নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক হুমায়ুন আহমেদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১০


বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীপরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক হুমায়ুন আহমেদ। আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ হুমায়ু্ন আহমেদ ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক হুমায়ুন আহমেদের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি তাঁর অন্যতম উপন্যাস। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শক প্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র আগুনের পরশমনি, দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, উড়ে যায় বকপক্ষী, ঘেঁটুপুত্র কমলা উল্লেখযোগ্য। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলিো সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে ২০১২-এ মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দী কারিকর। নন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদ ২০১২ সালের আজকের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বুলভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। আজ তাঁর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমুয়ুন আহমেদের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন তাঁর পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন। ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল ছিল শামসুর রহমান; ডাকনাম কাজল। তাঁর পিতা নিজের নাম ফয়জুর রহমানের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে ‌হুমায়ূন আহমেদ রাখেন। তাঁর অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন বিজ্ঞান শিক্ষক এবং কথাসাহিত্যিক; সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট।

হুমায়ুন আহমদের পিতা চাকুরী সূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছেন বিধায় তিনি দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সব গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ম্যাট্রিক পাশ করার পরে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই বিজ্ঞানে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। হুমায়ুন আহমেদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ৫৬৪ নং কক্ষে তার ছাত্রজীবন অতিবাহিত করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তোমাদের জন্য ভালোবাসা। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একসময় অধ্যাপনা ছেড়ে দেন তিনি৷ শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন এই অধ্যাপক

সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য হুমায়ুন আহমদে ১৯৭৩ সালে লেখক শিবির পুরস্কার, ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার , শিশু একাডেমী পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে মাইকেল মধুসুদন পদক, ১৯৮৮ সালে বাচসাস পুরস্কার , ১৯৯০ সালে হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক, ১৯৯৪ সালে একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪) লাভ করেন। ব্যাক্তিগত জীবনে দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এই কথাসাহিত্যিক। ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথমে গুলতেকিন আহমেদের সাথে বিয়ে হয়। এই দম্পতির তিন মেয়ে যথাঃ বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে অকালে মারা যায়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে তার কন্যা শীলা আহমেদের বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৫-এ গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই শাওনকে বিয়ে করেন হুমায়ুন আহমেদ। এ ঘরে তাদের তিন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। ছেলেদের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।

২০১১-এর সেপ্টেম্বের মাসে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারী চিকিৎসার সময় তাঁর আন্ত্রীয় ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। দীর্ঘ নয় মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে ১২ দফায় কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে অস্ত্রপাচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণ করায় তাঁর অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়। কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে স্থানীয় সময় ১১:২০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হসপিটালে পরলোকগমন করেন বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদপুরুষ। মৃত্যুর পর তাঁকে কে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়। আজ তাঁর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমুয়ুন আহমেদের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০

কাবিল বলেছেন: কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমুয়ুন আহমেদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: ধন্যবাদ কাবিল ভাই
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমুয়ুন আহমেদের
মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা
করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.