নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার ইচ্ছা ফেসবুকে আমি https://goo.gl/MsyCIb

রুদ্র রিটার্ন

রুদ্র রিটার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

টেনিদা

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০০

টেনিদা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর এক অমর সৃষ্টি। সত্যজিৎ রায়ের যেমন ‘প্রফেসর শংকু’, ‘ফেলুদা’ বা প্রেমেন্দ্র মিত্রের যেমন ‘ঘনাদা’ তেমনি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টেনিদা’ এক অনন্য স্বকীয় চরিত্র। ছোটদের জন্যে তাঁর সমস্ত রচনা কিশোর সাহিত্য নামক বইতেও পাওয়া যায় কিন্তু টেনিদা এদের মাঝে উজ্জ্বলতম। মূলত কিশোরসাহিত্য হলেও যে কোন বয়সের মানুষ যে কোন সময়ে টেনিদা পড়ে নির্মল আনন্দ পাবে তা হলফ করেই বলা যায়। ।
টেনিদা যার আসল নাম ভজহরি মুখার্জি। টেনিদা মূলত তিন কিশোরের লীডার। গল্প এবং উপন্যাসগুলোর বর্ণনাদাতার নাম প্যালার মতে টেনিদার নাক হল মৈনাক পর্বতের মত,বুকের ছাতি পুরো ৩৬ ইঞ্চি এবং গড়ের মাঠে গোরা পিটিয়ে চ্যাম্পিয়ন। তবে সাত বারের চেষ্টায়ও মেট্রিক পাশ করতে পারেনি। একটু চালবাজ, প্রচুর খেতে পারে এবং সে খাওয়া অবশ্যই হয় বেশিরভাগ প্যালা অথবা ক্যবলার পকেট কেটে! যত চালবাজই হোক বিপদ সামনে আসলে সবার আগে সেই সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়।
প্যালারাম যে নিজেও এই উপন্যাস,গল্পের একজন চরিত্র। পড়াশোনায় তাঁর অবস্থান টেনিদার ঠিক পরেই! তার ভাষায় সে সারাবছর পালাজ্বরে ভোগে এবং শিঙ্গি মাছের ঝোল খায়। বাকি দুজনের নাম হাবুল সেন আর ক্যাবলা। হাবুল সেন ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলে আর ক্যাবলা বাকি তিনজনের চাইতে সবচেয়ে মেধাবী আর বুদ্ধিমান।
এই চারমূর্তি পটলডাঙ্গায় থাকে আর চাটুজ্যেদের রোয়াকে বসে আড্ডা মারে। এই চাটুজ্যেদের রোয়াকই মূলত এর চারমূর্তির মিলনস্থল, আনঅফিসিয়াল অফিস ।
টেনিদার মুখের কথা অনেকটা প্রবচনের পর্যায়ে চলে গেছে। যেমনঃ ‘এক চড়ে তোর কান কানপুরে পাঠিয়ে দেব! (সময় এবং এলাকা ভেদে এই কান কত জায়গায় যে ঘুরেছে তার ইয়ত্তা নেই)’, ‘ব্যাপারটা মনে হচ্ছে পুঁদিচ্চেরি (মানে ব্যাপারটা সাংঘাতিক)’ এমনতর আরও কিছু।
সাথে হাবুল সেনের ঢাকাইয়া ভাষা এ উপন্যাস এবং গল্পগুলোকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। এর সাথে ক্যাবলার উপস্থিত বুদ্ধি, মেধার জুড়ি মেলা ভার। প্যালার প্রাণবন্ত ধারাভাষ্য পড়ে না হেসে থাকা পৃথিবীর দুরুহতম কাজের একটি হবার কথা ।
টেনিদা সমগ্র থেকে কিছু লাইন যা আমার প্রিয় সংলাপের কিছু grin emoticon
-শিক্ষকরা অবশ্য হীরেকে কাঁচ ভেবে ভুল করেছিলেন, একজন তাকে বলতেন ফক্স মানে সিরিগাল! বলতেন , "বৎস ভজহরি, জগদীশ্বর কি তোমার স্কন্ধের উপরে মস্তকের বদলে একটি গোময়ের হাঁড়ি বসাইয়া দিয়াছেন?". পণ্ডিতমশাই একবার ওকে গো শব্দরূপ জিজ্ঞেস করায় বলেছিল গৌ- গৌবৌ – গৌবর! শুনে পণ্ডিত মশাই চেয়ার থেকে উল্টে পড়ে যেতে যেতে সামলে নিয়েছিলেন।
-একবার টেনিদা নাকি অ্যায়সা কীর্তন ধরেছিল যে তার প্রথম কলি শুনেই চাটুজ্যেদের পোষা কোকিলটা হার্টফেল করে,
আর হাবুল- প্যালার যৌথ সঙ্গীত শুনে নেপালি ড্রাইভার দারুণ আটকে হাঁই হাঁই করে উঠে বলেছিল , অমন বিচ্ছিরি করে চেঁচিয়ে চমকে দেবেন না বাবু, খাঁড়া পাহাড়ি রাস্তা – শেষে একটা অ্যাকসিডেন্ট করে ফেলব!
যার সাথে কিছু মধুর কথোপকথন সর্বদাই মনের মুকুরে থাকে-
হঠাৎ ডেকে জিজ্ঞেস করলাম – আচ্ছা ড্রাইভার সাহেব,
আমি ড্রাইভার নই, গাড়ীর মালিক। আমার নাম বজ্রবাহাদুর।
- আচ্ছা বজ্রবাহাদুর সিং-
সিং নয়, থাপা।
তারমানে শিংওয়ালা নিরীহ প্রাণী নয়, দস্তুরমত থাবা আছে। মেজাজ আর গলার স্বরেই সেটা বোঝা যাচ্ছিল।
-টেনিদা বলল আমি এখন ভীষণ ভাবুক- ভাবুক বোধ করছি!
ভাবুক- ভাবুক শুনে আমার খুব উৎসাহ হল, তুমি এখন কবিতা লিখবে বুঝি?
টেনিদা বিরক্ত হয়ে বলল, দুত্তোর কবিতা! ও-সবের মধ্যে আমি নেই । যারা কবিতা লিখে তারা আবার মনিষ্যি থাকে নাকি? তারা রাস্তায় চলতে গেলেই গাড়ী চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে যায়, নেমন্তন্ন বাড়ীতে তাদের জুতো চুরি হয়, বোশেখ মাসে গরমে যখন লোকের প্রাণ আইঢাই করে – তখন তার দোর বন্ধ করে পদ্য লিখে- বাদলরাণীর নূপুর বাজে তাল-পিয়ালের বনে! দুদ্দুর!
আমি আশ্চর্য হয়ে বললুম, বোশেখ মাসের দুপুরে বাদলরাণীর কবিতা লেখে কেন?
টেনিদা মুখটাকে ডিম ভাজার মতো করে বললে, এটাও বুঝতে পারলি না? বোশেখ মাসে কবিতা না লিখে পাঠালে আষাঢ় মাসে ছাপা হবে কী করে? যা-যা কবিতা লেখার কথা আমাকে আর তুই বলিস নে । যত্তো সব!
ভাল মানুষ হাবুল সেনের অকাট্য যুক্তি ভাউয়া ব্যাঙ-এর মানে হইল গিয়া ভাইয়া ব্যাঙ, নায়ক বিজয় কুমারের বলা খুন – পুলিশ – ডাকাত, সাথে সাথে অন্যদের অ্যাম্বুলেন্স- ফায়ার বিগ্রেড- সৎকার সমিতি, তার পিছন পিছনে আসা মড়ার খাটিয়া, হরিসংকীর্তনের দল।
গুল মারতে টেনিদার জুড়ি নেই। প্যালারামকে ঝাড়ি দেন "ফ্রান্সের সানাইওয়ালা মসিয়ে প্যাঁকো", "লন্ডনের মুরগীর দোকানদার মিস্টার চিকেনসন", "জাপানি গাইয়ে তাকানাচি" এদের কথা বলে। এর সাথে আরো কত যে ঘটনার ঘনঘটা তা না পড়লে জানা যাবে না!
পটল আর শিঙিমাছের ঝোল খাওয়া প‌্যালারাম সহ চারমূর্তি জিন্দাবাদ।
থ্রি চিয়ার্স ফর পটলডাঙ্গা!
ডি লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফেলিস! ইয়াক!! ইয়াক !!!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৮

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: পটল আর শিঙিমাছের ঝোল খাওয়া প‌্যালারাম সহ চারমূর্তি জিন্দাবাদ।
থ্রি চিয়ার্স ফর পটলডাঙ্গা!
ডি লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফেলিস! ইয়াক!! ইয়াক !!!
+++ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.