নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ জীবন সহজ হোক, সরল হোক,সুন্দর হোক...

নিয়ামুলবাসার

সহজ ভাবনাই সরল জীবন..

নিয়ামুলবাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

হায়দারাবাদের ডায়েরী….

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৩:০২


হায়দারাবাদের ডায়েরী….
দীপাবলি উৎসব (২৩/১০/২০১৪)
আজ দেওয়ালি … আজ ছুটি…
প্লান ছিল অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমাবো। সে প্লান খতম হলো সকাল সাতটায় ব্যাচমেট রনজিতের ফোন পেয়ে। রনজিত বলল, পিজিডিআরডিএম ৭ম ব্যাচের সাথে পিজিডিআরডিএম ৮ম ব্যাচের ক্রিকেট খেলা। তারাতারি প্লে গ্রাউন্ডে চলে যেতে। কি আর করা? দশ মিনিটের মধ্যে তৈরি হয়ে দৌড়ালাম ক্রিকেট মাঠের উদ্দেশ্য। খেলা শুরু হলো। ৭ম ব্যাচ প্রথমে ব্যাট করে ১৫ ওভারে করলো ৯২ রান। ৯৩ রানের টার্গেট নিয়ে দিল্লীর আনসুমানকে সাথে করে মাঠে নামলাম ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে। আনসুমান ৫ রান করে আউট হয়ে গেল।এরপর নামলো কুনাল। ২য় বলেই বোল্ড আউট হয়ে ফিরে গেল। এরপর নামলো পন্কজ। সেও আউট হয়ে গেলো। আমি একসাইড আগলে রেখেছিলাম। রাজেস এর সাথে বেস একটা জুটি গড়লাম। রাজেসও আউট হয়ে গেল। এরপর আমার সাথে জুটি বাধতে মাঠে নামলো নিসকাস মেহেরা। এক ছক্কা, এক চার, সিঙ্গেলস-ডাবলে ভালই চলছিল আমার ব্যাট। মাঠের বাইরে থেকে আমার ব্যাচের বন্ধুরা ভালই বাহবা দিচ্ছিল। তারা বাংলাদেশ-বাংলাদেশ বলে চেচাচ্ছিল। বলছিল হাবিবুল বাসার- নিয়ামুল বাসার…।সাত ওভারে আমাদের রান ৪৭। এরপরই অঘটনটি ঘটে গেল…। নিসকাস মেহেরার ভুলের কারনে রান আউট হয়ে গেলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা ৫ রানের ব্যবধানে হেরে গেলাম। হার-জিৎ খেলার অংশ। ব্যাপার না..। ক্রিকেট খেলার যে একটা আনন্দ আছে, সেটাতো পেয়েছি…।
খেলা শেষ হতে-হতে ১১টা বেজে গেল। সকালের নাস্তা করা হয়নি। ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টদের সাথে নাস্তা শেষ করলাম। নাস্তা সেরে কোয়ার্টারে ফিরতে-ফিরতে ১১:৩০টা। কোয়ার্টারে ফিরে গোসল সারলাম। এর মধ্যেই রনজিৎ এসে হাজির। দীপাবলি উৎসব উদযাপন দেখার জন্য বাইরে যেতে হবে। তৈরি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম…
পরিস্কার নীল আকাশ। রোদ আছে। অন্যান্য দিনের মতো সে রোদে খুব বেশি একটা তাপ নেই। এনআইআরডি ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে সোজা সরলরেখা সড়ক দিয়ে হাটতে খুব ভালো লাগছিল। টানা এক সপ্তাহের ফিল্ড ভিজিটের ক্লান্তি ও পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেনটেশান এর চাপ সব কিছু ভুলে গেলাম…।
রাস্তার দু-পাশের প্রত্যেকটি দোকান ও বাড়ি, ফুল ও রঙ্গিন কাগজ দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।দেখতে চমৎকার লাগছিল। আমরা একটা অটো নিয়ে নিলাম। অটো নিয়ে প্রথমে গেলাম মেহেদিপাটনাম। মেহেদিপাটনাম থেকে বানজারা হিলস। বানজারা হিলস থেকে জুবিলি হিলস। হায়দারাবাদ সিটির বিভিন্ন এলাকার নামগুলো খুব সুন্দর। পাহারের নামে নাম।বানজারা হিলস, জুবিলি হিলস। কোনটির নাম আবার সাগর দিয়ে। যেমন হুসেন সাগর, হেমায়েত সাগর ইত্যাদি। যা হোক, জুবিলি হিলস থেকে গেলাম বালাম্মা টেম্পেলে। তেলেঙ্গনায় এই টেম্পেলের খুব নাকি নাম ডাক। আমার বন্ধু রনজিৎ জানালো, তেলেঙ্গনা প্রদেশের প্রত্যেক নব-দম্পতিই বিয়ের পরে প্রথমেই নাকি এখানে আসে পুজা করার জন্য।আজ দেওয়ালি, তাই ধর্মপ্রান হিন্দুরা দলে-দলে এখানে আসছে পুজা করার জন্য।
ঘুরে-ঘুরে সব কিছু দেখছিলাম। আর মনে-মনে ভাবছিলাম; ধর্ম মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার। অথচ সেই ধর্ম পালনের বিশ্বাস ও প্রথায় কত হাজার রকমের প্রভেদ।ভাবলে কোন কুল-কিনারা খুজে পাওয়া যায় না। আমার বন্ধু রনজিৎ জানালো এই টেম্পেল তৈরি করার জন্য এই মূল্যবান জায়গাটি নাকি এখানকার কোন এক বিখ্যাত এমপি দান করেছে। সেই এমপি ও এই টেম্পেলের দেবতার ছবি একসাথে প্রিন্ট করে বিশাল ব্যানার আকারে টাঙ্গানো।
টেম্পেল থেকে বেড়িয়ে হাটতে-হাটতে গেলাম ফিল্মনগর দেখতে । টেম্পেলের পেছণ থেকেই শুরু হয়েছে ফিল্ম নগর। ফিল্মনগরের বৈশিষ্ট হলো এখানে টালিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সকল নায়ক-নায়িকা বসবাস করেন। বিশাল বড়-বড় বাড়ি। বেশির ভাগই ডুপ্লেক্স বাড়ি। দেখলেই প্রান জুড়িয়ে যায়। কি সুন্দর আর্কিটেক্সারাল ডিজাইন। কি নিখুতভাবে সাজানো-গোছানো। দেখে বোঝা যায় এদের টাকা পয়সার কোন অভাব নেই। আমার বন্ধু রনজিৎের মাধ্যমে জানা গেল। টালিউডে প্রতি বছর ১২০-১৩০ টি ছবি মুক্তি পায় এবং স্টার নায়কেরা সিনেমায় আভিনয় করার জন্য সিনেমা প্রতি ২০-৩০ কোটি রুপি নিয়ে থাকেন।
আরও জানা গেল, অন্ধপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গনার মানুষ নাকি সিনেমা পাগল। হলে গিয়ে সিনেমা না দেখলে নাকি তাদের ঠিক মতো ঘুম হয়না। এমনকি এখানকার কোন-কোন এলাকার মানুষ এক সিনেমা চার থেকে পাঁচবার দেখে থাকেন। আরও যে তথ্য জানা গেল, সেটা হলো- অন্ধ্রপ্রদেশ নাকি লিকার কনজামসনের দিক দিয়েও ইন্ডিয়ায় অন্যতম। ফিল্মনগরে বেস কয়েকটি পুরনো ফিল্ম স্টুডিও রয়েছে।
এইসব দেখতে-দেখতে বেশ ক্ষুদা পেয়ে গিয়েছিল। আমরা দুপুরের লাঞ্চ সারার জন্য হোটেল খুজছিলাম। সুবিধামতো হোটেল খুজে বের করে তন্দুরি রুটি ও চিকেন ৬৫ দিয়ে দুপুরের লাঞ্চ সারলাম। লাঞ্চ সেরে আরও কয়েক জায়গায় এলোমেলো ঘুরে বেড়ালাম।
রাস্তায় একটু পরপরই ফুলের দোকান। দেদারছে ফুল বিক্রি হচ্ছে। ফুলের মধ্যে বেশিরভাগই আমার দেশের গাঢ় হলুদ রংয়ের গাদা ফুল। ফুলের দোকানের পাশাপাশি মিষ্টির দোকানেও ভিড় দেখলাম। আর একটা বিষয়, সেটা হলো গতকাল রাত থেকেই থেমে থেমে পটকা বাজির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ইন্ডিয়াতে পটকাবাজি সহজলভ্য। বিভিন্ন রকমের ক্রাকার্স এখানে পাওয়া যায়। মোড়ে-মোড়ে উঠতি বয়সি তরুনেরা ক্রাকার্স ফুটাচ্ছে। কোন-কোনটির শব্দ বিকট। রনজিত বলল, বিকট শব্দ ওয়ালা ক্রাকার্সকে নাকি বাচ্চা ছেলেরা বলে হাইড্রোজেন বোমা।
থেমে-থেমে অবিরামভাবে পটকা বাজি ফুটে চলেছে।সন্ধা হয়ে গেছে। অন্ধকার নামার সাথে-সাথে পটকা বাজি ফোটার শব্দের পাশাপাশি প্রত্যেক বাসার ছাদেই রং-বেরংয়ের আতশবাজির আলোকচ্ছটা দেখা হলো। দেখতে ভালো লাগছিল…
আমরা দুজনে সিনেমা হলে ঢুকলাম তেলেগু সিনেমা দেখার জন্য। আমার তেমন ইচ্ছে ছিল না্। একেতো তেলেগু একেবারে কিছুই বুঝি না। তার উপর তেলেগু সিনেমা মানেই ধুম ধাড়াক্কা মাড়ামাড়ি ও গান। আমার বন্ধু রনজিৎ সিনেমা পাগল। তার ইচ্ছা পূরনের জন্য আমিও ঢুকলাম সিনেমা দেখার জন্য। সিনেমার নাম এওক লাইলিও কসম। ভাষা না বোঝা না গেলেও এটুকু বুঝলাম, সেটা হলো সিনেমাটি লাভ স্টোরি নিয়ে..। তবে মজার ব্যাপার হলো সিনেমা হলের দর্শকেরা সিনেমাটি খুব উপভোগ করছিল। কখনও হাসছিল কখন হাততালি দিচ্ছিল। কখনও কেইবা শিষ দিচ্ছিল…।
সিনেমা শেষ করে আমরা বের হলাম। তখনও রাস্তার মোড়ে, বাড়ির ছাদে নিরবছিন্নভাবে আতসবাজি শব্দ করে চলেছে। আতস বাজির পোড়া কাগজে রাস্তা আচ্ছাদিত হয়ে গেছে। এই পরিমান আতসবাজি পোড়ানো হয়েছে। কোয়ার্টারে পৌছাতে-পৌছতে সারে এগারটা বেজে গেল। কোয়ার্টারে পৌছেই বসে গেলাম হায়দারাবাদের ডায়েরি লিখতে। আজকের দিনের অভিঙ্গতা আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আগামীকাল থেকে আবার ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে…. শুভ রাত্রি……..

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫

এহসান সাবির বলেছেন: শুভ সকাল!!

২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৪

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন: শুভ সকাল।

৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:২০

নিয়ামুলবাসার বলেছেন: এহসান কবির ও স্নিগ্ধ শোভন কে অনেক অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.