![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভাবনার আকাশ্, টা
******নুরএমডিচৌধুরী
রচনাকাল-১৭ অক্টোবর ১৭
পর্ব পরিধী-১০, প্রথম পর্ব
****************************
বাগানের এক প্রান্তে গিয়ে ভাবনা আর আকাশ বসে।
চারদিকে তরুন তরুনীর আড্ডা। আকাশ মনে মনে লজ্জাবোধ করতে থাকে।
ভাবে এই শেষ জীবনে এসে একি করছি। পাপের কথা ভেবে যে জীবনে প্রেমের স্বপ্ন দেখিনি, এতো কাছে পেয়েও নিজেকে কখনই জড়াইনি ভালবাসার শৃঙ্খলে আর আজ প্রেমের তপোবনে? আকাশ কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যায়।
খুব সংকীর্ণতায় কথার আদান প্রদান চলে তাদের। ভাবনার মনে নিরবিচ্ছন্ন ভাবের উদয় হলেও আকাশ খুব স্বচ্ছতায় কিছুক্ষন আড্ডা দেয়।
এক সময় ভাবনার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠে।
কথা বলে। মিথ্যে কথা।
আপুর সঙ্গে বসে একটু কথা বলছি।
মিথ্যে তো বলতেই হবে। তা নিয়েও আকাশের চিন্তার কমতি রইলনা।
তবেকি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছলনা আর মিথ্যের আবেশে চলতে হবে?
এ কেমন বন্ধন যা কিনা কিয়ৎকালের জন্যেও সমাদৃত হবেনা সকলের কাছে।
আকাশ জিজ্ঞেস করে কে ফোন দিয়েছিল।
ভাবনাঃ ছেলে।
ছেলের আজ এডমিশন পরীক্ষা।
মনটা ওর খুবই খারাপ। এত ভাল রেজাল্ট। তারঃপরও কোথাও চান্স হলোনা। মেডিক্যালে মাত্র কয়েকটা নাম্বার এর জন্য চান্স হলনা।
আকাশঃ তাই? অহ! ভেরি সেড নিউজ। আসলে তকদিরের উপর কারো হাত নেই।
ভাবনা যেন তকদিরকে মানতে নারাজ। এই নিয়ে কিছুক্ষণ কথা হয়। এক পর্যায়ে আকাশ বলে, চল উঠা যাক।
ভাবনাঃ না, উঠতে ইচ্ছে করছেনা।
আকাশঃ আরে ছেলেটা আনমনে হয়ে আছে এ সময় তোমার পাশে থাকাটা জরুরী। চল যাই।
ভাবনাঃ কোথায়? যেতে হয় তোমার সাথে যাবো।
আকাশঃ মনে মনে বড়ই বিষন্ন হয়, ক্লান্ত হয়ে উঠে।
সময়টা তার একেবারেই কাটছিলনা। প্রতিটি মিনিট যেন যাচ্ছিল তার প্রতিটি ঘন্টার সমান। প্রেম করা মোবাইল ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা, একজনের দুঃখ শেয়ার করা, দূর থেকেনানা নানা মাধ্যমে একজন ফরটি আপ বয়সী নর বা নারীর জন্য বেমানান না হলেও ইউনিভারসিটির ভিতর সহস্র তরুন তরুনীর মাঝে প্রেমময় আলাপন যেন একেবারেই আকাশের মনে সেলের মত বিধছিল।। আর অন্য দিকে ভাবনার প্রেমের ইমেজ যেন ঘড়ির কাটা ধরে বেড়েই চলছিল।
আবার ভাবনার মোবাইল ফো্নটা বেজে উঠল।
এবার আকাশঃ মনে মনে বেশ খুশি হল। এবার হয়ত উঠা যাবে।
আকাশঃ কে ফোন দিয়েছে?
ভাবনাঃ ছেলের বাবা।অবশ্যই ফোনে কথা বলার সময়ই আকাশ আন্দাজ করতে পেরেছিল। তারঃপরও উঠার উসিলা খোজছিল সে। এবারও আকাশ বলল, চল এবার উঠা যাক।
ভাবনাঃ না। উঠবনা।
আকাশ বেশ কায়দা কৌশলে তাকে উঠাল।
খুব জোরে হাটছে আকাশ।
ভাবনার যেন মেজাজ বেশ ভারি হয়ে উঠছে।
তাদের ভালবাসার জীবনের এই প্রথম লগ্ন। আর এই ক্ষণে আকাশ্্্্।আবার পুনরায় ভেবে নেয় প্রথম দর্শন তাই হয়ত লজ্জাবোধ করছে আকাশ।
ভাবনা তা তোয়াক্কা না করেই বলে, আরে এতো জোরে হাটছো কেন?
আকাশ হাটার গতিটাকে মন্থর করে। শান্তনা স্বরূপ বলে,
তুমিতো জাননা আমার এই হাটা কে নিয়ে অনেকের অনেক অভিযোগ। কি করব বলো। সেই যে স্কুল জীবনে দৌড়িয়ে ক্লাস ধরার অভ্যাস এতোদিনেও যে ছাড়তে পারলাম্ না। তোমার ভাবীর এই নিয়ে যে কি অভিযোগ তার আর কি বলব।এখন আর সে আমার সাথে কোথাও বেড়াতেই যেতে চায়না।
কথা বলতে বলতে দুজনে প্রায়ই ইউনিভারসিটির শহীদ মিনারের কাছাকাছি। একটু উঁচু জায়গায় উঠতে হয়। ভাবনা হাতটা বাড়িয়ে দিলে আকাশ সংকোচনে টেনে তোলে।
এতোটুকুই স্পর্শ কাতরতা।
কারণ ভাবনার মনে বিশাল ভুবন তৈরী হলেই আকাশের মনের ভুবনটা তৈরি ছিল অন্য আল্পনায় অন্য কল্পনায় অন্য আঙ্গিকে।
শহিদ মিনারের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছে দু জনে।
সে দিনটিতে ছিল অসংখ্য মানুষের ভীড়। পুরো ইউনিভারসিটা লোকারণ্য তাই খুব কাছাকাছি থাকলেও কেউ কাউকে যে দেখবে সে ভয়টা একেবারেই ছিলনা সেদিন।
প্রচন্ড রোদ।
আকাশ একটা রক্তজবা গাছের নীচে দাড়াল।
ভাবনা পিছু ফিরে তাকায়।আকাশও তাকিয়ে দেখে
ভাবনার চোখ ভরা জল টলমল করছে।
ভাবনা পুনরায় আকাশের কাছে এসে আর একবার তাকিয়ে বলে, আসি, ভাল থেকো।
কি করবে আকাশ ভেবে পায়না।
যে চঞ্চল মন নিয়ে এসেছিল মনের বাগানে ফুল ফোটাতে তা যেন অংকুরেই বিনাশ হতে চলল। কত কথার মালা বুনিয়ে ছিল দুজনে দুজনের গলায় পড়াবে। তা যেন আর হবার নয়।
সেই সল্প সময়ের কথোপকথনে ভাবনা তার জীবনের অনেক কথাই আকাশ কে শেয়ার করেছে। আকাশ তেমনটি করেনি। কারনটা তো আগেই বলেছি।
আকাশ ভাবে এই যে সাজানো সুন্দর সংসার তার অনুপ্রবেশে ধ্বংস হবে এটা যে বড়ই পাপ। তাছাড়া ভাবনার মনের যে আকুতি তাতে বুঝাই যায় সে সিরিয়াস।
অন্যদিকে আকাশ, তারও তো একটা সাজানো গুছানো সংসার আছে যেখানে সে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সুখি।
আর তাতে অশান্তির কালো ধোয়া এসে গ্রাস করবে এ কি করে সম্ভব।
এই সুদীর্ঘ জীবন পথ পেরিয়ে এসে আজ এই সময়ে এমন নাটকের পটভুমি সে লিখুক এটা আকাশ যে চায়না রচনা করতে চায়না অশ্রুসিক্ত বেদনাময় দুটি জীবন নাটক।
কথা ছিল সেখানে আকাশ আরও কিছুক্ষন থাকবে। ছেলে হলে প্রবেশ করলে ভাবনা আবার তার কাছে আসবে।
আকাশ সীদ্ধান্ত হীনতায় বেশ কিছুক্ষণ। হঠাত পুরনো বন্ধু রাফসানের সংগে তার দেখা। প্রথমে আকাশ তাকে চিনতে না পারলেও রাফসান তাকে ঠিকই চিনতে পারে।
*****
**************চলবে**************
©somewhere in net ltd.