![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দীপ্ত টিভিতে একটি সিরিয়াল আপনারা দেখে থাকবেন, "সুলতান সুলেমান"। বাংলায় ডাবিংকৃত এই সিরিয়ালে রাণী "হুররাম সুলতানে"র ভূমিকায় ছিলেন মারিয়েম জারলি। চেহারা পোশাক আর আচারিক উচ্চারণসহ সবদিক থেকে তিনি অভিনয়ে তুরস্কের ৬০০ বছরের প্রাচীন অটোমান সাম্রাজ্যের সফল শাসক সুলতান সুলেমানের সত্যিকারের রাণী হয়ে উঠেন। দর্শকপ্রিয় এই সিরিয়ালে হঠাৎ করেই এই অভিনেত্রীর অনুপস্থিতি এবং তার স্থানে একই চরিত্রে অন্য একজনকে অভিনয়ের ভূমিকায় দেখে এই সিরিয়ালের যারা নিয়মিত দর্শক, আগ্রহী কিংবা প্রশংসাকারী, সকলেই বিস্মিত হয়েছেন। আমিও হয়েছি। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, মারিয়েম জারলির বাবার বাড়ি তুরস্ক, মায়ের জার্মানি। এই সূত্রে মারিয়েম একইসঙ্গে দুই দেশের নাগরিক। কিন্তু থাকতেন মায়ের কাছে-- জার্মানিতে। "সুলতান সুলেমান"-এ অভিনয় করার জন্য ২০১১ সালে তিনি তুরস্কে এসে একটি হোটেলে উঠেন। সেখানে এক প্লেবয় চান এতেশের সঙ্গে প্রেম হয়। তারপর তাদের যা হয়, প্রথম আলো থেকে একটা প্যারার অংশবিশেষ তুলে দিচ্ছি,-
"মারিয়েম বলছিলেন, যখন প্রেমিক চানকে তিনি জানান যে তাঁদের জীবনে সন্তান আসতে যাচ্ছে, তখন প্রেমিকের ভিন্ন রূপ দেখেছেন তিনি। তাঁর ভাষায়, চান এতেশ এ খবর শুনে বলেন যে এই সন্তানের দায়দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন না। তাঁর ঘরে স্ত্রী আর দুই সন্তান আছে।"
বলিউডের তারকা হার্টথ্রুব খ্যাত হৃত্বিক রোশন ও তার প্রেমিকা ও স্ত্রী সুজানের মধ্যকার ১৭ বছরের প্রেমের সম্পর্কে ১৪ বছর বিবাহিত জীবনের চূড়ায় বিচ্ছেদ তুমুল আলোড়ন তুলেছিল বিনোদন জগতসহ বিভিন্ন মহলে। কিছুদিন আগে আমাদের দেশের মিথিলা-তাহসানেরও একই দশা ঘটল! দুদিন পরপরই মডেল, প্লেয়ার, রাইটার, সিঙ্গারসহ বিভিন্ন অঙ্গনে সেলিব্রেটিদের প্রেম প্রণয় বিচ্ছেদ নিয়ে মিডিয়া ও সোশাল সাইটে তোলপাড় চলে। তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে শারীরিক সম্পর্ক, সন্তান গ্রহণ, ভ্রূণহত্যাসহ নানা কাণ্ডে সমাজটা ঘিনঘিনিয়ে ওঠে। এদের বাইরে যে কী পরিমাণ এই ধরনের কিত্তিকম্মে সমাজটা গুলিয়ে ওঠে, নানা কারণে তার পূর্ণাঙ্গ হিসাবও পাওয়া যাবে না।
পৃথিবী যতো আধুনিক হচ্ছে, বিনোদন জগতও ততো উলঙ্গ হচ্ছে। আমরা তরুণরা খুব সহজেই আকর্ষণ বোধ করছি এবং ধ্বংস হচ্ছি। কিন্তু আমাদের মা খালা কিংবা দাদী নানীদের সময়টাতে এই ব্যাধি তেমন দেখা যায় না। পৃথিবী যতো মডার্ন হচ্ছে, এ অভিশাপ ততো প্রকট হচ্ছে। আল্ট্রা মডার্ন ফ্যামিলিগুলোতে এই রকমের এককালীন ভালোবাসার উৎপাত খুবই ভয়াবহ।
এ বিপর্যয়টা একদিনে হয়নি। সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবি (সালাদিন আইয়ুবি। বাল্য নাম ইউসুফ) যখন খৃস্টানদের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন, শেষ ক্রুসেডে খৃস্টানরা চরমভাবে পর্যুদস্ত হল, তখন সমগ্র খৃস্ট জগতের আধ্যাত্মিক গুরু ফ্রান্সের দ্বিতীয় পোপ আরভান বলেছিলেন, অস্ত্রের শক্তিতে কিংবা সমর যুদ্ধে মুসলমানদেরকে পরাস্ত করা দুঃসাধ্য এবং অসম্ভব। তোমরা যদি সত্যিই মুসলমানদেরকে হারাতে চাও, চারিত্রিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধস নামাও।
২০১২ সালের দিকে যখন ইহুদি জায়নিস্ট ও জয়নবাদিরা ফিলিস্তিনে নির্যাতন চালিয়ে ভূমিদখল ও অবৈধ বসতি স্থাপনে খেঁকিয়ে উঠেছিল, (কয়েকদিন আগেও ফিলিস্তিনে লড়াই চলেছে। প্রথমে ইসরাইলি সৈন্যরা শুক্রবারে মাসজিদুল আকসায় মুসলমানদেরকে জুমার নামায পড়তে দেয়নি। পরের শুক্রবারে যখন মুসলমানরা জামাতে শামিল হতে দলবেঁধে হাজির হয়, ইহুদি সৈন্যরা নিরস্ত্র মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় এবং মাসজিদুল আকসার ইমাম সাহেবও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তখন। পথের ভিখারি এই ইহুদিরা আশ্রয় পেয়ে বারবারই আশ্রয়দাতাদের ঘাড়ে অস্ত্র ঠেসে ধরে উচ্ছেদ করে গোটা দেশ দখল করতে চাইছে।) তখন বেশ কয়েকজন পণ্ডিত, যাজক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক এবং সামাজিক ব্যক্তির বক্তব্য, সাক্ষাৎকার ও আর্টিকেল পড়েছিলাম। বেশকিছু আলোচনা পেয়েছি, যার একটা অংশের সারাংশ-- সারাবিশ্বে যৌনতার এমন অবাধ চর্চা ও বিস্তার ছিল না। ইরোপ আমেরিকায় আমরা নারী পুরুষ ভেদাভেদ আড়াল করতে এবং যুবাদেরকে নিজেদের পক্ষ করে নিতে এর প্রচলন ঘটাই এবং ফ্রি সেক্স, লিভটু গেদার, সমকামিতা- মোটকথা যৌনতার গোটা ব্যাপারটাকেই সামাজিক বৈধতার পর্যায়ে নিয়ে ছড়িয়ে দিই। গোটা বিশ্বে অবাধ যৌনতা ছড়িয়ে দেয়ার পক্ষে ভূমিকা রাখি। এর ফলে যেটা হয়েছে, ইরোপ আমেরিকায় দিনে দিনে পারিবারিক বন্ধনগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যখন তখন যার তার সঙ্গে প্রেম হয়, প্রণয় হয়, বাচ্চা হয়, তারপর একটা বিছানা চাদরের রং পছন্দ অপছন্দের জের ধরেও বিচ্ছেদ ঘটে যায়। বাচ্চা বেড়ে ওঠে আশ্রমে, সে জানে না তার বাবা মা কে!! বাবা মায়ের বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে সাময়িক আনন্দের বলী হয়ে সে জন্মায়। কেউ তাকে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তার ভাইবোন আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। সমাজে বেঁচে থাকে আগাছার মতো। যে প্রেমের পরিণতি ডেকে আনে ভয়াবহ নিঃসঙ্গতা কিংবা আত্মহত্যা, আমরা এই সংস্কৃতি থেকে নিস্তার চাই। বহুগামিতার কারণে HIV-এইডস ও ক্যান্সারসহ নিরাময়হীন নানা মারণব্যাধির জন্য আমরাই দায়ী।
.
আমাদের বাংলাদেশের প্রথাবিরোধী লেখক (!) হুমায়ুন আজাদ এবং নারীবাদী লেখিকা (!) তসলিমা নাসরিনের অনুসারীরা বিয়ে প্রথা-নামক সামাজিকভাবে বৈধ ধর্ষণ বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। তাদের যুক্তি, যে সঙ্গমে নারীর আপত্তি কিংবা অসম্মতি নেই, সেটা ভালোবাসার চূড়ান্ত নিদর্শন। যেখানে এর ব্যতিক্রম, সেখানেই ধর্ষণ। বিবাহের মাধ্যমে পুরুষকর্তৃক এই ধর্ষণকে বৈধতা দিয়ে নারীর অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে।
নারী পুরুষের অধিকার থাকবে, যাকে ভালো লাগবে, তার সঙ্গেই শারীরিক সম্পর্কে জড়াবে। ভালো লাগবে না, সম্পর্ক ভেঙ্গে দিবে। বিবাহের কি দরকার!!
এই নারীখেকো সুশীল কেলা বিগ্যানিরা কি পৃথিবীর সর্বত্র প্রেমের উত্তেজনায় ধর্ষিত মারিয়েম জারলিদের দুঃখ বুঝবে?
একজন কেলা বিগ্যানি বলল, আপনারা ধার্মিকরা সেকেলে। আপনি নারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ভোগ করতে পারছেন না বলে এর বিরোধিতা করছেন। আমি বললাম, আপনার বোন, স্ত্রী বা প্রেমিকার নাম্বারটা দিন, আমি তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে আধুনিক হব। বিগ্যানি সাহেব তখনই কেটে পড়েছেন। ভেগে পালাবার আগে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে একবার উচ্চারণ করলেন, "শালা জঙ্গি!"
.
মডার্ন সভ্যতা : ওমর আলী আশরাফ
©somewhere in net ltd.