নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের শবে বরাতের দিন গুলো সব বদলে যাচ্ছে....

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৪

যখন ছোট ছিলাম তখন শবে ই বরাত এলে আমাদের বাসায় বাসায় একটা উৎসবের মত অবস্থা হত। ঈদের আগের উৎসব এই দিন দিয়েই শুরু হত তখন । যতই ধর্মীয় গাম্ভীর্যের ভাব থাকুক না কেন এটা আমাদের ছোটদের কাছে মূলত ছিল হালুয়া ডে। এই দিনের আগের দিন আমাদের বাসায় ছোলা ভিজিয়ে রাখা হত। এছাড়া গ্রামের ঢেকি বাড়ি থেকে চালের আটা কুটে নিয়ে আসা হত। শবে বরাতের দিন সকাল থেকেই মায়ের আয়োজন শুরু। আমাদের বাসায় মূলত দুই ধরনের হালুয়া বানানো হত। একটা সুজির, অন্যটা ছোলার। প্রথম দিকে আমার সুজির হালুয়াটা বেশি পছন্দ হলেও এক সময়ে আমার কাছে ছোলার হালুয়াটা বেশি পছন্দীয় হয়ে উঠেছিল। হালুয়া তৈরি হয়ে গেলে সেগুলো একটা বড় পাত্রে ঢালা হত। তারপর যখন তা ঠান্ডা হত তখন ছুরি দিয়ে কেটে পিচপিচ করা হত। বলা যায় সকাল থেকেই এই জিনিস খাওয়া শুরু হত আমাদের।
তারপর দুপুরের খাবারের পর থেকেই আমার মা রুটি বানানো শুরু করতেন। এদিকে গরু কিংবা খাসির ভুনা মাংসও চুলায় বসিয়ে দেওয়া হত। মোটামুটি সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলত এই চালের আটার রুটি বানানো। রাতের বেলা কোনো ভাত রান্না হত না। এই রুটি আর মাংসই ছিল রাতের খাবার।

সন্ধ্যা থেকে আমাদের বাসায় ধর্মীয় একটা আবহ তৈরি হয়ে যেত। সন্ধ্যা বেলায় আমরা গোসল দিয়ে সোজা হাজির হতাম মসজিদে। সেখানে এশার নামাজ পড়ে জিকির মিলাদ শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে দশটা । দশটার দিকে যখন বাসায় ফিরতাম তখন দেখতাম ঘরের উজ্জ্বল আলো বন্ধ করে দিয়ে মা নামাজ পড়ছেন ডিম লাইট জ্বলিয়ে। রাতে খাবার খেয়ে আবারও বের হয়ে যেতাম। যদিও আব্বা আর বাইরে বের হতেন না। আমরা, ছেলেরা কেবল বের হতাম। আমাদের আমাদের গ্রাম পাশের গ্রামের মসজিদগুলোতে গিয়ে হাজির হতাম। সেখানে নামাজ পড়ে আবার ছুটতাম অন্য মসজিদে। এভাবে চলত একেবারে ভোর বেলা পর্যন্ত। কেউ কেউ আবার মসজিদেই ঘুমিয়ে পড়ত। একেবারে ফজরের নামাজ পরে তারপর বাসায় ফিরে আসতাম। ছোট বেলায় প্রতিটা শবে বরাতের দিন আমাদের এভাবেই কেটেছে।
তবে ক্লাস টেন এর শবে বরাতটা ছিল সব থেকে অন্য রকম। এই দিনটার কথা আমার আজও মনে আছে ভাল করে। সেবার একটু বড় হয়েছি। তাই শবে বরাতের দিন রাতের খাবারের পর সাইকেল দিয়ে আমি চলে এলাম আমার স্কুলের বন্ধুদের এলাকাতে। তারপর একটা বিরাট সাহসের কাজ করে ফেললাম। আমার তখন সবে একটা প্রেমিকা জুটেছে। সেই সময়ের প্রেমের গল্প তো অনেক করেছি। যারা স্কুলে প্রেম করেছেন তখন তারা জানেন যে তখন প্রেমিক বালকের মনে কত তেল থাকে! তাই সেদিন রাতের বেলা সোজা গিয়ে হাজির হলাম প্রেমিকার বাসায়। গেটে কড়া নাড়লাম। উদ্দেশ্য ছিল একবার তার সাথে দেখা করা।
সেই রাতে গেটে সাড়া দিতে এল সে নিজে। মাথায় কাপড় দেওয়া, নামাজের পোশাকে। আমাকে দেখে স্বভাবই অবাক হয়েছিল। আসলে আমাদের ব্যাপারটা তার মায়ের কাছে লুকানো ছিল না। এবং অনেকটাই সম্মতি ছিল তবে একটা শর্ত ছিল যে আগে পড়ালেখা পড়ে অন্য কিছু। তাই তাদের বাসায় যাওয়ার সাহস হয়েছিল। অবশ্য সেই গেট পর্যন্ত দেখা করেই আবার ফিরে এসেছিলাম। পরের দিন অবশ্য বেশ বকাও শুনতে হয়েছিল তার কাছে।

এখনকার দিনের শবে বরাতগুলো কেন জানি আর আগের দিনের মত হয় না। এতো আয়োজন আর কেউ করে না। সব কিছুই কেমন যেন বদলে গেছে বা যাচ্ছে। আমাদের বাসায় আজকে হালুয়া বানানো হয়েছে কিনা ঠিক বলতে পারছি না। এখন আর আম্মা আগের মত নেই। তার বয়স হচ্ছে। নামাজ হয়তো পড়ছেন । এর বাইরে আর কিছু কি হচ্ছে ? কে জানে!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪১

সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: আমার একইরকম স্মৃতি ভালো লাগলো পড়ে

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:০৫

অপু তানভীর বলেছেন: আমাদের বয়সী কিংবা আমাদের থেকে বেশির বয়স কিংবা একটু কম বয়সী সবার স্মৃতি গুলোই মোটামুটি এই একই রকম !

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: যখন চিটাগং থাকতাম তখন পাড়া প্রতিবেশি সবাই কে আমরা খাবার বিলাতাম। অবিবাহিত মেয়েরা তার বফ দের বাসায় খাবার বিলানোর উছিলায় নিজের হাতের হালুয়া দিয়ে করা বিভিন্ন আইটেম পাঠাতো। ঢাকার মানুষের এসব করার সময় নেই। ঢাকায় এসে তাই শবে বরাত খুব মিস করতাম। এখন সয়ে গেছে।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:০৬

অপু তানভীর বলেছেন: ঢাকায় এসে আমিও এসব মিস করি। ঢাকার মানুষের আসলে এতো সময় কোথায়? এখন সব কিছুই তো রেডিমেড কিনতে পাওয়া যায়। তাই কষ্ট করে কেউ আর কিছু বানাতে চায় না এখানে।

হ্যা সব কিছুই অভ্যাস হয়ে গেছে।

৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:১৬

সামরিন হক বলেছেন: দু একটা জায়গায় বানান ঠিক করে নিতে পারেন। অবশ্য আমার বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি।

আগে প্রায় সবাই এভাবেই শবে বরাত পালন করত কিন্তু আস্তে আস্তে আমরা জেনেছি যে ,যা আমরা করতাম তা আসলে কোন পবিত্র নিয়মের মধ্যে পড়ে না। শবে বরাত হচ্ছে ১৫ই শাবান আর এই শাবান মাস পুরোটাই বিশেষ করে ১৫ শাবান পর্যন্ত,যা রমজানের আগে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মাস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাই আগের মত আর শবে বরাত আমরা পালন করি না ,উৎসব আমেজটাও নেই।
তবুও এখনও অনেকে অভ‍্যাস মোতাবেক হলুয়া রুটি বানায় এবং বিভিন্ন বাসায় বাসায় পাঠায়।


১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০৪

অপু তানভীর বলেছেন: আমার আসলে বানান ভুলের দোষ কোন দিন যাবে না। দুই একটা না বানান ভুল অনেক ছিল। যদি রিভাইস নাই দিই তাহলে তো হিসাব থাকে না। আবার দেখলাম । এখন হয়তো একটু কম তবে এখনও ভুল আছে নিশ্চয়ই।

আমিও এই ব্যাপারটা জানতে পেরেছি ঢাকায় এসে। যদিও এখনো অনেকেই মানেন তবে অনেকেই এখন আর আগের মত পালন করেন না ।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনারগুলো তো ছিলোই তার সাথে আমাদের সময়ের আরো কিছু যোগ করি.........

দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন বয়সের গরীব মানুষেরা বাসার গেইটে ভিড় করতো। আমরা তাদেরকে হালুয়া-রুটি-গোশত বিলি করতাম। বিকাল থেকে মাগরিবের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন বাসা থেকে লাল কাপড়ে মোড়ানো থালা হাতে মেয়েরা / বাচ্চারা বের হতো প্রতিবেশীদের মধ্যে হালুয়া-রুটি-গোশত বিলি করতে। আমাদের বাসা থেকেও বের হতো। মসজিদে মাগরিবের নামায পড়ে বাসায় এসে প্রধান কাজ ছিল কার বাসা থেকে কি এলো দেখা আর যেটা যেটা পছন্দ হয়, খাওয়া। নামায থেকে ফেরার পথে আগরবাতি কিনে নিয়ে আসতাম। কাচের গ্লাসে চাল দিয়ে সেই আগরবাতি গেথে দেয়া হতো। মোটামুটি সারারাত বাসায় আগরবাতি জ্বলতো।

তারপরে বের হতাম মূলতঃ পটকা ফোটাতে। বিভিন্ন পদের / নামের পটকা ছিল। সবগুলোর নাম মনে নাই। যেসব বাসার মেয়েদের প্রতি পাড়ার ছেলেরা ফিদা ছিল, তাদের বাসার সামনে অপারেশান বেশী চলতো। বিকট শব্দের সেইসব পটকা সেই রাতের গাম্ভীর্য অনেকটাই নষ্ট করলেও আমরা তখন সেটা নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করতাম না। সারারাতই থেমে থেমে এটা চালাতাম!!

পুরানো ঢাকার আরেকটা আইটেমের কথা না বললেই না। বিভিন্ন বেকারীতে শেরমাল নামে এক ধরনের রুটি বিক্রি হতো। বিশাল আকারের বিভিন্ন ডিজাইনের সেই রুটি কিনতাম। তবে এই রুটি শবে বরাতে পাওয়া গেলেও মোহররমের মেলাতে তার বেচাকেনা হতো সবচাইতে বেশী।

৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৩৪

শায়মা বলেছেন: তোমার মত আমারও ছেলেবেলা একই রকম ছিলো। আজ কোথায় সেই হালুয়া রুটির শবে বরাতের আনন্দ আর কোথায় বা সেই ভাব গাম্ভীর্য্যের প্রার্থনা.....সব বদলাতে বদলাতে একদম নাই হয়ে গেছে।

তারপরে বের হতাম মূলতঃ পটকা ফোটাতে। বিভিন্ন পদের / নামের পটকা ছিল। সবগুলোর নাম মনে নাই। যেসব বাসার মেয়েদের প্রতি পাড়ার ছেলেরা ফিদা ছিল, তাদের বাসার সামনে অপারেশান বেশী চলতো। বিকট শব্দের সেইসব পটকা সেই রাতের গাম্ভীর্য অনেকটাই নষ্ট করলেও আমরা তখন সেটা নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করতাম না। সারারাতই থেমে থেমে এটা চালাতাম!!



হা হা হা ভাইয়ু এত্ত শয়তান ছিলে!!!!!! :P

৬| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৪৯

ভুয়া মফিজ বলেছেন: শায়মা বলেছেন: হা হা হা ভাইয়ু এত্ত শয়তান ছিলে!!!!!! :P

আমরা জানতাম, পুরোটা রমযান মাস শয়তানকে বন্দী করে রাখা হবে। সেইজন্য একটু উজানো আর কি!!!!! :-B

জানো তো, মোমবাতি নেভার আগে দপ করে জ্বলে উঠে..........সিমিলার টু দ্যাট!!!!!!!! =p~

৭| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৩৯

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমাদের মানসিকতা ও সামাজিকতা
অনেক নীচে নেমে গেছে ।
শুধু তাই নয় আর্থিক সক্ষমতা ও ধর্মীয় চেতনা
দুটোই টান পড়েছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.