নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে সুন্দর করে হাসতে জানে না,সে মন খুলে ভালোবাসতে জানে না।

Omar Ali Ashraf

আমি একজন মুসলিম

Omar Ali Ashraf › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাকালের প্রচ্ছদ : ধারণ করে আছে অসামান্যকে

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০

রিভিউ লিখেছেন : ওমর আলী আশরাফ

বই : মহাকালের প্রচ্ছদ
লেখক : সালাহ উদ্দীন আলভী
ইখলাছ আল ফাহীম
ধরন : গল্পগ্রন্থ
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : কামিয়াব ডিজাইন
পৃষ্ঠা : ৬৪
মুদ্রিত মূল্য : ১৬০/-

হাকালের প্রচ্ছদ, না প্রচ্ছদটা মহাকালের? কী সেই প্রচ্ছদ?
জানতে হলে পাঠককে অবশ্যই মহাকাল সম্বন্ধে জানতে হবে। কী সেই মহাকাল?
রহস্য সৃষ্টিতে যথার্থ এবং গভীর মর্ম ধারনে সক্ষম নাম দেখেই বইয়ের কভারে চোখ আটকে যায়। পাঠক পাতা উল্টিয়ে দেখে, একটি করে গল্প চাখে, সব পাতা পাঠ হয়ে যায়, মনটা তবু ভরে না। আহ, কেন শেষ হয়ে গেল! আর কয়টা গল্প লিখলে তেমন কী ক্ষতি হত!

পর্যালোচনা :
দুইজন লেখকের ছয়টি করে বারোটি গল্প আমাদের সমাজের নানা স্তর থেকে উঠে এসে জড়ো হয়েছে এ বইয়ে। "অভিশপ্ত দিনমজুর" কিংবা "একটি রঙিন কম্বল"— কোন গল্পটা পেছনে রেখে অন্য একটা সামনে এনে আলাদা করে বলব, আমি সিদ্ধান্তহীনতার মধুর যন্ত্রণায় ভুগছি।
"ছেলেটা গজগজ করতে করতে চলে গেলো। লোকটির পাশে যাওয়ার মতো মন মানসিকতা আমার আর ছিলোনা। কেবলই কান্না পাচ্ছিলো। ব্যথা-টনটনে মন নিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে চলে আসলাম। বিবেকের আইন নিয়ে গবেষণায় লিপ্ত পৃথিবীটাকে তখন প্রশ্ন করতে মন চাইলো, কবে শেষ হবে তোমার থিসিস? কবে গামছাওয়ালারা তাদের গালে ছুড়ে দেয়া থাপ্পড়ের বদলে কান্না নয়, ফিরিয়ে দিতে পারবে আরেকটি থাপ্পড়, বলতে পারো?
কবে অভিশপ্ত এই দিনমজুরগুলো তোমার চোখে প্রদর্শিত হবে জাতির সৌভাগ্যের তিলক হয়ে, বলবে?"

প্রথম গল্পেই আমরা কিছু ম্যাসেজ পাই। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। বাবার বয়সী রিকশাচালক মুরব্বিকে এক ছোকরার হাতে অনবরত থাপ্পড় খেতে দেখে আমরা থ হয়ে যাই। তারপর উপরের কোটেশন বুকের ভেতর দড়ফড়াতে থাকে শেলবিদ্ধ জন্তুর মতো।
আমরা পরের গল্পে যাই। "গুমের অন্তরালে শিরোনাম নিয়ে গল্পটি নির্মাণ করেছে তিক্ত সত্য। এখানে আমরা নম্র ভদ্র রোমানকে ডিবিপুলিশ চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যেতে দেখি। কী ঘটতে যাচ্ছে, কী ঘটতে যাচ্ছে? উত্তেজনা নিয়ে সামনে এগোই। রোমানকে নির্যাতন এবং পুলিশের তৈরি করা প্রশ্নে জর্জরিত হতে দেখি। তবু রোমান মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেয় না। পুলিশ কিছুই প্রমাণ করতে না পেরে শখানেক বই আর ডজন দুয়েক পিস্তল সামনে দিয়ে জঙ্গি ট্যাগ লাগিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
পুলিশের রোমানকে জঙ্গি বলার পেছনে মোটাসোটা তথ্য হল দাড়ি-টুপি।

আমরা আরও সামনে এগুই। ফরিদা নামের বোরকার আড়ালে চুরি-সত্ত্বা বিস্তারে দক্ষ মহিলা থেকে সাবধান হই। পরের গল্পে ক্যান্সারে আক্রান্ত নীলুফার জন্য মনটা কেঁদে ওঠে। সায়মুন এসেছে ছোটবোনের পক্ষ থেকে অটোগ্রাফ নিতে। তার সঙ্গে উত্তম পুরুষে লেখা গল্পের প্রধান চরিত্রটি নিজের কাজের ছেলে মানিককে দিয়ে দেয়াটাও পাঠককে রোমাঞ্চিত করে। আমরা পাতা উল্টাতে উল্টাতে কখনও আনিসুজ্জামান ও মুহিত, কখনও আবুবকরে হারিয়ে যাই। সামনে এগুই, "খুন" গল্পের রাতুল হয়ে হাঁটতে হাঁটতে " শাদা প্রজাপতি"তে সুরমার "Now She Is Not A Virgin..."-এ এসে রাস্তা থেমে যায়। লেখকদের এ পর্বে গল্প বলা শেষ।

সমালোচনা :
এ বইয়ের সমালোচনায় যতো অপরাধ, আমরা দুই শ্রেণির ব্যক্তিকে নির্দেশ করতে পারি।
১. লেখকদ্বয়। লেখকদের দুর্বলতা কিংবা অপূর্ণতা এখানে আসবে।
২. সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রকাশক, ডিজাইনার, বিন্যাসকরা এখানে নিন্দিত হবেন।

"মহাকালের প্রচ্ছদ" গল্পের বই। গল্প সাহিত্যের প্রধানতম শাখা। গল্পের গাঁথুনি, নির্মাণে সৃজনক্ষমতা, উপস্থাপনায় শৈল্পিক ভঙ্গি প্রভৃতির বিবেচনায় নিরূপণ হবে এই গল্পগ্রন্থ কতটুকু সাহিত্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ভাষার সৌন্দর্য বিস্তারে "মহাকালের প্রচ্ছদ" আমাকে সামান্যই মুগ্ধ করতে পেরেছে। গল্প নির্মাণে ক্ষমতা, বুননে নিপুণতা পাঠক হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করেছে এবং চিন্তার জগতে একটা স্থান করে নিয়েছে।
বইটিতে মুদ্রণপ্রমাদ প্রকটভাবে চোখে পড়ে। শব্দবিন্যাসক এখানে দোষী। পাঠক বারবার থেমে যেতে বাধ্য হয় শুধু মুদ্রণপ্রমাদের অত্যাচারে।
প্রতিটি গল্পের সঙ্গে কার্টুন এনিমেশন যুক্ত করা হয়েছে। বাচ্চাদের বই ভেবে বিভ্রান্ত হতে হয়। শুধু মনে হচ্ছিল বাচ্চাদের ইংরেজি বই the jungal book কিংবা the gruffalo পড়ছি। কার্টুনে বাচ্চামি, গল্পে গাম্ভীর্য নতুন সমালোচনা উস্কে দেয়।

বইয়ে গল্পের ভেতর বোদ্ধামহলে খুঁটিনাটি কিছু বিষয়ে ভয়ংকর প্রশ্ন জাগে।
"রসকষহীন সমাজচিত্র" গল্পে দুটি দৃশ্যপট চিত্রায়ন করা হয়েছে, দুটি চরিত্রই রিকশাচালক এবং উভয়টিরই মোরাল রিকশাচালকদের ঠকানো। গল্প নির্মাণের পরীক্ষায় লেখক এখানে ফেল নিশ্চিত। তিনি সমাজে অবহেলিত এবং নির্যাতিতদের মধ্যে রিকশাচালক ছাড়া কখনও কি আর কারো সাক্ষাত পাননি?
'বিচিত্র বিজ্ঞাপন "সুন্দরী মহিলা হোমটিউটর আবশ্যক"' গল্পে আছে, "বিকেল তিনটা থেকে পরেরদিন ভোর পর্যন্ত আঁখির শরীরের উপর দিয়ে বয়ে যায় মহাপ্রলয়। একসময় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ছেলেগুলো কখন কীভাবে পালিয়েছে তার জানা নেই। পরবর্তীতে জানা যায়, ওরা সপ্তাহ দিন আগে এখানে এসেছিলো। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার নাম করে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়।"
প্রশ্নটা এখানেই? ব্যাচেলররা ভাড়ায় থাকছে, আবার বাসার সামনে বিজ্ঞাপন টাঙিয়েছে "সুন্দরী মহিলা হোমটিউটর আবশ্যক"। বাড়িঅলা কিংবা মহল্লার কারো মনে কি প্রশ্ন জাগেনি, ব্যাচেলরদের হোমটিউটর কেন? আবার হতে হবে সুন্দরী মহিলা!
অবশ্য লেখক পরের বাক্যে লিখেছেন, "কিন্তু তাদের আচরণ কোনো শিক্ষার্থীর আচরণের সাথে মেলাতে পারেনি আশপাশের বাসার লোকজন।"
এই বাক্যে উপরে তোলা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সামান্য কোশেশ হলেও তা প্রশ্নটাকে আরও তীক্ষ্ণ করে, ছেলেগুলোর আচরণ বখাটে মনে হওয়ার পরেও কেন তারা "সুন্দরী মহিলা হোমটিউটর আবশ্যক" বিজ্ঞাপন দেখে কোনো ব্যবস্থা নেননি?!
"পরিবর্তন" গল্পে মায়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমরা একটি ছেলের পরিবর্তন দেখি। সে অন্যায়কর্ম ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। চমৎকার। কিন্তু গল্পকার পৃথিবীতে এতো এতো নাম থাকতে তার জন্য একটি নাম নির্বাচন করতে পারলেন না! তাছাড়া গল্পটি উত্তম পুরুষে লেখা। বিভিন্ন গল্পে উত্তম পুরুষ চরিত্রের আঁতলামোটা সত্যি বিরক্তিকর। সাধারণ পাঠক এসব ক্ষেত্রে গল্পকার নিজের গুণগান গাইছে মনে করে বিভ্রান্ত হয়।

বইটিতে মোট বারোটা গল্প। শক্ত নরম কোনো ত্রুটি চোখে পড়লেই মনে ওঠে, লেখকদ্বয় নবীন এবং এটি তাদের প্রথম বই। পৃথিবীর যেকোনো বিখ্যাত লেখকের সেরা বইটিও ত্রুটিমুক্ত নয়। এই নবীন ও তরুণ বয়সী লেখকদের প্রথম বইতে কিছু ত্রুটি থাকায় বরঞ্চ ভালোই হয়েছে, আলোচিত সমালোচিত হয়ে লেখকরা শক্তিশালী সাহিত্য নির্মাণে অজেয় হয়ে ওঠার ফুরসত পাবেন— এ বিশ্বাস দৃঢ় আস্থা রেখে করতেই পারি।

ইতিকথা :
একটি বইতে দুজন লেখকের বারোটা গল্প। প্রতিটি গল্পের প্রেক্ষাপট, চরিত্র ও উপাদান যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনই সবকটি গল্পই নির্মিত হয়েছে নোংরা সমাজটাকে উপজীব্য করে। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার, সবকটি গল্পই বইয়ের নাম "মহাকালের প্রচ্ছদ" গাম্ভীর্যকে আশ্রয় করে শক্তপোক্তভাবে নামের মান রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। এ পয়েন্টে নম্বর দেয়া হলে আপনাকে দুজন লেখককেই দশে দশ দিতে হবে।
সমাজ, সভ্যতা, বাস্তবতারা বিচিত্র ভঙ্গিতে উঠে এসেছে মহাকালের প্রচ্ছদে। প্রতিটি গল্পের আয়তন, ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং অভিনব ধাঁচ পাঠককে ক্লান্ত হতে দেয় না। বিষাদ, যন্ত্রণা, হাহাকার সুখপাঠে ব্যাঘাত ঘটায় না। গল্পের অধুনিক ধারা পুরোপুরি রক্ষা করা না গেলেও এই গল্পগুলোকে বোদ্ধামহল ছুঁড়ে ফেলার সাহস দেখাতে পারবেন না, এ কথা জোর গলায় বলতে পারি।
সবিশেষে বলি, "মহাকালের প্রচ্ছদ" শুধু নামের গাম্ভীর্যতা-ই পাঠকের মন দখল করে রাখার জন্য যথেষ্ট হলেও প্রতিটি গল্পই পাঠককে ভাবাবে, প্রেরণা যোগাবে, চিন্তার জগতে আলোড়ন তুলবে, নিজেকে সংশোধনের উপায় বাতলে দিবে, সমাজ সংস্করণের কথা বলবে এবং পাঠককে আগলে রাখবে পৃথিবীর যাবতীয় কলুষ থেকে।

.
ওমর আলী আশরাফ
শিক্ষার্থী ও লেখক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.