![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইয়াজুজ মাজুজের ভূমিকাঃ
অভিশপ্ত ইহুদীদেরকে পুনরায় জেরুজালেমে ফিরে আনবেঃ
সবশেষে, কোরআন ইয়াজুজ মাজুজকে দ্বিতীয় এবং শেষ বারের মতন সূরা আম্বিয়ার দু’টি আয়াতে উল্লেখ করেছে যেখানে একটি শহরের কথা বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা সে শহরটিকে ধ্বংস করে দেন এবং সে শহরের অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করেন, এবং “এই শহর আমাদের” এই দাবী নিয়ে যাতে আর কখনো ফিরে না আসতে পারে সে জন্য তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আয়াতটি আরো ঘোষণা করছে যে, এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে ইয়াজুজ মাজুজের মুক্তি এবং তাদের সব দিকে ছড়িয়ে পড়ে সুবিধাজনক সকল স্থান দখল না করা পর্যন্তঃ
“নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে একটি শহরের উপর (জেরুজালেম) যাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি (এবং এর অধিবাসীরা সেখান থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে), (এই শহর আমাদের, এই দাবী নিয়ে) তারা (অর্থাৎ এর অধিবাসীরা) আর ফিরে আসতে পারবে না, যতক্ষণ না ইয়াজুজ ও মাজুজকে মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে এবং তারা সবদিকে ছড়িয়ে না পড়ছে। [আম্বিয়া ২১:৯৫-৯৬]
এই শহরটিকে চিহ্নিত করতে পারলে এবং শহরের অধিবাসীরা যে ইতোমধ্যেই সেই শহর তাদের এই দাবী নিয়ে সেখানে প্রত্যাবর্তন করেছে (ঐশ্বরিক আদেশবলে বহিষ্কারের পর), এটা প্রমাণ করতে পারলে ইয়াজুজ মাজুজের মুক্তি এবং সেই সাথে তাদের পরিচয় উভয়টিই সূর্যের আলোর ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে।
কম করে বললেও ব্যাপারখানা আজব, রহস্যময় এবং ধাঁধার মত মনে হয় যে, পবিত্র কোরআনে “জেরুজালেম” (আরবীতে কুদ্স বা বায়তুল মুকাদ্দাস) শহরটির নাম একটিবারও উল্লেখ করা হয়নি! অথচ কোরআনে উল্লেখিত কত নবীর সাথে ঐ “পবিত্র শহরের” সম্পর্ক রয়েছে; আর এই শহরেই, মক্কা ও মদীনায় আল্লাহ্র নবী (স) কর্তৃক নির্মিত আল্লাহ্র গৃহসমূহ ছাড়া, আরেক নবীর হাতে নির্মিত আল্লাহ্র অপর গৃহখানি রয়েছে। আল্লাহ্র ঐ গৃহখানি (মসজিদ আল-আক্সা) কোরআনে কেবল উল্লেখিত হয়েছে তাইই নয়, তারই সাথে উল্লেখ করা হয়েছে রাসুলুল্লাহ্ (স) এর সেই অলৌকিক যাত্রার কথা, যে যাত্রায় তাঁকে মক্কা থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত আল্লাহ্র ঐ গৃহখানিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
এ বিষয়টি সম্পর্কে এমন রহস্য অবলম্বন করার পেছনে কারণ হতে পারে শেষ যুগে (End Times) জেরুজালেম একটা কেব্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য নির্ধারিত। সেকারণে আল্লাহ্ হয়তো ঐ শহরের নাম এবং তার পরিণতিকে একটা পবিত্র মেঘের আড়ালে আচ্ছন্ন রেখেছেন, যে মেঘের আবরণ উপযুক্ত সময় (জেরুজালেমের প্রস্তুতি সম্পন্ন) না আসা পর্যন্ত সরানো হবে না।
বর্তমানে জেরুজালেমের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে ঐ রহস্যের মেঘ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইহুদীরা যখন ঈসা (আ) কে প্রত্যাখ্যান করলো এবং পরবর্তীতে এই বলে গর্ব করলো যে, তারা তাঁকে হত্যা করেছে (নিসা ৪:১৫৭) তখনো তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলো যে, এই ঈসা তাদের আল্লাহ্ প্রতিশ্রুত মসীহ্ নয়, মসীহ্র আগমনী হচ্ছে ভবিষ্যতের একটি ঘটনা (যার সাথে সাথে ইহুদী ধর্মের Golden Age এর প্রত্যাবর্তন ঘটবে)। তারা বিশ্বাস করতো যে, অন্যান্য অনেক কিছুর সাথে, স্বর্ণযুগের প্রত্যাবর্তনের জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ হতে হবেঃ
১/ Gentiles বা অ-ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণ থেকে “পবিত্রভূমি” মুক্ত করতে হবে,
২/ নির্বাসিত ইহুদীরা তাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পবিত্রভূমিতে ফিরে আসবে।
৩/ ইজরায়েল রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে,
৪/ ইব্রাহিম (আ) এর বিধাতার (ইহুদি নিয়মে) উপাসনার জন্য, Temple of Solomon পুনরুদ্ধার করা হবে,
৫/ হযরত দাঊদ ও সুলায়মান (আ) এর যুগের মত, আবারো ইজরায়েল সমগ্র পৃথিবীর নিয়ন্ত্রা রাষ্ট্রে পরিণত হবে। (Like as SuperPower America)
৬/ ইজরায়েলের শাসক হিসেবে, দাঊদ (আ) এর সিংহাসন থেকে, অর্থাৎ জেরুজালেম থেকে একজন ইহুদী রাজা সমগ্র পৃথিবীর উপর শাসন করবে; আর সেই রাজাই হবে GOD-Promised messiah!
৭/ আর সেই শাসন হবে চিরস্থায়ী।
এখন নিচের বিষয়গুলো ভেবে দেখুনঃ
১/ ব্রিটিশ সেনাপতি অ্যালেনবি(Gen. Allenby) ১৯১৭ সালে যখন তুর্কী মুসলিমদের কাছ থেকে জেরুজালেম দখল করে নেয়, তখনই (ইহুদী বিশ্বাস মতে) মুসলিম বা ‘Gentile’ অ-ইহুদীদের কাছ থেকে পবিত্রভুমি মুক্ত হয়।
২/ আল্লাহ্ নির্ধারিত ২০০০ বছরের নির্বাসনের পর (আদি) ইজরায়েলী ইহুদীগণ, পবিত্রভুমির উপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সেখানে প্রত্যাবর্তন করেছে।
৩/ ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল “পুনরুদ্ধার” করে সেটাকে প্রাচীন ইজরায়েল বলে তারা দাবী করতে শুরু করে।
৪/ এই ইজরায়েল পারমাণবিক ও তাপ-পারমাণবিক মারণাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত। মনে হচ্ছে ফিলিস্তিনি “ইন্তিফাদা” (যা এ্যরিয়েল শ্যারন কর্তৃক উস্কানীর মাধ্যমে ইচ্ছাকৃত ভাবে সৃষ্ট) এবং নাইন ইলেভেনে মোসাদ কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ- এই দুই ঘটনার অযুহাতে ইজরায়েল এমন এক যুদ্ধে যাওয়ার নিয়তি বরণ করতে যাচ্ছে, যে যুদ্ধের এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাতিসংঘ ও অন্যান্য বাকী গোটা বিশ্বকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, ইজরায়েল নিজ প্রতিবেশের গোটা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে। ঐ যুদ্ধে তৌরাতে প্রতিশ্রুত এলাকা অনুযায়ী ইজরায়েলী ভুখন্ডের সম্প্রসারণ ঘটবে, অর্থাৎ মিশরের নদী থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত।
৫/ এরপরেই আল-আক্সা মসজিদের ধ্বংস সাধন ও সেই স্থলে Temple of Solomon প্রতিষ্ঠার কাজটি সমাধা হবে। “মসীহ্ বিধাতার জন্য একখানা গৃহ নির্মাণ করবেন" (বাইবেলের পুরাতন নিয়ম, ১ খান্দাননামা ১৭:১১-১৫)- নবী নাথনের এই ভবিষ্যতবাণী, বর্তমান মসজিদের ধ্বংস সাধনের ইঙ্গিত বহন করে।
এগুলো বর্তমান ইজরায়েল রাষ্টের নিত্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তন। তবে এই রাষ্ট্র যে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বানী করা সত্যিকার ইজরায়েল রাষ্ট্র নয়, বরং Anti-christ এর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় তৈরি একটি “ভন্ড” রাষ্ট্র তা ধাপে ধাপে বর্ণনা করবো।
নাম ব্যবহার না করে কোরআনে বারবার জেরুজালেমকে একটি “নগরী” বা শহর বলে অভিহিত করা হয়েছে। ‘শেষযুগে’ জেরুজালেমের ভূমিকার উপর, আল্লাহ্র তরফ থেকে যে মেঘের আবরণ ছড়িয়ে রাখা হয়েছিলো, এটা যেন তারই অংশ। উদাহরণস্বরূপ, কোরআনে ঐ ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে যখন তাদের নবী মুসা (আ) কে আল্লাহ্ তলব করেছিলেন এবং তিনি সিনাইয়ের চূড়ায় গিয়েছিলেন, আর ইত্যবসরে ইহুদীরা সোনার তৈরি বাছুরের পুজা করতে শুরু করে। পবিত্র কোরআনে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর ঐ ধরনের উপাসনা হলো শির্ক, যার পরিণতি হচ্ছে আল্লাহ্র শাস্তিঃ
“অবশ্য যারা ঐ (সোনার) বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পার্থিব এ জীবনেই গজব ও লাঞ্ছনা এসে পড়বে।
যারা (আল্লাহ্র বিরুদ্ধে) মিথ্যা আবিষ্কার করে, এভাবেই আমরা তাদের শাস্তি দিয়ে থাকি।
আর যারা মন্দ কাজ করে, তারপরে তওবা করে নেয় এবং ঈমান নিয়ে আসে,
তবে নিশ্চয় (তারা দেখবে যে) তোমার প্রতিপালক তওবার পর অবশ্য ক্ষমাকারী, করুণাময়।” [সুরা আ’রাফ ৭:১৫২-১৫৩]
Indeed, those who took the calf [for worship] will obtain anger from their Lord and humiliation in the life of this world, and thus do We recompense the inventors [of falsehood]. But those who committed misdeeds and then repented after them and believed – indeed your Lord, thereafter, is Forgiving and Merciful.
এরপর কোরআন ঘটনার বর্ণনাকে অব্যাহত রাখে- পবিত্রভুমিতে প্রবেশের অনুমতি লাভের আগে, ইজরায়েলীরা তখনও সিনাই মরুভুমিতে অবস্থান করছে- সেই সময় সম্পর্কে কোরআন ঘোষণা করেঃ
“আর আমি তাদেরকে (বনী ইজরায়েলকে) ১২টি গোত্রে বিভক্ত করে দিয়েছি,
এবং নির্দেশ দিয়েছি মূসাকে, যখন তাঁর কাছে তাঁর সম্প্রদায় পানি চাইলো যে, স্বীয় যষ্ঠির দ্বারা আঘাত কর এ পাথরের উপর।
অতঃপর এর ভেতর থেকে ফুটে বের হলো বারটি প্রশ্রবণ।
প্রতিটি গোত্র চিনে নিলো নিজ নিজ ঘাটি। আর আমি তাদের উপর মেঘের ছায়া দান করলাম, এবং তাদের জন্য অবতীর্ণ করলাম মান্না ও সাল্ওয়া
(এবং বললাম) আমি তোমাদের জন্য যে উত্তম আহার্য দান করেছি, সেখান থেকে আহার করো।
(কিন্তু তারা বিদ্রোহ করলো) তারা আমার কোনো ক্ষতি করেনি, বরং নিজেদের আত্মারই ক্ষতি করলো” [আ’রাফ ৭:১৬০]
And We divided them into twelve descendant tribes [as distinct] nations. And We inspired to Moses when his people implored him for water, “Strike with your staff the stone,” and there gushed forth from it twelve springs. Every people knew its watering place. And We shaded them with clouds and sent down upon them manna and quails, [saying], “Eat from the good things with which We have provided you.” And they wronged Us not, but they were [only] wronging themselves.
এরপরেই কোরআন জেরুজালেমকে, রহস্যজনকভাবে শুধুমাত্র একটি “শহর” বলে অভিহিত করেঃ
“আর যখন তাদের প্রতি নির্দেশ হলো যে, তোমরা এ নগরীতে (অর্থাৎ জেরুজালেমে) বসবাস কর এবং তোমাদের যেমন ইচ্ছা আহার করো, কিন্তু বিনয় সহকারে কথাবার্তা বলো
এবং প্রণত অবস্থায় দরজা দিয়ে প্রবেশ কর; আমি তোমাদের দোষ ত্রুটি ক্ষমা করে দেবো; অবশ্য আমি সৎকর্মীদেরকে অতিরিক্ত দান করবো। [আ’রাফ ৭:১৬১]
And when it was said unto them: Dwell in this city and eat therefrom whence ye will, and say “Repentance,” and enter the gate prostrate; We shall forgive you your sins; We shall increase (reward) for the right-doers.
একইভাবে কোরআন নিম্নলিখিত আয়াতে সতর্কবাণী সহকারে, আরো রহস্যজনক ভাবে জেরুজালেমকে কেবল একটি ‘শহর’ বলে আবারো উল্লেখ করেছেঃ
“এবং যে শহরকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তাঁর অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত;
যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধনমুক্ত করে দেয়া হবে, এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভুমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে (অথবা সবদিকে ছড়িয়ে পড়বে)।” [সূরা আম্বিয়া ২১:৯৫-৯৬]
And there is prohibition upon [the people of] a city which We have destroyed that they will [ever] return,
Until when [the dam of] Gog and Magog has been opened and they, from every elevation, descend.
যখন তারা সকল উঁচু জায়গা থেকে (সমতল ভুমিতে) নেমে আসে, অথবা সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে, কার্যত তারা তখন পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং “ইয়াজুজ মাজুজের” বিশ্বব্যবস্থা (World order) মুতাবেক পৃথিবীর উপর শাসন করে।
জেরুজালেমকে anonymous শহর বা ভুমি বলে আরো কয়েকটি আয়াতের অবতারণাঃ
“আমি বনী-ইজরায়েলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে, তোমরা দুই বার ‘ঐ ভুমিতে’ ফাসাদ (দুর্নীতি ও ভয়ংকর অত্যাচার) সৃষ্টি করবে
এবং শক্তিমদমত্ত হয়ে অহংকারী হয়ে উঠবে (এবং দুইবারই শাস্তিপ্রাপ্ত হবে)। [বনী ইজরায়েল ১৭:৪]
And We gave (Clear) Warning to the Children of Israel in the Book, that twice would they do mischief on the earth and be elated with mighty arrogance (and twice would they be punished)!
আল্লাহ্ তায়ালা বনী ইজরায়েলীদেরকে সতর্ক করেছিলেন তাদের দুইবার ফ্যাসাদ সৃষ্টির বিষয়ে এবং দুইবারই তাদেরকে চরম শাস্তি দিয়ে আল্লাহ্ তাঁর কথা রাখেন। প্রথম ঘটনাটি ঘটে খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সনে, যখন বখতে-নাসারের (Nebuchadnezzar) নেতৃত্বে ব্যাবীলনীয় এক বাহিনী জেরুজালেম অবরোধ করে, তারপর শহরটি পুড়িয়ে দেয়, এর অধিবাসীদের হত্যা করে, সুলাইমান (আ) কর্তৃক তৈরি করা মসজিদ ধ্বংস করে দেয় এবং ইহুদী জনসংখ্যার উৎকৃষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অংশকে ক্রীতদাস হিসেবে ব্যাবীলনে নিয়ে যায়। যেভাবে আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষণা করেছেন (বনী ইজরায়েল ১৭:১৫-১৬) যে, তিনি সতর্কবাণী না পাঠিয়ে কোনো জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেন না, ঠিক সেইভাবে নবী ইয়ারমিয়া (Jeremiah) বাইবেলে তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন (ইয়ারমিয়া ৩২:২৬)।
দ্বিতীয়বার, ঈসা (আ) কে ক্রুশবিদ্ধ করার পর যখন ইহুদীরা গর্ব করলো এবং তাঁকে হত্যার ক্রেডিট নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়লো তখন আবার তাদেরকে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়। সেনাপতি টাইটাসের (Titus) এর নেতৃত্বে রোমান বাহিনী ৭০ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম অবরোধ করে। টাইটাস জেরুজালেম শহর ধ্বংস করে দেয়, এর বাসিন্দাদের হত্যা করে ও পবিত্রভুমি থেকে অবশিষ্ট ইহুদীদের বহিষ্কার করে। পবিত্র মসজিদ আল আক্সা আবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং রোমান সৈন্যরা সেটাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে, গলিত স্বর্ণ পিন্ডের খোঁজে প্রতিটি পাথরকে এক এক করে আলগা করা হয়, ঠিক যেমনটি ঈসা (আ) সতর্কবাণী দিয়েছিলেন, “একটি পাথরও অপর পাথরের উপর লেগে থাকবে না; সব ভেঙ্গে ফেলা হবে।” ইহুদীদেরকে জেরুজালেম থেকে বহিষ্কারের লোমহর্ষক কাহিনী পড়তে ফলো করুন- বনী ইজরায়েল ১৭:৪-৭।
“এর আগে, আমি উপদেশের পর (অর্থাৎ মূসা (আ) এর কাছে পাঠানো তৌরাতের পর) যবুরে লিখে দিয়েছি যে আমার সৎ বান্দারা ‘ঐ ভুমির’ উত্তরাধিকার লাভ করবে।” [সুরা আম্বিয়া ২১:১০৫]
অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়ালা বনী ইজরায়েলকে পবিত্রভুমি জেরুজালেমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছিলেন এবং সে জন্য আজও তারা নিজেদের GOD’s chosen people বলে গর্ববোধ করে এবং জেরুজালেমকে তাদের Promised Land মনে করে, যদিও তারা দাঊদ (আ) এর স্রষ্টার আর ধার ধারে না।
“আমি তাঁকে (ইব্রাহিম) ও (তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র) লুত-কে উদ্ধার করে ঐ ভুমির দিকে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি বিশ্বের জন্য কল্যান রেখেছি” [সুরা আম্বিয়া ২১:৭১]
ইব্রাহিম (আ) কর্তৃক ইরাকস্থিত ঊর-বাসীর মূর্তি ভাঙ্গা ও সেই দোষে তাঁকে বিশাল অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপনের কাহিনী উক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা আগুন থেকে ইব্রাহিম (আ) কে রক্ষা করে কল্যাণময় ভুমি জেরুজালেমে নিয়ে আসেন।
“এবং সুলায়মানের অধীন করে দিয়েছিলাম প্রবল বায়ুকে; তা তাঁর আদেশে প্রবাহিত হতো ঐ ভুমির দিকে, যেখানে আমি কল্যান দান করেছি।” [সুরা আম্বিয়া ২১:৮১]
আল্লাহ্র এই সকল আশীর্বাদের জন্যই, ইজরায়েলের তৎকালীন (ইসলামী) রাষ্ট্রটি, যা সুলাইমান (আ) এর শাসনাধীন ছিলো, তা যে শুধু গোটা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রা রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিলো তাইই নয়, বরং তা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচে চমৎকার রাষ্ট্র বলেও স্বীকৃত। সুলাইমান (আ) এর ইজরায়েলের মাধ্যমেই ইজরায়েলী জনগণ Golden Age এর অভিজ্ঞতা লাভ করে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বর্তমানের “ফিরে আসা” এই অভিশপ্ত ইহুদীরা একজন Future Messiah এর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় আবার সেই Golden Age এ ফিরে যেতে চায়!
“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আক্সা পর্যন্ত;
যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।” [বনী ইজরায়েল ১৭:১]
কোরআন ঘটনার ক্রমানুবর্তিতায় আবার আশীর্বাদপ্রাপ্ত ভুমির উল্লেখ করে, যখন মক্কা থেকে জেরুজালেম এবং সেখান থেকে আসমানসমূহে মুহম্মদ (স) এর অলৌকিক রাত্রীকালীন যাত্রার বর্ণনা করা হয়। ঐ মসজিদে আক্সাকে রাসুলুল্লাহ (স) সনাক্ত করেন জেরুজালেমে নির্মিত নবী সুলাইমান (আ) এর উপাসনালয় হিসেবে।
“জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণিতঃ তিনি আল্লাহ্র রাসুল (স) কে বলতে শুনেছেন যে, কুরাঈশরা যখন আমার কথা বিশ্বাস করলো না (রাত্রিকালীন যাত্রার কাহিনী), আমি তখন আল্-হিজরে দাঁড়িয়েছিলাম এবং আল্লাহ্ জেরুজালেমকে আমার সামনে তুলে ধরেন, এবং আমি তা দেখতে দেখতে তাদেরকে বর্ণনা দিতে লাগলাম।” [সহীহ্ বুখারী]
এরপর রাসুলুল্লাহ (স) মুসলিমদেরকে কেবল তিনটি স্থান ব্যাতীত অন্য কোনো পবিত্র স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে নিষেধ করেনঃ
“আবু হুরাইরা (রা) কর্তৃক বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ্ (স) বলেনঃ তিনটি মসজিদ ছাড়া আর কোনো স্থানকে লক্ষ্য করে (তীর্থ) যাত্রা শুরু করো না- অর্থাৎ মসজিদুল হারাম (মক্কায়), আল্লাহ্র রাসুলের মসজিদ (মদীনায়), এবং মসজিদ আল্ আক্সা (জেরুজালেমে)”। [সহীহ্ বুখারী]
তাহলে দেখা যাচ্ছে কোরআনে বর্ণিত Anonymous শহরটি একমাত্র “জেরুজালেম” কেই ইঙ্গিত করছে এবং সুরা আম্বিয়ার ৯৫-৯৬ আয়াত অনুযায়ী পবিত্রভুমি জেরুজালেমে ইহুদীদেরকে একমাত্র ইয়াজুজ মাজুজের বিশ্ব ব্যবস্থাই পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
যখন আমরা জেরুজালেমকে কোরআনের ঐ ‘শহরটি’ বলে সনাক্ত করতে পারি, তখন আমাদের চোখের সামনে এও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে বর্তমান সময়ে পবিত্রভুমিতে ইজরায়েলী ইহুদীদের প্রত্যাবর্তন এটা নিশ্চিত করেছে যে ইয়াজুজ মাজুজকে ইতোমধ্যেই মুক্তি দেয়া হয়েছে, এবং তারা ‘প্রতিটি উঁচু স্থান থেকে নেমে এসেছে, অথবা সবদিকে ছড়িয়ে পড়েছে”, এবং সেহেতু এটা বলা ভুল হবে না যে তারা ইতোমধ্যেই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছে। যে বিশ্ব ব্যবস্থায় পৃথিবী আজ শাসিত হচ্ছে, তা হচ্ছে ইয়াজুজ মাজুজের বিশ্ব বিন্যাস বা বিশ্ব ব্যবস্থা। আর অবশ্যই ইয়াজুজ মাজুজই “পবিত্রভুমিতে” ইহুদীদের প্রত্যাবর্তনকে সম্ভব করে দিয়েছে।
কিভাবে?
আবার সূরা আম্বিয়ায় ফিরে যাইঃ
“নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে একটি শহরের উপর (জেরুজালেম) যাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি (এবং এর অধিবাসীরা সেখান থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে), (এই শহর আমাদের, এই দাবী নিয়ে) তারা (অর্থাৎ এর অধিবাসীরা) আর ফিরে আসতে পারবে না, যতক্ষণ না ইয়াজুজ ও মাজুজকে মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে এবং তারা সবদিকে ছড়িয়ে না পড়ছে। [আম্বিয়া ২১:৯৫-৯৬]
এর আগে কোরআন, হাদীস ও বাইবেলের বিভিন্ন উধৃতি নিয়ে গবেষণা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ধ্বংসপ্রাপ্ত সেই শহরটি হলো “জেরুজালেম” এবং বহিষ্কৃত জনগোষ্ঠীটি হলো বনী ইজরায়েল। শেষবার খ্রিস্টাব্দ ৭৩ সনে সেনাপতি টাইটাসের আক্রমণে জেরুজালেম যখন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তখন বনী ইজরায়েলীদেরকে জেরুজালেম থেকে ধরে এনে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তারা আর এক হতে না পারে। কিন্তু কোরআনের ভবিষ্যৎবাণীকে সত্য প্রমাণ করে দীর্ঘ ২০০০ বছর পর আবার ইহুদীরা জেরুজালেমে ফিরতে সক্ষম হয়েছে। বলা যায় ভয়ঙ্কর ইয়াজুজ মাজুজ তাদেরকে ফিরে এনেছে।
এখন আমরা ইতিহাসের পাতা খুলে সনাক্ত করবো যে ঠিক কারা ছড়িতে ছিটিয়ে থাকা ইহুদীদেরকে ২০০০ বছর পর জেরুজালেমে ফিরিয়ে আনলো!
অষ্টম শতাব্দীতে খাজার রাজ্যের রাজা বুলান ইউরোপে ব্যবসায়ীক সুবিধার জন্যে হঠাৎ করে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে ফেলে। ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করলেও তারা তাদের বাপ-দাদার প্যাগানিক কর্মকান্ড কখনো ছাড়তে পারেনি। হাল আমলের ভারত উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মগোষ্ঠীর মত শয়তানের উপাসনা তাদের চলতেই থাকে।
পরে খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে খাযারিয়ারা যথাক্রমে রোমান ক্যাথলিক ও আরবের উত্তরে বর্তমান তুরস্কের মুসলিমদের সাথে মিশে যায়। এর ফলে পৃথিবীর ইতিহাসে বিস্ময়কর একটা পরিবর্তন ঘটে, খাজার বংশোদ্ভূত ইহুদি ও খ্রিস্টানেরা প্রথমবারের মতো নিজেদের মধ্যে আন-হোলি বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কারণ, এতকাল ধরে ইহুদী ও খ্রিস্টানেরা ছিলো পরস্পর পরস্পরের চরম শত্রু! খ্রিস্টানদের messiah হযরত ঈসা (আ) কে ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য ইহুদীদের প্রতি তারা ছিলো যারপরনাই খ্যাপা। এমনকি ইসলামের নবী মুহম্মদ (স) এর সামনেও এরা পরস্পর ঝগড়া করেছে। ইউরোপের ইহুদী ও খ্রিস্টানদের আশ্চর্যজনক মিত্রতাকে কোরআন উল্লেখ করেছে এভাবেঃ
“”হে মুমিনরা! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু এবং অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু, (তোমাদের বন্ধু নয়)। তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধু বা অভিভাবক বানাবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।” (৫:৫১)
O you who have believed, do not take the Jews and the Christians as allies. They are [in fact] allies of one another. And whoever is an ally to them among you – then indeed, he is [one] of them. Indeed, Allah guides not the wrongdoing people.
এই আন-হোলী বন্ধনে আবদ্ধ ইহুদী-খ্রিস্টান মিত্র ইউরোপের ক্ষমতার শীর্ষস্থান গুলো দখল করার পরপরই কোনো এক রহস্যময় কারণে জেরুজালেমের দখল নেওয়ার জন্য বছরের পর বছর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড পরিচালনা করে। আমরা ক্রুসেড নিয়ে প্রথম পর্বে আলোচনা করেছি। পরে ১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা জেরুজালেমের দখল নিতে সক্ষম হয়। মুসলিমদেরকে কচুকাটা করা হয়, নারীরা ধর্ষণ-লাঞ্ছনার স্বীকার হয়, শিশুদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রায় ৯০ বছর পর কুর্দি বংশোদ্ভূত বীর যোদ্ধা (সেকুলার ভাষায় জঙ্গি) সালাউদ্দিন আইয়ুবী কর্তৃক পবিত্রভুমি জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করা হয়। এর ফলে পবিত্রভুমিতে এই ইহুদী-খ্রিস্টান আন-হোলী ক্রুসেডারদের রাজত্ব কিছু সময়ের জন্য নিভে যায়। কিন্তু তারা আবার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
১৮৯৭ সালে জায়োনিস্ট আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। (একই বছর ফেরাউনের লাশও উদ্ধার হয়)। ‘জায়ন’ হল একটি পাহাড়। জেরুজালেমের ‘জুডাহ’ পাহাড়। এই পাহাড়ের নামে এই আন্দোলনের নামকরণ করা হয়েছে ‘জায়নবাদী আন্দোলন’ বা Zionism. খাজার ইহুদীদের জায়ন পাহাড়ে ফিরে আসার অনুভূতি বা উচ্ছাস থেকে জায়ানবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত। উইকিপিডিয়ার ভাষায়ঃ
“…After almost two millennia of the Jewish diaspora residing in various countries without a national state, the Zionist movement was founded in the late 19th century by #secular Jews, largely as a response by Ashkenazi Jews to rising antisemitism in Europe, exemplified by the Dreyfus affair in France and the anti-Jewish pogroms in the Russian Empire….”
চিন্তা করেন, যারা সেকুলার, যারা GOD এর ধার ধারে না, তারা ফিরে যেতে চায় GOD Promised Land এ, তারা নিজেদের GOD’s chosen people বলে দাবী করে। এই ভন্ডরাই জায়োনিস্ট আন্দোলনের হত্তাকর্তা! (ভন্ডের আরবী প্রতিশব্দ আবার দাজ্জাল)
১৯১৩ সালে ফেডারেল রিজার্ভ প্রতিষ্ঠা করে ১৯১৪ সালে খাজার ইহুদীরা কৌশলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ লাগায় এবং তুরস্কের অটোমান খিলাফতকে যুদ্ধে জড়িয়ে মুসলিমদের খেলাফতি সিস্টেমকে ধ্বংস করে ফেলে। মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল মুসলিম রাজত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত করে এই ইউরোপীয় আন-হোলী মিত্র নিজেদের ভিত্রে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। সাথে আরব বিশ্বে রপ্তানী করে জাতীয়তাবাদের বিষ। মক্কা মদীনার খাদেম বনানো হয় জায়োনিস্ট এজেন্ট আল-সউদকে।
এর ফলে পবিত্রভুমি জেরুজালেম দখল করার পথে আর কোনো ঐক্যবদ্ধ মুসলিম শক্তি অবশিষ্ট থাকলো না।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় নভেম্বর ১৯১৮। কিন্তু এর অন্তত এক বছর আগে অর্থাৎ অটোমান সাম্রাজ্য তখনো বহাল, এ অবস্থায় ইজরায়েলী রাষ্ট্র গঠনের ভ্রূণ তৈরি করে রাখা হয়েছিল। দলিলের নাম বেলফোর ঘোষণা (Balfour Declaration 1917), বেলফোর (Arthur James Balfour) ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি একটা চিঠি লিখেছিলেন Walter Rothschild কে। ওয়াল্টার হচ্ছেন জার্মান ইহুদি বাবা লর্ড নাথন রথসচাইল্ডের (জার্মান উচ্চারণে রথশিল্ড) সন্তান, পুঁজি ব্যবসায়ী, সরকারি বন্ডের প্রধান ব্যবসায়ী। বেলফোরের চিঠিটা ঠিক কোনো সরকারি ঘোষণা নয়। তবে তিনি ইহুদিদের জায়নিস্ট রাষ্ট্রের স্বপ্নের পক্ষে তার সরকারের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ও সহানুভূতির কথা জানাতে এ চিঠি লেখেন। পরে এ চিঠিকেই বেলফোর ঘোষণার দলিল হিসেবে আবির্ভূত ও দাবি করা হয়।
“His Majesty’s government view with favour the establishment in Palestine of a national home for the Jewish people, and will use their best endeavours to facilitate the achievement of this object, it being clearly understood that nothing shall be done which may prejudice the civil and religious rights of existing non-Jewish communities in Palestine, or the rights and political status enjoyed by Jews in any other country.”
কলঙ্কিত বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পার হয়েছে ২০১৭ সালে।
১৮৯৭ সালে জায়নিস্ট আন্দোলন শুরু হলেও ইউরোপে এই আন্দোলনের জনপ্রিয়তা পাচ্ছিলো না। এর দু’টি কারণ ছিলোঃ
১/ ইউরোপের সুখ স্বাচ্ছন্দময় জীবন ও জমি জমা ফেলে রেখে জেরুজালেমের মরুভুমিতে গিয়ে বর্বর জীবনযাপন করাকে সাধারণ ইহুদীরা মেনে নিতে পারছিলো না।
২/ জেরুজালেমে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ইহুদীরা দুই ভাগে বিভক্ত ছিলো। জায়োনিস্ট ইহুদীদের মতামত হলো “ইজরায়েল” রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য Messiah এর আগমণ জরুরী নয়। আমরা আগেভাগে গিয়ে ইহুদীবাদী রাষ্ট্র বানাবো, তারপরে মেসিয়াহ্ এসে আমাদেরকে সুলাইমান (আ) এর Golden Age উপহার দিবেন। জার্মানির আসকেনাজী ইহুদীরা জায়োনিস্ট আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। বাদবাকী ইহুদীরা বাইবেল খুলে প্রমাণ দেখায় যে, “ইজরায়েল” রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল শর্ত হলো মেসিয়াহ্ এর আগমণ।মেসিয়াহ্ স্বয়ং এসে ইহুদীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন করবেন এবং পৃথিবীর সকল জাতির উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠ বানাবেন। [Isaiah 11:11-12]
জায়োনিস্টরা পড়ে যায় মুশকিলে। ফলে তাদেরকে ভায়োলেন্সের পথ বেছে নিতে হয়। হিটলারের সাথে তাদের চুক্তি হয়। যে সকল ইহুদীরা বিশ্বাস করে ইজরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য মেসিয়াহ্ এর আগমণ হলো পূর্বশর্ত তাদেরকে টাইট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
হিটলার সম্পর্কে আমার সিরিজ;
হিটলার নিজে ছিলেন একজন যায়োনিস্টঃ
হিটলারের “স্বস্তিকা” হল একটি প্যাগানিক সাইনঃ
হিটলার ছিলেন স্যাটানিক ওয়ার্শীপারঃ
হিটলারঃ ফিতনাবাজ’দের আদর্শ
তোমরা যারা হিটলার করোঃ
অকথ্য নির্যাতনের মুখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদীরা ঝাঁক বেঁধে জেরুজালেমে রেফিউজি বেশে প্রত্যাবর্তন করে। বোকা ফিলিস্তিনি আদি নিবাসীরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে তখন যে ভুলে নিপতিত হয় সে ভুলের মাশুল আজও প্রতিটি মুহূর্তে দিয়ে যাচ্ছে। আজ তারা রেফিউজির বেশধারী সেই খাজার ইহুদীদের আগ্রাসনের স্বীকার। গত ২০০০ বছর ধরে ঐ পবিত্রভুমিতে যারা দাঊদ ও মূসা (আ) এর স্রষ্টার উপাসনা করে এসেছে, সেই উপাসনাকারীদের দাঊদ ও মূসা (আ) এর নামেই কচুকাটা করা হচ্ছে, ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের স্যাটানিক সংবিধানের আওতায় ইজরায়েলকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয় এবং ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা ঠিক যেনো মেসিয়াহ্ এর মতোই ভুমিকা রাখে। সেই থেকে ইউরোপ মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া অবৈধ শিশু ইজরায়েলের ভরণপোষণের সকল দায়িত্ব বহন করে আসছে পিতা আমেরিকা।ইজরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর এর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ১৯৪৯ সালে ইউরোপীয় অঞ্চলগুলোকে নিয়ে গঠন করা হয় NATO. জাতিসংঘের মতো ন্যাটোও জায়োনিস্ট ইহুদী-খ্রিস্টান মিত্রদের একটি জোট যারা ইজরায়েলের নিরাপত্তায় যেকোনো দেশে হামলা করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক এর জলন্ত প্রমাণ। অবশ্য তুরস্কের মতো একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রকে ন্যাটোতে যুক্ত করাতে পেরে ইজরায়েলের অনেক সুবিধা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে হামলা করার জন্য ন্যাটো তুরস্কের এয়ারবেইছ ব্যবহার করে বেশ সুফল পাচ্ছে।
ইজরায়েল এমন একটা বিস্ময়কর রাষ্ট্র যে রাষ্ট্রের সীমানা প্রতিদিনই বাড়ে। এবং এই সীমানা মিশরের নীলনদ থেকে ইরানের সীমান্তবর্তী ফোরাত নদী পর্যন্ত না বাড়া পর্যন্ত তাদের ভায়োলেন্স চলতেই থাকবে।
যাই হোক, ইজরায়েল সৃষ্টির ঐতিহাসিক দলীল থেকে আমরা জানলাম বর্তমানের “GOD’s chosen People” দাবী নিয়ে আজ যারা পবিত্রভুমিতে সন্ত্রাসীপনা করছে তারা আসলে খাজার ইহুদী, ইয়াজুজ মাজুজের ব্লাডলাইন। দাঊদ কিংবা ইব্রাহিম (আ) এর রক্তের সাথে এদের সম্পর্ক নাই, এরাই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদীদের পবিত্রভুমিতে ফিরিয়ে এনে সূরা আম্বিয়ার ভবিষ্যতবাণীকে পূর্ণ করেছে [২১:৯৬]
এই জায়নবাদী ইহুদীদের নিয়ে যে গবেষণা হয় না এমন না। তবে খুব সীমিত পর্যায়ে। যেহেতু জায়নবাদীরা পৃথিবীর ক্ষমতার শীর্ষস্থান গুলো দখল করে আছে তাই অনেক গবেষণা, জায়নবিরোধী লেখনী আলোর মুখ দেখতে পারে না।
ডঃ এরান এলহাইক, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের জেনেটিক গবেষক তার গবেষণাতে এটি দেখান যে বর্তমানের ইহুদীরা মূলত খাজারিয়ার বাসিন্দা, এরা ইব্রাহিম (আ) এর প্রজন্ম নয়। সে হিসাবে তারা খাজার, ইজরাইলীয় নয়। আমেরিকা, ইউরোপ, এবং বর্তমানের ইজরাইলের ইহুদী জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ) নন, বরং এরা কিং বুলান এর উত্তরসূরী এবং পুরানো খাজারিয়ার বাসিন্দা। রাশিয়ার দক্ষিণের ককেশাস অঞ্চলে টার্কিক লোকেরা ছিল মূর্তিপূজক বা স্যাটানিক ওয়ার্শীপার যারা পরে ইহুদী ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় অষ্টম শতাব্দীতে। সপ্তম শতাব্দীতে ইসলাম আসে, এরা ইহুদী ধর্মে ঢুকে ইসলামের শেষ নবী আসারও বহু পর। কিন্তু বর্তমান ইজলায়েলের সন্ত্রাসবাদী ইহুদীরা আদৌ কখনো আদি ইসরাইলের বাসিন্দা ছিলো না। এইসব খাজাররা পরবর্তীতে রাশিয়া, হাঙ্গেরী, পোলান্ড, জার্মানি এবং ইউরোপের আরো অনেক দেশে বাস করতো। পরে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় তারা ইজরায়েলের দখল নিতে সক্ষম হয়।
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশ ঐতিহাসিক ও পুরাতত্ত্ববিদ হিউস্টোন স্টুয়ার্ট চ্যাম্বারলেন “দ্যা ফাউন্ডেশন অব দ্যা নাইনটিন্থ সেঞ্চুরী” নামে বই ছাপেন। বইয়ের একটি বাক্য এরকমঃ “which held that the Jews were not a race, but instead, were ‘bastards.’ অর্থাৎ ইহুদীরা কোন জাতি নয়, বরং শিকড়হীন জারজ! ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে একজন বড় ইহুদী স্কলার আব্রাহাম হারকাভি এটি ষ্পষ্ট করেন যে, ইহুদীদের প্রচলিত ইদিশ ভাষাটিও খাজারদের ভাষা। এর মানে এর সহজ অর্থ দাঁড়ায় এদের পূর্ব পুরুষ আদি ইজরায়েলের কেনানের বাসিন্দা নয়, বরং ককেসাস অঞ্চলের আর্য গোত্রের। জাতিগতভাবে এরা হান, উলগোর এবং মেগিয়ার ব্লাডলাইনের অধিকারী।
ইহুদী স্কলার Arthur Koestler ১৯৭৬ সালে “The Thirteenth Tribe” নামে একটি চমকপ্রদ বই রচনা করেন, যেখানে তিনি প্রমাণ সহকারে দেখান জার্মান আসকেনাজী ইহুদীরা আসলে টার্কিশ খাজার ব্লাডলাইনের, যারা অষ্টম শতাব্দীর অন্ধকারের যুগে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে ১৩-তম গোত্র হিসেবে বনী ইজরায়েলের সাথে মিশে যায় এবং ওয়েস্টার্ন কমিউনিটি গঠন করে। এই ১৩-তম গোত্রের সাথে বাইবেলীয় ইজরায়েলের কোনো সম্পর্ক নাই এবং তারা নবী জ্যাকব (ইয়াকুব) এর বংশধরও নয়।
বাস্তবেও আমরা তাইই দেখতে পাই। বর্তমানের ইজরায়েলী ইহুদীদের ৯০ ভাগ সাদা ধবধবে ইউরোপীয় চামড়ার অধিকারী, তাদের চক্ষু নীল এবং চুল সোনালী বর্ণের। অথচ শারীরিকভাবে এদের আরবদের সাথে মিল থাকার কথা। কারণ আরবরা এসেছে ইবারহিম (আ) এর এক পুত্র ইসমাইল (আ) এর বংশ থেকে এবং ইজরায়েলীরা এসেছে তাঁর আরেক পুত্র ইসহাক (আ) এর বংশ থেকে। তাই শারীরিক গঠনে দুই ভাই এর বংশধরদের তেমন একটা পার্থক্য থাকার কথা না। কিন্তু বর্তমান ইজরায়েলী ইহুদীরা টার্কিশ খাজার বংশোদ্ভূত হওয়ায় সহজেই আদি ইজরায়েলীদের থেকে আলাদা করা যায়।
এবার কিছু অ্যারাবিয়ান মানুষ দেখা যাকঃ
ইহুদীদেরকে জেরুজালেমে ফিরিয়ে আনা ইয়াজুজ মাজুজের অনেকগুলো ভূমিকার একটি। পরের পর্বে আমরা অন্যান্য ভূমিকাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ্!
কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-১
কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-২
©somewhere in net ltd.