্ডিঙে আমাদের এক আত্মীয় থাকতেন তার বাসায় যেতাম আমরা। হীরামন ও খুব জনপ্রিয় সিরিজ ছিল। বাংলাদেশের লোককাহিনী গুলো আমরা সেই সিরিজের মাধ্যমেই দেখেছি।


ভালো থাকবেন। শুভকামনা।

৩| ০৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ১:১৯

রিফাত হোসেন বলেছেন: তখনকার সময় টিভি মানেই এক একটা সিনেমা হলের মত উপচে পড়া ভিড়।

০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৯

নীলসাধু বলেছেন: হু। তখনতো টিভি ই ছাড়া দেখার আর কিছু ছিল না তাই এই উত্তেহনা ছিল। তবে এর মাঝেও নির্দোষ ভালো লাগা ছিল।


মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সুন্দর থাকুন।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২৩ সকাল ৯:১৫

মেহবুবা বলেছেন: নিজের শৈশব কৈশোর দেখতে পেলাম যেন। ওয়াইজমুলার অভিনীত এই টারজান ধারাবাহিক বেশী পছন্দের ছিল আমাদের, জেনও দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। আরো টারজান ধারাবাহিক এবং মুভি দেখেছি কিন্তু এটাই সবচেয়ে ভালো লেগেছিল। ওয়াইজমুলার বাস্তবে একজন সাঁতারু ছিলেন অথচ এই ধারাবাহিক এ সত্যি টারজান৷ মনে হোত।
৭৯ সনের কথঅ মনে আছে বায়োনিক ওমে এবং সিক্স মিলিয়ন ডলারম্যান দেখবার জন্য ৯ টার মধ্যে পড়াশোনা শেষ করে ফেলতাম ভাই বোনেরা! কি দিন ছিল! অল্পতেই তুষ্ট, নির্বিকার ¡

০৬ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৭

নীলসাধু বলেছেন: আমরা হয়তো একই সময়ের তাই স্মৃতিগুলো কাছাকাছি লেগেছে আপনার কাছে।
টারজান সিরিজের নায়ক নায়িকাদের মধ্যে এদেরকেই ভালো লাগতো সবচেয়ে বেশি।
মন্তব্যে ভালো লাগা রইলো।
সুন্দর থাকুন।

৫| ০৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৩:১২

আমি সাজিদ বলেছেন: শৈশবের স্মৃতিতে ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।

৬| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৮

বিদ্রোহী পুরুষ বলেছেন: কি চমৎকার লেখা আপনার। চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছিলাম কতক ছেলে ছোকড়া চষে বেড়াচ্ছে পুরো মহল্লা।
আমার শৈশব নব্বইয়ের শেষ আর দুই হাজারের প্রথমে হলেও আপনাদের পুরো দৃশ্যটা যেন ভাসছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.