নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাষ্ট্র মামা কিডা? তারে আমি চিনি না।

শাহাদাত নোমান

আমি শুধু রাতের মানুষ!

শাহাদাত নোমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ভাষা নাকি পিজিন!

১৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ২:৩৬

আমাদের চলনে বলনে ও বাংলা ভাষায় ইংরেজী শব্দের যে ব্যাবহার তাতে, আমার মতো ছোট মাথার মানুষের অস্বস্তি এবং আপত্তি দুইই হয়। এ নিয়ে আপত্তি প্রকাশের আগে আমরা বাংলা ভাষায় শব্দ ভান্ডারে উকি দিয়ে দেখবো, গোলাতে ঠিক ক'টা শব্দ আছে! কিন্তু তার ও আগে স্মরন করা দরকার, বাংলা ভাষা ঠিক সংস্কৃত হতে আসে নি। যদিও এ ভাষায় সংস্কৃত ভাষার প্রতাপ বেশি, তবুও এর জন্ম ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর গৌড়ীয় বা মাগধি প্রাকৃতের মধ্যেই। অতঃপর ক্রমে ক্রমে আধুনিক বাংলা ভাষার লাবন্য ফুটে উঠতে, চর্যাপদ পদ হতে নব্যযুগ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে।। সেই তো কত কত পন্ডিত, ভাষাবিদদের বহু বহু সাধনা এবং বায়ান্নর রক্ত দিয়ে এ ভাষা যৌবনে পা দিয়েছে। আর যৌবনে কি না সুন্দর হয়!

হাজার বছরের সাধনার ফল খুঁজতে গিয়ে আমরা টের পাই এক লক্ষ পঁচিশ হাজার শব্দ এ ভাষায় গান করে, কবিতা লেখে, কথা কয়, গল্প লেখে। বাংলাভাষায় লাখের ঘরে টেক্কা দেয়া শব্দ গুলোর দিকে তাকালে মনে হতেই পারে, এ ভাষা কতনা উদার পন্থি! এ ভাষায় পঞ্চাশ হাজার ততসম শব্দ আছে, আরবী আছে আড়াই হাজার, ইংরেজী আছে দেড় হাজার, তুর্কি শব্দ চারশ, পর্তুগিজ-ফরাসী আছে দেড় শ, বাদ বাকি সত্তর হাজার সাড়ে চারশ শব্দ খাটি বাংলা, তদ্ভব এবং অন্যান্য। এতো এতো শব্দের ভীড়ে নিশ্চই নতুন করে বিদেশ থেকে শব্দের আমদানির প্রয়োজন পড়ে না। কারন ভুলে যাওয়া শব্দ একদিন অভিধানও মনে রাখেনা।

এখন আমরা ভাষার কিছু বিবর্তন গত রুপের কথা স্মরন করবো। যেহেতু ভাষা যোগাযোগের সহজাত ব্যবস্থা, তাই আমরা ভাষার কিছু রুপ খুঁজে পেয়েছি যেমনঃ লিংগুয়া ফ্রাংকা, ক্রেওল, পিজিন ইত্যাদি। কিন্তু এখানে আমরা পিজিন ভাষা নিয়েই আলাপ করবো।

পিজিন (Pidgin) শব্দটি ইংরেজী Business শব্দের অপভ্রংশ থেকে উদ্ভব হলেও কোন দেশের ভাষা এ নয়। মুলত এখানে ক্রিয়ার সাধিত রুপের পরিবর্তে ক্রিয়াবাচক অব্যয় ব্যবহৃত হয়। পিজিন ভাষার পরিচয় অত্যন্ত সস্তা। এটাকে বলা হয় মিশ্র ভাষারীতির কৃত্রিম ভাষা। আবার ভাষা বিজ্ঞানী ইয়াসপারসেন একে ধরেই নিয়েছেন সাময়িক ব্যবস্থার ভাষা হিসেবে।
তখনকার ব্রিটিশ আমলে হগ মার্কেটের স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা ব্রিটিশ খরিদ্দারদের সাথে এ ভাষায় কথা বলতেন। যেমনঃ "টেক তো টেক, নো টেক তো নো টেক, একবার তো সী" (নিতে হলে নিন, না নিলে নাই নিলেন, একবার তো দেখুন)। এই হলো পিজিন ভাষার ছিরি! আমাদের ভাষাবিজ্ঞানী সুকুমার সেন একে অপভাষার তকমা লাগিয়েছেন।

আমাদের পাশ্চাত্য আধুনিকতা যখন বাংলার ঘরে ঘরে, তখন টিভি দেখে শয়তান মহাশয় লজ্জায় জীভ কাটেন। সেখানে পরিবর্তনশীল ভাষা কে টিকিয়ে রাখে! হাজার বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে ওঠা বাংলা ভাষার যখন কোন যায়গায় কমতি নেই, তখন কেনো দুইশ বছর পেছন ফিরে গিয়ে পিজিন ভাষায় কথা বলা, কবিতা লেখা,গল্প লেখা?

(২০১৫ সালের ভাবনা। এখনো প্রাসঙ্গিক মনে হয়। সেই সাথে ইচ্ছে করে আরও অনেক ভাবনা নিয়ে আলাপ করি।)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ২:৪৮

অনল চৌধুরী বলেছেন: একটা জাতির ভাষায় অন্য জাতির ভাষার শব্দ তখনই ঢোকে,যখন সিই জাতি অন্য কোনো জাতির দাস হয়।
বাংলা ভাষায় এতো ফারসি-ইংরেজী শব্দ কারণ বাংলা অঞ্চল প্রায় ৫০০ বছর ফার্সী ভাষী এবং ১৯০ বছর ইংরেজদের গোলাম ছিলো।
ফারসি ভাষায় বাংলা ভাষার কোনো শব্দ কি আছে?
বা ইংরেজী ভাষায়????

২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:৩২

শাহাদাত নোমান বলেছেন: দেখুন অনল চৌধুরী, একথা সত্য যে শাসিত জনগোষ্ঠীই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের স্বীকার হয়। কিন্তু ভাষা তো কেবল শব্দের সমাহার নয়, এই ধরুন আমাদের এখানের নদীর ভাষা এবং ফরাসীদের নদীর ভাষা তো এক নয়। আমাদের এখানে মান বাংলা বা প্রমিত বাংলার যে ধরণ তা কেবল সকল অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের সুবিধাজনক ভাষা। কিন্তু এর বাইরেও বাংলার মানুষের সাথে মানুষের বহুরকম যোগাযোগ ঘটে। সেটাও বাংলায় ঘটে। অভিব্যক্তি, ভাব, রস, চিন্তার ভাষা, লেখার ভাষা, বলার ভাষা ইত্যাদি ভাষার ধরণটাও কিন্তু বাংলা। ফলে বাংলাভাষীদের সাথে অন্য কোন ভাষার পার্থক্য চলে না। আসলে এটা বেমানানও বটে! কিন্তু আবার এটাও সত্য যে, বিভিন্ন ভাষার শব্দ এদেশের ভাষাকে ঋদ্ধ করেছে। ফলে এদেশের মানুষের নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য উদযাপন করা যায়। আমার মুখের ভাষায় যখন বাংলা অধিকৃত ফরাসী বা ইংরেজী শব্দ বের হয়, আমি বুঝতে পারি, আমার পায়ের নিচের যে মাটির উপর সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে তা পৃথিবীর বহুজাতের সম্মিলনের প্রচেষ্টা। এই বৈচিত্র্য উদযাপনের সৎ সাহস আমাদের থাকা উচিৎ।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিদিন আমাদের কমপক্ষে দশটা নতুন শব্দ শেখা উচিত। ভাষা যে কি জিনিস তা অন্য দেশে গেলে টের পাওয়া যায়।

২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:৩৩

শাহাদাত নোমান বলেছেন: আমি এখনও অন্য দেশে যাইনি।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:০৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ,বেশ ভালো

২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:৩৪

শাহাদাত নোমান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ রাত ২:২৯

অনল চৌধুরী বলেছেন: আমার পায়ের নিচের যে মাটির উপর সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে তা পৃথিবীর বহুজাতের সম্মিলনের প্রচেষ্ট না ,গোলামীর ইতিহাস,কারণ ১৯৭১এর আগে বাঙ্গালী ১০০০ বছর গোলাম ছিলো।
কোনো বাঙ্গালী দেশ শাসন করতে পারেনি।

১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৯

শাহাদাত নোমান বলেছেন: কেউ শাসন করলে কেউ শাসিত হবেই। এটাই সহজাত। ফিউডাল বাংলায় খাজনা দেয়া নেয়া ছাড়া শাসকদের কিইবা সম্পর্ক থাকতে পারে! কিন্তু শাসক গোষ্ঠির বাইরেও এই ভুখন্ডের লোকের নানা ধরণের অর্জন আছে, এই সাংস্কৃতিক অর্জনকে কিভাবে অস্বীকার করা যায় বলুন!

৫| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ইংরেজি শব্দ মিশিয়ে বাংলা বলা আসলে আমাদের জাতীয় হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ। জাহির করার প্রবণতা সমাজকে ধ্বংস করছে। ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখার জন্য।

৬| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০০

শাহাদাত নোমান বলেছেন: জি, কৃতজ্ঞতা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.