নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ গ্যাসহীনতার দিন গুলোতে প্রেম

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:২২

ছবিঃ গুগল

ইরা কিছুটা সময় সল্টেজ বিস্কুটের দিকে শুকনো মুখে তাকিয়ে রইলো । আজকের পরিস্থিতি এমন হয়ে যাবে সে ভাবতে পারে নি । এই সল্টেজ বিস্কুট খেয়ে রাত পার করতে হবে, এটা ভাবতেই যেন আরেকটু ক্ষুধা বেড়ে গেল ওর । একটা ব্যাপার ইরা এর আগেও খেয়াল করে দেখেছে । যখন দেখা যাবে যে সামনে যে জিনিসটা নেই সেই জিনিসটার ক্ষধাই বেড়ে যায় । সেটা পওয়ার জন্যই মন আকুপাকু করে । আজ ওর সাথে সেই ব্যাপারটাই হচ্ছে ।

সকাল থেকে আজকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকাতে গ্যাস নেই । কোন রকম আগাম বার্তা না দিয়েই এই গ্যাস সরবারহ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ । জানা গেছে গ্যাস পাইপ লাইনের কাজ চলতেছে । সেটা নিয়ে ইরার মাথা ব্যাথা নেই । ওর মাথা ব্যাথা হচ্ছে আজকে ওদের হোস্টেলে কোন রান্না হয় নি । সেই দুপুরে খেয়েছিলো ক্যাম্পাস থেকে । তারপর আর ভারী কিছু খাওয়া হয় নি ।

ইরা যে এলাকাতে থাকে সেই এলাকার গ্যাস বন্ধ সেই সকাল থেকে । তাই এলাকার খাবার দোকান গুলোতে চাপ পড়েছে অনেক বেশি । ইরা তবুও খুব একটা গা করে নি । ভেবেছিলো ধীরে সুস্থে গিয়ে খাবার কিনে আনলেই হবে । কিন্তু সন্ধ্যার সময় নিচে নেমে ওর চোখ কপালে উঠলো । প্রতিটা খাবার দোকানে প্রচুর ভীড় । সেই ভীড় ঠেলে সেখানে গিয়ে খাবার কেনা ওর পক্ষ কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না । আর তাছাড়া কিছু সময়ের ভেতরে এলাকার প্রতিটা দোকানের সব খাবার দোকানের খাবার ফাঁকা হয়ে গেল । ইরা কিছু সময় এদিক ওদিক হাটাহাটি করলো অসহায়ের মত । শেষে ঠিক করলো স্টেশনারি দোকানে গিয়ে পাউরুটি কিনে নিয়ে যাবে । কিন্তু সেখানে গিয়েও তাকে হতাশই হতে হল । প্রতিটা স্টেশনারী দোকানেরও অবস্থা একই । বিস্কুট আর পাউরুটি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে । শেষ কয়েকটা দোকান ঘুরে এই সল্টেজ বিস্কুট পেয়েছে । তাই সাথে করে কিনে নিয়ে এসেছে ।

একটু আগে রুমমেটকে একটা বড় সাইজের বার্গার খেতে দেখেছে । তার বয়ফ্রেন্ড তাকে দিয়ে গেছে । ইরার খানিকটা আফসোস হল । যদি ওর একটা বয়ফ্রেন্ড থাকতো তাহলে হয়তো আজকে ওর জন্য এমন কিছু করতো ।

ওর রুমমেট ওকে অবশ্য সেঁধেছিলো কিছুটা নেওয়ার জন্য, ইরা মানা করে দিয়েছে । আজকে সবারই ক্ষুধা লেগেছে । তাই তার রাজি হয়ে যাওয়া মোটেই ভাল দেখায় না । শুকনো মুখে বলেছে যে ওর ক্ষুধা নেই । ইরা একবার চেষ্টা করলো ফুড পান্ডা কিংবা পাঠাও ফুডে অর্ডার দেওয়ার । সেখানেও কাজ হল না । কোন অর্ডারই কনফার্ম হচ্ছে না । কেউ অর্ডার পিক করছে না । আজকে প্রচুর ভীড় এই জন্যই মনে হয় !

মনের দুঃখে ইরা ফেসবুকে স্টাটাস দিল একটা । খাবার নিয়ে স্টাটাস । বেশ কিছু লাইক পড়লো সেখানে। কয়েকজন কমেন্টও করলো । কেউ কেউ হা হা দিল । ইরা মোবাইলটা এক পাশে রেখে আবারও সল্টেজ বিস্কুটের দিকে মন দিল । আপাতত এটা খেয়ে বেশি করে পানি খেতে হবে । তাহলে আর ক্ষুধা লাগবে না আশা করা যায় । কাল সকালে ক্যাফে বাগদাদ থেকে ভরপেট নাস্তা করা যাবে ।

রাত দশটা বাজে তখন ইরার মনে সত্যিই আজকের রাতটা ওর জন্য বেশ দীর্ঘ হতে চলেছে । একটু আগে সে বিস্কুট খাওয়া বন্ধ করেছে । দুইপিচ মুখে দিয়ে আর খেতে ইচ্ছে করে নি । একবার মনে হল একটা বই পড়ার মন দেবে । মনযোগ দিয়ে বই পড়া শুরু করলে আর কিছু মনে হবে না । বইটা হাতে নিতে যাবে তখনই ওর মোবাইলে টুং করে আওয়াজ হল । কেউ ম্যাসেজ করেছে ।
একবার মনে হল এখন ম্যাসেজ টেসেজ না দেখে । কিছুই ভাল লাগছে না । কিন্তু কি মনে হয়ে দেখলো ।

মেসেজ করেছে ওর ক্লাসের একটা ছেলে । অপু নাম । ছেলেটাকে সে চেনে তবে কথা হয় নি খুব একটা ।
-হ্যালো !
-হাই !
-কি খবর ?

ইরার খানিকটা মেজাজ গরম হল । এখন ওর হাই হ্যালো করতে ইচ্ছে করছে না । মনে হল মেসেজটা আর সিন না করে রেহে দেয় । অপু আবার লিখলো
-বিরক্ত করছি হয়তো । একটা কথা বলতে নক দিলাম ।
ইরা একটু ভেবে বলল
-বল ।
-তুমি মোহাম্মাপুরের এনএন টাওয়ারের সারোমিতা হোস্টেলে থাকো না ?
ইরা আরও একটু বিরক্ত হল । একবার মনে হল কঠিন কিছু লেখে । লেখার জন্য প্রস্তুঈ হচ্ছিলো তখনই অপু আবার মেসেজ করলো
-আমিও এই এলাকাতে থাকি । আজকে আমাদের এখানে গ্যাস নেই । তাই রান্না হয় নি বলতে গেলে কারো ঘরেই । আমি টিউশনী থেকে ফেরৎ আসার সময় সায়েন্সল্যাব থেকে এক প্যাকেট বিরিয়ানী নিয়ে আসছিলাম । তখনই তোমার স্টাটাস দেখলাম ।

ইরা তাকিয়ে রইলো মেসেজটার দিকে । কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না । অপু বলল
-আমি তোমার হোস্টেলের নিচে । তুমি কি একটু নিচে আসবে ?
-না না ঠিক আছে !
-প্লিজ নিচে আসো ।
-আমাকে দিয়ে দিলে তুমি কি খাবে ?
-তুমি না খেয়ে আছো এটা জেনে আমার খাবার নামবে গলা দিয়ে !

ইরা একটা বড় রকমের ধাক্কা খেল লাইনটা দেখে । অপু এমন কথা কেন লিখলো ? তাহলে কি..... ?

ইরা আর কিছু ভাবলো না । ধীর পায়ে নিচে নেমে এল । গেটের কাছে আসতেই দেখলো রাস্তার ওপাশে অপু দাড়িয়ে আছে । ওকে দেখেই হাসলো । তারপর এগিয়ে এল ওর কাছে । ইরা তাকিয়ে আছে অপু দিকে । এর আগে কোন দিন ভাল করে অপুকে লক্ষ্য করে নি কিন্তু আজকে অপুর চোখের দিকে তাকিয়ে ইরার বুকের ভেতরে কেমন যেন করতে লাগলো !
তখনই মনে হল এই ছেলেটা ওকে অসম্ভব পছন্দ করে !

ইরার কথা জড়িয়ে গেল । কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । কোন মতে বলল
-আমাকে খাবার দিয়ে দিলে তুমি কি খাবে ?
অপু হেসে বলল
-আমি আরেকটা নিয়ে আসবো কিনে !
-এলাকার কোথাও খাবার নেই ।
-সমস্যা নেই । আমার বাসায় বিস্কুট আছে । আর আমি এমনিতেও কম খাই । দেখছো না কেমন চিকন আমি !

ইরা কিছু সময় কি বলবে ভেবে পেল না । তারপর ওর হাত থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট টা নিল । তারপর অপুর দিকে তাকিয়ে বলল
-ঐ স্টেশনারি দোকান থেকে একটা পানির বোতল কিনে আনো তো দেখি !
-আচ্ছা !

বলেই অপু বিরিয়ানির প্যাকেট টা ইরার হাতে দিয়ে দোকানের দিকে রওয়ানা দিল । ফিরে এল একটু পরেই । ইরা তখন ওদের হোস্টেলের সামনের ফুটপাতে বসেছে । এখানে মাঝে মাঝেই ওরা বসে বসে গল্প করে । বসার জন্য ছাউনির মত আছে ।

অপু ওকে ফুটপাতে বসতে দেখে খানিকটা অবাক হল । পানির বোতলটা পাশে রাখলো । তারপর পাশেই দাড়িয়ে রইলো কিছুটা সময় । ইরা বলল
-কই বসো !
অপু চুপ করে বসলো । ইরা বিরিয়ানীর প্যাকেট খুলে দেখলো অনেকটা বিরিয়ানি । ও এতোটা খেয়ে শেষ করতে পারবে না । অপুর দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার হাতে খেতে সমস্যা নেই তো !

অপুর দিকে তাকিয়ে ইরার মনে হল ও খুব বেশি অবাক হয়েছে । এমনটা সে মোটেই আশা করেনি । ইরা প্রথম লোকমাটা অপুর মুখেই দিল । অপু কেবল ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । ইরার বুঝতে কষ্ট হচ্ছে ছেলেটা মনে মনে প্রচন্ড খুশি হয়েছে । তারপর ইরা মুখে আরেকটা লোকমা নিতে নিতে বলল
-ঐ কথাটা কেন বললেন তুমি ?
-কোনটা ?
-আমি না খেলে গলা দিয়ে খাবার নামবে না !
অপু কিছু না বলে মাথা নিচু করলো । ইরা হঠাৎ বলল
-আমার জন্যই কি তুমি এই এলাকাতে বাসা নিয়েছো ?
অপু এবারও কিছু না বলে চুপ করে রইলো । ইরা আবারও অপুর মুখে খাবার তুলে দিল !


মানুষ যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো তখন দেখলো একটা মেয়ে একটা ছেলেকে পরম মমতায় খাইয়ে দিচ্ছে । ছেলেটা খানিকটা লজ্জা আর আনন্দমাখা মুখে সেই খাবার খাচ্ছে ।






মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৫০

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: হা হা মন্দ না।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৪২

অপু তানভীর বলেছেন: সব খারাপের ভেতরেও ভাল কিছু হতে পারে !

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫২

ম্যাড ফর সামু বলেছেন: তাহলে মাঝে মাঝে ঢাকা শহরের গ্যাসের লাইনটা বন্ধ করে রাখা দরকার! কি বলেন! এতে অন্তত হৃদয়ের লাইনগুলো যদি সবার খুলে যায়! :P :P জটিল আইডিয়া, জটিল লেখা।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৫

অপু তানভীর বলেছেন: অবশ্যই এমন হতে পারে ! ;)

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব গল্প।
সত্য ঘটনা।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৬

অপু তানভীর বলেছেন: বানানো গল্প, ঘটনা সত্য নয় মোটেও !

৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৫

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: গল্পে ভালো লাগা রইলো।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৭

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য :)

৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৩০

অগ্নি সারথি বলেছেন: হা হা হা! ভাল্লাগসে।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৮

অপু তানভীর বলেছেন: গল্পে তো কত কিছু হতে পারে । বাস্তবে আমি বিরিয়ানী কারো সাথে শেয়ার করি না ! ;)

৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:০৮

আমিন রবিন বলেছেন: চমৎকার

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৮

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৮

মা.হাসান বলেছেন: আমার এলাকায় মাঝে মাঝে গ্যাসের সমস্যা হয়। যতদূর জানি, বি.এন.পি.-জামাতের কিছু লোক এলাকায় গ্যাসের পাইপে মটর বসিয়ে গ্যাস সংকটের ঘটনা ঘটায়। পুলিশ এদের ধরে, এরা আবার জামিন নিয়ে বের হয়ে একই কাজ করে। আশাকরি ২০৪১ সাল নাগাদ এদের মামলার রায় হয়ে ফাঁসি হয়ে যাবে এবং তখন আর গ্যাস সংকট থাকবে না।
নায়ক যেহেতু আপনি , সন্দেহ করি ঐ এলাকার গ্যাস সংকটের পিছনে আপনার হাত ছিল। তিতাস কে কত দিতে হয়েছিল? ;) বরাবরের মতো ভাল লিখেছেন, পোস্টে প্লাস।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৯

অপু তানভীর বলেছেন: :D

৮| ০১ লা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সফট সফট ইমোশনাল গল্প.... +++++

০১ লা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১১

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.