নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে বলার আসলে কিছু নেই। বিপণি বিতানের কোন সিদ্ধহস্ত বিক্রায়কও আমি নই। হঠাৎ হঠাৎ কিছু শব্দ মনের মাঝে টুপটাপ করে ঝরে পড়ে। তাই লিখি এখানে।

আসাদুজ্জামান পাভেল

নিজের সম্পর্কে বলার মতো আসলে তেমন কিছু নেই।

আসাদুজ্জামান পাভেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ হাইফেন ( পর্ব- দুই)

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৩

২.

অভিভাবকদের কাতারে দীপ্তি বসে আছে।
একটু জড়সড় অবস্থা তার। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সে জুবুথুবু হয়ে বসে আছে। ফিরোজও আছে পাশে। কিন্তু ওর সাথে কোন কথাবার্তা নেই। দুইজন একেবারেই অপরিচিত মানুষের মতো পাশাপাশি বসে আছে। কস্মিনকালেও দেখা-সাক্ষাৎ নেই যেন। অথচ পাশের এক অল্প বয়সী মেয়ের সাথে বেশ আলাপ জুড়ে দিয়েছে সে। দেখে এমন রাগ হয় দীপ্তির! কেমন হ্যাংলার মতো হাসছেও আবার। কই তার সাথে তো এমন করে হাসে না! প্রান খুলে কবে যে ওরা একসাথে হেসেছে ঠিক মনেও করতে পারে না। সে-ই কি হাসে অমন করে? কে জানে?
সেও অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে বসে। দেখে ওর বাম পাশের মেয়েটি ওর দিকে বেশ আগ্রহী চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি বেশ আলাপী। ওর সাথে খুব সহজেই দিব্যি গল্প জুড়ে দেয়। মেয়েটি পরে আছে একটা কালো স্কার্ট, হালকা গোলাপি রঙের টপস। গলায় জড়ানো মেরুন রঙের শিফনের স্কার্ফ। ওর কৌতূহলী চোখ দীপ্তির পরনের শাড়ির ওপর খেলা করে। জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি ইন্ডিয়ান?
- ‘নাহ, বাংলাদেশী। এটা ইন্ডিয়ার পাশের একটা ছোট্ট স্বাধীন দেশ’।
- ‘তোমার পরা এটা কি পোশাক? স্যা-রি’?
- ‘হুম, শাড়ি’।
- ‘শ্যা-ড়ি, ঠিক মতো পেরেছি বলতে’?
- ‘তুমি চমৎকার উচ্চারণ করেছো’।
- ‘আই লাভ ইয়োর ড্রেস’।
- ‘থ্যাঙ্ক ইউ’।
- ‘আমার নাম অ্যান। আমার মেয়ে কিমি এবার আন্ডারগ্রেড শেষ করলো অর্থনীতিতে। তোমার কে? ছেলে না মেয়ে? নাকি তোমার এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলির কেউ’?
- ‘আমার ছেলে। সেও অর্থনীতিতে। তবে তার কনসেন্ট্রেশন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং-এ’।
- ‘উউ... মাস্ট বি স্মার্ট কিড। এন্ড উইল মেক মাচ মানি সামডে। হি হি হি। কি নাম ওর’?
- ‘ধীমান রহমান’।
- ‘ডিমন রামান? ওয়াও, নাইস নেম। হেই, আই গেস আই হার্ড দ্য নেম বিফোর। ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। আমার মেয়ের কাছে অনেক শুনেছি ডিমন আর নাইয়ার কথা। গ্রেট কাপল। ইউ মাস্ট বি হ্যাপি ফর দ্যাম, রাইট’।

দীপ্তি ঠিক বুঝতে পারে না কি বলছে মেয়েটি। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই শোনে স্পিকারে ঘোষণা হচ্ছে, এবারে ‘ভ্যালেডিক্টোরিয়ান স্পিচ’। সে দেখে একটি দারুণ সুন্দরি মেয়ে পোডিয়ামে উঠে আসছে। একদম বাঙালি চেহারা! বাঙালি নাকি মেয়েটি? আরে ব্বাস, দেখতে দারুণ তো মেয়েটি? মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছে এই জন্যেই কিনা, মেয়েটিকে বেশ লম্বা লাগছে। কি নাম বলল যেন ঘোষক? নাইয়া? শোনা শোনা মনে হচ্ছে।কোথায় যেন শুনেছে নামটা? এই নামটিই কি একটু আগে বলেছে পাশের মেয়েটি? কি যেন বলেছিল, নাইস কাপল। মানে কি? নাকি সে ভুল শুনেছে। এদের ইংরেজি একদম ঠাওর করতে পারে না দীপ্তি। হাবিজাবি কি যে বলে! সে যাই হোক। সে মন দিয়ে ওর বক্তৃতা শোনার চেষ্টা করে। সে শোনে পাশ থেকে অ্যান বলছে, ‘হেয়ার শি কামস, নাইয়া’।

‘আমাদের পরিবার যে স্বপ্ন দেখেছে সে আসলে বৃহৎ অ্যামেরিকার স্বপ্নের মতোই বিশাল এবং মহৎ। তা না হলে কি করে সেই সুদূরের কোন এক চিন্তার বীজ এখানে এসে মহীরুহের মতো আকার নেয়। আমিই বা কি করে এখানে এসে আজ সবার সামনে কথা বলছি! কি করে আমাদের পরিবার সগর্বে এখানে এসে যুক্ত হবে? সে বিচারে যেকোনো বড় এবং সুন্দর স্বপ্নই আসলে এক অর্থে ‘অ্যামেরিকান ড্রিম’। আমি তাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘পরিবার’ নিয়েই কথা বলবো আজ...’।

দীপ্তি দেখে কথা বলার সময় মেয়েটি চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলছে। বেশ ভালো অনুশীলন করেছে বলতে হবে। কিন্তু দুটো জায়গায় এসে একটু বেশিক্ষণ থামছে। অনেকটা টেবিল ফ্যানের মতো যেন বিষয়টা। ছোটবেলায় সে দেখেছে টেবিল ফ্যান গুলো চারপাশে ঘোরার সময় কোন কোন জায়গায় এসে একটু থেমে যেতো। তারপর আবার ঘুরতে থাকতো। এই মেয়েটিও ঠিক তেমনি। সে বোঝার চেষ্টা করে কোথায় কোথায় মেয়েটির চাহনি স্থির হচ্ছে। ওদের সারির ডানপাশে একবার। সেদিকে তাকিয়ে দেখে আমাদের মতোই কিছু মানুষ বসে আছে। বাংলাদেশী কিম্বা ভারতীয় হবে হয়তো। তারমানে ওরা মেয়েটির পরিবার। তারপর দৃষ্টি ঘুরে ঘুরে যেখানে এসে স্থির হয় তা দেখে সে চমকে যায়। দেখে মেয়েটি ঠিক ওর আর ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে মৃদু হাসি। উফ, কী সুন্দরই না দেখতে মেয়েটা!
পুরনো অভ্যাসবশত সে ফিরোজের কোটের হাতা খামছে ধরে জিজ্ঞেস করে, দেখেছো মেয়েটা কি সুন্দর? আচ্ছা ও কি বাংলাদেশী? নাকি ইন্ডিয়ান?

সে তাকিয়েছিল মঞ্চের দিকে। তখনো মেয়েটা বক্তৃতা দিয়ে চলছে। কোন উত্তর না পেয়ে পাশ ফিরে দেখে ফিরোজ একবার ওর দিকে, আরেকবার কোটের কুচকান হাতার দিকে তাকাচ্ছে। সে চাহনিতে স্পষ্ট ভ্রুকুটি। দীপ্তির হাত আস্তে আস্তে শিথিল হয়ে যায়। একটু আগের অবিবেচকের মতো কাণ্ডটা করার জন্য নিজেকে মনে মনে গালি দেয় সে। মাঝে মাঝে তার খেয়াল যে কোথায় থাকে। নিজের উপর এখন বিরক্ত লাগছে খুব। সে শোনে ফিরোজ নিম্ন স্বরে ফিশ ফিশ করে বলছে, ‘মনে হয় ইন্ডিয়ান হবে। পাকিস্তানি হবে না, এটা ডেফিনিট। পাক্কুগুলা কি আর অত স্মার্ট হয়।আমি ভেবেছিলাম ধীমানই একদিন এই অনুষ্ঠানে স্পিচটা দিবে। সেটা আর হল কই!একটা মেয়ের কাছে হেরে বসে আছে!’
দীপ্তি লক্ষ্য করে ফিরোজ সম্ভাব্য তালিকায় একবারও বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেনি।


অনুষ্ঠান শেষে ওরা অডিটোরিয়ামের বাইরে এসে দাঁড়ায়। আশাপাশের সবাই ফটাফট ছবি তুলছে। ওদের সে আয়োজনের বালাই নেই। দুটো মানুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে, চুপচাপ। ধীমান এখনো এসে পৌঁছায় নি। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল ওরা এসে এখানে দাঁড়াবে। ও এসে পরে যোগ দিবে। হারিয়ে যেতে পারে তাই একই জায়গায় স্থির। ওদের হাতে কোন সেল ফোনও নেই। সে শোনে ফিরোজ বলছে, ‘সিগারেটের নেশা চেপেছে খুব। কিন্তু এখানে খাওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না’।

সে কথা শেষ করতে পারে না। দেখে ধীমান আসছে। অনেকটা দৌড়ে। মুখে ওর সেই নির্মল হাসি। বাতাসে ওর গাউনটা উড়ছে। এই দৃশ্যটা দীপ্তি অনেক আগে থেকে কল্পনা করে রেখেছে। শাহরুখ খানের মতো ধীমান একদিন দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরবে। তারপর ওর সামনে দাঁড়িয়ে হ্যাটটা উপরের দিকে হাস্যোজ্জল মুখে ছুড়ে দিবে। ছেলেমানুষি ভাবনা যদিও, কিন্তু মনের অতলে এই ভাবনাটা সে পুষে রেখেছে বহুকাল। কখনো কাউকে বলেনি। এমনকি ধীমানকেও না। আর ফিরোজকে তো বলার প্রশ্নই ওঠে না। সে পরে এই নিয়ে ভারি তামাশা করবে। কিন্তু আজ ধীমানের দৌড়ে ছুটে আসা এবং তার সাথে বাতাসে ওর গ্রেজুয়েশন-গাউনের ওড়ার দৃশটা কি করে হুবহু মিলে গেল? তবে কি ধীমান ঠিকই জানতো ওর মনের চাওয়া?

ও এসে যখন দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরে, দীপ্তির বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসে। তার কম্পিত পিঠে হাত দিয়ে ধীমান বলে, হোয়াই ক্রাইং মা? চিল, না...!
চোখ মুছে দীপ্তি তাকায় ওর দিকে। ধীমানের মাথা ফিরোজকেও ছাড়িয়ে গেছে। ঠিক এই সময়ে ফিরোজ বলে, সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে খুব। ধী, কুড ইউ ম্যানেজ?
শুনে দীপ্তির গা জ্বালা করে ওঠে। কিন্তু তার রাগটা বেশিক্ষণ টিকে না। শোনে ধীমান বলছে, হা হা হা। সিউর, উইল গেট অ্যা কর্নার ফর ইউ।

এবার ছবি উঠতে থাকে টপাটপ। বিভিন্ন কায়দায়, নানা ভঙ্গিতে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক কায়দা, সেলফি। ধীমান কোত্থেকে যেন একটা সেলফি স্টিক জোগাড় করেছে। দীপ্তি ভাবে ছেলেটা পাশে থাকলেই চারপাশের রঙ বদলাতে থাকে। সবকিছু সচল হয়ে ওঠে। ও দেশ ছেড়ে চলে আসার পর থেকে তার ভুবন জোড়া মেঘ। ওর এই মন খারাপ চিন্তাটা এগোতে পারে না। দেখে, ঠিক এই সময়ে চারদিকে আরও বেশি রঙ ছড়িয়ে সোনালি বেন্দ্রে সহাস্যে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। এইবার দীপ্তি নির্দ্বিধায় ধীমানের গাউনের হাতা খামছে ধরে বলে, এই নায়িকা তোদের সাথে পড়ে নাকি রে? মাগো দেখতে কি দারুণ। বোম্বের হিরোইন যেন।
ধীমান হাসে, হা হা হা।
ততক্ষণে মেয়েটি একদম কাছে এসে গেছে। ধীমান ওর গমগমে গলায় বলে, নাহিয়া, মিট মাই প্যারেন্টস। বাবা-মা, দিস ইজ নাহিয়া। আওয়ার দিস ইয়ার ভ্যালেডিক্টোরিয়ান। জানো নাহিয়া, তোমাকে দেখে মা কি বলছিল? বলে তুমি নাকি বোম্বের নায়িকার মতো দেখতে। হা হা হা।

দীপ্তি লজ্জা পেয়ে যায়। ধীমান এমন বিপদে ফেলবে ভাবে নি। দেখে ফিরোজের চেহারায় বেশ একটা মিহি তৃপ্তির রেখা। খানিক আগের সেই বিরক্তির ছাপ নেই মোটেই। উফ মানুষ এমন ভান করতে পারে! দীপ্তির অবাক হবার পালা তখনো শেষ হয় নি। চমকে উঠে দেখে নাহিয়া ঝুকে ওকে সালাম করছে! এ যুগে কদমবুসি!
ওর চমক উঠে সরে যাওয়া দেখে ধীমান ঠা ঠা করে হেসে ফেলে। হাসতেও পারে ছেলেটা। বলে, মা-বাবা, বিশেষ একটি কথা বলার জন্যই আজকের এই বিশেষ দিনটি বেছে নিয়েছি। এতদিন তুলে রেখেছিলাম। নাহিয়া সত্যিই আমার জীবনের নায়িকা।

(চলবে)
আগের পর্ব পড়তেঃ
পর্ব-১। Click This Link

পরের পর্ব পরতেঃ
পর্ব-৩। Click This Link
পর্ব-৪। Click This Link


মন্তব্য ২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাল লাগল।

চলুক সিরিজ :)

২| ০৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:০২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কিভাবে চোখ এড়িয়ে গেল বুঝলাম না। দারুণ। আগের পর্ব পড়ে আসি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.