নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুপ্তির সাথে পরিচয় হওয়ার ঘটনাটা আমার কাছে এখনও কেমন যেন লাগে । এখনও মনে হয় ঐদিন যদি আমি ওকে বাসের সিট ছেড়ে না দিতাম তাহলে হয়তো আমাদের জীবনের গল্পটা আজকে অন্য রকম হত । কিন্তু অন্য রকম কিভাবে হবে ! আমাদের গল্প যে এভাবেই লেখা হয়েছে !
বড় মগবাজারে আমি টিউশনী থেকে বাসায় ফেরার জন্য যেখানে বাসের জন্য অপেক্ষা করতাম সেখানেই সুপ্তির সাথে আমাদের প্রতিদিন দেখা হত ! আমি যখন পড়ানো শেষ করে বাসের জন্য অপেক্ষা করতাম সেও অপেক্ষা করতো । দেখতাম একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে । কিন্তু কোন দিন কথা হয় নি । একদিন বাসে খুব বেশি ভীড় ছিল । কোন মতে আগে উঠে পড়লাম । ভাগ্য ভাল হওয়ার মগবাজার মোড়ে না আসতেই একটা সিটও ফাকা হয়ে গেল আমি যে সিট টার কাছে দাড়িয়ে ছিলাম । বসে পড়তেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা ঝাকিতে এদিক ওদিক ঝুকে যাচ্ছে ।
আমি উঠে গিয়ে মেয়েটাকে বসতে দিলাম । ব্যস আমার মনে আর কিছু ছিল না । ফার্মগেট আসতেই বাসের অনেকেই নেমে গেল । মেয়েটার পাশের সিট টাও ফাকা হয়ে গেল । মেয়েটা আমাকে রীতিমত ডেকে সেই ফাকা সিটে বসালো । বসে মেয়েরা স্বাধারনত এমনটা করে না । সিট ছেড়ে দিলে সেই উপকারের কথা তারা মনে রাখে না বরং এমন একটা ভাব করে যেন সেই সিটে আসলে তারই বসার অধিকার ছিল আমি অবৈধ ভাবে সেখানে বসেছি । যাক এই মেয়েটা সেরকম নয় জেনে ভাল লাগলো !
বাস যখন আড়ং এর মোড়ে আটকে আছে তখন মেয়েটার সাথে টুকটাক কথা বললাম । নাম কি করে এই সব । মেয়েটা আগ্রহ নিয়ে বলল এবং আমারটাও শুনলো ! ব্যস ওখান থেকেই শুরু ! তারপর প্রতিদিনই আমাদের দেখা হত । মেয়েটার একটা প্রাইভেট কোম্পানীর রিসিপ্টশনিষ্ট ছিল । তবুও সব কাজ শেষ করে বের হতে হতে রাত নয়টা বেজে যেত । অফিসের সবাই বের হলে তার বের হওয়ার উপায় ছিল না । ঠিক যখন আমি বের হতাম টিউশনী থেকে ।
আমরা একসাথে ওয়্যারলেস মোড়ে দাড়ানো থেকে বাসে মোহাম্মাদপুর আসা পর্যন্ত গল্প করতাম । নিজের কথা বলতাম ! বিশেষ করে যেদিন থেকে আমি আমার জীবনের গল্প করলাম ওর কাছে সেদিন থেকেই ও যেন আমার সাথে আরও বেশি বেশি কথা বলতে শুরু করলো ।
আমারও খারাপ লাগতো না । আমার প্রেমিকার তখন সবে মাত্র বিয়ে হয়ে গেছে । আমারও কারো সাথে কথা বলতে পেরে খারাপ লাগতো না ! দিনা মানে আমার প্রাক্তন প্রেমিকা যার সাথে আমি বাসার অমতেই পালাতে চেয়েছিলাম । বাসা থেকে বেরও হয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছিলাম । বাবা আমাকে হুমকি দিয়েছিল যে আমি যদি ঐ মেয়ের সাথে যাই তাহলে আমার জন্য তার ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে । আমি তবুও বাসা থেকে বের হয়ে এসেছিলাম । মেট্রিকের পর কোন দিন বাবার উপর নির্ভরশীল ছিলাম বলেই হয়তো সাহসটা আমার ছিল । কিন্তু ঐদিন দিনা এল না । আমি একা একাই ট্রেনে উঠে ঢাকায় চলে এলাম । পরে জানতে পারলাম আমার বাবাই না দিনার বাবাকে ফোন কে দিনাকে আটকানোর কথা বলেছিল । দিনা আর বের হতে পারে নি বাসা থেকে । বাবার উপর রাগ করে আর কোন দিন বাসায় যায় নি । তারও বছর খানেক পরে দিনার বিয়ে হয়ে যায় ! আমি একা একা ঘুরতে থাকি ।
তারপর সুপ্তির সাথে আমার দিনের পর দিন কথা হতে থাকে । মেয়েটা যে একেবারে বিশ্ব সুন্দরী ছিল সেটা আমি বলবো না । তবে মেয়েটার ভেতরে কিছু একটা ছিল যেটা আমার ভাল লাগলো । আর দুজনের যেহেতু মোহাম্মাদপুরেই থাকতাম শুক্রবারে দুজন এলাকার দোকানে ফুসকা চটপটি খেতাম !
একদিন আমি কিছু আচ করতে পারলাম । সেদিন আমার পড়ানোর সময় সূচিতে একটু পরিবর্তন আসার কারনে ঘন্টা দেড়েক পড়ে বের হলাম পড়ানো থেকে । তখন সাড়ে দশটা বেজে গেছে ! আমি অবশ্য আগে থেকেই ওকে মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আজকে যেন ও আমার জন্য অপেক্ষা না করে । আমার বের হতে দেরি হবে । কিন্তু যখন ওয়্যারলেস মোড়ে এলাম তখন অবাক হয়ে দেখলাম সুপ্তি মুখ শুনকো করে দাড়িয়ে আছে । আমাকে দেখে একটু মুখটা উজ্জল হয়ে এল !
আমি কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম
-এখনও অপেক্ষা করছো কেন ?
-তোমার সাথে যাবো !
-তোমার কি মাথা খারাপ নাকি ! এতো সময় দাড়িয়ে থাকার দরকার ছিল কোন । বললাম না যে আমার দেরি হবে !
সুপ্তির মুখটা আবার কালো হয়ে গেল । অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । আমার কেন যেন মনে হল ও কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে । আমি একটু বেশিই জোড়ে কথা বলে ফেলেছি ! আমি প্রবল বিশ্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । আমরা যে বাসে করে যাওয়া আসা করতাম ততক্ষনে সেই বাস বন্ধ হয়ে গেছে । ওকে নিয়ে রিক্সায় চড়লাম । রাস্তা ঘাট প্রায় ফাকা হয়ে গেছে । পুরো রাস্তা ধরে ও কোন কথা বলল না । কেবল আমার হাত ধরে বসে ছিল । বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে !
তারপর এক শুক্রবারে সব কিছু আরও একটু বেশি ওলট পালট হয়ে গেল । আমাকে সুপ্তি আমাদের এলাকার ঘোরোয়া মিনি চাইনিজে নিয়ে গল । আমি খানিকটা অবাক হয়েছিলাম তবে কিছু বললাম না । তারপর ও যখন বলল যে ওর ইচ্ছে যে আমাদের জীবনটা এরপর থেকে এক সাথে চলুক তখনও আমি আকাশ থেকে পড়লাম আরেকবার । দিনার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমি এই ব্যাপারটা মাথা থেকে সরিয়ে রেখে ছিলাম ।
-আমি কিভাবে বিয়ে করবো ?
-আমাকে পছন্দ না তোমার ?
-আরে পছন্দ হবে না কেন ? কিন্তু বললেই তো আর বিয়ে করা যায় না । তোমার তো একটা চাকরি আছে । আমার তো তাও নেই । টিউশনি করে দিন চলে !
-টাকা তো কম আয় কর না আমার থেকে !
-তা করি না কিন্তু সেটার তো স্থায়ীত্ব নেই । আজ আছে কাল নেই । তখন কি হবে !
-সেটা তখন দেখা যাবে ! দুজন মিলে আমার অনেক টাকা আয় কি ! চল্লিশের কাছাকাছি ! দুজনের জন্য এনাফ ! এটা কোন অযুহাত না ! তবে আমাকে যদি পছন্দ না হয় তাহলে অবশ্য আমি কিছু বলবো না !
আমি কি করবো বুঝলাম না । আমার পরিচিত অনেকেই বিয়ে শাদী করে ফেলেছে । আমার এসবের চিন্তা নেই দেখে ওসবের দিকে যায় নি । কিন্তু আজকে !
আর কিছু না ভেবে সুপ্তিকে বিয়ে করেই ফেললাম । আর কেউ না কেবল আমরা দুজন বিয়েতে হাজির হলাম । একবার মনে হল বাসায় জানাই তারপর মনে হল জানিয়ে কি হবে ! কোন দরকার নেই ।
বিয়ের পর দুজন আলাদা আলাদা থাকলেও পরের মাসেই মগবাজারেই একটা ছোট্র দুই রুমের বাসা ঠিক করে ফেললাম । আরও ভাল করে বললে সুপ্তিই বাসাটার খোজ বের নিয়ে এল । কবুতরের খোপের মত দুটো ঘর, একটা বাধরুম, একটা ছোট্ট রান্না ঘর সাথে ছোট একটা বারান্দা ! ব্যাস আর কিছু না । কিন্তু আমাদের জন্য অনেক কিছু । কিছু টাকা আমার হাতে ছিল, সেটা দিয়ে ঘরের জন্য আসবার পত্র কিনে ফেললাম । ছোট একটা ফ্রিজ একটা আলনা ! জুতার র্যাক !
কি বলবো জীবন কেমন চলছিল তবে যেমন চলতে শুরু করলো সেটা আমি কোন স্বপ্নেও ভাবিই । ছোট বাসার ভেতরে সুখের কোন অবাব ছিল না । টাকা পয়সারও অভাব ছিল । সুপ্তি ঠিকই বলেছিলো দুজনের যা খচর হতো তার থেকে আমরা দুজন একটু বেশিই আয় করতাম !
সকাল বেলা সুপ্তি অফিস চলে যেত । তবে যাওয়ার আগে আমার জন্য রুটি বানিয়ে তারপর যেত । আমি একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে রান্না করতাম । দুপুরে ও অফিস থেকে চলে আসতো এক সাথে খাওয়ার জন্য । তারপর বিকেলে আমি বের হতাম টিউশনীর জন্য । এসে দেখতাম ও রান্না করছে । ছুটির দিন গুলোতে আমরা বেলা করে এক সাথে শুয়ে থাকতাম । এক সাথে রান্না তারপর বিকেলে ঘোরাঘুরি । সত্যি বলতে কি জীবনটা এতো চমৎকার হবে কোন দিন ভাবতেও পারি নি ।
ওর মত মেয়ের সাথে এভাবে পরিচয় তারপর জীবনটা এভাবে এগিয়ে চলা !
আমি যতই সুপ্তির সাথে দিন কাটাতে শুরু করলাম ওকে যেন আস্তে আস্তে চিনতে শুরু করলাম । চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে হলেও একটা ব্যাপার আমি ঠিকই পরিস্কার বুঝতে পারতাম যে ও ভেতরে ভেতরে খুব জেদি । এবং ও জেদটা আমার সাথেই দেখাতো । সুপ্ত আগ্নেওগিরির মত ছিল ওর জেদটা । সব সময় দেখাতো তবে একবার শুরু হয়ে গেলে সেটা আর থামানো মুশকিল হয়ে যেত ।
সেটা আমি বিয়ের চার মাসের মাথায় টের পেলাম । টিউশনী সেদিন ছিল না । আমার অন্য এক জায়গায় একটু কাজ ছিল । আরও ভাল করে বললে কয়েক জনের সাথে দেখা করার কথা ছিল । এর মাঝে এমন একজন ছিল যাকে আমি এক সময় পছন্দ করতাম যদিও আমাদের মাঝে কোন দিনই কিছু হয় নি । অনেক আগের ঘটনা । আমি সব কিছুই সুপ্তিকে বলতাম এটাও ও জানতো । ও যখন শুনলো অন্য সবার মাঝে ঐ মেয়েটাও আছে তখন ওকে আমাকে বলল আমি যেন না যাই । এমন না আমাকে যেতেই হবে । তবে আমি সেদিকে কান দিলাম না ।
যাওয়ার আগে আরও বেশ কয়েকবারই বলল আমি যেন না যাই । কিন্তু আমি না শুনেই চলে গেলাম । রাতে বাসায় ফিরে দেখি মহারানী মুখ অন্ধকার করে আছে । আমার সাথে ঠিক মত কথা বলল না । রাতের খাবারের সময় দেখলাম ও কিছুই খেল না । আমার মনে হল হয়তো আগেই খেয়েছে তাই এখন খাবে না । কিন্তু পরদিন দুপুরেও ও খেতে এল না তখন একটু চিন্তায় পড়লাম । এমনতো করে না ও । ফোন করলেও ও রিসিভ করলো না । সন্ধ্যায় আমি টিউশনীতে গেলাম না । ও যখন বাসায় আসলো তখন দেখি ওর মুখটা শুকিয়ে এতো টুকু হয়ে গেছে । চেহারা দেখেই মনে হল ও সকাল থেকে কিছু খায় নি ।
আমি জোর করে খাওয়াতে গেলাম কিছুইতেই খেল না । আরও ভাল ভাবে জিজ্ঞেস করতেই বেরিয়ে এল যে আসলে সকাল থেকেই না গতকাল দুপুর থেকে না খেয়ে আছে আমার উপর রাগ করে । কত করে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়েও ওকে খাওয়াতে পারলাম না তো কিছুতেই । আমি কেন ওর কথা না শুনে চলে গেলাম ! এটাই ছিল ওর জেদের কারন !
শেষে আর না পেরে আমি নিজেও বললাম যে আজ থেকে আমারও খাওয়া দাওয়া বন্ধ । এখন থেকে ঠিক যত ঘন্টা না খেয়ে থাকবে তত দিন আমিও না খেয়ে থাকবো ! তারপর বিছানায় শুয়ে পড়লাম !
ঘন্টা খানেক না পাড় হতেই দেখলাম ওর রাগ কমে এল । ও নিজে খেতে বসলো । সেই সাথে আমি নিজে আরও ভাল করে বুঝলাম সুপ্তি আসলে কেমন মেয়ে । নিজে জেদ ধরে নিজের উপর কষ্ট দিবে !
তারপরেও ছোট খাটো ভাবে ও আমার উপর রাগ করতো তবে সেটা সামলে নিতাম । সবার উপর মেয়েটা আমাকে যে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতো সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হত না । আর আমাকে ভালবাসে বলেই তো আমার উপর জেদ ধরে আমার সাথে রাগ করে ! এই মেয়েটার জন্য আমার কেন জানি অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে । বিয়ে করলে যে মানুষের চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আসে সেটাও আমার মাঝে দেখা দিল । আমি চাকরীর জন্য জোর প্রচেষ্টা শুরু করলাম । ওর সাথে জলদি জলদি রাতে ঘুমিয়ে পড়তাম । রাতে জলদি ঘুমানোর ফলে সকালে তাড়াতাড়ি উঠেও পড়তাম । তারপর চাকরির পড়া শুনা চালাতাম এক টানা ! এভাবেই দিন যাচ্ছিলো । আস্তে আস্তে সুফল পাওয়াও শুরু করলাম । আরও মাস ছয়েক যেতে না যেতেই আমি চাকরি পাওয়া শুরু করলাম । সব ধরনের চাকরিতে এপ্লাই করতাম । চাকরি পেলেও আসলে আমরা দুজনেই অপেক্ষা করছিলাম একটা ভাল চাকরি পাওয়ার অপেক্ষাতে ।
এভাবেই দিন যাচ্ছিলো তখনই একদিন অস্বাভাবিক একটা ঘটনা ঘটলো । ও সকাল বেলা অফিসে চলে গেছে । আমি বসে বসে পড়ছি । এমন সময় আমাদের বাসার দরজায় কড়া নড়ার শব্দ পেলাম । একটু অবাক হলাম । আমাদের বাসায় কেউ ই আসে না । তাহলে এখন আবার কে এল ? দারোয়ান কি কোন কাজে এসেছে ?
কিন্তু দরজা খুলে বেশ অবাক হয়ে গেলাম । একজন স্যুট পরা মাঝ বয়সী মানুষ আমার সামনে দাড়িয়ে । আমার দিকে তাকিয়ে আছে । হাতে কিছু একটার প্যাকেট ! আমি বললাম
-বলুন কাকে চাই ?
আমি এই ভদ্রলোকে যে আগে কোন দিন দেখি নি সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ! সুপ্তির পরিচিত কেউ ? লোকটা আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি সুপ্তির হাজব্যান্ড ?
আমি বললাম
-হ্যা ! আপনি ?
লোকটা একটু ইতস্তত করলো । তারপর বলল
-আমি ওর বাবা !
আমি একটু ধাক্কার মত খেলাম । প্রায় এক বছর হয়ে গেছে আমাদের বিয়ের । তবে এর মাঝে কোন দিন ও ওর বাবা মায়ের ব্যাপারে একটা কথাও আমাকে বলে নি । প্রথমে আমি একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম তবে ও জবাব না দিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলো । তারপর থেকে আমি আর দ্বিতীয়বার জানতে চাই নি !
আমার শ্বশুর মশাইয়ের দিকে আমি আরেকবার ভাল করে তাকালাম । সে যে বেশ অবস্থা সম্পন্ন মানুষ সেটা আমি বুঝতেই পারছিলাম । আমি ওনাকে ভেতরে আসতে বললাম । উনি ভেতরে এল । আমাদের বসার ঘরে ছোট শোফার উপর ওনাকে বসতে দিলাম । বসতে বসতে উনি বললেন
-তুমি খুব অবাক হয়েছে আমাকে দেখে ?
-আসলে ও কোন দিন আপনাদের কথা আমাকে বলেই নি ! আমি জানতামই না ওর কেউ আছে কি না !
সুপ্তির বাবাকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখলাম । তারপর বললেন
-সুপ্তি আসবে কখন ?
-দেরী আছে । ও দেড়টার আগে আসবে না ।
-আমি যে এসেছি ও যেন না জানে !
-কেন ?
-আসলে ও আমার সাথে রাগ করে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে । আমার মেয়ে তো আমার মতই জেদী । প্রচন্ড জেদ ! প্রথমে ভেবেছিলাম কোথায় আর যাবে ফিরে আসবে ! কিন্তু ও ফিরে আসে নি আর !
-ও !
-তারপর যখন বুঝতে পারলাম ও আর ফিরে আসবে না তখন পাগলের মত ওকে খুজতে শুরু করলাম । গত তিন বছরের ওকে দুইবার খুজেও পেয়েছিলাম দুই বারই ও আবার পালিয়ে গেছে । এইবার আর তাই ওর কাছে যায় । খবর পেলাম ও তোমাকে বিয়ে করেছে !
আমি কি জানতে চাইবো বুঝতে পারলাম না । তারপর একটা কথা মনে হতেই বললাম
-ও কিসের জন্য পালিয়েছিলো বাসা থেকে !
-আসলে দোষ যে আমার ছিল না বলবো না । এখন মনে হয় আমারই দোষ ছিল । ছোট বেলা থেকেই ওকে আমি আমার মত করে মানুষ করতে চেয়েছি । নিজের ইচ্ছে গুলো ওর উপর চাপিয়ে দিয়েছি । তখন ভুলে গেছিলাম যে ও আমার মেয়ে ওর ভেতরে জেদ থাকবে । ও চুপ করে থাকলেও আসলে আমার উপর আস্তে আস্তে ওর প্রচন্ড অভিমান জন্মেছিলো । তারপর যখন ও পড়ালেখা শেষের আগেই আমি ওকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইলাম তখন সেই জেদটা বের হয়ে এল । ও বাসা ছেড়ে চলে এল ! আর ফিরে যায় নি !
আমার সুপ্তির বাবার জন্য খারাপই লাগলো । তিনি আরও বেশ কিছু সময় থাকলেন । আমার সাথে অনেক কথা বললেন । সুপ্তির অনেক ছবি দেখলেন ! তারপর যাওয়ার সময় সেই প্যাকেট টা আমার হাতে দিয়ে বললেন ও চকলেট খুব পছন্দ করে । ওকে যেন আমি এগুলো দেই আস্তে আস্তে । আর কোন ভাবেই যেন ওকে না জানাই যে উনি আমার কাছে এসেছিলেন ! আমি কথা দিলাম যে বলব না !
তারপর থেকে সুপ্তির বাবা আমাকে নিয়মিত ফোন দিতেন । আমিও কথা বলতাম । কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো ওর বাবার কথা সুপ্তির কাছে বলা উচিৎ । ভদ্রলোক যথেষ্ট সময় কষ্ট পেয়েছেন নিজের এক মাত্র মেয়ের কাছ থেকে দুরে থেকে । আমি কেবল সুযোগের অপেক্ষাতে ছিলাম । তেমন সুযোগ একটা চলেও এল । যে ভাল চাকরিটার অপেক্ষা করছিলাম সেটার কল চলে এল ।
রাতের বেলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওকে জড়িয়ে যখন শুয়ে পড়লাম তখনও ওকে বললাম
-একটা কথা বলব । রাগ করবা নাতো ?
সুপ্তি আমার দিকে মুখ করে শুয়ে বলল
-রাগ করবো কেন ? তবে ঐ বদ মেয়ের কথা বলবা না !
আমি হাসলাম । তারপর বললাম
-আজকে সকালে আমার একটা চাকরি কল এসেছে !
কোম্পানীর নাম আর স্যালারীর কথা বলতেই সুপ্তি চিৎকার করে উঠলো । তারপর আমার বুকে একটা ছোট করে কিল মেরে বলল
-এটা এতো সময় আমার কাছে লুকিয়ে রেখেছো ! তুমি খুব খারাপ ! আজকে আমরা রাতে বাইরে খেতাম !
-এক সাথে সেলিব্রেট করার আরও অনেক সময় আছে ! বুঝলে ।
-হুম ! আমি জানতাম তুমি এক দিন ঠিকই পারবে !
-এটা তোমার জন্যই ম্যাডাম ! তোমাকে বিয়ে না করলে হয়তো এমন কথা আমার মনেও আসতো না ।
সুপ্তি আমাকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল
-হুম হয়েছে । বুঝলাম ! কালকে আমরা তোমার জন্য কেনাকাটার জন্য বের হব ! ঠিক আছে !
-নাহ ! কালকে আমরা অন্য কোথাও যাবো ?
-কোথায় ?
-তোমার বাবার বাসায় ।
আমি ভেবেছিলাম সুপ্তি চমকে উঠবে । তবে সে চমকালো না ! আমি অবাক হলাম ! তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলালম
-তুমি জানতে আমার সাথে দেখা হয়েছে ?
সুপ্তি কিছুটা সময় চুপ থেকে বলল
-কবে থেকে দেখা হয়েছে জানি না । তবে যেদিন থেকে ওয়্যারডোরফের ভেতরে লুকানো চকলেট গুলো দেখেছি সেদিন থেকে জানি । বাবা আমার জন্য প্রতিদিন চকলেন নিয়ে আসতো !
সুপ্তি তখনও আমাকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে আছে । ওর চেহারা আমি দেখতে পাচ্ছি না । তবে আমার মনে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । আমি বললাম
-তোমার বাবাকে যথেষ্ঠ শাস্তি দেওয়া হয়েছে । আমার মনে হয় এখন তাকে তোমার মাফ করে দেওয়া উচিৎ !
সুপ্তি অনেকটা সময় কোন কথা বলল না । তারপর বলল
-ঠিক আছে ! এখন আমি চাইলেও তো আগের মত গায়েব হয়ে যেতে পারবো না । তুমি আমার সাথে আছো । তবে তুমি নিজেও তোমার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ঠিক করবে বল !
একটু হেসে বললাম
-করবো !
সেদিন রাতে আমরা প্রায় না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলাম । এতো দিন যে সুপ্তি আমাকে ওর ফ্যামিলির ব্যাপারে একটা কথাও বলে নি সেই সুপ্তিও আমাকে কত কথাটা যে বলল ! আমাদের সামনের জীবনটা যে আরও চমৎকার হতে যাচ্ছে সেটা আমার কিংবা সুপ্তির কারো বুঝতেই অসুবিধা হল না !
জীবনটা আসলেই এভাবে এক জনের সাথে জড়িয়ে যায় । এভাবেই এগিয়ে চলে । সুপ্তির সাথে আমার ভাগ্যই লেখা ছিল নয়তো এভাবে ওর সাথে পরিচয় হত না । না হলে সুপ্তির জেদও হয়তো কোন দিন কমতো না ! সব কিছুর জন্যই উপর ওয়ালা কিছু না কিছু ঠিক করে রেখেছেন । কেবল সঠিক সময়ের অপেক্ষা !
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২৬
অপু তানভীর বলেছেন: আসলে গল্পটা ফেসবুকে শেয়ার করা আর এখানে যারা পড়েছে তাদের অধিকাংশই ফেসবুকের । এইজন্যই হয়তো মন্তব্য নেই !
২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫১
নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: এই চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের শিকার আমিও, আজ সারা জীবনের চাপা ক্ষোভ এক সাথে ঝেড়ে দিয়েছি দুইজনের উপরেই। আজ সন্ধ্যা ব্যাপক মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: ঘটনা কি !!!
কার বিয়া ?
৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫১
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: একটু খটকা, মগবাজারে টিউশনি থেকে বাসে উঠার সময় আবার বসে উঠে মগবাজার না আসতেই সিট পেয়ে যাওয়া হয়তো আমারই ভুল।। ভেঙ্গে দেবেন কি?? আর আসলেও এতবার পড়ার পরও কারো মনেই হলো না কিছু বলতে!! এতই কৃপন আমরা??
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২৮
অপু তানভীর বলেছেন: আসলে মগবাজার এলাকাটা বিরাট বড় । আমি যে রুটের কথা বলছি সেটা বড় মগবাজার, ওয়্যারল্যাসের কাছ থেকে আর সিট পেয়েছে মগবাজার মোড়ে গিয়ে । আমি এই রুটে চলাচল করি তো তাই এভাবে লিখেছি । তবে একটু ঠিক করা দরকার !
৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০০
হোসাইন সজীব বলেছেন: বরাবরের মতই আরেকটা ভাল গল্প
ধন্যবাদ অপু ভাই :*
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩২
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৫| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০
রাতু০১ বলেছেন: সরল সুন্দর।
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৬
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কেবল সঠিক সময়ের অপেক্ষা !
বরাবরের মতোই দারুন ভাল লাগা ++++++++
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৭
অপু তানভীর বলেছেন: সঠিক সময়ের অপেক্ষা । একদম ঠিক কথা !
৭| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১২
আমিই মিসির আলী বলেছেন: অপেক্ষা।
তবে ভেবে চিন্তে...
লেখা ভালো লাগছে।
+++
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৫
অপু তানভীর বলেছেন: ভেবে চিন্তে তো অবশ্যই !
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
৮| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:২৪
আমি মাধবীলতা বলেছেন: ভালো লেগেছে !
নিশি কি হারিয়ে গেছে অপুভাই... ?
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৫
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।
নিশির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে
৯| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১৭
পেপার রাইম বলেছেন: ভাবছি মগবাজারের দিকে একটা টিউশনি নিবো আবার ঢাকা এসে,যদি সুপ্তির মত কাউকে পেয়ে যাই।
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৩
অপু তানভীর বলেছেন: দেখেন পেয়ে যান কি না ! আমি তো এখনও পাইলাম না
১০| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬
সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: ভালো লাগলো
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৭
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
১১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:০৫
খাঁজা বাবা বলেছেন: সুন্দর
আপনি যেন আবার পালাবেন না
গল্প লিখতে থাকুন
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩২
রাফা বলেছেন: Already 160 person who read this story, but none of them comments anything.
Are they really busy or no one understand anything.
I'm really surprised.