নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাগরণ & বিনোদন (গল্প)

নিশি চৌধুরী

স্বাধীনচেতা ও বিনোদন প্রিয়

নিশি চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে পাওয়া

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৮

ইশা প্রতিদিন বালিশ চাপা দিয়ে কান্না
করে। যাতে কেউ শুনতে না পায়। অনেকেই
বলে কান্না করলে নাকি মন হালকা হয়।
কিন্তু ইশার মন দিনদিন ভারী হচ্ছে। দুঃখ
যেন আগের থেকে বাড়ছে।
.
চোখ মুছে কান্না থামিয়ে মোবাইল হাতে
নিয়ে কাংখিত নাম্বারে কল দিল।
.
- একটু আগেই না কথা বললাম।
> আবার ইচ্ছে হল তাই কল দিয়েছি। একটু
সময় হবে না?
- হুম বল।
> একটা কবিতা শুনাও না? (আকুল আবেদন)
- এখন একটু ব্যস্ত আছি। রাতে শুনাবো।
বাই।
তানিমই কেটে দিল।
.
ইশা তবুও কানের পাশে মোবাইল ধরে
রাখল। কিছুক্ষণ পর আবার বালিশ চেপে
কান্না করতে লাগল।
.
তানিম ইশার আপন মানুষটি। ছেলেটি
প্রতিদিন ইশার কলেজ ছুটির পর ইশার পিছু
নিত। ইশা দুএক বার বারণও করেছিল। কিন্তু
তানিম শুনেনি। যার ফলে একদিন কিছু
ছেলের হাতে মারও খেতে হয়েছিল। যদিও
তাতে ইশার কোনো হাত ছিল না।
মার খাওয়ার পরও তানিম ইশার পিছন
ছাড়েনি।
.
> এইযে এদিকে আসুন।
- জ্বি বলুন।
> কতটুকু ভালবাসেন আমাকে?
- যতটুকু প্রয়োজন।
> আমার সবকিছু বেশি বেশি লাগে।
- দিতে পারব। যদি হাত ধরার সুযোগ দেন।
> ওকে। কাল থেকে প্রতিদিন ভোর পাচটা
বাজে আমার ঘরের বারান্দার নিচে এসে
আমাকে গুড মর্নিং বলবেন। আর স্কুল ছুটির পর পিছু নিবেন না।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
তানিম চলে যেতে লাগল। ইশা আবার ডাক দিল।
.
> এইযে আপনাকে যেতে বলেছে কে?
- না মানে স্যরি।
> এভাবে কত দিন করা লাগবে সেটাও তো
জিজ্ঞেস করলেন না।
- যেদিন আপনার মন জয় করতে পারব সেদিন আপনিই নিজ থেকে বলে দিবেন।
> হুম। খুব ভাল কথা বলতে পারেন। শুনুন
এভাবে ১৫ দিন করবেন। যদি একদিনও লেইট করেন। তবে আর কখনোই সামনে আসবেন না। এই নিন বাসার ঠিকানা।
- আচ্ছা।
.
সেদিন থেকে তানিম যথাসময়ে ইশার
রুমের বারান্দা বরাবর দাড়িয়ে থাকত। ১০দিন হবার পর ইশা অবাক হয়ে গেল।
তানিম একটা দিনও মিস করেনি। অবশেষে
১৫ দিন পর ইশা হার মানলো এবং
তানিমের ভালবাসা গ্রহণ করলো।
.
কথামতো পার্কে বসে আছে তানিম। কিছুক্ষণ ইশাও এলো।
> দেখ তুমি আমার পরীক্ষায় পাস করেছ। তাই কথামতো আমিও রাজি। তবে কখনো আমাকে কষ্ট দিবা না।
তানিম মাথা নেড়ে সাই দিল।
.
তারপর দুষ্টামি শুরু করলো তারা। হঠাৎ
তানিম পা ধরে আউচ করে উঠল। ইশা দেখল পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে।
.
> এটা কিভাবে হল?
- ব্যাথা পেয়ে।
> আচ্ছা তোমার বাসা কোথায়?
- গোলপাহাড়।
> তুমি কি প্রতিদিন সেখান থেকে আমার
বাসার নিচে হেটে হেটে আসতে? মিথ্যা
বলবা না। আমার কসম।
.
তানিম নিশ্চুপ হয়ে গেল। ইশা তার উত্তর
পেয়ে গেল। ইশার চোখে জল এসে গেল। সে তানিমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে
লাগল।
.
> তুমি আমাকে এত ভালবাস?
- এর থেকেও বেশি বাসি।
.
এভাবেই শুরু হল তাদের ভালবাসা। কিন্তু
ইদানিং তানিম আগের মত নেই। একটুও খবর নেয় না। ইশা কল দিলে কথা বলে। নয়তো বলেই না। হঠাৎ তানিম এমন কেন হল তার উত্তর ইশা খুজেই পায় না।
.
ইশা কখনোই তানিমকে অবহেলা করেনি।
তবে কেন আজ তানিম এমন করছে? ইশা
তানিমকে এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেসও
করে না। যদি ব্রেকআপ বলে দেয়। কিন্তু
এভাবে কতদিন?
.
ইশা তানিমকে রাতে কল দিল।
- হুম বলো।
> কাল একটু দেখা করতে পারবে?
- দেখ আমি ব্যস্ত আছি। তাই পারব না।
> প্লিজ তানিম শুধু ১০ মিনিট।
.
অনেক কষ্ট করে তানিমকে রাজি করাল।
পরেরদিন যথাসময়ে ইশা এসে হাজির।
কিন্তু তানিমের কোনো খবর নেই। তামিম
আগে কখনো দেরি করত না। বরং ইশারই
দেরি হত। ইশা কল দিল। কিন্তু বন্ধ। ইশার
চোখ ছলছল করছে। কিন্তু কান্না করছে না।
নিজের মধ্যেই চাপিয়ে রাখছে।
.
প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করার পর
তানিম কল দিল।
> হ্যালো তুমি কোথায়?
- স্যরি আমি আসতে পারলাম না। কাজে
পড়ে গিয়েছি।
> আমি কিছু বুঝি না। আজ যদি তুমি না আসতবে আমি আর ঘরে ফিরব না। এখানেই বসে থাকব।
- তোমার যা ইচ্ছা কর।
তানিম কেটে দিল।
.
ইশা কোণায় বসে কাদতে লাগল। কিছুক্ষণ
পর তানিম আসলো। আসলে সে লুকিয়ে
ছিল।
.
- কি হয়েছে? ডেকেছ কেন?
ইশা ঘুরে দেখল। হ্যা তানিম।
> লুকিয়েছিলে তাই না? (চোখ মুছতে মুছতে বলল)
- কেন ডেকেছ সেটা বল।
> আচ্ছা আমার আগের তানিম কই? যে
আমার জন্য সব করতে পারত।
- নাটক করার জন্য ডেকেছ?
> তুমি আমাকে আর আগের মত ভালবাস না?
.
তানিম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল
- যাক বাবা ভাল হয়েছে। এতদিন পর হলেও বুঝতে পেরেছ।
.
ইশার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। কিছু
বলতে চাইলো কিন্তু এর আগেই তানিম ভাল থেকো বলে চলে গেল। ইশা আটকাতে পারল না। শুধু বেঞ্চে বসে কেদে যাচ্ছে।
.
রাতে বিছানায় শুয়ে পড়ল তানিম। কিন্তু
ঘুম আসছে না। কিভাবে আসবে? বারবার
ইশার কান্নাময় চেহারাটা ভেসে উঠছে
চোখের সামনে। তানিমও ইশাকে
ভালবাসে। কিন্তু ইশার বাবার অর্থের
কাছে তানিমের ভালবাসা হেরে গেছে।
.
ইশার বাবা তানিমকে চাকরি দিয়েছে।
শর্ত ধীরে ধীরে ইশাকে নিজের জীবন
থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তানিমও
পরিবারের খুশির জন্য বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে
গেল। কারণ সেই সময় তানিমের বাবা
হাসপাতালে ভর্তি ছিল। চিকিৎসার
যাবতীয় খরচ ইশার বাবা দিয়েছে। এখন
তানিমের বাবা সম্পূর্ণ সুস্থ। তানিমের
পরিবার গ্রামের থাকে। তানিম শহরে
মেসে থাকে।
.
অতি কষ্টে ঘুমিয়ে পড়ল তানিম। এদিকে
তানিমের বন্ধু তানিমের এই অবস্থা দেখে
ইশাকে সব খুলে বলল। কারণ তানিম ধীরে
ধীরে বাজে অভ্যাস গুলোর দিকে এগুচ্ছে।
খানা দানা কিছুই ঠিক মত করছে না।
.
হঠাৎ রাত ৩টায় ইশার বাবার কল।
- জ্বি আংকেল?
~ বাবা তুমি এখনই ন্যাশনাল হসপিটালে
চলে এস। ইশা সুইসাইড করেছে।
.
কথাটা শুনে তানিমের মনে হল কেউ তার
দুনিয়াটায় বড় একটা ধাক্কা দিয়েছে। দ্রুত
হাসপাতালে গেল। ইশা ওটিতে। কিছুক্ষণ
পর ডাক্তার এসে বলল
= রোগীর পরিস্থিতি তেমন ভাল না।
তানিমের সাথে দেখা করতে চায়।
.
তানিম ভেতরে গেল। ইশার বেডের পাশে
বসলো। ইশার হাত ধরলো। আজ তানিমের চোখের অশ্রু যেন বাধ মানছে না। অনবরত পড়তেই আছে। এতদিনের কষ্ট সব আজ প্রকাশ পাচ্ছে।
.
ইশা কোনো মত কাপতে কাপতে বলল
> একবার বল ভালবাসি। যাওয়ার আগে
অনন্ত এট শুনে যেত পারব।
তানিম ইশার ধরে কেদে কেদে বলল
- অনেক অনেক ভালবাসিরে পাগলী। এই
কাজ কেন করলে?
> বল আর কখনোই আমাকে ছেড়ে যাবে না।
- আর যাব না।
.
ইশা চোখ টিপ মারলো। তানিম বোকা মত
তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কঠিন
পরিস্থিতিতেও এমন করে কিভাবে?
.
> ওই এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
- না কিছু না।
ইশা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
> আমি সুইসাইড করিনি। এসবকিছুই নাটক।
ডাক্তার আমার মামা। আর সুইসাইড করে
রিস্ক নিব কেন?
.
তানিম চড় মেরে দিল।
- ফাজিল মেয়ে।
> আস্তে। বাইরে শব্দ গেলে ধরা খেয়ে
যাব।
.
ডাক্তার এল।
< সব ঠিক আছে?
> হ্যা। নেক্সট রাউন্ড চালু করেন।
.
ডাক্তার বাইরে যেয়ে ইশার বাবাকে
ভেতরে আসতে বলল
.
অতঃপর ইশা তার বাবা থেকে প্রতিশ্রুতি
নেয় যে তানিমের সাথে তার বিয়ে দিবে।
ইশা বাবাও রাজি হয়ে যায়।
.
অতঃপর ডাক্তার সবাইকে বাইরে চলে
যেতে বলে। যেতে তানিম একবার পিছে
তাকালো। ইশা চোখ টিপ মারল + বিজয়ের
দুষ্টু হাসি।
.
কিছু মাস পর তাদের শুভ বিবাহ হয়ে গেল।
এভাবেই ফিরে পেল তারা তাদের
ভালবাসা।
.
লিখাঃ Nishi Chowdhuri (রাত্রির আম্মু)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.