নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক যাযাবর

Palol

একজন সংবাদ কর্মী, মানুষ ও প্রকৃতির জন্য ভাবিত। সংবাদপত্রে যা লিখতে পারি না, তাই এখানে লিখতে চাই।

Palol › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রদ্ধাঞ্জলি : কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী তারিখ : ০৮/০১/১৪

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫

এক. ১৯৭০ সালের ১০ মে, চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে ছিল ন্যাপের জনসভা। আগুন ঝরা সময় তখন। স্বাধীনতার জন্য উম্মাতাল মানুষ যেন টগবগ করে ফুটছিল। ময়দানজুড়ে মুক্তিপাগল মানুষের ভীড়, তিল ধারণের ঠাঁয় নেই। মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর আসার কথা ছিল সেখানে। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত: আসতে পারেন নি তিনি। এ সংবাদে ময়দানের মানুষ হতাশ, কেউ ধীরে ধীরে সভাস্থল ত্যাগ করছেন। এসময় স্থানীয় নেতারা বক্তৃতা দেয়ার পর মঞ্চে উঠেন তরুণ কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী। ভরাট কণ্ঠে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, মানুষ দাঁড়ালেন, কী বলে তা শোনার জন্য। স্বাধীনতার জন্য সরাসরি লড়াই শুরু করার আহবান জানালেন তিনি। মুর্হুমুহু করতালি আর হর্ষধ্বনীতে প্রাণ ফিরল জনসভায়। জনসভা শেষে ওই দিনই রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়া অব্দি কারাগারেই অন্তরীন থাকতে হয় তাকে। স্বাধীনতার কথা বলে যিনি কারাবন্দী হন, তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা ?

দুই . ১৯৬২ সাল, সামরিক স্বৈরশাসক আইউব খানের দোদর্ন্ড প্রতাপের কাল। ১৭ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা আন্দোলনে শহীদ হন বাবুল ওয়াজিউল্লাহ। ওই আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা ছিলেন কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী। স্বৈরশাসকের রোষানলে পড়েন ছাত্রনেতারা। ১৯৬৪ সালে হুলিয়া জারি হয় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের ৯ জন ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে। এরা হলেন, সিরাজুল আলম খান, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রণো, কেএম ওবায়েদুর রহমান, বদরুল হায়দার চৌধুরী (সাবেক প্রধান বিচারপতি), শাহ মোয়াজ্জেম, রেজা আলী, গিয়াস কামাল চৌধুরী এবং আইউব রেজা চৌধুরী।

ছাত্র আন্দোলনের এই পর্বে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি থাকলেও, পরবর্তিতে দেখা যায় তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে দলের সঙ্গে নিজেকে আর মেলাতে পারেন নি তিনি। রাজনৈতিক মতাদর্শিক প্রশ্নে তিনি খুঁজতে থাকেন সঠিক লাইন।

তিন. কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রথমদিকে তিনি রুশপন্থী ধারার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে সময় তার নেতা ছিলেন মনি সিংহ, খোকা রায় প্রমুখ। পরে তিনি চীনাপন্থী ধারার সঙ্গে যুক্ত হন, সে সময় তার নেতা ছিলেন আব্দুল হক, আব্দুল মতিন, দেবেন সিকদার, আলাউদ্দিন আহমদ প্রমুখ। এরপর তিনি পাকিস্তান আমলেই পন্থী রাজনীতির মোহ থেকে মুক্ত হন। পরবর্তিতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ট্রেডিশনাল কোনো ধারার সঙ্গে আর যুক্ত থাকেন নি। কমিউনিস্ট আন্দোলনে একটি স্বতন্ত্র তত্ত¡গত লাইন দাঁড় করানোর কাজ করতে থাকেন। আমৃত্যু সে লক্ষ্যেই পরিশ্রম করে গেছেন কমরেড আইউব রেজা চৌধুরী। সাদা কাগজে কম্পিউটারে কম্পোজ করে বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা লিখে বিলি করে বেড়াতেন। সেখানে তার স্বতন্ত্র রাজনৈতিক তত্ত¡গত লাইনের সাক্ষাত পাওয়া যায়। একটি কমিউনিস্ট পত্রিকা বের করার জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন।

চার. ভোগবিলাস, আত্ম-প্রতিষ্ঠা ও আরাম আয়েশের কাছে নিজেকে সপে দেন নি কখনো। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের বুঝের ওপর দাঁড়িয়ে থেকেছেন। চিন্তার দাসত্ব করেন নি। দেশের এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কমরেড আইউব রেজা চৌধুরীর রাজনৈতিক বক্তব্য, বিশেষত তত্ত¡বধায়ক সরকার প্রশ্নে তার অবস্থান কমিউনিস্ট আন্দোলনে নতুন চিন্তার খোরাক জোগাতে পারে। কমরেড আইউব রেজা চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে তার প্রতি আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও গভীর ভালবাসা।##



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.