নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কর্মীরা কমছে, বাচালরা বাড়ছে

আমি শিক্ষানবীশ এবং কর্মী । সবার কাছ থেকেই শিখছি । সারা জীবনই হয়ত শিখে যাব।

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ

ঊড়ছি কেন!!!!!!!!!!!!! কেউ জানেনা!!!!!!!!!!!!

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আজ চোখের জলে বৃষ্টির অবগাহন

২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:২৪

টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে অনুপ একটা চায়ের দোকানের ছাউনিতে এসে বসল। এই চায়ের দোকানটায় আগে কখনও বসেনি সে। পাঁচ মিনিট হাঁটলেই অবশ্য হালিম মামার টি স্টলে গিয়ে বসা যায়। কিন্তু অনুপ আজ এই দোকানটাতেই চা খাবে। চায়ের দোকানির সাথে সম্পর্কের উপরও চায়ের স্বাদ নির্ভর করে মনে হয়। পরিচিত দোকানের চায়ের স্বাদ একরকম আর অপরিচিত দোকানের অন্যরকম।



এই মামা এককাপ লাল চা দিও, চা দোকানিকে বলল অনুপ।



লোকটা তেমন গ্রাহ্য করল না মনে হয়। অপরিচিত চায়ের দোকানে আসলে এই আরেক সমস্যায় পড়তে হয়। এরা মনে করে অপরিচিত কাস্টমার মানেই তার বানানো চা নিয়ে দুর্নাম করবে।

লাল চায়ের অর্ডার দিয়েছে জন্য হয়ত আরো গুরুত্ব কম দিচ্ছে লোকটা। দোকানটা একদম ফাঁকা, সে সহ মোটে তিনজন বসে আছে তবুও দোকানি এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন রাজ্যের চা বানানোর দায়িত্ব আছে তার উপর।



অনুপ দুধ চা’ই খায়। কিন্তু আজ টাকা নেই। এককাপ দুধ চা পাঁচ টাকা, তার পকেটে আছেই দশ টাকা। ফেরার বাসভাড়া পাঁচটাকা রাখলে পকেটে পাঁচটাকা থাকে। দুধ চা খেলে আর সিগারেট খাওয়ার টাকা থাকে না। অন্যদিকে এখানে লাল চা তিনটাকা কাপ।



অবশেষে দড়াম করে টেবিলের উপর চা দিয়ে গেল দোকানি। অনুপ একটা হলিউড সিগারেট ধরিয়ে আনল। এই সিগারেটটার দাম তার পক্ষে বহনযোগ্য। আর সে যত সিগারেট খায় দামি কোন ব্র্যান্ড হলে সিগারেট ছাড়া আর অন্য কিছু খেতে হত না।



অনুপের হাতে একটা ব্যাগ। দামি কিছু পেনসিল, কয়েকটা খাতা আর ইরেজার আছে ব্যাগটায়। অনুপের ছোট ভাই রুদ্রের জন্মদিন আজ। পাঁচ বছর পূর্ণ হলো ওর। বিশ টাকা দিয়ে ছোট্ট একটা কেকও নিয়েছে সে। আর দুটো মোমবাতি।



অনুপের মা নেই। তিন বছর আগে ক্যান্সারে মারা গেছেন। মা মারা যাওয়ার পরের মাসেই তার বাবা আরেকটা বিয়ে করেছেন। তাদের একটা মেয়েও আছে দুই বছরের। অনুপের বাবা অনুপকে মোটেও দেখতে পারেন না। নতুন মা তো তার সাথে ভিখিরির মত আচরণ করেন। রুদ্রের সাথেও একই ব্যবহার করেন তার বাবা আর নতুন মা। একতলার ছোট্ট একটা ঘরে দুইভাই একসাথে থাকে ওরা। আর বাবা তার নতুন পরিবার নিয়ে দুইতলায়।



ইচ্ছা করেই অনুপ তাদের সাথে দেখা করেনা। দুপুর আর রাতে রুদ্র দুইতলা থেকে দুইজনের খাবার নিয়ে আসে। রুমেই খায় দুইভাই। মাঝে মাঝে তাদের যে এই বাড়িতে এখনও রেখেছে তার নতুন মা আবার খাবার দিচ্ছে সেটাই অনুপের কাছে আশ্চর্যের মনে হয়।



আজ যে রুদ্রের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে চলছে সেটা অনুপ ছাড়া আর কেউ মনে রাখেনি। অথচ মা বেচে থাকতে একবার রুদ্রের জন্মদিন অনেক ঘটা করে পালন করা হয়েছিল। বাবার অফিসের সবাইকে দাওয়াত করেছিল বাবা নিজেই।



-ছোটভাইয়ের বাসা কই?, পাশে বসা অতি আগ্রহী একজন তার দিকে চোখ ফুড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল।

-এইত পাশেই। সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে উত্তর দিল অনুপ।



-এই ছোট বয়সে সিগারেট খাও, বাসায় কছু বলেনা? এই বয়সে সিগারেট খেও না।

এইবার লোকটা অভিভাবকের মত ভ্রু কুকচে বলল।



হঠাৎ অনুপের লোকটাকে খুব ভাল লাগল। লোকটা হয়ত জানেনা তাকে সিগারেট খেতে নিষেধ করার মত কেউ নেই। তবে এমন করে সিগারেট না খাওয়ার কথা কেউ বলেনি তাকে। মা বেচে থাকতে সিগারেট খাওয়া ধরেনি অনুপ।



-আচ্ছা। ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করব।

হাসি মুখে বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে এল অনুপ। আরেকটা সিগারেট নিয়ে পকেটে রাখল। পাঁচটাকা বিল দিয়ে হাঁটা দিল রাস্তায়।



বৃষ্টিটা বাড়ছেও না আবার কমছেও না। টিপটিপ করেই পড়ছে। পিয়ানোর সুরের মত।



হঠাৎ অনুপের মনে পড়ল রুদ্রের আবদারটার কথা। পাঁচবছর উপলক্ষে পাঁচটা একটাকার নোট চেয়েছিল গতকাল। ছেলেটা যেন অন্যরকম হয়ে বেড়ে উঠছে। ঠিক যেমনটা সে চেয়েছিল। অনুপ হিসাব করে দেখেছে দিনে ছয়ঘন্টা বই আর কমিক্স পড়ে রুদ্র। আসলে যে পড়ে তা না, ছবি দেখে। বানান করে পড়তে শিখিয়েছে অনুপ। তবে এখনও বই পড়ে বুঝতে পারে না পিচ্চিটা।



অনুপ পিচ্চিটাকে গল্প শুনিয়েছিল হাতে সারাক্ষণ গল্পের বই থাকলে যা ইচ্ছা তাই পাওয়া যায়। তাই হয়ত সবসময় বই নিয়ে পড়ে থাকে রুদ্র। সে চায় রুদ্র যেন বিশাল একটা মন পায়, একটা বিশাল কল্পনার জগত আর একটা মানুষের হৃদয়। সেজন্যই সে বাবার সামনে রুদ্রকে যেতে নিষেধ করে। অরুপ চায়না ওই কুৎসিত লোকটার একটা বৈশিষ্ট্যও রুদ্রের চরিত্রে আসুক।



এই দোকান সেই দোকান ঘুরেও পাচটা একটাকার নোট পেল না অনুপ। পাঁচটা কয়েন নিয়ে পকেটে পুরল। অবশ্য রুদ্রকে বললে বুঝবে। এই ছোট বয়সেও ছেলেটা অসধারণ বোঝে।



এখন আর পকেটে বাস ভাড়া নেই অনুপের। হেঁটেই যেতে হবে। পিয়ানো থেকে বৃষ্টির ধারা এখন গিটারের রুপধারণ করেছে। পাশের দোকান থেকে একটা পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে কেক আর গিফটের প্যাকেটটা তাতে পুরল।



বৃষ্টি বাড়ছে।



আজরাতটা দুইভাই মিলে দারুণ কাটাতে হবে। গতমাসের টিউশনির একশটা টাকা এখনও ড্রয়ারে আছে। কেকটা কেটে রুদ্রকে নিয়ে বের হতে হবে। চটপটি খাওয়া, ছবি তোলা আরও কত বায়না আছে পিচ্চিটার।



শোয়ার আগে দারুণ একটা গল্পের বই পড়ে শোনাতে হবে রুদ্রকে।

অনেক কাজ পড়ে আছে। ছোটভাইটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন অনুপের। তার ছোটভাইকে সে তার মত করে গড়তে চায়। বিশাল মনের জগত আর বিশাল স্বপ্নের জগতে বাস করা একজন সুন্দর মানুষ হিসেবে।



হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল অনুপ।

হঠাৎ মা’র কথা মনে পড়ছে ওর। বৃষ্টিতে ভেজার গুণটা অনুপ ওর মা’র কাছ থেকে পেয়েছে।



বৃষ্টি এবার তবলার ছন্দে পড়ছে। সাথে অনুপের চোখের জল।

এই বৃষ্টিটা নিশ্চয়ই রুদ্রের জন্মদিনে মায়ের উপহার।



বাড়ি ফিরে রুদ্রকে সাথে নিয়ে ভিজবে অনুপ। আজ চোখ মুছতে ইচ্ছা করছে না ওর।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৩০

এহসান সাবির বলেছেন: ভালো লাগলো অনেক।

২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৩৮

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: থ্যাঙ্কু

২| ২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৩৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: হুমম, মধ্যবিত্ত জীবনের অপূর্নতার গল্প। সন্তান হিসেবে মা এর অভাব এবং বাবার প্রতি ক্ষোভের গল্প।

ভালো হয়েছে। :) তবে বাবার প্রতি ক্ষোভের ব্যাপারটার কারন আরো স্পষ্ট হলে আরো ভালো হত। :)

২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৪০

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: গল্প শেষ হবার পর ভাবছিলাম এটা নিয়ে কিছু যোগ করব। শেষ পর্যন্ত হলো না। :P

ধরিয়ে দেয়ার জ্জন্য থেঙ্কু :)

৩| ২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কিঞ্চিৎ অসম্পূর্ণ কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প।

ভালো লাগা রইল।

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:০৮

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: আমারও খুতখুত লাগছিল। কিন্তু বদভ্যাস একটা কিছু লিখলে দ্বিতীয় বার হাত দিতে ইচ্ছা করে না।

দোয়া রাইখেন বদভ্যাস ছাড়ন লাগব।
আর যে কোন পরামর্শ এই ক্ষুদ্র মানুষকে দিতে দ্বিধা করিবেন না।
ভাল থাকবেন

৪| ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১:১৩

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: জীবনের গল্প ! বাস্তবতার ছায়া ফুটে উঠেছে খুব সুন্দর ভাবে ++

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১:৪২

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: ঠেঙ্কু মিতা
ভাল থাইকেন
পেলাচের জন্য ডাবল থেঙ্কু

৫| ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১:১৭

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: বাবার ব্যাপারটা ডিটেলস আনলে ভাল হত । যদিও সেটাপ সেটা সম্পূর্ণ আপনার বিষয় । যাই হোক ভাল লাগলো এটাই আসল কথা । ভাল থাকবেন ।

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১:৪১

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: পড়ার জন্য থ্যাঙ্কু
ভাল থাইকেন
দোয়া রাইখেন

৬| ৩০ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:৫৮

মামুন রশিদ বলেছেন: টাচি গল্প । চোখ-মন ভিজিয়ে দিলো ।


অনেক ভালোলাগা+

৩০ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৫

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: আবারও থ্যাঙ্কু

৭| ৩০ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:২৮

ফারজানা শিরিন বলেছেন: শুভ কামনা অনুপের জন্য ।

৩০ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:০৪

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: :)

৮| ৩০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩

গ্য।গটেম্প বলেছেন: খুব সুন্দর তো :)

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৮

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: থ্যাঙ্কু পড়ার জন্য

৯| ৩০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮

মেহেরুন বলেছেন: অসাধারন ++++++++++

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৮

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: ধুন্যবাদ মেহেরুন

১০| ৩১ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২২

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো। চালিয়ে যান।

০১ লা জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৭

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: দোয়া রাইখেন
ভাল থাইকেন

১১| ৩১ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৩২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: অনুপ আর রুদ্র - দুই ভাইয়ের এই ছোট যে জগত সেটা খুব সুন্দর। অনুপের মায়ার জগতটা তার ভাইয়ের জন্য সুবিশাল !

ভালো লাগছে গল্প ।

০১ লা জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৮

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: থেঙ্কু অপর্ণা দি
ভাল থাইকেন

১২| ০১ লা জুন, ২০১৩ রাত ১:০৬

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

ভালো লাগলো। চালিয়ে যান। +++++++

০১ লা জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৮

নির্লিপ্ত স্বপ্নবাজ বলেছেন: :) :)
ভাল থাইকেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.