নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আপনারে ছাড়া করিনা কাহারে কুর্ণিশ

অর্ফিয়াসের বাঁশি

লিবারেল, মডার্ন, অসাম্প্রদায়িক, খানিকটা সোশালিস্ট; রিফর্মেশনে বিশ্বাসী। সবকিছুকে নিউট্রাল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে ভাবতে চাই। চিকিৎসাশাস্ত্রের সাথে জড়িত; যেকোন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করি- নিজেকে প্রতিনিয়ত আপগ্রেড করি। সংস্কৃতিমনা; কবিতা পড়তে ভালোবাসি; আবৃত্তি করি।

অর্ফিয়াসের বাঁশি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসাম্প্রদায়িক নজরুল এবং এক নগণ্যের কিছু কথা

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫৬

'মারো শালা যবনদের!’ ‘মারো শালা কাফেরদের!’– আবার হিন্দু মুসলমানি কাণ্ড বাধিয়া গিয়াছে। প্রথমে কথা-কাটাকাটি, তারপর মাথা-ফাটাফাটি আরম্ভ হইয়া গেল। আল্লার এবং মা কালীর ‘প্রেস্টিজ’ রক্ষার জন্য যাহারা এতক্ষণ মাতাল হইয়া চিৎকার করিতেছিল তাহারাই যখন মার খাইয়া পড়িয়া যাইতে লাগিল, দেখিলাম– তখন আর তাহারা আল্লা মিয়া বা কালী ঠাকুরানির নাম লইতেছে না। হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি পড়িয়া থাকিয়া এক ভাষায় আর্তনাদ করিতেছে– ‘বাবা গো, মা গো!’– মাতৃপরিত্যক্ত দুটি বিভিন্ন ধর্মের শিশু যেমন করিয়া এক স্বরে কাঁদিয়া তাহাদের মাকে ডাকে!
দেখিলাম, হত-আহতদের ক্রন্দনে মসজিদ টলিল না, মন্দিরের পাষাণ দেবতা সাড়া দিল না। শুধু নির্বোধ মানুষের রক্তে তাহাদের বেদি চিরকলঙ্কিত হইয়া রহিল।
মন্দির-মসজিদের ললাটে লেখা এই রক্তকলঙ্ক-রেখা কে মুছিয়া ফেলিবে, বীর?
ভবিষ্যৎ তাহার জন্য প্রস্তুত হইতেছে!
সেই রুদ্র আসিতেছেন, যিনি ধর্ম-মাতালদের আড্ডা ওই মন্দির-মসজিদ-গির্জা ভাঙিয়া সকল মানুষকে এক আকাশের গম্বুজ-তলে লইয়া আসিবেন।
জানি, স্রষ্টার আপনি-মোড়ল ‘প্রাইভেট সেক্রেটারি’রা হ্যাট খুলিয়া, টুপি তুলিয়া, টিকি নাচাইয়া আমায় তাড়না করিবে, তবু ইহাদের পতন হইবে। ইহারা ধর্ম-মাতাল। ইহারা সত্যের আলো পান করে নাই, শাস্ত্রের অ্যালকোহল পান করিয়াছে।
পুসিফুট জনসন মাতালদের বিরুদ্ধে অভিযান করিয়া বহু মার খাইয়াছেন।
মুহম্মদকে যাহারা মারিয়াছিল, ইশা-মুসাকে যে-সব ধর্ম-মাতাল প্রহার করিয়াছিল, তাহাদেরই বংশধর আবার মারিতেছে মানুষকে – ইশা-মুসা মুহম্মদের মতো মানুষকে!
যে-সব অবতার-পয়গম্বর মানুষের মার হইতে মানুষকে বাঁচাইতে আসিয়া মানুষের মার খাইয়া গেলেন, তাঁহারা আজ কোথায়? মানুষের কল্যাণের জন্য আসিয়াছিলেন যাঁহারা, তাঁহাদেরই মাতাল পশু শিষ্যেরা আজ মানুষের সর্ব অকল্যাণের হেতু হইয়া উঠিল।
যিনি সকল মানুষের দেবতা, তিনি আজ মন্দিরের কারাগারে, মসজিদের জিন্দানখানায় গির্জার gaol-এ বন্দি। মোল্লা-পুরুত, পাদরি-ভিক্ষু জেল-ওয়ার্ডের মতো তাহাকে পাহারা দিতেছে। আজ শয়তান বসিয়াছে স্রষ্টার সিংহাসনে।

একস্থানে দেখিলাম, ঊনপঞ্চাশ জন ভদ্র-অভদ্র হিন্দু মিলিয়া একজন শীর্ণকায় মুসলমান মজুরকে নির্মমভাবে প্রহার করিতেছে, আর একস্থানে দেখিলাম, প্রায় ওই সংখ্যাক মুসলমান মিলিয়া একজন দুর্বল হিন্দুকে পশুর মতো মারিতেছে। দুই পশুর হাতে মার খাইতেছে দুর্বল অসহায় মানুষ। ইহারা মানুষকে মারিতেছে যেমন করিয়া বুনো জংলি বর্বরেরা শূকরকে খোঁচাইয়া মারে। উহাদের মুখের দিকে তাকাইয়া দেখিলাম, উহাদের প্রত্যেকের মুখ শয়তানের চেয়েও বীভৎস, শূকরের চেয়েও কুৎসিত! হিংসায়, কদর্যতায় উহাদের গাত্রে অনন্ত নরকের দুর্গন্ধ!
উহাদের দুই দলেরই নেতা একজন, তাহার আসল নাম শয়তান। সে নাম ভাঁড়াইয়া কখনও টুপি পরিয়া পর-দাড়ি লাগাইয়া মুসলমানদের খ্যাপাইয়া আসিতেছে, কখনও পর-টিকি বাঁধিয়া হিন্দুদের লেলাইয়া দিতেছে, সে-ই আবার গোরা সিপাই গুর্খা সিপাই হইয়া হিন্দু-মুসলমানদের গুলি মারিতেছে! উহার ল্যাজ সমুদ্রপারে গিয়া ঠেকিয়াছে, উহার মুখ সমুদ্রপারের বুনো বাঁদরের মতো লাল!


দেখিলাম, আল্লার মসজিদ আল্লা আসিয়া রক্ষা করিলেন না, মা-কালীর মন্দির কালী আসিয়া আগলাইলেন না! মন্দিরের চূড়া ভাঙিল, মসজিদের গম্বুজ টুটিল!
আল্লার এবং কালীর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। আকাশ হইতে বজ্রাঘাত হইল না মুসলমানদের শিরে, ‘আবাবিলের’ প্রস্তর-বৃষ্টি হইল না হিন্দুদের মাথার উপর।

এই গোলমালের মধ্যে কতকগুলি হিন্দু ছেলে আসিয়া গোঁফ-দাড়ি-কামানো দাঙ্গায় হত খায়রু মিয়াঁকে হিন্দু মনে করিয়া ‘বলো হরি হরিবোল’ বলিয়া শ্মশানে পুড়াইতে লইয়া গেল, এবং কতকগুলি মুসলমান ছেলে গুলি খাইয়া হত দাড়িওয়ালা সদানন্দ বাবুকে মুসলমান ভাবিয়া ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পড়িতে পড়িতে কবর দিতে লইয়া গেল।

মন্দির এবং মসজিদ চিড় খাইয়া উঠিল, মনে হইল যেন উহারা পরস্পরের দিকে চাহিয়া হাসিতেছে!

- কাজী নজরুল ইসলাম।





..
ইদানীং কিছু বকধার্মিক নজরুলকে আবারো নতুন করে উত্থাপন করা শুরু করেছে। কারণ তার স্ত্রীর নাম ছিল প্রমিলা নজরুল। তার সন্তানের নাম ছিল কৃষ্ণ মুহাম্মদ। কারণ তিনি একই সাথে আগমনী গান, শ্যামাসঙ্গিত আর বাংলা গজল, হামদ-নাত। এতে অনেকেই মনে করে ধর্মের সীমানা লঙ্ঘন করেছেন তিনি। অথচ এটা কেউই ভাবে না যে আবদুর রহিম গ্রীন বা ম্যালকম এক্স থাকলে কৃষ্ণ মুহাম্মদ কেন থাকবে না। নাম কি শুধুই ধর্মভিত্তিক? নাকি এর সাথে ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য বহন করে? ইসলামের প্রথম যুগের মুসলিমদেরও তো তাহলে নাম পরিবর্তন করার কথা।
গিরিশ চন্দ্র সেনের কুরানের বাংলা অনুবাদ আমরা গ্রহণ করেছি, কিন্তু নজরুলকে আগমনী গান গাইতে দিতে আমরা নারাজ। তারা কখনোই উল্লেখ করে না তিনি বাংলায় কোন পরিস্থিতিতে জাগরণ ঘটিয়েছিলেন। তারপরেও নজরুলের সম্মান এতটুকুও কমে নি। যে লোক একই সাথে বলেন যে তাঁর ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে, তিনি অসত্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে এমন ভাবে দাঁড়ান যেন খোদার আরশ পর্যন্ত তা চলে যায়, তাঁর সম্মান কমানো কি এত সহজ?
তিনি তো নিজেই বলে গিয়েছেন- “কেউ বলেন আমার বানী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।”


এই ছিলেন আমাদের নজরুল। শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি। শ্রদ্ধা থাকুক সবসময়।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: নজরুল একজন গ্রেট কবি। মানুষ।
কবিকে যারা ছোট করবে আসলে তারা নিজেকেই ছোট করবে।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৬:১৭

অর্ফিয়াসের বাঁশি বলেছেন: রাজীব নুর ভাই, একমত

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:৫৭

অনল চৌধুরী বলেছেন: নজরুল দোষে গুণে মানুষ।তবে তিনি বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিতদের মতো শুধূ লম্পট ছিলেন না।
তিনি ভারতের একমাত্র কবি যাকে বৃটিশরা কারাগারে পাঠিয়েছিলো।
তার ৭ টা গ্রন্থ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।
এরকম প্রতিভার সৃষ্টি হয় না,জন্ম হয়।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৬:১৯

অর্ফিয়াসের বাঁশি বলেছেন: বাঙালি স্বভাবসুলভ ভাবেই তার নিন্দা করে। আগে এটা কম ছিল। এখন মনে হচ্ছে ছড়িয়ে পড়ছে

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:০৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জল নক্ষত্র ।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:২৩

অর্ফিয়াসের বাঁশি বলেছেন: শত বছরেও একজন নজরুল আসেন না

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:১৩

রাশিয়া বলেছেন: নজরুল অসাম্প্রদায়িকতা দেখাতে গিয়ে শব্দচয়নে অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন। কিছু কিছু শব্দ প্রয়োগ করেছেন যা মানুষের ধর্মীয় আবেগের জায়গাতে আঘাত করে। মৃত্যুশয্যায় কেউ মাগো বাবাগো বলে আমি শুনিনি। সবাই আল্লাহর নাম নিয়েই মরতে চায়।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩২

অর্ফিয়াসের বাঁশি বলেছেন: কে বলেছে? আপনি কি মৃত্যুর সময় বলবেন 'ইয়া আল্লাহ, আমার জন্য এক চুমুক পানি পাঠাও?' নাকি বলবেন 'কেউ আমাকে একটু পানি দাও?' এখানে ভুল ধরতে আসার কিছুই নাই। এখানে আল্লাহতা'আলা কে নিয়ে মশকরা করা হয় নি, বরং বুঝানো হয়েছে চকিতে মৃত্যুর সময় ধর্মের জ্ঞান সবসময় থাকে না।

"নজরুল অসাম্প্রদায়িকতা দেখাতে গিয়ে শব্দচয়নে অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন। কিছু কিছু শব্দ প্রয়োগ করেছেন যা মানুষের ধর্মীয় আবেগের জায়গাতে আঘাত করে।".... এখানেও একটু সমস্যা আছে। তার লেখার গূঢ় অর্থ বুঝতে হবে। নতুবা তাকে ফ্যাৎনাকারী বলেই মনে হবে, এই মেন্টালিটিটা বদলাতে হবে। তা না হলে নজরুলকে এতদিনে কেউ স্বরণ করতেন না। তিনি বাংলার জাগরণের প্রবাদ পুরুষ বলেই তাকে মানুষ তখন থেকে এখন পর্যন্ত শ্রদ্ধা করে আসছে। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই তিনি বাড়াবাড়ি করেছেন, কিন্তু সেটা 'কিছু ক্ষেত্রে'। তাই সেটা হাইলাইট করে তাকে জাস্টিফাই করতে চাওয়া ফ্যালাসির সামিল।
গভীরভাবে ভেবে দেখলেই হবে।
ধন্যবাদ।

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নজরুল খাঁটি অসাম্প্রদায়িক কবি ছিলেন। তাঁর প্রতি সকল বাঙ্গালির শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ থাকা উচিৎ।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩৩

অর্ফিয়াসের বাঁশি বলেছেন: তাকে নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ব্যবসাও করা হচ্ছে। সমস্যাটা সেখানেই। তাকে শ্রদ্ধা করতে না চাইলে এড়িয়ে চলুন, কিন্তু ব্যবসা কেন করা হবে বলুন? আসলে সমাজটাতে যে পচন ধরতে শুরু করেছে, তা নিয়ে বলার কিছু নাই।

৬| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৩২

শুভ_ঢাকা বলেছেন: স্বার্থান্বেষীরা কবি নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মকে খণ্ডিত ভাবে উপস্থাপন করেন। কবি নজরুলকে বিশ্ব দরবারে সঠিকভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে খামতি পরিলক্ষিত হয়।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩৪

অর্ফিয়াসের বাঁশি বলেছেন: জ্বী। কারণ খণ্ডিত ভাবে উপস্থাপন করা হলে তাঁকে যে ফ্যাৎনাকারী হিসাবে পরিচয় করানো সহজ হবে, বুঝেন নি?

৭| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:০৩

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: অনলাইনে থাকেন অথচ লিখেন না কেন? লিখুন যা ইচ্ছা মনে আসে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.