নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ জীবন এগিয়ে চলে ....

০১ লা মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:২১

তৃষা ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বলল

-ড্রাইভার চাচা ।

-জি মামনি !

-আপনি এখান থেকে বাসায় চলে যান । আমি আমার এক বন্ধুর কাছে যাবো ।

-কিন্তু মামনি .....

ড্রাইভার কি বলল তার পুরোটুকু শোনার আগেই তৃষা গাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লো । সোজা হাটা দিল ওদের থেকে দুই গাড়ি পাশে একটা কালো প্রাডোর দিকে । ওর বুকের ভেতরে কেমন একটা অচেনা অনুভুতি হতে শুরু করলো । এইটা আগেও ও অনুভব করেছে । তৃষা আরও দ্রুত পা চালালো । এখন যদি সিগনালটা ছেড়ে দেয় তাহলে আবার কবে দেখা হবে কে জানে !

তৃষার গাড়িটা এতোক্ষন কাটাবন সিগনালে বসে ছিল । তৃষাও চুপচাপ বসে ছিল কানে হেডফোন লাগিয়ে । ঠিক তখনই পাশের গাড়ির কাঁচ দিয়ে একেবারে শেষের গাড়ির দিকে নজর গেল । কিছুটা সময় কোন কথা বলতে পারলো না । ড্রাইভিং সিটে অপু বসে আছে । চুপচাপ গম্ভীর মুখে । এতো দুর থেকেও ওর চেহারায় একটা দুশ্চিন্তার রেখা ঠিক ঠিক দেখা যাচ্ছে । এখান থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ।

তখনই তৃষার মনে হল ছেলেটার সাথে কথা বলা দরকার । ছেলেটা বলেছিল যোগাযোগ রাখবে কিন্তু একেবারে যেন কোন খোজ খবর নেই । যে নাম্বারটা ছিল সেটা সব সময় বন্ধ থাকে ।

বেশ রোদ উঠেছে । তৃষার চোখে অবশ্য কালো রোদ চশমা টা লাগানোই আছে । তৃষা সোজা গিয়ে কালো প্রাডোটার দরজা খুলে সামনের সিটে উঠে বসলো । বসেই তাকালো অপুর দিকে ।

অপুর গাড়ির দরজা খুলতেই সতর্ক হয়ে উঠেছিলো কিন্তু সামলে নিলো নিজেকে । ওর দিকে তাকিয়ে আছে একটু অবাক হয়ে । এখানে ওকে কোন ভাবেই আশা করে নি । তৃষা পেছনে তাকিয়ে দেখে পেছনের সিটে তিনজন বসে আছে । একজনে সে খুব ভাল করে চেনে । বাবুল নাম তার । অন্যজনে চেনে না । মাঝে একটা ৭/৮ বছরের ছেলে । চোখ বন্ধ করে আছে । এমন ভাব করে আছে যেম ঘুমাচ্ছে । কিন্তু তৃষা ভাল করেই জানে যে ছেলেটা ঘুমাচ্ছে না । তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে ।

তৃষা বাবুলের দিকে তাকিয়ে বলল

-কেমন আছো বাবুল ?

বাবুল দাঁত বের করে হাসলো ।

-জে আফা মনি ভালা আছি ! আপনে ভালা ?

-আর ভাল কই ? তোমার ভাইয়ের খবর কি ?

এইকথা শুনে বাবুল যেন খুব মজা পেল দাঁত টা আরও বিস্তৃত হল । এপাশের জন্য এতোক্ষন খানিকটা ভয়ে ভয়ে ছিল কিন্তু তৃষা এদের পরিচিত দেখেই পেশিগুলো শিথিল হয়ে এল । ঘুমন্ত ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অপুর দিকে তাকালো আবার ।

-কোথা থেকে তুললেন একে ?

-কেন ?

-জানতে চাইছি !

-আজিমপুর থেকে !

-কোথায় নিয়ে যাবেন ?

-গাজীপুর !

-আমাকে যেখানে নিয়ে গেছিলেন ?

-হুম !

-আমিও যাবো !

তৃষা কিছুটা সময় তৃষার দিকে তাকিয়ে তারপর বলল

-না ! তুমি এখনই নেমে যাবে । সিগনাল ছেড়ে দিবে এখনই !

-জি না, আমি নামবো না । দেখি আপনি কিভাবে নামান !

অপু কোন কথা না বলে তাকিয়েই রইলো মেয়েটার দিকে । এখনও ঠিক আগের মতই জেদি রয়েছে মেয়েটা । নিজের কাছেই একটু যেন অসহায় বোধ করলো । এমনিতেও টেনশনে আছে । যাকে তুলে এনেছে সে খুব বড়লোকের ছেলে । খবর ছড়িয়ে পড়তো খুব বেশি সময় লাগবে না । এর আগে যদি সেফজোনে ঢুকতে না পারে তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে । তার উপরে কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না । এখন এই মেয়ে এসে হাজির । কোথা থেকে খোজ পেল কে জানে !

অপু খুব ভাল করেই জানে একে কোন ভাবেই গাড়ি থেকে নামানো যাবে না । শেষে নামতে গেলেই উল্টো ঝামেলা পাকাবে ! আরও কিছু চিন্তা করছিলো কিন্তু আর আগেই সিগনাল ছেড়ে দিলো । অপু গাড়ি ছুটালো শাহবাগের দিকে । ওখান থেকে ফার্মগেট হয়ে সোজা গাজীপুরের দিকে যেতে হবে ।

যখন গাড়িটা কোল্ডপার্ক রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশ করলো তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে । তৃষা এতোটা সময় কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলো তখনই বাবার ফোন এসে হাজির ।

-কোথায় তুমি ? গাড়ি থেকে ওভাবে নেমে গেছ কেন ?

-আব্বু আমি এক বন্ধুর বাসায় আছি ।

-তুমি এখনই বাসায় আসবে ! বল কোথায় আছো ?

-না বলবো না !

-দেখ তুমি কিন্তু আর ছোট্ট মেয়ে নেই । এরকম ছেলেমানুষী করবে না ।

-এক্সজেক্টলী । আমি এখন আর ছোট্ট মেয়ে নেই । আমি নিজের দেখাশুনা নিজে করতে পারি । তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না । আমার বন্ধুর কাছে আছি । ফিরতে রাত হবে । নাও ফিরতে পারি !

-তৃষা .......

তৃষা তার বাবার চিৎকার শুনতে পেল কিন্তু আর শোনার দরকার বলে মনে করলো না । লাইন কেটে দিয়ে ফোনটা বন্ধ করে দিল । তারপর গাড়ি থেকে নেমে পড়লো একা একাই । তৃষার এটা নিয়ে দ্বিতীয়বার এখানে আসা । এর আগে অবশ্য যখন প্রথমে এসেছিলো তখন পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল । ওর পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকানো ছিল তার মুখে মেডিক্যালে টেপ আটকানো ছিল যাতে কথা না বলতে পারে ।

এখানে নামিয়ে ওকে একটা সামনের বাংলোর বাড়ির একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছিলো । আজকে এই ছেলেটার হাত যদিও বাঁধা নেই তবে তৃষা জানে ওকে ঐ ঘরেই আটকে রাখা হবে । তারপর তার বাবার কাছে মোটা অংকের টাকা চাওয়া হবে । যেমন টা ওর বাবার কাছে চাওয়া হয়েছিল ।

তৃষা আর অপুর ব্যাপারটা আসলেই অন্য রকম । অপুর ঠিক ওকে প্রথমে ভাল করে দেখে নি । বাবুলই ওকে জোর করে গাড়িতে তুলেছিল মুখে ক্লোফর্ম আর মুখে টেপ দেওয়ার কাজটাও বাবুলই করেছিলো । কিন্তু যখন তৃষাকে ঘরের ভেতরে আটকে রাখার পর অপু ওর মুখের টেপটা খুলে দিল তখনই খানিকটা ধাক্কার মত খেলো যেন ।

খুব পরিচিত একটা মুখ । কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো মেয়েটার মুখের দিকে । তানিয়ার চেহারার সাথে মেয়েটার চেহারার অদ্ভুদ একটা মিল আছে । তানিয়ার সামনে চুল চলে আসতো সব সময় এই মেয়েটারও ।

রাতে যখন তৃষা খেতে চাইলো না তখন অপু নিজে থেকে এগিয়ে এসে খাওয়াতে । তবুও কিছুতেই খাবে না সে । মুখ খুলে দিয়েছিলো তাই এক মুখ থুথু ছিটিয়ে দিলো অপুর মুখের দিকে ।

অপু একটু অবাক না হয়ে পারলো না । আগেও এরকম কাজ করেছে সে । এখানে ধরে আনার পরে সবাই কেমন ভয়ে সিটিয়ে থাকে । অথচ এই মেয়ে কেমন জেদ ধরে আছে । একটু ভয় পাওয়া তো দুরের থাকুক গায়ের জোর দেখাচ্ছে । কিন্তু অপু কিছু করতে পারছে না । শেষে অপু বলল যে খাওয়ার পর সে নিজে তাকে বাসায় দিয়ে আসবে । এখনই । কিন্তু আগে খেতে হবে ।

এতো সহজে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে সেটা তৃষা ভাবতেও পারে নি । খাওয়া শেষ করে ওর হাতকড়া খুলে দেওয়া হল । যখন গাড়িতে উঠতেছিলো তখনও তৃষার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না আসলেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে । যাত্রা পথে জানতে চাইলো তাকে কেনই বা ধরা হল আর কেনই বা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে !

অপু কোন কথা বলে নি । কেবল চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছিলো । রাতের বেলা গাড়ি, রাস্তা ছিল ফাঁকা তাই বাসায় পৌছাতে খুব একটা দেরি হল না । অপু কোন কথা বলছে না দেখে তৃষা নিজের চোখ বন্ধ করেছিলো কিছু সময়ের জন্য । কখন ঘুম চলে এসেছিলো ও নিজের বলতে পারবে না । যখন আবার চোখ খুলল তখন তৃষা দেখে ওদের বাসার সামনে চলে এসেছে । গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল

-আপনার কোন ফোন নাম্বার আছে ?

-কেন ?

-আচ্ছা থাক । আপনি বরং আমার নাম্বারটা নিন !

এই বলে তৃষা নিজের নাম্বারটা দিল ওকে । এমন কাজ কেন করলো সেটা ও নিজেই জানে না । অপু ওর সাথে সারাটা রাস্তায় একটা কথাও বলে নি । কেবল মাঝে মাঝে ওর দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলো আর পুরানো কিছু কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো । বুকের ভেতরে কেমন একটা ব্যাথাও অনুভব করছিল বারেবার ।

নিজের অনুভুতি দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছিলো । ভেবেছিলো তানিয়াকে ও ভুলেই গেছে । মন থেকে বের করে দিতে পেরে খুব ভাল ভাবেই । কিন্তু কোথায় কি ! এই মেয়েটা আবারও ওকে কষ্টের সাগরে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে ।

অপু নাম্বার নিতে নিতে বলল

-তুমি সাবধানে থেকো !

-কেন ?

-কারন তোমার উপর আবার হামলা হবে । আর এবার কিন্তু আমি থাকবো না । কন্ট্রাক্ট অন্য কাউকে দেওয়া হবে । সে কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দিবে না ।

অপু কোন কথা বলে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল

-আপনি কেন ছেড়ে দিলেন ?

-জানি না !

-বলেন !

-বাসায় যাও । হয়তো সামনে কোন দিন আবার দেখা হবে । তবে সাবধানে থেকো । ঠিক আছে ?

-আচ্ছা ।

তারপর নিজের বাসার দিকে দৌড় দিল । সেটা তাও বছর খানেক আগের কথা ।

তৃষা বাংলোর বারান্দায় বসতে বসতে অপুর দিকে তাকিয়ে বলল

-এই কাজ আর কতদিন ?

-যতদিন চলে !

-অন্য কিছু ভাবেন ?

-কি লাভ ?

-আছে । অনেক লাভ আছে ।

বাবুল ফিরে এল একটু পরেই ।

-ভাই । পুলাডা ঘুমায়া আছে । রাইতের আগে উঠবো না মনে হয় ।

-হুম !

-আমি চইলা যামু ?

অপু কোন কথা বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো । রোদ একদম কমে গেছে । আর কিছু সময়ের পরেই আধার নেমে আসবে । কি করা যায় সেটা ভাবতে লাগলো । তৃষা বাবুলের দিকে তাকিয়ে বলল

-বাবুল !

-জে আফা !

-তোমার ভাই তো এই কাজ ছাড়বে না । ঠিক করেছি তোমার দলে যোগ দিবো ! কেমন হবে ?

-খুব ভালা হইবে আফা ! আপনে থাকলে ভাইয়ের মন ভালা থাকে !

এই বলতেই অপু বাবুলকে ধমক দিয়ে বলল

-যা তুই ভাগ । রাতের খাবার খেয়ে আবার আসবি । রনিকেও নিয়ে যা !

বাবুল ধকম খেয়ে বিন্দু মাত্র রাগ করলো না । বরং দাঁতটা যেন আরও একটু বিস্তৃত হল । বাবুল চলে যেতেই তৃষা তাকালো অপুর দিকে । কেমন একটা হাসি হাসি চোখে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে । ছেলেটা যদিও মনটা গম্ভীর করে রাখছে বাবুলের মত অপুও জানে যে ও আসে পাশে থাকলে অপুর মন ভাল থাকে ।

-আচ্ছা একটা কথা জানতে চাইবো ?

-আমার উপর আর কোন হুমকি নেই ?

-হঠাৎ এই কথা জানতে চাইছো কেন ?

-আহা বলেন না । আছে কি না !

-নাহ ! আপাতত নেই । পরে অবশ্য আবার আসতে পারে । কিছু বলা যায় না ।

-যদি আবার আসে ! তখন ? তখনই কি আমাকে আগের মত বাঁচাবেন ?

এই কথার জবার না অপু কেবল তৃষার দিকে তাকালো । অপুর কোন কিছু মুখ দিয়ে বলতে হল না । অপুর চোখই বলে দিচ্ছে সে কি করবে । তৃষা কোন কথা না বলে আরও একটু সরে এল অপুর দিকে । গাঁয়ের সাথে গা লাগিয়ে বসলো । কাছাকাছি থাকলে যে অপুর কেবল যে ভাল লাগে সেটা নয়, তৃষারও ভাল লাগে ।

তৃষাকে ফেরৎ পাঠানোর পরেই আবার যে তৃষার উপর হামলা হবে সেটা অপু খুব ভাল করেই জানতো । অপু যার হয়ে কাজ করে সে যখন জানতে পারে অপু কাজটা করে নি তখন একটু চিৎকার চেঁচামিচি করেছিলো, পরে অবশ্য আর কিছু বলে নি । এরকম কিডন্যাপিং তারা প্রায়ই করে । একটা হাত থেকে ছুটে গেলে খুব একটা যায় আসে না । তবে অপুকে এই কথাও বলেছিলো যে আমরা করি নি কিন্তু অন্য গ্রুপ ঠিকই করবে ।

তৃষার উপর হামলা হওয়ার এক মাস পার হয়ে গেছে । তৃষার সাথে যদিও একজন বডিগার্ড দেওয়া হয়েছে তবুও ভয়টা অনেকটাই কেটে গেছে । আগের মত সতর্কতাও আর অবলম্বন করা হচ্ছে না । ঠিক তখনই আবারও তৃষার গাড়ির উপর হামলা হল ।

ক্লাস শেষ করে তৃষার ড্রাইভারকে ফোন দিল গেটের কাছে আসার জন্য । গেট কাছে গাড়িটা আসতেই কোন কিছু না দেখে গাড়িতে উঠে বসলো সে । উঠে বসেই অনুভব করলো কিছু একটা যেন অন্য রকম ।

তখনই মনে পড়লো তার গাড়ির সামনে একজন বডিগার্ড থাকার কথা । সে গাড়িতে ওঠার সময় বডিগার্ড বাইরে বের হয়ে আসে প্রত্যেকবার কিন্তু আজকে বের হয় নি । আর সামনের ড্রাইভারকে কেমন যেন অন্য রকম লাগছে । তৃষা যখন পুরোপুরি বুঝতে পারলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । দুপাশ দিয়ে আরও দুজন চড়ে বসেছে ।

ঠিক আগের মতই ওর মুখে কিছু একটা দিয়ে চেপে ধরলো কেউ !

তৃষার আর কিছু মনে নেই । কেবল জ্ঞান হারানোর আগে একটা কথাই ওর মনে মাত্র এক মাসের ভেতরে আবারও কেমন করে এতো বড় বোকামী করলো সে । অন্য কারো চেহারা মনে না আসলেও কেবল অপুর চেহারাটাই ওর চোখের সামনে ভেসে এল । ছেলেটা ওকে সাবধান করেছিলো । কোথায় এখন সে !

----

তৃষার এবারের কিডন্যাপের কন্ট্রাক্ট পেয়েছিলো কালা মজনুর দলের লোকজন । কিডন্যাপিংয়ে দেশের ভেতরে রীতিমত অপ্রতিদ্বন্দীই বলা চলে । যে কাজ হাতে নেয় কোন ভাবেই সেটা অসমাপ্ত করে রাখে না । বিভিন্ন গ্রুপের ভেতরে রেষারেষি থাকলেও কেউ মজনু গ্রুপের সাথে লাগতে আসে না । কারন খুব ভাল করেই জানে এর ফল মোটেই ভালখবে না । প্রায়ই দেখা যায় এক গ্রুপ এক পার্টিকে কিডন্যাপ করেছে অন্য গ্রুপ তাদের কাছ থেকে সেই ভিটটিম থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপন আদায় করছে । কোন নিয়মের ভেতরে এসে পরে না । তবে মজনু গ্রুপের থাক থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কোন বন্দিকে ছিনিয়ে নিতে পারে নি । দুয়েকবার চেষ্টা যে করে নি তা কিন্তু তারা কেউ সফল হয় নি বরং পরে তারা বেঘরে মারা পরেছে । তাই এদিকে আর কেউ সাহস করে পা দেয় না ।

কিন্তু আজকে সব কিছু হিসাবের বাইরে চলে গেল । মজনু গ্রুপের প্রধান মজনুর ছোট ভাই রাজু যখন তৃষাকে নিয়ে নারায়নগঞ্জের পঞ্চবটি পার হয়ে এল তখন একটা ট্রাক পাশ থেকে এসে সোজা ওদের ধাক্কা মারলো । রাস্তা থেকে প্রায় ছিটকেই পড়লো পাশে ধান ক্ষেতে । রাজুর মাথাটা ঝিম ঝিম করা অবস্থায় দেখলো কেউ একজন ওদের গাড়ির কাছে চলে এসেছে । কোমরে গোজা পিস্তলটা বের করার সময় পেল না । তার আগেই একটা ভোতা আওয়াজ হল, সেই সাথে কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজ । তারপর আরও কয়েকটা ভোতা আওয়াজ।

তৃষার মাথাও একটু ঝিমঝিম করছিলো ধাক্কার ফলে তবে সেটা বড় কিছু নয় । কিন্তু আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর পাশে যে দুজন ছিল দুই জনেই কেমন করে যেন পড়ে আছে । ওরা কেউ যে বেঁচে নেই সেটা বুঝতে তৃষার মোটেও কষ্ট হল না । সেই সাথে এও বুঝতে পারলো যে কেবল এক্সিডেন্টের ফলে এদের মৃত্যু হয় নি । রক্ত পাতের ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা কিভাবে মারা গেছে ।

তৃষার খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কেন জানি ওর খুব একটা ভয় লাগছিলো না । ডান পাশের দরজাটা খুলে গেল । তৃষা তাকিয়ে দেখে সেখানে অপু দাড়িয়ে । হাত দিয়ে সেদিকের ছেলেটার বডিকে টেনে বের করলো । তারপর অপু ওকেও বের করে আনলো । ওর দিকে তাকিয়ে বলল

-তুমি ঠিক আছো ?

তৃষা কোন কথা বলল না । কেবল মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালো । ওর কপাল সম্ভব একটু কেটে গিয়েছিলো । সেখানটাতে একটু জ্বালছিল । তৃষা সেখানে হাত দিল । তারপর বলল

-তোমার অনেক লেগেছে তাই না ?

-আমি ঠিক আছি ! আপনি আমার খোজ পেলেন কোথা থেকে ?

ততক্ষনে একটা গাড়ি চলে এসেছে রাস্তার উপর । তৃষাকে হাটতে সাহায্য করলো অপু । তারপর দ্রুত ওকে নিয়ে গাড়িতে নিয়ে চলে যায়।

অপু জানতো এর পর থেকে মজনু গ্রুপ ওর পেছনে লেগে যাবে । সেই সুযোগ আর তাদের দিল না সে । নিজেই আগে হামলা করে বসলো । একে একে যত গুলো মাথা আছে সব গুলো খুজে বের করে শেষ করে দিল । এখন এই ালইনে সবাই অপুর গ্রুপকে জমের মত ভয় পায় । কেউ ওদের পথে আসে না ।

অনেকটা সময় দুজন বসে রইলো । আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর তৃষাই একটা সময়ে বলল

-আপনি আপনার ঐ প্রেমিকাকে খুব ভালবাসতেন, তাই না ?

এই প্রশ্নের জবাব অপু দিল না । তৃষা বলল

-ঐ ভালবাসা থেকে একটু ভাল কি আমাকে বাসা যায় ?

অপু ওর দিকে ফিরে তাকালো । তারপর বলল

-আমি যে জীবন চলি সেখানে তুমি কিভাবে আসবে শুনি ? আমার সাথে থাকলে তুমিও যে বিপদে পড়বে !

-আই ক্যান লিভ উইথ দ্যান ।

-তাই ?

-হুম ! কারন আমি জানি এই পৃথিবীতে একটা মানুষ থাকতে আমার কোন ভয় নেই । কেউ আমার কিছু করতে পারবে না ।

-আর সেই মানুষটা মরে যায় তখন ?

এই কথা বলতেই তৃষা ওর মুখে হাত দিল ।

-খবরদার এই কথা বলবেন না । আপনি মরে গেলে আমিও মরে যাবো !

অপু কি বলবে খুজে পেল না । এই কথাটা আগেও ওকে একজন বলতো । সেই মানুষটা চলে গেছে ওকে ছেড়ে, না ফেরার দেশে । আর কারো সাথে অপু নিজের জীবনটাকে জড়াতে চায় না কিন্তু এই মেয়েটা ঠিকই ওর জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে । সে চাইলেও মেয়েটাকে জীবন থেকে বের করে দিতে পারবে না ।



রাত হতে থাকে । ওরা দুজন সেই একই জায়গাতে বসে থাকে চুপচাপ । কোন কথা বলে তবে নিরবতার মাঝেও দুজন অনেক কথা বলে ফেলে । এভাবে তাদের জীবন হয়তো এগিয়ে চলবে সামনের দিন গুলোতে ! এটাই তাদের জীবনের গল্প এভাবেই হয়তো এগিয়ে চলবে !

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:০৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর।

০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০৪

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০৫

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৮

খাঁজা বাবা বলেছেন: ভাল লাগল

০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০৬

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ০১ লা মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: কমন ফ্রো, কিন্তু অনেক সুন্দর ++

০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০৮

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৫| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১:০৯

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: দারুন গল্প । খুব ভালো ছিল ।

০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:১০

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য :)

৬| ০৩ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৭:২০

Lionel Hridoy বলেছেন: ভালোই লাগলো :(

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

অপু তানভীর বলেছেন: :)

৭| ১৪ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৪

শাইয়ন খান বলেছেন: :)

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:০৯

অপু তানভীর বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.