নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ!

মৃদুল ইসলাম

এ্যা ম্যান অব স্ট্রীম অব অপজিট্‌স

মৃদুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৭

১৪ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৬:১৯



মিস্টেরিয়াস নীলচক্ষুঃ

যেদিন সিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, সেদিন আমি অপরাধীদেরকে সমবেত করবো নীলচক্ষু অবস্থায়। [সূরা তোয়াহাঃ ১০২]
The Day the Horn will be blown. And We will gather the criminals, that Day, blue-eyed.

হাশরের ময়দানে অপরাধীদের চোখ নীল বর্ণ ধারন করবে। অপরাধীরা ভয়ে মুষড়ে যাবে আর এতে চোখ গুলো নীল বর্ণ হবে অথবা আল্লাহ অপরাধীদের কে আরো বেশি লাঞ্ছনা ও শাস্তি দেয়ার জন্য সকলের মাঝে নীল চক্ষু অবস্থায় চিহ্নিত করে রাখবেন।
Institute of Forensic Genetics at the University of Copenhagen এর একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেন যে নীলচক্ষুর অধিকারী সকল হিউম্যান স্পিসিস একজন মাত্র পূর্বপুরুষ হতে আগত, যিনি আজ থেকে ৬০০০-১০০০০ বছর পূর্বে কৃষ্ণসাগরের আশেপাশে বসবাস করতেন। এই মানুষগুলো ছিলো প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়ান আর্য জাতি। এরা কৃষ্ণসাগরের ককেশাস অঞ্চল থেকে ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিম ইউরোপে এবং পরে ঘোড়ায় চড়ে ইরান এবং ভারত অঞ্চলে আগ্রাসন চালায়।



আমাদের দেশের ক্লাস সিক্স-সেভেনের (সম্ভবত) ‘সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে আর্যদের আগ্রাসনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। আমি পড়েছি অনার্যদের উপরে আর্যদের এই ভয়ঙ্কর অত্যাচারের কাহিনী। এখন বোর্ড বইয়ে বিষয়টা নাওও থাকতে পারে। এরা ছিলো মূলত মূর্তিপুজারী এবং এখানকার অনার্যদের তাদের ধর্মগ্রহণ করতে বাধ্য করেছিলো। বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে যে প্যাগানিক হিন্দুধর্ম চালু আছে তা ঐ আর্য আগ্রাসনেরই বাই-প্রোডাক্ট। সে সময় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ছিলো “গরু”। এজন্য গরুকে দেয়া হয় মায়ের সম্মান। যাই হোক, ভারতীয় মিডিয়া অবশ্য আর্যদের আজকাল নায়ক (Aryan) হিসেবে উপস্থাপন করে!

গুণের দিক থেকেও নীলচক্ষুর অধিকারী লোকজন বাকী মানবজাতি থেকে আলাদা। তাদের ব্লাডলাইন এক এবং অনাচার-অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-ফ্যাসাদ সৃষ্টির উস্তাদ। বর্তমান পৃথিবীতে যত অন্যায় অত্যাচার জুলুম সংগঠিত হচ্ছে, তার পেছনে নাটের গুরু হলো ইউরোপ-আমেরিকা এবং এসব জুলুমের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে এদের অধিকাংশই নীল চোখের অধিকারী। আজ বিশ্বে যত অনিয়ম চলছে, তার মাস্টার প্ল্যান কোন না কোনো নীল চোখের বিকৃত মস্তিষ্ক থেকে বের হচ্ছে। এ যেনো হাশরের ময়দানের একটা Demo বা নমুনা, আখিরুজ্জামান সংগঠিত হওয়ার আগেই মহান স্রষ্টা জুলুমের কারিগরদেরকে আমাদের সামনে নীল চক্ষু অবস্থায় সমবেত করেছেন! (আল্লাহু আলাম)

সুপ্রাচীন সুমেরীয় প্যাগানরা নীলচক্ষুকে GOD এর সাইন মনে করতো। নীলচক্ষুর অধিকারী লোকদের সামাজিক মর্যাদায় সবার উপরে স্থান দিতো। বলা বাহুল্য, প্যাগান GOD মানেই শয়তান জ্বিন। আপনারা যারা “Suicide Squad” মুভি দেখেছেন তারা স্মরণ করতে পারবেন, বোন জ্বিন তার ভাইকে এক পর্যায়ে বলতেছে, আমরা এমন প্রযুক্তি বানাবো যেটা দেখে মানুষরা আমাদের পূজা করবে। এইটা শুনে ভাই জ্বিন বলতেছে, মানুষরা তো আগে আমাদেরই পূজা করতো, হঠাৎ কি হলো তাদের? তখন বোন জ্বিন বলতেছে তারা এখন প্রযুক্তির পূজা করে। কথাটা সত্য। শির্‌কের ধরণ পাল্টে গেছে। ঈসা (আ) ও মুহম্মদ (স) এর আগমনের মধ্য দিয়ে মূর্তিপূজা বিলুপ্ত হয়েছে। মানুষ শয়তানের আইডল বানিয়ে আর পূজা করে না (ভারতের হিন্দুরা বাদে)। তাই বাধ্য হয়ে শয়তানকেও ভিন্ন পথ বেছে নিতে হয়েছে। মানুষ এখন মানুষের জ্ঞানকে পুজা করে, মানুষ এখন জাতিসংঘের স্যাটানিক সংবিধানকে পুজা করে, তারা নীলচক্ষুদের বানানো বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থার পুজা করে।

নিচে Blue-Eyed GOD এর কিছু চিত্র দেওয়া হলোঃ



নীলচক্ষুর মানুষ দেখতে চাইলে প্রচুর হলিউডি মুভি-নাটক দেখার অভ্যাস থাকতে হবে। আমি লক্ষ্য করেছি যেকোনো মুভির প্রায় ৮০% ক্যারেক্টার বেছে নেওয়া হয় নীলচক্ষুদের পক্ষ্য থেকে। মূল চরিত্র বা নায়ক-নায়িকার ক্ষেত্রে যা প্রায় ৯৫%। হলিউড শাসনকারী তারকাদের অধিকাংশই Blue-Eyed. যদিও গোটা আমেরিকায় নীল চোখ-ওয়ালা ব্যাক্তির পরিমাণ মাত্র ১৬%। যা পুরো পৃথিবীতে মাত্র ৮%। এই হলিউড তারকারা জীবন যাপনে উশৃংখল, ব্যাভিচারী এবং প্রায় সবাইই গুপ্ত সংঘ illuminati, Freemasons ইত্যাদি এর এর সেবাদাস, এরা স্যাটানিক ওয়ার্শিপার।



১৯৬২ সালে নির্মিত অস্কারপ্রাপ্ত মুভি Lawrence of Arabia‘র কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? আরবীয় পোশাক পড়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে সিরিয়ার “দারা” শহরে প্রবেশ করলে অটোমান পুলিশ তাকে অনারব হিসেবে সহজেই সনাক্ত করে ফেলে। কারণ লরেন্স ছিলো Blue-eyed Man.



হলিউড নিয়ে কিছু বলা যাক। “হলিউড” নামটার মধ্যেই একখানা টুইস্ট লুকিয়ে আছে। HollyWood বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই Holly+Wood. যার বাংলা করলে হয় পবিত্র কাঠ বা পবিত্র বন-জঙ্গল। তাইলে হলিউডের এই “জঙ্গল” কাদের কাছে পবিত্র? অবশ্যই প্যাগান ও যারা যাদুবিদ্যা চর্চা করে তাদের কাছে পবিত্র। Black art, Magic, Kabbala যারা চর্চা করে তাদের কাছে পবিত্র। আগেকার যাদুকররা এক ধরণের লাঠি (Magic Wand) যাদুচর্চায় ব্যবহার করতো। যে লাঠি দিয়ে তারা মানুষকে বশ করতে পারতো, সম্মোহিত করতো, নিজেকে ভুলিয়ে দিতো। হ্যামিলনের বাশিওয়ালার মতন আর কি! ঐ প্যাগান যাদুচর্চাকারীদের সেই ‘পবিত্র জঙ্গল’ শব্দ দুটির তাৎপর্যগত মিল রেখে প্রতীকীভাবেই আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণকেন্দ্র আমেরিকার Hollywood নামটি নেয়া হয়েছে।



লক্ষণীয় বিষয় হলো প্রাচীনকালের প্যাগান যাদুচর্চাকারীদের সেই Holy Wood এবং আধুনিক Hollywood কার্যক্ষেত্রে মানুষের উপর একই অশুভ প্রভাব ফেলে চলেছে। বর্তমান হলিউড সমগ্র পৃথিবীর ব্যাপক মানুষকে জ্ঞাত অজ্ঞাতসারে তাদের মুভি, কলাকুশলী লাইফ ষ্টাইল এবং কালচার এর অশুভ প্রভাবের মাধ্যমে এক ধরণের সম্মোহন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। পশ্চিমা হলিউডের আদলে ঐ একই মিশন নিয়ে প্রাচ্যেও গড়ে তোলা হয়েছে Bollywood. এইসব মিডিয়া ইন্ড্রাস্ট্রি পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্সে বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মিথ্যা মিশিয়ে প্রচার করে মানুষের ব্রেইনওয়াশ করছে সহজেই। “অবাস্তব” কে বাস্তব রুপ দান করে গুলিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে তরুণ-তরুণীরা বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে “ফ্যান্টাসীর” জগতে গা ভাসাতেই এখন বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।

ফেরাউনের আমলেও এমন মিডিয়া ইন্ড্রাস্ট্রি ছিলো। তার এজেন্টরা প্রত্যেকদিন জনগনের মাঝে ফেরাউনী অলৌকিকতা ও ডিভিনিটি বর্ণনা করত। মিশরীয়দের বোঝাতো যে, ফেরাউনের জন্যই বন্যা হয়, সুদূর দেবালয় পুন্ট (ইথিওপিয়া) থেকে নীল নদে পানি আসে, ভালো ফসল ফলে। তারা ফেরাউনের যুদ্ধের মিথ্যা বর্ণনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করত। ফেরাউন Rameses ll হিট্টীয় সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়। কিন্তু তার নির্দেশে মিডিয়া এজেন্টরা প্রচার করে যে, ফেরাউন যুদ্ধে জয়লাভ করেছে। এভাবে তারা ফেরাউনের সময়ও যেমন চামচামি করতো ও প্রোপাগান্ডা ছড়াতো, বর্তমান আধুনিক সভ্যতাতেও চামচামি করে ও প্রোপাগান্ডা ছড়ায়।



আর হলিউড সহ পশ্চিমা বিভিন্ন নিউজ-মিডিয়ায় নীলচক্ষু মানবদের অধিকহারে রিক্রুটের কারণ সম্ভবত এই যে পৃথিবীবাসীর মগজ ধোলাইয়ের জন্য ইয়াজুজ মাজুজ গং তাদের নিজ গোত্রীয় লোকদেরই বেশি ট্রাস্টেড মনে করে।
তবে সকল নীল চোখের মানুষই খারাপ না। এদের মধ্যেও সৎকর্মপরায়ণ আছে, এরাও জান্নাতে যাবে, তবে সংখ্যাটা হবে খুবই সীমিত। নীল চোখের মানুষদের আমরা ইয়াজুজ মাজুজ গোত্রীয় বলছি তিনটি তথ্যের উপর ভিত্তি করেঃ

১/ এদের অতীত উৎপত্তি ও বর্তমান অবস্থান,
২/ এদের ফিত্না-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার প্রবণতা ও সক্ষমতা।
৩/ শয়তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা।

রথচাইল্ড পরিবার হলো খাঁটি ইয়াজুজ মাজুজের ব্লাডলাইন। এরা খাজার ইহুদী। বর্তমান ইজরায়েলের ৯০ শতাংশ ভূমির মালিক এই পরিবার। একটি ভিডিও সাজেস্ট করা গেলোঃ
Lord Rothschild Discusses How His Family Created Israel ! 2017 Interview

শেষকথাঃ যারা জিদ ধরে বসে আছেন যে ইয়াজুজ মাজুজরা এখনো বিশ্বে মুক্ত হয়নি, তারা অস্বীকার করতে পারবেন না যে, তাদের এই দাবীর মানে হলো মহান আল্লাহ্‌ এখনো যুলক্বারনাঈনের প্রাচীরকে ধ্বংস করে দেননি। এমতাবস্থায়, এরূপ সন্দেহ পোষণকারী লোকদের উপর এটা ধর্মীয় দায়িত্ব যে, তারা যুলক্বারনাঈনের প্রাচীরের অনুসন্ধান করে প্রমাণ করুক তাদের দাবী অনুযায়ী প্রাচীরটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কোরআনে বর্ণিত ঐ দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যুলক্বারনাঈনের প্রাচীরের অনুসন্ধানের জন্য কোনো রকম প্রচেষ্টা তারা যদি না চালায়, তবে কোরআনের প্রতি এই অদ্ভূত অবহেলা কিভাবে বৈধ, তার ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে। তাদের আরও ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেনো হাজার বছরেরও অধিক সময় ধরে কেউ কখনো এই প্রাচীর প্রত্যক্ষ করেনি। উপরন্তু তারা জানাতে বাধ্য থাকবে, তারা কি এরূপ অনুসন্ধানে কখনো নেমেছিলো? না নামলে তার কারণ কি?

এটা এমন যুগ যেখানে আমাদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এক নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আজ স্যাটেলাইট প্রযুক্তি (Google Earth) আক্ষরিকভাবেই পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চির ছবি তোলাকে সম্ভব করেছে। তাহলে যুলক্বারনাঈনের প্রাচীর ও তার অপর পার্শে অবস্থানরত অদ্ভূত প্রাণী ইয়াজুজ মাজুজ কেনো দৃশ্যমান হয় না?
মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি জাতি সমগ্র পৃথিবী, অর্থাৎ এর মুদ্রা, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী, অর্থনীতি, বাজার, সংস্কৃতি, খাদ্য, খবর, খেলাধুলা, যোগাযোগ, বিনোদন, ফ্যাশন এবং ভ্রমণ ইত্যাদির উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা চরম ক্ষমতার অধিকারী, যা ক্রমশ আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সম্ভাব্য এমন কোনো মিলিত শক্তি নেই যারা তাদের চ্যালেইঞ্জ করতে পারে। উপরন্তু এমন কোনো নিরপেক্ষ প্রমাণও নেই যে, সমগ্র বিশ্বের উপর তাদের ক্ষমতার থাবাকে কেউ সফলভাবে চ্যালেইঞ্জ জানাতে পেরেছে।
পৃথিবীকে শুধু নিয়ন্ত্রণই নয়, তারা এর চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান। তারা পৃথিবীকে নিজেদের মন মতো পরিবর্তন করেছে। বহু যুগ ধরে লালিত প্রাচীর এবং মানুষের চমৎকার সামাজিক বৈচিত্র, যা তাদেরকে একে অপর থেকে আলাদা করে রাখতো, সেগুলিকে তারা তছতছ করে দিয়েছে। মানবজাতিকে তারা এমনভাবে বিশ্বায়িত করেছে যে, মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ঈশ্বরহীন বিশ্বব্যাপী সমাজ আবির্ভূত হয়েছে।

তারা আধুনিক পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ সভ্যতা এবং ইউরোপীয় বিশ্ব-ব্যবস্থা তৈরি করেছে যেনো এগুলি তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। অদম্য বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি, শিল্পোদপাদন, তথ্য প্রযুক্তি ও যৌনবিপ্লবের (পর্ণগ্রাফি তার একটা অংশ) মাধ্যমে তারা সমাজকে এমনভাবে আলোড়িত করেছে যে, নিকট অতীতকেও এখন সেকেলে মনে হয়। তারা নতুন ও সর্বাধুনিক পণ্যসামগ্রী, ফ্যাশন অথবা স্টাইলকে সর্বোত্তম হিসেবে সাদরে গ্রহণ করার পথ তৈরি করেছে। তাদের জীবনযাত্রাকে সর্বোত্তম উন্নতির পরিচায়ক হিসেবে গোটা মানবজাতির স্বীকৃতি পেতে সফল হয়েছে।

ক্রমাগত তারা নিজেদেরকে পরিবর্তিত, বিকশিত এবং নতুনভাবে আবিষ্কার করছে। আর এভাবেই তারা তাদের সাথে সমগ্র মানবতাকে ঈশ্বরহীন সমাজে পরিবর্তিত করতে থাকবে যতক্ষণ না সবাই তাদের কার্বনকপি-তে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু এই জীবনযাত্রা হচ্ছে মানবতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যে ক্ষয়িষ্ণু ও ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির। নারীদেরকে তারা চরিত্রহীনা করেছে। তাদের পরনের কাপড় এমন পরিসরে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এখন তারা পোশাক পরিধান করা স্বত্বেও উলঙ্গ। (অনেক কিছুর ন্যায়) পুরুষরা নগ্নতার প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত একটা যৌনবিপ্লব সংগঠিত হবে যার ফলে যৌনমিলন সূর্যের আলোর ন্যায় সহজলভ্য হয়ে যাবে। বিবাহ এখন সেকেলে হয়ে গেছে, ক্ষেত্রবিশেষে কঠিন করে ফেলা হয়েছে। অধিকাংশ শিশুই এখন বিবাহ বহির্ভূতভাবে বা অবৈধভাবে জন্ম নিচ্ছে। পশ্চিমা সমাজে এমন বাস্টার্ড বা জারজ শিশুর অভাব নেই। যৌন উচ্ছৃঙ্খলা ও অবাধ যৌনাচারপূর্ণ জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে লোকজন আলিঙ্গন করছে। যৌনচাহিদা ও আকাংখাকে তারা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে যৌন-হয়রানী ও ধর্ষণ এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলস্বরুপ, যৌনকামনার অতৃপ্ত পিপাসার জন্যে তারা আর স্বাভাবিক ব্যাক্তিগত যৌনসম্পর্কের মাঝে তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছে না, বরং পাবলিক বা জনসম্মুখে যৌনমিলন সংগঠিত হচ্ছে এবং শীঘ্রই লোকজন গাধার ন্যায় জনসম্মুখে যৌনমিলন আরম্ভ করে দিবে। উপরন্তু নারী-পুরুষের স্বাভাবিক যৌনসম্পর্ক তাদের যৌনকামনাকে আর মেটাতে পারছে না, তাই তার স্থান দ্রুত দখল করে নিচ্ছে পুরুষ সমকামীতা homosexuality ও নারী সমকামীতা lesbianism.



তারা তৈরি করেছে গগণচুম্বি অট্টালিকা, অত্যাধুনিক ম্যানহাটন, যা বাকি বিশ্বের খালি পায়ের বেদুইনদের উঁচু ভবন তৈরির প্রতিযোগীতায় লিপ্ত করেছে।
তাদের সফলতা এতটাই চাকচিক্যময় যে, খ্রিস্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ, হিন্দু অথবা ইসলাম, যে ধর্মেরই হোক না কেনো, সমগ্র মানবজাতি তাদের ক্ষয়িষ্ণু, ধর্মনিরপেক্ষ এবং বাস্তবিকপক্ষে ঈশ্বরহীন জীবনযাত্রাকে অনুকরণ ও অনুসরণ করছে। মুসলিমদের উদ্দেশ্যে নবী (স) ভয়াবহ সতর্কবাণী করেছেনঃ

“তোমার তাদেরকে পদে পদে অনুসরণ করবে, এমনকি গিরগিটির গর্তে প্রবেশ করলেও…।” [সহীহ্‌ বুখারী]

ইউরোপীয় ইহুদী-খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঘৃণা ও বিদ্বেষের সম্পর্ককে আজ একটা আজব মিত্রতায় দাঁড় করিয়েছে। তারা এখন একে অপরের আজব পারস্পরিক মিত্র ও বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। তারা বিশ্বের শাসকে পরিণত হয়েছে, আর ইতিহাসে এটা একটা অনন্য ঘটনা। তারা বৈষম্যমূলক বিশ্ব ব্যবস্থা তৈরি করেছে যেটা সাধারণভাবে অ-ইউরোপীয়দের জন্যে অশুভ, এবং বিশেষভাবে আরব ও মুসলিমদের জন্য ভয়ানক। তাদের বিশ্ব ব্যবস্থা নিষ্ঠুর অত্যাচারের যুদ্ধ আরম্ভ করেছে যাতে পৃথিবীর সকল অ-ইউরোপীয় দেশ দখল করা যায়। উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকার দক্ষিণ অংশ, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি স্থানে সারা পৃথিবী এরকম উচ্ছেদ প্রত্যক্ষ করেছে। এ রকম নিষ্ঠুরতা কেবলমাত্র তদের দ্বারাই সংগঠিত হতে পারে যাদের অন্তর পশুর মতো, যে অন্তরে খ্রিস্টান বা ইহুদী ধর্মের প্রতি সরিষা দানা পরিমান বিশ্বাস নেই।



বাদবাকী বিশ্বের উপর কর্তৃত্বকারী ইউরোপীয় ইহুদী-খ্রিস্টান শাসন ব্যবহৃত হচ্ছে মানবজাতির ধনসম্পদ চুরি, লুন্ঠন ও শোষণ করতে। কিন্তু তাদের চূড়ান্ত এজেন্ডা হলো এমন এক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাপিয়ে দেওয়া যার মাধ্যমে ইহুদী-খ্রিস্টানরা ঔপনিবেশিক শেষ হয়ে যাবার পরেও এসব দেশের ধর্মীয় জীবনযাত্রা ও প্রতিষ্ঠানকে, বিশেষভাবে ইসলামের জীবন পদ্ধতিকে ধ্বংস করে তাঁকে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে রুপান্তর করতে পারে।
তারা তাদের ক্ষমতাকে অনন্যভাবে দুর্নীতি, অত্যাচার ও ফ্যাসাদ ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করছে। তাদের বদমায়েশী ও নির্যাতন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও তারা মন ভুলানোর জন্যে অতীতে তাদের অত্যাচারের জন্যে ক্ষমাও চেয়ে নিচ্ছে। যেসব ইউরোপীয় ইহুদী ও খ্রিস্টান মার্জিত, বিশ্বাসপুর্ণ ও ভদ্র জীবনযাপন করে এবং অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে তারাও রেহাই পাচ্ছে না। সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে তারা ‘বুড়ো গর্দভ’ বলে উপহাস করে। “The 13th Tribe” লিখে খাজার ইহুদীদের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য Arthur Koestler কে তার স্ত্রীসহ হত্যা করে এরা। পরে প্রচার করে যে তারা সুইসাইড করেছে। যদিও Arthur Koestler ও ছিলেন একজন খাজার ইহুদী!

বর্ণবাদের সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচারের মাত্রাকেও হার মানিয়েছে আজকের পশ্চিমা ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের যুদ্ধাপরাধ। ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়ায় আরব মুসলিমদের উপর নিপীড়ন, ইজরায়েলীদের গাজায় ফিলিস্তিনি মুসলিম ও খ্রিস্টানদের উপর চালিত নিধন অভিযান, ইত্যাদি অতীত ইতিহাসের সকল নির্যাতনকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।
তাদের লোভ অবর্ণনীয়। তারা আইনসিদ্ধ চুরির (অর্থাৎ কৃত্রিম মুদ্রাস্ফীতি ও সেই সাথে সুদের বিনিময়ে অর্থ ধার দেওয়ার) মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতির সম্পদ চুষে খাচ্ছে। এমনকি রিবার মাধ্যমে গরিবদের যে সামান্য সম্বল আছে তাও লুটে নিচ্ছে। পরিণামে তারা মানবজাতিকে নতুন অর্থনৈতিক গোলামীর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে ফেলেছে। তারা বিশাল পরিমাণ অর্থ ধার দিচ্ছে এটা জেনে যে, ঋণগ্রহীতা কখনোই সুদসহ তা পরিশোধ করতে পারবে না। অর্থনৈতিক ব্ল্যাকমেইল করার কারণে ঋণগ্রহীতা দেশগুলি তাদের নিয়ন্ত্রণের আওতায় এসে পড়ে। প্রকৃত মুল্য বিশিষ্ট আসল মুদ্রা (দিনার ও দিরহাম) কে তারা প্রতিস্থাপিত করেছে non-redeemable (বিনিময়ের অযোগ্য) কাগুজি মুদ্রা দ্বারা, যার মুল্য বাহির থেকে (অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে) আরোপ করা হয় এবং তাদের সুবিধামত বদলানো যায়। যখন কাগুজি মুদ্রা তার মূল্যমান হারাবে, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ চরম দারিদ্রের মুখোমুখি হবে। অপরদিকে যারা ইতোমধ্যেই ধনী তারা গোলামীর শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষদের হারানো সম্পদের বিনিময়ে আরও ধনবান হতে পারবে।

সবশেষে, তারা সেই বিশ্ব ব্যবস্থার ধারক যা আজব ও রহস্যজনকভাবে পবিত্রভুমিকে স্বাধীন করতে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ইউরোপ খ্রিস্টান হয়ে পড়ার পর মূলত হাজার বছর ধরে ক্রুসেড নামের ‘Holy War’ চালিয়েছিলো, যতক্ষণ না এটি সফল হয়েছিলো এবং চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত হয়েছিলো। যখন জেনারেল অ্যালেনবী পরিচালিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ‘উসমানিয়া সাম্রাজ্যের’ সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে এবং ১৯১৭ সালে ঘোড়ায় চড়ে বিজয়ীর বেশে জেরুজালেমে প্রবেশ করে এবং ঘোষণা করে, “Today the Crusades have ended” “আজ ক্রুসেডের সমাপ্তি হলো”, তখন তার বলা উচিত ছিলো, Today the European Crusades have ended, অর্থাৎ “ইউরোপীয় ক্রুসেড আজ সমাপ্ত হলো”। কারণ ক্রুসেড ছিলো একান্তই ইউরোপীয় প্রচেষ্টা, এর সাথে অন্যান্য স্থানে বসবাসকারী খ্রিস্টানদের কোনো সম্পর্ক ছিলো না। প্রকৃতপক্ষে ইউরোপীয় ক্রুসেড এখনো চলছে, এর বিবর্তিত বর্তমান নাম হলো “War on Terror”, অর্থাৎ পশ্চিমা সন্ত্রাসীদের “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”। এটা শেষ হবে না যতক্ষণ মুসলিমরা পবিত্রভুমি ও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে ইউরোপীয় জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে।

কিছু ইউরোপীয়রা ইহুদী হয়ে গিয়েছিলো, তারাই ইউরো জায়োনিস্ট আন্দোলনের সূচনা করে। এরাই কট্টরভাবে এবং একগুঁয়ে জেদীর মতো লক্ষ্য পূরণ করার জন্যে ইহুদীদেরকে পবিত্রভুমিতে ফিরিয়ে আনে এবং ইজরায়েলী রাষ্ট্র পুনপ্রতিষ্ঠা করে। এসব ইহুদীরা ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে খাজার গোত্রের অধিবাসী ছিলো আর তারা ইহুদী ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলো। ইউরোপীয়রা সেমেটিক বংশোদ্ভূত না হওয়া স্বত্বেও সফলভাবে, এবং পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও অসৎ উপায় অবলম্বন করে, পবিত্রভুমিতে সেমেটিক বংশোদ্ভূত (অ-ইউরোপীয়) ইহুদীদেরকে ফিরিয়ে এনেছে। তারা ঠিক একই উপায়ে, আক্ষরিকভাবে মুসলিম দেশে দীর্ঘদিন বসবাস করা ইজরায়েলী ইহুদীদেরকে বাধ্য করেছে সেই ধর্মনিরপেক্ষ ইজরায়েলী রাষ্ট্রে ফিরে আসতে। তাদের অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে সকল প্রতিরোধকে তারা Anti-Semitic নাম দিয়ে উচ্ছেদ করেছে। ইহুদী-খ্রিস্টান ইউরোপীয় বিশ্ব ব্যবস্থা সেই ইজরায়েল রাষ্ট্রকে রক্ষা ও শক্তিশালী করেছে এমনভাবে যে, সেটা এখন একটা পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং শীঘ্রই বিশ্বের নিয়ন্ত্রা রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এসব কি কেবল হঠাৎ করেই সংগঠিত হয়েছে? এটা কি এমন ঘটনা যার কোনো ব্যাখ্যা নেই? যদি তা না হয় তবে তার ব্যাখ্যা কি?

মুসলিম দার্শনিক-কবি ড. আল্লামা মুগম্মদ ইকবালের একটি কবিতা আউড়িয়ে লেখার সমাপ্তি টানবো। তিনি ইয়াজুজ মাজুজ সংক্রান্ত কোরআনের এই বিশেষ আয়াতের মর্ম উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ইজরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির অনেক আগে। ১৯১৭ সালে জেরুজালেম মুক্ত করার হাজার বছরের পশ্চিমা ক্রুসেডের প্রতি তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন একটি উর্দু কবিতা লিখে। ইয়াজুজ মাজুজের সাথে সম্পৃক্ত সুরা আম্বিয়ার দুটি আয়াত গবেষণা করে তিনি লিখেনঃ

খুল গ্যয়ে ইয়াজুজ মাজুজ কে ল্যস্কর ত্যমাম
চ্যশমে মুসলিম দেখ লে ত্যফসীরে হ্যরফে ইয়্যনসিলুন

ইয়াজুজ মাজুজের দলগুলি যে মুক্ত হয়ে গেছে
মুসলিমদের চোখ দেখে নিক ইয়ানসিলুন শব্দের তাৎপর্য

[বাংগ-ই-দ্যরা, য্যরীফানাঃ ২৩]

(Inspired by- “Jerusalem in the Quran” and “Gog magog” written by Imran nazar hossain
helped by- Google, youtube etc.)


কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৬

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৫

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৪

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৩

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-২

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-১

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.