নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক যাযাবর

Palol

একজন সংবাদ কর্মী, মানুষ ও প্রকৃতির জন্য ভাবিত। সংবাদপত্রে যা লিখতে পারি না, তাই এখানে লিখতে চাই।

Palol › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রদ্ধাঞ্জলি : কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮

০৯ জানুয়ারী;২০১৩।



ওরা আমর কাগজ কলম কেড়ে নিয়েছে

তাতে কী আসে যায়

আমি আমার আঙ্গুল চুবিয়ে নিয়েছি

আমারই বুকের রক্তে।

ওরা আমার মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে

তাতে কী আসে যায়

আমার দু’হাতের শেকলে ছড়ার মধ্যে

ঝনঝনিয়ে উঠছে আমারই কণ্ঠস্বর।



---------ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ

(মূল উর্দু থেকে অনুবাদ আদিব আজাদ)



নিয়মিত পত্রিকা বের করার সঙ্গতি ছিল না তার, তাই সাদা কাগজে কম্পিউটারে কম্পোজ করা ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা বিলি করে বেড়াতেন তিনি। যে কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি আর ঘটমান সকল বিষয় নিয়েই নিয়মিত লিখে যেতেন তিনি। কোনো ঘটনাই বাদ পড়ত না। ভিকারুন্নেসা স্কুলে ছাত্রীর ওপর নির্যাতন, আনু মুহাম্মদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা, মোশরেফা মিশুর গ্রেপ্তার, গার্মেন্টস কর্মীদের আন্দোলন, একুশে ফেব্রুয়ারী, মে দিবস --এরকম সকল বিষয় নিয়েই লিখে যেতেন। বিলি করতেন বাম প ্রগতিশীল নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের মাঝে।

তার লেখা কেউ পছন্দ করত, কেউ করত না। তাতে ভ্রুক্ষেপ ছিলনা। কলম থামত না তার মোটেই, লিখে যেতেন নিরলসভাবে। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যেত তার লেখায় ফুটে উঠত একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লাইন। হয়ত সেই রাজনীতিকে তুলে ধরতেই নিরলসভাবে লিখে যেতেন তিনি।

সেই দায় থেকেই নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশের আর্থিক অসঙ্গতিকে অগ্রাহ্য করেছেন। জীবনের দুর্লভ বুঝ মানুষের সঙ্গে বিনিময় করতে গিয়েছিলেন সেই পথেই। তার সঙ্গে পরিচিতরা এতক্ষনে নিশ্চয়ই বুঝেছেন এখানে কমরেড আইউব রেজা চৌধুরীর কথাই বলা হচ্ছে।

সাদা কাগজে কম্পিউটার কম্পোজে লেখা বিলি করা যেন তার একটা নিজস্ব ষ্টাইলে দাঁড়িয়েছিল। কাঁধে কালো ব্যাগ নিয়ে ছুটে যেতেন পুরানা পল্টন, তোপখানা রোড, শাহবাগ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে। যোগাযোগ রাখতেন বামপন্থী রাজনৈতিক, বুদ্ধিজীবী সহ শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে। নিয়মিত টেলিফোন করতেন। পত্রিকায় প্রকাশিত কোনো লেখায় চিন্তার ইতিবাচক দিক থাকলেই তা নিয়ে কথা বলতেন সহকর্মীদের সঙ্গে। যারা তাকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করেছেন, তিনি কোনো চিন্তার দাসত্ব করতেন না। কোনো দেশের কিংবা পার্টির ডেস্ক থেকে আসা ধার করা তত্ত্ব অনুকরণ করতেন না। কমরেড আইউব রেজা চৌধুরীর চিন্তার সঙ্গে কেউ একমত হতে পারেন কেউবা দ্বিমত। অনেকে তার রাজনীতির ধারাকে বিরোধীতাও করতে পারেন। কিন্তু সকলেই এটা স্বীকার করবেন, কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ধারা তুলে ধরেছেন লেখালেখি সহ তার জীবনের বাস্তব সংগ্রাম দ্বারা। সেই রাজনৈতিক ধারাকে তিনিই বাংলাদেশে পরিশীলিতভাবে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই জীবন যাপন করেছেন।

৬২ শিক্ষা আন্দোলন, আইউবের সামরিক স্বৈরাচারের হুলিয়া, একাধিকবার কারাবরণ, আত্মগোপন, আর্থিক টানাপোড়েন--এরকম হাজারো ঘটনা তার অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধশালী করেছে। তিনি সত থেকেছেন, শত টানাপোড়েনের মধ্যেও কীভাবে সত থাকা যায় তা নিজের যাপিত জীবন দিয়েই উদাহরণ দিয়ে গেছেন।

এই আকালে এমন উদাহরণ আমাদের ঋজু হয়ে দাড়াতে সাহসী করে তোলে। কমরেড আইউব রেজা চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর এই সময়ে তার স্মৃতির প্রতি আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা। ###





মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: স্যালুট কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী ।
তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর এই সময়ে তার স্মৃতির প্রতি আমারও অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৩

Palol বলেছেন: ধন্যবাদ গিয়াস লিটন,
দেশে অনেক ক্ষমতাধর মানুষ আছেন, কিন্তু আমাদের দরকার একজন আলোকিত মানুষ, একজন সংগ্রামী মানুষ, যিনি কোনো অনুশোচনা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন না। যিনি মৃত্যুর আগে ইস্পাতের অস্ত্রভস্কির ভাষায় বলতে পারেন,' আমার সারা জীবন ব্যয় করেছি একটি মহত উদ্যেশ্যে, মানুষের কল্যাণে সংগ্রামে।' কমরেড আইউব রেজা চৌধুরীকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তারা বলতে পারবেন, তিনি ছিলেন তেমনই মানুষ। যিনি কোনো অনুশোচনা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.