![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখেও তবু দেখছি না তো অন্যায়-অবিচারের দ্বন্দ্ব, কেউ শুধালে যাচ্ছি বলে আমি আসলে অন্ধ।
চিত্রকর্ম: La mort de Cèsar by Vincenzo Camuccini
জুলিয়াস সিজার, দিগ্বিজয়ী রোমান শাসক ও সেনাপতি, আইনসভায় তার আসনে গিয়ে বসেছেন কেবল। কক্ষে কয়েকশত সিনেটর উপস্থিত যারা সবাই তার বিশ্বস্ত লোক। সভা শুরুর আগে Tillius Cimber নামে এক সিনেটর সিজারের সাথে কথা বলার জন্য আসেন। সিজারের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে কিছুক্ষণ কথা বলেন। এরপর ফিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান। কিন্তু Cimber সভার সবাইকে অবাক করে দিয়ে সিজারের আলখাল্লা টেনে ধরে সিজারকে তার আসনের সাথে চেপে ধরেন। সাথে সাথে এগিয়ে আসেন Publius Casca, যে কিনা সিজারের আরো একজন বিশ্বস্ত সিনেটর, তার ছোরা দিয়ে সিজারের ঘাড়ে আঘাত করেন। ততোক্ষণে সভাকক্ষ বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গেছে। প্রায় ৬০ জনের মতো সিনেটর জুলিয়াস সিজারের হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তার গায়ে একে একে ২০ টির অধিক ছুরিকাঘাত করা হয়। তার আলখাল্লা তার নিজের রক্তে, নিজের রক্তের গন্ধে মেখে যায়। জুলিয়াস সিজারের হত্যাকারীদের মধ্যে ছিলেন Marcus Brutus- যে কিনা সিজারের বন্ধু এবং বিশ্বাসভাজন লোকের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। আক্রমণকারীদের মধ্যে যখন Brutus কে দেখতে পান তখন সিজার বলেন "Kai su teknon", ইংরেজিতে যার অর্থ দাড়ায় "You too, my child?" এটিই সিজারের শেষ বাক্য ছিলো।
এই ঘটনা খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ সালের ১৫ই মার্চের। বিশ্বাসঘাতকতার মধ্য দিয়ে একের পর এক যুদ্ধ জয় করে সাম্রাজ্য বিস্তৃত করতে থাকা জুলিয়াস সিজার শত্রুদের হাতে নয়, বরং তার বিশ্বাসভাজন লোকদের দ্বারা খুন হন।
বিশ্বাসঘাতকতা সবসময়ই কাছের লোকদের থেকে আসে। কথায় বলে "ঘরের শত্রু বিভীষণ।" শত্রুরা কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না। শত্রুদের উপরে বিশ্বাস থাকেনা, তাই তাদের কাজকর্ম বিশ্বাসঘাতকতার মধ্যে পরেও না আসলে। কিন্তু কাছের লোকদের প্রতি বিশ্বাস থাকে। শত্রুদের ব্যাপারে সাবধান থাকা যায়, বন্ধুদের ব্যাপারে কখনো সাবধান থাকা যায়না। বন্ধুদের ব্যাপারে আস্থা থাকে তারা কখনো আমাদের ক্ষতির উদ্দেশ্যে কোন কাজ করবে না। এদের ব্যাপারে সাবধান থাকা যায় না। তাই বিশ্বস্ত লোকদের থেকে যে আঘাত আসে তা প্রতিরোধ করা যায়না, আন্দাজ করা যায়না। এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ ও বিধ্বংসী। জুলিয়াস সিজার যে কিনা ইতিহাসের একজন শ্রেষ্ঠ জেনারেল ও কৌশলবিদ ছিলেন, সে তার বিশ্বাসভাজনের কাছেই নাস্তানাবুদ হয়েছেন।
কিন্তু আসলে বিশ্বাস কি? বিশ্বাস হলো অন্যের উপরে আস্থা রাখার আত্মবিশ্বাস। একে আস্থা রাখার সিদ্ধান্তও বলা যেতে পারে। কারণ আপনি সচেতন বা অবচেতনভাবে নিজেই ঠিক করেন কে আপনার বিশ্বাস রাখার যোগ্য। বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে লোকজনের কাজকর্ম বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে। ব্যক্তির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজকর্মের সমন্বয়ে বিশ্বাসের ভিত মজবুত বা দুর্বল হয়। কারো কাজকর্ম থেকেই মূলত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করা যাবে কিনা। এই সিদ্ধান্ত পূর্বের মতোই হতে পারে সচেতন অথবা অবচেতন ভাবে। কারো উপরে বিশ্বাস স্থাপন করা হলে তার প্রতি আমাদের ধারণা থাকে, আশা থাকে- যদি তার কখনো আমার ক্ষতি করার সুযোগ আসে, তাহলে সে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এমন আচরণ করবে না যাতে আমার কোন প্রকারের ক্ষতি হয় বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। যেকোনো সু-সম্পর্কের জন্য বিশ্বাস একটি মৌলিক ভিত্তি হিসেবে থাকে। বিশ্বাস ছাড়া কোন সু-সম্পর্ক গঠিত হতে পারেনা এবং টিকে থাকতে পারে না।
কারো উপরে বিশ্বাস থেকে আসে সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ। অবিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ পাশাপাশি থাকতে পারে না। যেকোনো সম্পর্কে কোন প্রকারের অবিশ্বাস বা সন্দেহ চলে আসলে সেই সম্পর্ক ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। হাজার বছরের বিশ্বাস ভেঙে যায় মুহূর্তের কাজের মধ্য দিয়ে। সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তি হলো বিশ্বাস, বিশ্বাস না থাকলে সম্পর্কের অন্যান্য ভিতগুলোও একে একে ভেঙে পরে। যাদের আমরা বিশ্বাস করি, তাদের বিশ্বাসঘাতকতা বা প্রতারণার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি চিরতরে বদলে যায়। বিশ্বাস অর্জন করা সহজ, কিন্তু বিশ্বাসঘাতকের পক্ষে বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা কখনোই সম্ভব হয় না।
বিশ্বাসঘাতকের জন্য দ্বিতীয় সুযোগ বলে কিছু নেই। যে একবার বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, সে দ্বিতীয়বার করতে দ্বিধা করবে না। মানুষ বদলায় না কখনো, পরিস্থিতির কারণে সাময়িকের জন্য পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু মৌলিকভাবে মানুষের চিন্তা-ভাবনা অপরিবর্তিত থেকে যায়। এবং ক্রান্তিকাল শেষে তার আসল রূপ আবার ফিরে আসে। মানুষের চরিত্র হলো স্থিতিস্থাপক বস্তুর মতো, চাপে পড়ে বদলায়, চাপ শেষে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। বিশ্বাসঘাতকের জন্য দ্বিতীয় সুযোগ বলে কিছু নেই, দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া নিছক বোকামি কেবল। বিশ্বাসঘাতকের চেয়ে আমার শত্রু আমার অধিক ভালো বন্ধু।
©somewhere in net ltd.