নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রমজানের একেবারে শুরুর স্মৃতি থেকে আমার মনে আছে রমজান এলেই রাতের বেলা মাইকে মোয়াজ্জিন সাহেব ডাকাডাকি শুরু করে দেন । আমাদের গ্রামে এই কাজটা করা শুরু হত মোটামুটি রাত তিনটার সময় থেকে চলতো একেবারে আযান পর্যন্ত । কেবল যে তিনি উঠার জন্য আমাদের ডাকতেন সেটাই না, নানান ধরনের গজল চালু করে দিতেন । কত হাজিস কিংবা কোরআন তেলোয়াত চলত। এই কাজে তাকে সাহায্য করতো মাদ্রাসার নানান ছাত্ররা । তবে আমাদের এটা নিয়ে খুব বেশি আপত্তি ছিল না । কারণ মসজিদ ছিল বাসা থেকে অনেকটাই দুরে । মাইকের এই আওয়াজ আমার কর্ণকুঠরে খুব বেশি সমস্যার সৃষ্টি করতো না। বাড়ির কাছে হলে অবশ্য আপত্তি করতে পারতাম ।
তবে ঢাকায় যখন প্রথমবার এলাম তখন আবিস্কার করলাম যে আমাদের গ্রামের মসজিদের মত মাইকে এতো প্রবল ভাবে ডাকাডাকি করা হত না । অন্য্ এলাকাতে কী করা হত আমার জানা নেই তবে আমার বাসার আশে পাশের মাইকে এমনটা করা হত না । রাত তিনটার দিকে একবার ডাক দেওয়া হত তারপর সেহরীর সময়ের শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে একবার ওয়ার্নিং দেওয়া হত এবং সময় শেষের একটা ডাক । ব্যাস এমনই হত সেহরির ডাকাডাকি । এখনও যেহেতু একই হাউজিং এলাকাতে আছি তাই এখনও সেই একই নিয়ম ফলো করা হয় ।
তবে একটা ব্যাপার আমি সব থেকে বেশি অবাক হয়েছিলো সেটা হচ্ছে রাত তিনটা হতেই একদল ছেলে হাউজিংয়ের প্রতি রাস্তায় চিৎকার করে করে মানুষজনকে ডাকতে শুরু করে । কোন মাইক নয় খালি গলাতে চিৎকার করে ডাকছে ।
জাগো জাগোরে মুসলমান
জাগো জাগোরে মুসলমান
সুরে সুরে চিৎকার করে হাউজিংয়ের প্রতিটা গলিতে তারা দল বেঁধে ডেকে চলতো । আওয়াজ শুনে বোঝা যায় এদের বয়স খুব বেশিও না । এই ব্যাপারটা আমার কাছে একেবারেই নতুন ছিল । আমাদের গ্রামে আসলে এই রকম ডাক কোন দিন হয় নি, আমার তখন এই ছেলে গুলোর জন্য মনের ভেতরে আলাদা একটা শ্রদ্ধা জমা হল । মনে হল যে মানুষকে রোজা রাখানোর জন্য এই ছেলে গুলো কেমন চিৎকার করে সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলছে । নিজেদের আরাম আয়েশকে বিশর্জন দিয়ে ধর্মের কারণে কাজ করে যাচ্ছে ! ধর্মের প্রতি এতো টান এদের । ব্যাপারটা ভাবতেই মনটা ভাল হয়ে গেল ।
কিন্তু এই ভাল কাজ ধর্মের কাজের পেছনে যে আরও একটা উদ্দেশ্য্ সেটা বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছিলো । প্রথমবার অবশ্য টের পাই নি কারণ প্রথমবার আমি অনেক আগেই বাড়িতে চলে গিয়েছিলো । পরের বার যখন ঢাকাতে থাকতে এসেছিলাম তখন ব্যাপারটা আমার কাছে ধরা পরে । রমজানে যথারীতি ডাকাডাকি শুরু হল । এবং বিশ রমজান পার হতেই একদিন একটা রোগামত ছেলে আমাদের মেসবাড়ির দরজায় কড়া নাড়লো । আমিই দরজাটা খুলে দিলাম । আমার দিকে তাকিয়ে সে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল । সেটা ছিল একটা রশিদ । আমি ঠিক বুঝলাম না । এমাউন্টটা অবশ্য এখন মনে নেই সম্ভবত একশটাকা ছিল । বললাম, কীসের এটা ?
সে বলল, আমরা ভোরবেলা ডাকি ।
আমি তখনও ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারলাম না । বললাম, মানে?
ছেলেটার চোখে এবার একটা অধৈর্য্যের আভা । সে বলল, আমরা সেহরির জন্য ভোরে ডাকি । এটা তারই বিল !
আমার চোখ কপালে উঠলো । সত্যি বলতে আমি তখন ঢাকার পরিবেশের সাথে খাপ খাইতে নিতে পারি নি । কেউ যে ভোরে ডাকাডাকির জন্য মানুষের কাছ থেকে টাকা দাবি করতে পারে সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল ।
বিস্ময়ের ব্যাপারটা সামলে নিয়ে আমি বললাম, এখন তো কেউ বাসায় নেই । সবাই আসুক তারপর আলোচনা করে দেওয়া যাবে ।
-আপনি দিয়ে দেন ।
-না আমি এভাবে টাকা দিতে পারবো না ।
ছেলেটা চলে গেল বটে । পরদিন সে আবার এল । এবং এবার আমি যদিও বাসায় ছিলাম আরও কয়েকজন ছিল বাসায় । সেই ছেলে একই ভাবে বিল দাবী করলে আমাদের মেসের অন্য একজন সেটা দিতে অস্বীকৃতি জানায় । বলে কোন দুঃখে টাকা দেবে । তাদের কে কি কেউ এই দায়িত্ব দিয়েছে নাকি!
তখন আমি সেই ছেলের মারমুখী ভাব দেখতে পেলাম । তার আচরণ আর কথা বার্তা শুনে মনে হল যে টাকা দিতেই হবে । নয়তো সে দেখে নেবে এমন একটা ভাব ।
পরিবেশ খানিকটা উত্তপ্ত করে সে চলে গেল । যাওয়ার আগে বলে গেল সে আবার আসবে ।
আমার তখনও ব্যাপার হজম হচ্ছিলো না । অথচ আমি এদের কতই না ভালো ভেবেছিলাম । মেসবাড়ির একবড় ভাই জানালো যে এরা মূলত পাড়ার বখাটে আর নেশাখোর । টাকা আয়ের একটা মাধ্যম হিসাবে এটা এই সেহরিতে ডাকটাকে ব্যবহার করে । আর কিছু না ।
তারপর প্রতিবছরই এদের উৎপাত চলতে থাকে । এখন ঐ ছেলেগুলোর প্রতি কোন শ্রদ্ধা জন্মে না । বরং বিরক্তি জমে । তবে আশার কথা যে আমি তখন একটি হিন্দু পরিবারের সাথে সাবলেট থাকি । তাই ডাকাডাকির বিল সেই বাড়িতে আসতো না ।
২.
ঢাকাতে আসার পরে আরও একটা নতুন ব্যাপারের সাথে পরিচিত হয় সেটা হচ্ছে সেহরী নাইট বা সেহরী পার্টি । সত্যি বলতে কী এমন একটা জিনিস যে আসলেই হতে পারে সেটা আমার ধারণার বাইরেই ছিল । ইফতার পার্টি আমাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক ছিল । তবে সেহরিতেও যে পার্টি হতে পারে সেটা জানা ছিল না । তবে এই ধারণা কিন্তু আমি যখন ঢাকাতে এসে হাজির হই তখনও অতোটা ছিল । এটা মূলত চালু হয়েছিলো দেশে ফেসবুকের প্রসার চালুর হওয়ার পরে ।
ঢাকাতে অনেক হোটেলই সারা রাত চালু থাকে । যখন দেশের মানুষ সবাই ফেসবুক ব্যবহার করতে শুরু করে তখনই প্রায়ই দেখতাম যে রাতের বেলা তারা ওমুক হোটেলে চেকইণ দিচ্ছে । খাওয়ার ছবি পোস্ট দিচ্ছে । এবং এর পরে বড় বড় রেস্টুরেন্টের ফেসবুক পেইজেও খেয়াল করলাম যে তারা এই রাতের বেলা সেহরির আয়োজনের ব্যাপার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন ।
একবার দেখলাম দেশের একজন বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়ার হোটেল আর রাজ্জাকে সেহরি খাওয়ার ছবি পোস্ট করছেন তার পেইজে । আল রাজ্জাক আমাদের ক্যাম্পাসের যাওয়ার পথেই পড়তো । আমরা মাঝে মাঝে সেখানে যেতাম । তাই সেটা পরিচিত ছিল খুব । তার সাথে আরেকজন পরিচিত মুখ ছিল ।
তার পরের বছর থেকে একেবারে ডাল ভাত হয়ে গেল এই সেহরি নাইটের ব্যাপারটা । প্রায় প্রতিটা হোটেল রেস্টুরেন্ট সেহরি নাইটের আয়োজন করতে শুরু করলো । ফেসবুক ভরে গেল নাইটের ছবিতে । তাদের দেখাদেখি আরও মানুষ গিয়ে হাজির হল নাইটে । প্রথমে কেবল পশ লোকজন মানে যাদের নিজেস্ব গাড়িঘোরা আছে তারাই এসব নাইটে গিয়ে হাজির হত । কিন্তু এক সময়ে সবাই যাওয়া শুরু করলো । করোনার আগের বছর পর্যন্ত এই নাইট চলল খুব জোড়ে সরে। প্রথম প্রথম কেবল বন্ধু বান্ধব নিয়ে এই সব নাইট উজ্জাপন করা হত আস্তে আস্তে পরিবারের সবাই এখন এই নাইটে গিয়ে হাজির হটে শুরু করলো । এখনও অবশ্য আছে । এখনও এই নাইট চলছে । তবে এখন কেন জানি আগের থেকে কম দেখছি ছবি । কিংবা আমারই চোখে কম পড়ে । এখন এটার নাম সেহরি নাইট থেকে সহুর বা সাহুর নাইট হয়েছে সম্ভবত । এমন কিছুটা শব্দের বিরর্তন হয়েছে । তবে আমি এখনও পর্যন্ত এই সেহরি নাইট কিংবা সেহরি পার্টিতে যেতে পারি নি । আদৌও পারবো কিনা জানি না ।
সামুর ব্লগারদের নিয়ে একটা সাহুর নাইট করা যায় কিনা ভেবে দেখা দরকার !
সংযুক্তিঃ এখন তিনটা ১৩ বাজে । পুলাপাইনের ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে ।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:১৯
অপু তানভীর বলেছেন: ইফতার পার্টি ঢাকায় পরিচিত মানুষের একটা মিলন মেলা । এই রেওয়াজ আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে । রমজানে মানুষ জনকে ইফতার করানো ।
আমিও এখন ইফতার পার্টিতে যাই না । আগে বন্ধুদের সাথে অন্তত একটা ইফতার হতই ঢাকাতে । আবার গ্রামে গিয়েও স্কুলের বন্ধুদের সাথে প্রতিবছর একটা আয়োজন হত । এবার হবে কিনা কে জানে !
২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৯:৪৮
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সাহুর নাইট ইফতার পার্টি মানুষ এত সময় পায় ক্যামনে বুঝি না। ইফতার করে শুতে না শুতেই তো তারাবীর সময় হয়ে যায়। তাছাড়া এক ঘুম দিতেই তাহাজ্জুদের সময় হয় আবার সেহেরী টাইম। এসব লোক দেখানো ইবাদত নিয়ে মানুষ ইদানিং মশগুল হয়ে আছে।
আর মাঝে মাঝে বিরক্তই লাগে দল বেঁধে ডাকাডাকিতে। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে অসুবিধা হয়। নামাজ রোজার টান থাকলে ডেকে দিতে হয় না। নিয়ত শুদ্ধ করতে হবে আগে।
ধন্যবাদ ভাইয়া জি
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:২১
অপু তানভীর বলেছেন: আসলেই যার রোজা রাখার ইচ্ছে সে ঠিক ঠিক উঠে যাবে। এই সব ডাকা ডাকির দরকার হবে না । আর এখন এই আধুনিক যুগে প্রত্যেকের কাছে মোবাইল থাকে, এলার্ম ক্লক থাকে । মিস হওয়ার কোন সম্ভবনাই নাই তারপরেও যখন ডাকাডাকি তখন স্পষ্টই বুঝতে হবে যে এর পেছনে আসলে অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে ।
৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৪৫
আমি সাজিদ বলেছেন: গতকাল রাতেই পোস্টটি পড়েছি। সহুর নাইট ট্রেন্ডটি কখনোই পছন্দ ছিলো না। পোস্টে প্লাস।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:২৩
অপু তানভীর বলেছেন: আমি যখন প্রথম প্রথম ঢাকাতে এলাম তখন মজা করেই মাঝে মাঝে বলতাম একটা সেহরি পার্টি করার কথা । কিন্তু তার কয়েক বছর পরে দেখলাম যে সত্যি সত্যিই মানুষ সেহরি পার্টি শুরু করে দিয়েছে । আমার কপালে এখনও যাওয়া হল না এই পার্টিতে !
৪| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৪১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
এখন দরজা জানালা আটকানো থাকে। ডাকা ডাকি হলেও খুব একটা কানে আসে না।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:২৩
অপু তানভীর বলেছেন: আমার ঘরে খুব ভাল ভাবেই শোনা যায় এই ডাক ।
৫| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৮:১১
ঢাবিয়ান বলেছেন: ঘুম থেকে উঠে সেহরি খাওয়াটা সবাই কোনরকমে খায় । এই সময়টাতে কি আয়েশ করে হরেক রকম খাবার খেতে কারো ইচ্ছে হয়? আমার মনে হয় সেহরি নাইটে যারা যায়, তারা আসলে রোজা রাখে না। আরেকতা হতে পারে । এরা সারা রাত জেগে থাকে এবং সাহরি নাইট করে একেবারে ঘুম দিয়ে সারা দিন ঘুমায়। যাদের দিনের বেলা স্কুল, কলেজ যেতে হয়, চাকরি করতে হয় তাদের পক্ষে এই জাতীয় ফাতরামি করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: ঢাকা তে অবশ্য বেশির ভাগ মানুষ, বিশেষ করে যুবক থেকে মধ্যবয়স্ক, এরা একেবারে সেহরি করেই ঘুমায় রাতে । এমনিতেও রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে একটা দেড়টা বাজে । ঘুমালে উঠা কষ্টকর হয়ে যায় । তাই যারা পার্টিতে যায় তাদের কাছে এসব কোন ব্যাপার না ।
যাদের শরীরে তেল থাকে বেশি তাদের কাছে আসলে চাকরি স্কুল কলেজ কোন ব্যাপার না । আমার তেল কম তাই যাওয়া হয় না ।
৬| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:০৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সেহেরির ডাকাডাকি সহ রমজান এর স্মৃতি নিয়ে আমারও একটা লেখা লেখার ইচ্ছে আছে, বিশ রোজার পর লিখবো ইচ্ছে আছে।
পুরাতন ঢাকায় সেহেরিতে ডাকাডাকি আছে, কাশিদা গাওয়ার চলও ছিলো আগে, ঈদের বখশিশও তারা তুলতো, এখনো আসে, কিন্তু চাঁদাবাজি করে নয়, আপনার যেমন রশিদ সহকারে বিল নিয়ে হাজির হয়েছে ঠিক তেমনটা নয়।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:১১
অপু তানভীর বলেছেন: এখানে রীতিমত হুমকি ধামকি দেওয়া হয় অন্তত এদের মনভাব এমনই দেখেছি যদি কেউ টাকা দিতে না চায় !
আমি বলবো যে একটা সময়ে যখন এতো আধুনিক ছিল না, মানুষের হাতে এলার্মক্লক ছিল ছিল না সর্বোপরি মানুষের রাত জাগার অভ্যাস ছিল না তখন এই ডাক দেওয়াটা সমর্থনযোগ্য ছিল । কিন্তু এই যুগে এসে এটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়, কেবলই মাত্র বিরক্তির কারণ ছাড়া কিছু নয় ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৮:৩৯
বিটপি বলেছেন: এইসব সাহুর নাইট আর ইফতার পার্টি যত এড়িয়ে যাওয়া যায়, অতই ভালো। আমি কোন ইফতার পার্টিতে যাইনা। বেশির ভাগ ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণকারীরা মাগরিব নামাজের ধার ধারেনা। এটা আমি একদম হজম করতে পারিনা।