নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে বলার মত কিছু নাই। যে দিন বলার মত পরিস্থিতি হবে আশাকরি সেদিন আর বলতে হবে না।

পাজী-পোলা

চেষ্টাই আছি........

পাজী-পোলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বসুমতি কটেজ পর্ব ১০

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৯

বাহিরে ঝড় আর নেই। হালকা বৃষ্টির ফোঁটা যদিও বাতাসে ভাসছে ও কিছু নয়, শরীর ভিজবে না। সাদিক লোকটার নিঃশ্বাস দেখে, নার্ভ চেক করে। হাত পা গুলো শীটকে শক্ত হয়ে আছে। কতক্ষণ ঝড়ের মধ্যে ছিল কে জানে?
সাদিক জিজ্ঞেস করে "শুনতে পাচ্ছেন, আপনি কি বেঁচে আছেন?" সাদিকের নেশা হয়ে গেছে। মেয়েটা হাসবে, না রাগ করবে! বুঝতে পারছে না। লোকটা বিড়বিড় করে জড়ানো গলায় কি যেন বলে, সাদিক কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কিন্ত বুঝতে পারে না।
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে "বেঁচে আছে।" ওর ঠোঁটে আশার ঝিলিক।
মেয়েটা বলে "আপনি কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো, এইযে?" লোকটা আবার বিড়বিড় করে।
মেয়েটা সাদিককে বলে "ওকে উঠান তো, ঘরে নিয়ে চলুন। "
সাদিক তোলার চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না। নেশার ঘরে ঢুলছে। কী করবে, ঠিক বুঝতে পারছে না। তোফায়েল তাকিয়ে দেখে- কি আশ্চর্য, ছয় ফুটের জিরাফটা সাড়ে চার ফুটের গিনিপিক টাকে তুলতে পারছে না। লোকটা সাড়ে চার ফুটের বেশি হবে মনে হয়। ফর্সা ধবধবে, বেশ গাটুম গুটুম।
মেয়েটা তোফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে "হোম্বার মত দাঁড়িয়ে না থেকে উনাকে সাহায্য করো। "
তোফায়েল চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। সাদিক লোকটাকে কাঁধে তুলে নিয়ে রুমের দিকে ছোটে, পেছন পেছন মেয়েটাও।

সাদিক লোকটাকে বেডের উপর শুইয়ে দিয়ে ভেজা কাপড়গুলো ছাড়িয়ে দেয়। তোয়ালে দিয়ে গাটা মুছে দেয়। মেয়েটাকে বলে "একটু গরম তেল পাওয়া যাবে?" বলে সে কম্বল আনতে যায়, মেয়েটা তেল আনতে। সাদিক কম্বল দিয়ে ভালোভাবে লোকটাকে জড়িয়ে দেয়, হাত ঘষে, শীটকে আছে, উষ্ণতা দরকার।
তোফায়েল বলে "ওর অবস্থা তো ভালো না, যদি কিছু হয় আমাদের কাঁধে পড়বে, শেষে পুলিশের ঝামেলায় পড়তে হবে। আমি আবারো বলছি- কাজটা ঠিক করছেন না আপনারা।"
সাদিক বলে "সে দেখা যাবে, মারা গেলে আবার বাহিরে ফেলে আসবো। কিন্তু এ অবস্থায় তো রেখে আসতে পারি না।"
" আমিই বা এই অবস্থায় আমার ঘরে রাখতে দেবো কেন?"
সাদিক তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে" এত ইন্সেন্সিতিভ হচ্ছেন কি করে? একটা অসুস্থ লোককে বাইরে ফেলে রাখবেন?"
কথাটা তোফায়েল কে আঘাত করে, তোফায়েল রাগত স্বরে বলে "আমি ইন্সেন্সিতিভ? নিজের কথা ভুলে গেলেন?"
ঠিক, সেও তো বিপদে পড়ে আশ্রয় নিয়েছে, তোফায়েল তো তাকে থাকার জায়গা দিয়েছে। সাদিক বলে "একটু সুস্থ হয়ে নিক, আমি ওকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যাব। প্রয়োজন হলে আমি বাহিরে থাকবো। ঝড় তো আর নেই, কোন সমস্যা হবে না, আমি ঠিক কাটিয়ে দিতে পারব। "
মেয়েটা এসে দাঁড়ায়, কিচেন থেকেই ওদের সব কথা শুনতে পাচ্ছিল।
মেয়েটা বলে "কাউকে কোথাও যেতে হবে না।" তারপর সাদিকের দিকে তেলের বাটি এগিয়ে দিয়ে তোফায়েল কে বলে "তুমি কি বলতো! এরকম আহত লোকটাকে বাহিরে রেখে থাকতে পারবে? একটুও বাঁধবে না?"
" কিন্তু এখন যদি কিছু হয়ে যায়, আমাদের জেলে যেতে হবে। "
"যেতে হলে, যাব। কারো বিপদে সাহায্য করায় যদি জেল হয়, হবে। তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন?"
তোফায়েল চুপচাপ সোফায় বসে পড়ে।
সাদিক বলে " কিচ্ছু হবে না। দেখবেন- একটু পরেই উঠে দাঁড়াবে। আপনি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছেন।"
তোফেল বলে "নামটাম কিছু বলতে পেরেছে?
" না" জবাব দেয় সাদিক।
মেয়েটা বলে "আরেকবার জিজ্ঞাস করেনতো, দেখি কিছু বলতে পারে কিনা।"
সাদিক বলে "শুনতে পাচ্ছেন? আপনার নাম কি?"
লোকটা আবার বিড়বিড় করে, কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারে না। সাদিক হাতে-পায়ে, শরীরে গরম তেল ঘসে, কম্বল দিয়ে ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে বলে "থাক, একটু ঘুমাক। এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।"
লোকটা চুপচাপ শুয়ে আছে, ঘুমিয়ে পড়েছে মনেহয়। এই ঘুম যেন শেষ ঘুম না হয়, ওরা সবাই মনে মনে এটাই আশা করতে লাগলো।
সাদিক বললো "তোফায়েল সাহেব আর একটা বানান তো, আমি হাতটা ধুয়ে আসি।"
তোফায়েল দুটো পেক বানালো, একটা সিগারেট জ্বালালো, বলল "বেঁচে গেলে তো ভালো, কিন্তু কিছু হয়ে গেলে!"
মেয়েটা বলল "তুমি এত ভাবছো কেন? আমাদের যতটুকু করার করেছি, যা হবার হবে।"
সাদিক হাত ধুয়ে এসে বলল" কিচ্ছু হবে না। বৃষ্টিতে অনেক্ষন ভিজেছে তাই হাত-পা শীটকে আছে, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। কিচ্ছুক্ষণ শুয়ে থাক, ঠিক হয়ে যাব। হ্যা, আপনাদের রাতটা নষ্ট হয়ে গেল।" বলে সাদিক মুচকি হাসলো যেন।
তোফায়েল মুখ ভর্তি একরাশ ধৌয়া ছাড়ল, সাথে কি দীর্ঘ নিস্বাশও! বুঝতে পারলো না। এ রাতের আর কোন আশা নেই। রাতটা একটা দূর্যোগপূর্ণ রাত।
মেয়েটা বলল" কী বলছেন, এরকম অসুস্থ একটা লোককে বাহিরে রেখে আমরা ভেতরে সময় কাটাবো! তাছাড়া আমরা তো গল্পই করছিলাম। " বলে মেয়েটা হাসলো। পরিবেশটা স্বাভাবিক হল।
ওদের মধ্যে কোন একটা খেলা চলছে, সাদিক বুঝতে পারে। নয়তো বারবার এমন গল্পই করছিলাম বলছে কেন। সাদিক গ্লাসটা তুলে নিলো, বলল" লোকটা হিন্দু।"
"বুঝলেন কী করে?" তোফায়েল জিঙ্গেস করে।
সাদিক বলে" পৈতা পড়ে আছে, সম্ভবত ব্রাহ্মণ।"
"আশ্চর্য! আজকাল কেউ এসব মানে নাকি।" তোফায়েল নিজের জন্য একটু সুরা ঢালে। সুরার স্বাদ ঠোটে মিলছে না। এই ছয় ফুটের জিরাফটা বিরক্ত তো করছেই, তার মধ্যে নিয়ে এসেছে সাড়ে চার ফুটের একটা গিনিপিগ। সেটা বাচে কি মরে তার ঠিক নেই। তোফায়েল ভেবেছিল রাতটাকে রঙিন বানাবে। ঝড়ের মধ্যে কুড়িয়ে পাওয়া রাতটা স্বপ্নিল হবে। কিন্তু হচ্ছে কী! মানুষ কত স্বপ্ন বুনে, বুকের মধ্যে সৃষ্টি করে ক্ষীণ ক্ষীণ আশা। সবটা কি পূরণ হয়? আশা ভঙ্গের ক্ষত চিহ্ন গুলো জ্বালাবে অনেকদিন। যখনি এই রাতের কথা মনে হবে, তখনি একটি অতৃপ্তির করুণ সুর বাজবে। অথোচো তোফায়েল ভেবেছিল- রাতটাকে মন্থন করবে রোমাঞ্চে, বন্ধুত্বের আড্ডার কোন আসরে। চারপাশে ঘিরে থাকবে হা করা চোখ আর ওর ঠোটে দম্ভের হাসি। কিন্তু হচ্ছেটা কী? হাতের রেখায় আটকে থাকা নিয়তি এভাবে যে ফাকি দেবে, ভাবতে পারেনি। তোফায়েলের চোখেমুখে বিরক্তি।
"অনেকেই মানে। ধর্মের বীজ ছড়িয়ে আছে অনেক গভিরে। শিকরে জড়িয়ে আছে। এত সহজে উপড়ে ফেলা যাবে না।" বলে মেয়েটা।
সাদিক দেখল- মেয়েটা সিগারেট টানছে বেশ আয়েশ করে। ওর ঠোটে বিষটাকে ভালো মানিয়েছে। সিগারেট ধরার কায়দা দেখে বোঝা যায়, অনেক পরত জমিয়েছে।
তোফায়েল বলল" ধর্ম তো খারাপ কিছু বলে না। উপড়ে ফেলতে হবে কেন? শান্তির জন্যই তো ধর্ম।"
সাদিক ব্যঙ্গ হেসে বলে" শান্তির ধর্ম নিয়েই যত অশান্তি।"
তোফায়েল সাদিকের দিকে তাকায়। যদিও সে ধর্ম মতে চলে না, কিন্তু মানে। ধর্ম সব কিছুর মধ্যে একটা ভারসাম্য তৈরি করেছে। আমরা মানিনা বলে এত বিপত্তি।
তোফায়েল বলে" শান্তির বাণী তো সব ধর্মই ছড়ায়। সংঘাত সব ধর্মেই আছে।"
কথাটা শুনে সাদিক যেন জ্বলে ওঠে। কন্ঠে সেই উত্তাপ নিয়ে বলে " কোন ধর্ম শরীরে বোমা বেধে মানষ মারে?"
তোফায়েল সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় "কেন, ক্রাইস্টচার্চ মসজিদের কথা ভুলে গেলেন?"
"ভুলিনি। আপনি বোধয় হামলাকারী ট্যারেন্ট এর ইস্তেহার পড়েননি! সে কিন্তু বলেছে- ১৩০০ বছর ধরে মুসলিমদের প্রাশ্চাত্যে ও পৃথিবির বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য তাদের উপড় প্রতিশোধ নিতে আক্রমণ কিরেছিলো।" বলে সাদিক।
তোফায়েল বলে" সিরিয়াসলি! আপনি এটা দিয়ে জাস্টিফাই করছেন? ১৩০০ বছর ধরে ঐ লোক গুলো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে? সেক্ষেত্রে জঙ্গিরাও তো বলে- ওরা প্রাশ্চাত্য নগ্ন সভ্যতাকে শিক্ষা দিতে লড়াই করছে। ওরা কিন্তু এটাকে জীহাদ বলে।"
সাদিক মিইয়ে গিয়ে বলে" জাস্টিফাই করছি না। গোষ্টির দায় তো পড়ে।"
তোফায়েল বলে" দেখুন, জঙ্গিবাদ আমিও সমর্থন করি না। উগ্র জঙ্গিবাদ ক্রাইম, সেটা যে ধর্মের নামেই ছড়াক। ধর্ম সহিংসতা সেখায় না, শান্তির কথায় বলে।"
মেয়েটা সিগারেট নিভিয়ে বলে " সহিংসতা তো ধর্মের নামেই ছড়ায়, ধার্মিকরায় করে। যে ইশ্বর ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করলেন, তাকে রক্ষা করতে তার সৃষ্ট মানুষকেই অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হয়! মহান ক্ষমতাধর ইশ্বর এতটা অসহায়? নিজের সৃষ্ট ধর্মকেই রক্ষা করতে পারেন না।"
তোফায়েল মেয়েটার দিকে তাকায়।
"আপনি ইশ্বরে বিস্বাস করেন না?" প্রশ্ন করে সাদিক।
মেয়েটা বলে" কারো শাশ্বত মহত্ব আমি চোখ বন্ধ করে মানতে পারি না। অতিপ্রাকৃতিক কিছুতেই আমার বিশ্বাস নেই। All I believe in, man's are eating and shit goes down।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.