নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবিঃ গুগল
রাতের বেলা বাড়ি থেকে বের হওয়া বেশ ঝামেলার একটা কাজ । বিশেষ করে ঐ ঘটনার পর থেকে বাবা পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছে যে দিনের বেলা যতই বের হই না কেন সন্ধ্যার পরপরই বাসায় ফিরে আসতে হবে । অবশ্য বাবাকে কোন ভাবেই দোষ দিতে পারি না ।
কদিন থেকেই আমাদের এলাকাতে অদ্ভুদ ভাবে মানুষ মারা যাওয়া শুরু হয়েছিল । আর খুন গুলো সব হচ্ছে রাতের বেলা। রাতের বেলা কাউকে একা পেলেই কে বা কারা সেই মানুষটাকে মেরে রেখে যাচ্ছে ।
পুলিশ বেশ কিছুদিন চেষ্টা করেও কোন কুল কিনারা করতে পারে নি । এদিকে কাউকে একা পেলেই হয়েছে । তবে এখন আর ঐ ঘটনা খুব একটা ঘটছে না । কারন পুলিশ টহল বাড়িয়ে দিয়েছে । আর যারা যারা রাত করে বাড়ি ফিরছে তারা সবাই এখন দল বেঁধে বাসায় আসছে । তাই আর খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না । এখন সেই আতঙ্কটা অনেকটাই কমে গেছে । তবে বাবা মায়েদের মন বলে কথা ।
আমার মনে অবশ্য আজীবনই এই ভয় ডর একটু কম । আমি এখনও রাতের বেলা বাইরে ঘুরাঘুরি করি । রাতে আমার সব সময় ঘুম আসতে একটু দেরি হয় । তাই আমি এদিক ওদিক একটু ঘুরাঘুরি করি একা একা । আমি জানি আমার সাথে কিছু হবে না । তাই শ্রাবণী যখন আমাকে ফোন করে আসতে বলল ওদের বাসার সামনে তখন আমি কিছু না ভেবেই বাইরে বের হয়ে আসলাম । যদিও আম্মুর চোখ ফাঁকি দিয়ে আসতে হয়েছে । সে দেখলে আমাকে কোন ভাবেই আসতে দিত না ।
আমি আপন মনে হাটতে লাগলাম শ্রাবণীদের বাসার দিকে । এতো রাতে ওদের বাসায় আসতে বলাতে আমি খানিকটা অবাকই হয়েছি । তবুও আর কোন প্রশ্ন করি নি । মেয়েটার সাথে নতুন প্রেম হয়েছে আমার । মেয়েটার সব কিছুই ভাল তবে কেন জানি কথা বলে কম । আর একেবারে নির্জিব ধরনের । এই মেয়ে আমাকে পছন্দ করতে পারে আমি কোন ভাবতে পারি নি । যেদিন জানতে পারলাম যে মেয়েটা নাকি আমার ব্যাপারে খোজ খবর নিতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই আমার মনের ভেতরে কেমন আকুপাকু করছিলো । তারপর একদিন কলেজ যাওয়ার পথে ওর পথ আটকালাম । সরাসরিই জানতে চাইলাম যে ও আমার ব্যাপারে জানতে চাইছিলো কি না । মেয়েটা সেদিন মৃদু হেসেছিল কেবল । তারপর থেকেই সব এগিয়ে চলছে বেশ ভাল ভাবেই । তবে আজকের মত এতো প্রবল ভাবে সে আর কোন দিন আমাকে ডাকে নাই । তাও আবার রাতের বেলা । আমি খানিকটা দ্বিধা নিয়েই এগিয়ে গেলাম ওদের বাসার দিকে ।
ওদের বাসাটা এলাকার একেবারে শেষ দিকে । গলির একেবারে শেষ মাথায় । যাওয়ার পথেই পুলিশ প্রেট্রলের সামনে পড়লাম । তবে আমার মুখ চেনে বলে আমাকে কিছু বলল না । আমাকে কিছু না বলার একটা কারনও অবশ্য আছে ।
আমি আগেই বলেছি আমার মনের ভেতরে একটু ভয়ডর কম । আমি রাত বিরাতে একা একা ঘুরাঘুরি করি । ৪/৫ মাস আগের ঘটনা । তখন আমাদের এলাকাতে এই মানুষ খুনটা খুব বেড়ে গিয়েছে । দু চার দিন পরপরই শোনা যাচ্ছিলো কেউ না কেউ মারা পড়ছে । আমি তখনও বাইরে বের হতাম তবে তখন আমার সাথে একটা দুই ফুট লম্বা মোটা প্লাস্টিকের পাইপ থাকতো । নিজের নিরাপত্তার জন্য । যতই ভয় না পাই নিজের নিরাপত্তার একটা ব্যাপার আছে তো ।
তেমন এক দিনে আমি হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছি । যায়গাটা বেশ নির্জন হয়ে গেছে । তবে চাঁদের আলো আছে বেশ । সব কিছু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । আশে পাশে কোন বাড়িঘরও নেই । আমি আপন মনে হেটে বেড়াচ্ছি । এমন সময় আমার একটু ছোট বাধরুম পেল । আমি রাস্তা থেকে নেমে এলাম । ঝোপের ভেতরে বসে পড়লাম । এমন সময় দেখি অন্ধকারের মধ্যেই একটা লোক দৌড়ে পালাচ্ছে আর তার ঠিক পেছনেই একজন কেমন লাফিয়ে লাফিয়ে আসছে । অনেকটা ক্যাঙ্গারু যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে চলে ঠিক সেই রকম । পেছনে একটা লেজও আছে । মুখটা খানিকটা লম্বা মত । অনেকটা ছাগলের মুখের মত । কান দুটো খাড়া । লোকটাকে ধরেই ফেলল ।
একেবারে আমার থেকে দুহাত দুরে এসে তাদের ভেতরে ধস্তা ধস্তি শুরু হল । আমাকে তারা কেউ দেখে নি । আমি তখনই মোটা প্লাস্টিকের পাইপটা নিয়ে উঠে দাড়ালাম । আমাকে দেখে তারা দুজনেই চমকে উঠলো । আমাকে এখানে কেউই আশা করে নি । তারপর পাইপটা দিয়ে ঐ ছাগল মুখো প্রাণীর মাথায় সজোরে আঘাত করলাম । দুই বাড়ি দিতেই সে লোকটাকে ছেড়ে দিল । তারপর ঠিক সেই ভাবেই লাফাতে দৌড়াতে শুরু করলো ।
একবার ভাবলাম পেছন পেছন যাই তারপর আর গেলাম না । পড়ে থাকা লোকটা তখন উঠে দাড়িয়েছে । কাছে আসতেই আমি তাকে চিনতে পারলাম । আমাদের বাবু ভাই । আমাকে জড়িয়ে ধরলো আনন্দে । সেই খবর পরদিন সবার কাছে পৌগে গেল । আমি নাকি ঐ দানবের কাছ থেকে বাবু ভাইকে বাঁচিয়েছি । ব্যাস আমি হয়ে গেলাম এলাকার হিরো । সেখান থেকেই সবাই আমাকে অন্য চোখে দেখতে শুরু করলো । শ্রাবণীও আমাকে তখনই চিনতে শুরু করেছিলো ।
আমি শ্রাবনীদের বাসার কাছে এসেই ওকে ফোন দিলাম । পুরো এলাকাটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে । একেবারে নির্জন লাগছে । আমি দিনের বেলা এর আগেও ওদের বাসার সামনে এসেছি তবে রাতের বেলা এই প্রথম । মোবাইল বের করে ফোন দিতে যাবো তখনই দেখতে পেলাম শ্রাবণীকে । ওর গেট খুলে বের হয়ে আসছে । ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে এল । আমার একদম কাছে এসে দাড়ালো । তারপর বলল
-আসতে সমস্যা হয় নি তো ?
-নাহ । কিসের সমস্যা ?
-নাহ মানে সবাই যা বলাবলি করে । আমাদের এই এলাকাতে কি যেন আছে !
আমি খানিকটা গর্ব নিয়েি বললাম
-জানো না একবার আমার সাথে তার দেখা হয়েছিলো । কি অবস্থা করেছিলাম তার । বেটা কেমন করে দৌড়েছিলো । এখন তো আর দেখাই যায় না ।
শ্রাবণীকে দেখলাম হঠাৎ চুপ করে গেছে । আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল চল বাড়ির ভেতরে যাই ।
আমি এবার সত্যিই অবাক হলাম । তারপর বললাম
-কি বললে ? বাড়ির ভেতরে গিয়ে কি হবে ?
শ্রাবণীকে খানিকটা অধৈর্য হতে দেখলাম । ও বলল
-আজকে বাসায় কেউ নেই ।
-তাই জন্য তুমি আমাকে এখানে ডেকে এনেছো ?
-হ্যা । আমি আসলে .....
কথা বলতে গিয়ে ও আটকে গেল । আমার তখনই মনে হল কি যেন একটা ঠিক নেই । আমি চট করে পেছন ফিরে তাকাতেই অবাক হয়ে দেখলাম সেই ক্যাঙ্গারুর মত প্রাণীটা এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে । আমি আমি শ্রাবণীর দিকে তাকাতেই আমার দ্বিতীয় ধাক্কাটা লাগলো । শ্রাবণীর চোখে কোন ভয় কিংবা বিস্ময় নেই । খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেদিকে তাকিয়ে আছে ।
ঐ প্রাণীটার দিকে তাকিয়ে খানিকটা বিরক্ত হয়েই বলল
-তোমাকে না বললাম ওকে বাসার ভেতরে নিয়ে যাই তারপর আসো !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-মানে কি বলছো এসব ?
শ্রাবণী তারপর বলল
-ঠিকই বলছি । তোমার জন্যই আজকে আমাদের এই অবস্থা । সবাই সাবধান হয়ে গেছে । আমরা আর কাউকে খেতে পারছি না । না খেয়ে থাকতে হচ্ছে । আজকে আর স হ্য করতে না পেরে তোমাকে ডাক দিয়েছি । আর তোমার উপর তো আমার আগে থেকেই রাগ আছে । ঐদিন আমাকেই তুমি ঐভাবে আঘাত করেছিলে ।
তারপর আমাকে তীব্র ভাবে অবাক করে দিয়ে শ্রাবণীর চেহারা পরিবর্তন হতে শুরু করলো । পা দুটো আরও একটু লম্বা হয়ে গেল । সেই সাথে মুখের ভাবটা হয়ে গেল ছাগলের মত লম্বাটে । কান দুটো খাড়া হয়ে গেল । আমি কি বলব খুজে পেলাম না । এই জন্যই এই মেয়ে আমার পেছনে লেগেছিলো । ওর একটা উদ্দেশ্য ছিল ।
আমাকে দুদিক থেকে দুজন ঘিরে ধরলো । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । দুজন আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই থাকলো । আজকে আমার কাছে ঐ প্লাস্টিকের ছড়ি নেই । আবার একজনের পরিবর্তে দুইজন ।
তাহলে কি এই ভাবে মারা পড়বো আজকে ?
মেয়ে মানুষটাকে বিশ্বাস করে এই ভাবে বেঘরে প্রাণ হারাবো ?
তারপর মনটা বিদ্রোহ করে উঠলো । মনে হল যা থাকে কপালে । মরলে মরবো তবুও এদের অন্তত একজনকে দেখে নিবো । কাকে হামলা করবো আগে ? তখনই সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো এই মিথ্যাবাদী মেয়েটার উপর । আমি চোখের পলকেই প্রবল একটা ঘুসি মেরে দিলাম ঐ নাক বরাবর !
সম্ভবত আমার এই রকম প্রতিক্রিয়ার জন্য দুজনের কেউই প্রস্তুত ছিল না । দেখলাম শ্রাবণী নামের এই প্রাণীটা নাক চেঁপে মাটিতে শুয়ে পড়লো । আর আমার পেছনের প্রাণীটা থমকে দাড়িয়েছে । কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না । এগোতে ঠিক সাহস পাচ্ছে না । কারনটা আমি ঠিকই বুঝতে পারলাম । শ্রাবণী নিজেই বলেছিলো যে কদিন থেকে ওরা কিছুতেই খেতে পায় নি । এই জন্য ওদের শরীর দর্বূল । তাই আমার এক ঘুসিতেই কাইত হয়ে গেছে । পেছনের জন্য আর সাহস করলো না । দেখলাম সে ঘুরে আবারও ঝোপের আড়ালে চলে গেল । আমি কিছু বলতে যাবো তাকিয়ে দেখি শ্রাবণী আবারও মানুষের রূপ ধারন করেছে । অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালো ।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার উপর দয়া করলাম । আর যদি কোন অকাজ শুনেছি তো সেদিন তোমাকে একেবারে জ্যান্ত পুতে ফেলবো ।
ও তখনও নিজের নাক ধরেই আছে । সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে ।
আমি আর সেদিকে না তাকিয়ে আমি হাটা দিলাম বাড়ির দিকে । ভাল একটা শিক্ষা হয়ে গেল । এই টাইপের ছদ্মবেশী মেয়ের মানুষের কাছ থেকে আরও সাবধান হতে হবে !
২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৫
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০
খাঁজা বাবা বলেছেন: ছেড়ে দেয়া একদম ঠিক হয়নি
হত অন্য কাউকে ফাঁদে ফেলবে আবার
২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন: খবর আছে তখন তার
৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: অনেক দিন পর ব্লগে আপনার গল্প পেলাম।
সুন্দর গল্প।
ভালো থাকুন।
২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন: আপনিও ভাল থাকুন !
৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:২৮
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ভাল একটা শিক্ষা হয়ে গেল । এই টাইপের ছদ্মবেশী মেয়ের মানুষের কাছ থেকে আরও সাবধান হতে হবে !
একটু ভয় ভয় গল্প, আরো চলতে পারত
২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬
অপু তানভীর বলেছেন: বেশি দুর না যাওয়াই ভাল ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৪:০৪
মলাসইলমুইনা বলেছেন: সহজ সরল ভুতের গল্প
পড়েছি আয়েশি
ভালোলাগা বেশী -
নয় মোটেই অল্প স্বল্প...
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৩
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:২০
নজসু বলেছেন: গল্পটা রাতে পড়তে চেয়েছিলাম।
কি মনে করে এখনই পড়লাম।
দিনের বেলাতেই শ্রাবণীর আসলরূপ জানতে পেরে গা শিউরে উঠেছিল।
ভাগ্য ভালো আপনাকে খেয়ে ফেলেনি।
ভয়ের মতো ভালো লাগলো।