নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ জীবন সহজ হোক, সরল হোক,সুন্দর হোক...

নিয়ামুলবাসার

সহজ ভাবনাই সরল জীবন..

নিয়ামুলবাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প- জার্নি টু শ্রীপুর

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৩১





“জার্ণি টু শ্রীপুর”

-নিয়ামুল বাসার



(১)

রুটিন জীবনে এমন এক একটা দিন আসে যেদিন কোনও কিছু ভাল লাগে না । কোনও কাজে মনোযোগ দেওয়া যায় না । কেমন যেন শুধু অস্থির লাগে । আজকের দিনটি মারুফের জন্য সেরকম একটি দিন । সকালে ঘুম থেকে উঠেই টের পাচ্ছিল একটা চোরা অস্থিরতা দানা বাঁধছে বুকের মধ্যে । প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এলেই মারুফের এরকম অস্থিরতা শুরু হয় । অস্থিরতা চলতেই থাকে যতক্ষননা তাঁর জন্য সারা সপ্তাহজুরে অপেক্ষায় থাকা প্রিয়জনের সাথে দেখা না হয় ।

মারুফ জেলা পর্যায়ের একজন সরকারী কর্মকর্তা । পোস্টিং মানিকগঞ্জে । বিবাহিত । স্ত্রী গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার একটি গার্র্লস হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন । চাকুরির বাধ্যবাধকতার কারনে স্ত্রীর অন্যত্র বদলী হওয়ার কোন সুযোগ নেই । একজন নবীন কর্মকর্তা হিসেবে মারুফও এর থেকে ভাল পোস্টিং নিতে পারেননি । তাই বাধ্য হয়েই দু’জনকে দুই জায়গায় অবস্থান করতে হচ্ছে । স্ত্রী হাস্না তিন বছরের ছেলে নাফিউল ও একজন কাজের মহিলা নিয়ে থাকেন শ্রীপুরে এবং মারুফ থাকেন মানিকগঞ্জ জেলার একটি সরকারী ব্যাচেলর ডাকবাংলোতে । শুধুমাত্র ছুটির দিনগুলোতে তাদের কাছে আসার সুযোগ হয় । মারুফই প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পিতিবার অফিস শেষ করে শ্রীপুরে চলে যায়, আবার রবিবার সকালে মানিকগঞ্জে চলে আছে । এভাবেই চলছে তাদের প্রতিনিয়ত কাছে আসার লড়াই ।

আজ বৃহস্পিতিবার । সকাল থেকেই মারুফের সেই অস্থিরতা শুরু হয়েছে । কতক্ষনে অফিস শেষ হবে ! কখন অফিস থেকে বের হবে ! কখন বাসে উঠবে ! কখন শ্রীপুরে যাবে ! কতক্ষনে দেখা হবে অপেক্ষায় থাকা প্রিয়জনের সাথে …?

মারুফ ঘড়ির দিকে তাকাল । তিনটা বেজে পাঁচ মিনিট । অফিস শেষ হতে এখনও প্রায় দু’ঘন্টা বাকি । টেবিলের ওপরে রাখা মারুফের মোবাইলটি বেজে উঠে । রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হাস্না গলা শোনা যায়, রওয়ানা হয়েছো ?

- কেবলতো তিনটে বাজে, অফিস শেষ হতে এখনও দু’ঘন্টা বাকি ।

- সকালে তোমাকে বললাম না, আজকে একটু তাড়াতাড়ি রওয়ানা হতে ।

- চেয়েছিলাম তো ।

- তো ?

- জরুরি কিছু ফাইল দেখতে হচ্ছে ।

- তোমার ছেলে তোমার জন্য অস্থির হয়ে আছে । আমাকে বারবার বলছে, আব্বা আসে না ? মোবাইল হাতেই গোপনে মারুফ একটি দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ফেলল ।

- আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি ।

মোবাইল রেখে মারুফ টেবিলে রাখা ফাইল গুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে ।বারবার সে চেষ্টা ব্যহত হয়। মনোযোগ ছিড়ে যায় । মারুফের চোখে-মুখে অস্থিরতার প্রতাপ বাড়তে থাকে।



(২)

ঘড়িতে পাঁচটা বাজে । মারুফ চেয়ার ছেড়ে উঠল । বেল দিয়ে পিয়নকে ডাকল । পিয়নকে বলল, সেলিম কে মটর সাইকেল বের করতে বলো । পিয়নটি চলে যায় ।

সেলিম মটর সাইকেল চালাচ্ছে । মটর সাইকেলের পেছনে বসে আছে মারুফ । মারুফকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে সেলিম চলে যায় । মারুফ মেইন রাস্তায় দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । হাত উচিয়ে একবার ঘড়ি দেখল । একটি বাস আসতে দেখে এগিয়ে যায় । মারুফ হাত উঠিয়ে বাস থামাতে চেষ্টা করে । ড্রাইভার বাস না থামিয়ে মারুফের পাস দিয়ে দ্রুতগতিতে চলে যায় । মারুফ অস্থিরভাবে রাস্তার মধ্যে পায়চারি করতে থাকে । হাত উচিয়ে আবার একবার ঘড়ি দেখল । দুরে আবার একটি বাস এগিয়ে আসতে দেখল । মারুফ দৌড়ে গিয়ে হাত ইসাড়া করে বাস থামানোর চেষ্টা করল । এই বাসটিও না থামিয়ে মারুফকে পাস কাটিয়ে দ্রুত বেগে চলে গেল । মারুফের চোখে-মুখে বিরক্তির ছায়া ।

মারুফ হতাস হয়ে লোকাল বাসের কাউন্টারের দিকে হাটতে শুরু করে । একটি লোকাল বাসের সামনে এসে দাড়ায় । বাসের হেলপাড়টি ডেকে-ডেকে যাত্রী তুলছে । থামরাই-নবীনগড়-সাভার-ঢাকা । বাসের মধ্যে অল্পকয়েকজন যাত্রী বসে আছে । মারুফ বাসে উঠে জানালার পাশের একটি সিটে বসে পড়ে । মারুফ বসে আছে । একজন-দুজন যাত্রী উঠছে । আস্তে আস্তে বাসের সবগুলো আসন পূর্ন হয়ে যায় । বাসের লোকজন অস্থির হয়ে ওঠে । দু’একজন চেচিয়ে ওঠে- এই ড্রাইভার বাস ছাড়ো না কেন ? বাসটি কানায়-কানায় যাত্রী পূর্ন হলে বাস ছাড়ে।

প্রচন্ড গরম পড়েছে আজকে । একটু আগে এক পসলা বৃষ্টি হয়ে গেছে । সেই এক পসলা বৃষ্টি গরমকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেছে । দুরে কোথাও একটা বিদ্যুত চমকানোর শব্দ শোনা যায় ।

লোকাল বাসটি একটা স্টপেজে থেমে আছে । হেলপাড় ডেকে-ডেকে যাত্রী তুলছে । আবার বাসটি চলতে শুরু করে । মারুফ বাসের জানালা দিয়ে দুরে কি যেন দেখছে । মোবাইলের রিং বেজে উঠতেই পকেট থেকে মোবাইল বের করে রিসিভ করে । ওপাশ থেকে হাস্নার কন্ঠ শোনা যায় ।

- তুমি কত দূর ?

- নবীনগড়ের কাছাকাছি ।

- এখনও নবীনগরে পৌছাওনি ?

- আজকে রাস্তায় যে ভীর, ডিরেক্ট বাস পাইনি । লোকাল বাসে উঠেছি ।

- শ্রীপুর পৌছাতে-পৌছাতে রাত বারটা বেজে যাবে ।

- বাজলে কি করার আছে ?

- শোনো, তোমার ছেলে বলছে সে নাকি আঙ্গুর খাবে । জয়দেবপুর চৌরাস্তায় নেমে ওর জন্য আঙ্গুর কিনে নিয়ো ।

- আ্চ্ছা ঠিক আছে । রাখছি ।

লোকাল বাসটি নবীনগড় এসে থামে । হেলপাড় চেচিয়ে বলে ওঠে-এই নবীনগড় । মারুফ বাস থেকে নেমে পড়ে । দুরে আবার একটা বিদ্যুত চমকানোর শব্দ শোনা যায় । বেশ কিছুক্ষন আগে সন্ধা হয়েছে । রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলছে । মারুফ বেস কিছুদূর হেটে এসে একটা লোকাল বাসের সামনে দাড়ায় । বাসের হেলপাড়টি চেচিয়ে বলছে, এই চান্দরা-শফিপুর-কোনাবাড়ি-চৌরাস্তা-গাজীপুর । যাত্রীতে পরিপূর্ণ বাসে মারুফ দৌড়ে উঠে পড়ে । অনেক কষ্ট কসরতের পড়ে দাড়ানোর একটা জায়গা পেয়ে মারুফ দাড়িয়ে থাকে । বাসটি চলতে শুরু করে ।

বিভিন্ন স্টপেজে যাত্রী উঠিয়ে নামিয়ে বাস এগিয়ে যেতে থাকে। ঘামে মারুফের জামা ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে । পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখের ঘাম মুছল । একজন যাত্রী নেমে একটি সিট ফাঁকা হলে মারুফ সেখানে বসে পড়ে । বাসের হেড লাইটের আলোবাদে চারপাশে গাঢ় অন্ধকার।

বাসটি জ্যামের মধ্যে আটকে আছে । থেমে-থেমে চলছে । মারুফ উদাস ভাবে বাসের মধ্যে বসে আছে । গরমে বাসের সবাই অস্থির আচরন করছে । থেমে-থেমে বাস চলছে ।

আবার বাসটি জ্যামে আটকে থাকে । বাসের সব যাত্রীকে হাত দিয়ে নাক বন্ধ করতে দেখা যায় ।

মারুফও হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে । জ্যাম ছাড়লে বাসটি আবার চলতে শুরু করে । মারুফ সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। একসময় জয়দেবপুর চৌরাস্তায় পৌছে যায় ।

মারুফ বাস থেকে নেমে পড়ে । বাইরে তখন গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে । মারুফ গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই হাটতে থাকে । হঠাৎ করে ভাড়ি বৃষ্টি নামতে শুরু করে । বৃষ্টি থেকে বাচতে রাস্তার মানুষ দিকবিদিক ছুটতে শুরু করে । দাড়ানোর মতো কোন জায়গা না পেয়ে মারুফ ভিজতে থাকে । শয়ে-শয়ে মানুষ তখনও নিজ-নিজ গন্তব্যে পৌছানোর জন্য ছুটাছুটি করছে ।

মারুফ ভিজতে-ভিজতেই আরেকটা বাসে উঠে পড়ল । কাক ভেজা অবস্থাতেই বাসের একটা সিটে গিয়ে বসে পড়ে । বাসটি চলতে শুরু করে । সিটে হেলান দিয়ে মারুফ চোখ বন্ধ করে থাকে ।

বাসের হেলপাড়ে এই মাওনা-মাওনা বলে চেচিয়ে উঠে । মারুফের চোখ বন্ধ অবস্থা থেকে খুলে যায় । বাসটি দাড়ালে মারুফ বাস থেকে নেমে পড়ে । নেমে রাস্তা পাড় হয়ে আবার একটা সিএনজিতে উঠে পড়ে । সিএনজিটি চলতে শুরু করে । ঠান্ডা বাতাসে মারুফ কেমন কুকড়ে যায় । সিএনজিটি একটি একতলা বাসার সামনে এসে দাড়ায় । মারুফ ভাড়া দিলে সিএনজি চলে যায় । মারুফ বাসার সামনে এসে দড়জা নক করে । দড়জা নক কড়া মাত্রই হাস্না দৌড়ে এস দরজা খুঁলে দেয় । হাস্না ও মারুফ দুজন-দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে । মারুফ রুমে ঢুকলে দেখে তার ছেলেটি বিছানায় ঘুমিয়ে আছে । মারুফের ভেজা জামা কাপড় ছাড়তে হাস্না সহযোগিতা করে । তোয়ালে দিয়ে পরম যত্নে মাথা মুছিয়ে দিতে থাকে ……



-০-





মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২৭

নিয়ামুলবাসার বলেছেন: এক বসাতেই গল্পটি লিখেছি । গল্পটি লিখতে পেরে খুব ভাল লাগছে । গল্পটি সন্মদ্ধে ব্লগারদের মন্তব্য পেলে খুশি হবো...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.