নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার ইচ্ছা ফেসবুকে আমি https://goo.gl/MsyCIb

রুদ্র রিটার্ন

রুদ্র রিটার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গেরিলা যুদ্ধ ঢাকার বাইরে ১৯৭১

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৭

২৬ মার্চের ক্র্যাক ডাউনের পরে বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধটা অনিবার্য হয়ে পরে । ঢাকার রাস্তায় লাশের স্তুপ বারতে থাকলে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে পাল্টা আঘাতের প্রয়োজন অনুভব করে এদেশের মানুষ । এপ্রিলের ৩ তারিখে এম এ জি ওসমানীর সাথে খালেদ মোশাররফ , মেজর সফিউল্লাহ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল রব এর এক বৈঠকের মাধ্যমে শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র প্রতিরোধ ।
খালেদ মোশাররফ ছিলেন ফোর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ অধিনায়ক । সেনা শৃঙ্খল ভেঙ্গে তিনি ২৭ মার্চ তার বাহিনী নিয়ে ঝাপিয়ে পরেন মাতৃভূমির জন্যে । পরবর্তীতে ২ নং সেক্টর এবং কে ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২ নং সেক্টর ছিলো মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর । রাজধানী ঢাকা এবং দুই দুইটা ক্যান্টনমেন্ট । সারা দেশের কার্যক্রম পাক হানাদাররা পরিচালনা করে এখান থেকেই । তাই সাধারণ নিয়মিত কৌশলে ২ নং সেক্টরকে শত্রুমুক্ত করা সম্ভব ছিলো না । অসম্ভব সাহসী খালেদ মোশাররফের রণকৌশলে দিশেহারা হয় পাক বাহিনী ।
আলফা , চার্লি , ব্রাভো এবং ডেলটা । এই চারটা কোম্পানিতে বিভক্ত খালেদের নিয়মিত বাহিনী । কিন্তু প্রবল পরাক্রমশালী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের সাথে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন ছিলো অভিনব এক যুদ্ধপদ্ধতি । সেই করলেন খালেদ মোশাররফ । এ টি এম হায়দার কে গেরিলা স্টাফ অফিসার নিযুক্ত করে গড়ে তোলা হয় গেরিলা বাহিনী । মেজর হায়দার সেসময়ের শ্রেষ্ঠ গেরিলা কমান্ডোদের একজন ছিলেন । মেলাঘর ক্যাম্পে ট্রেনিং নিতে থাকে প্রায় চার হাজার গেরিলা , মে মাসের প্রথম দিকেই ।
গেরিলা অপারেশনের মূল লক্ষ্যই ছিলো ক্রমাগত আক্রমনে পাকবাহিনীকে ব্যাতিব্যাস্ত করে ফেলা । হিট এন্ড রান ট্যাকটিক্সকে কিংবদন্তী পর্যায়ে নিয়ে যায় ঢাকার গেরিলা ওয়ার ফেরার । অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত পাকিস্তানী বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পরে । মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে পরিচালিত এসব গেরিলা অপারেশন আমাদের স্বাধীনতাকে তরান্বিত করে । নভেম্বর ডিসেম্বর মাসের গেরিলা আক্রমন গুলো পরিচালিত হতো মেজর হায়দার ও শাহবেগ সিং এর যৌথ কমান্ডে । খালেদ তখন গুরুতর আহত অবস্থায় ভারতে চিকিত্‍সাধীন ।
২১ মে
জামাল কবির (বীর প্রতীক) এবং খোকন নামে দুই গেরিলা এন্টি ট্যাংক মাইন দিয়ে শত্রুবাহী একটা ট্রাক উড়িয়ে দেয় ।
গেরিলাদের আরেকটি দল দেবীদ্বার থানা আক্রমন করে ছয়জন দালাল পুলিশ হত্যা করে । তারা হাজীগঞ্জ থানার সাব ইন্সপেক্টর সহ দুজনকে মেরে ফেলে ।
২৯ মে
তিনজন গেরিলার একটি দল চৌদ্দগ্রাম থানা আক্রমন করে । তিনজন পাকসেনা নিহত হয়
৬ জুন
চারজন গেরিলার একটি দল গোমতী নদী পেরিয়ে কুমিল্লা পৌছে ।
১০- ১১ জুন
কুমিল্লার কমার্স ব্যাংক , ন্যাশনাল ব্যাংক ও জর্জকোর্টে পাকসেনাদের আক্রমন করে গেরিলা বাহিনী
চারজন গেরিলার ডেমোলিশন দলটি জাঙ্গালিয়ার কাছে মাইন পুতে একটি ডিজেল ইঞ্জিন লাইনচ্যুত করে ।
২১ ও ২৭ জুন
জুন মাসের ১৬ তারিখে দুটি গেরিলা টিমকে পাঠানো হয় । প্রথম দলটি ২১ জুন কুমিল্লার দক্ষিনে দুটি ইলেকট্রিক পাইলন উড়িয়ে দেয় । ফলে নোয়াখালীতে বিদ্যুত সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় ।
দ্বিতীয় দলটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উত্তরে তালশহরে তিতাস গ্যাসের চার ফুট পাইপ উড়িয়ে দেয় । ঢাকা নারায়ণগঞ্জ আশুগঞ্জের শিল্প কারখানা গুলো বিকল হয় পড়ে
২৭ জুন
গেরিলাদের ষাটজনের একটি দল ফরিদপুরে পৌছে এবং ছোট ছোট প্লাটুনে বিভক্ত হয় । ২৭ তারিখ রাত এগারোটায় গেরিলা কমান্ডার খলিলের নেতৃত্বে পালং থানায় হামলা চালানো হয় । তিনজন নিহত হয় এবং নয়টি রাইফেল দখলে আসে ।
২৮ জুন
রাজৈর থানার টাহেরহাটে অবস্থানরত কিছু পাকিস্থানী সেনার উপর ২০ জনের একটি গেরিলা দল আক্রমন চালায় । এতে ১০ জন পাক সেনা নিহত হয় এবং তারা টাহের হাট থেকে পালিয়ে যায় ।
জুলাই
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে খালেদ মোশাররফ খবর পান যে নারায়ণগঞ্জের 'পাক বে' কোম্পানীকে তিনশ ফাইবার গ্লাস স্পিডবোট তৈরীর নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান বাহিনী । পাকিস্তানীদের পানিভীতি সর্বজন বিদিত । এসব স্পিডবোট তৈরী হয়ে গেলে শত্রুদের গতিবিধি অনেকগুন বেড়ে যাবে এবং বর্ষা মৌসুমে হায়েনারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে পৌছতে পারতো ।
১০ জনের একটি গেরিলা প্লাটুন পাক বে আক্রমন করে এবং সকল যন্ত্রপাতি ধ্বংস করে দেয় । ফলে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের গতিবিধি অনেকাংশে সীমিত করতে বাধ্য হয় ।
৪ জুলাই
দুপর বারটায় পাঁচজন গেরিলার একটি দল পাগলায় বিদ্যুত সরবরাহের একটি পাইলন উড়িয়ে দেয় ।
৫ জুলাই
নারায়ণগঞ্জের গুলশান সিনেমা হলে দুজন গেরিলা গ্রেনেড চার্জ করে । পাচজন দালাল আহত হয় এবং সমগ্র এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি হয় ।
১২ জুলাই
রাত সাড়ে দশটার দিকে নারায়ণগঞ্জ পোস্ট অফিসে বিস্ফোরণ ঘটায় গেরিলা বাহিনী । এছাড়া মন্ডলপাড়া ও চৌধূরীবাড়ি ইলেক্ট্রিক সাবস্টেশন এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার চারটি বৈদ্যুতিক পাইলন উড়িয়ে দেয় । বিস্তীর্ন এলাকা বিদ্যুত শুন্য হয়ে পরে ।
অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর ছেলে ভাষণের নেতৃত্বে একটি গেরিলা ডেমোলিশন দল বাউসিয়া সেতুটি ধ্বংস করতে যায় । কিন্তু বিস্ফোরকের ইগনিশন কাজ না করায় সেতুটি ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি । স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে খবর পেয়ে সেসময় পাক বাহিনী গেরিলাদের উপর আক্রমন চালায় । কয়েকজন গেরিলা গুরুতর আহত হয় এবং ২৬০ পাউন্ড টিএনটি ফেলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় ।
১৫ জুলাই
ফতুল্লা ও ঢাকার মাঝের একটি রেলসেতু এক্সপ্লোসিভ দিয়ে উড়িয়ে দেয় গেরিলারা । ফলে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় ।
৪ ও ৫ আগস্ট
আগস্ট মাসের চার তারিখ আড়াইহাজার থানার এবং দরগাঁও থানার দুটি সড়ক সেতু উড়িয়ে দেয় গেরিলারা । ফলে নরসিংদী ডেমরা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । পাঁচ তারিখে বাতের চর ও দাউদকান্দির দুটি সড়কসেতু উড়িয়ে দিলে ঢাকা কুমিল্লা সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায় ।
১৩ আগস্ট
বেলা তিনটার দিকে পাকিস্থান বিমানবাহিনীর একটি জিপ এমবুশ করে গেরিলা দল , ডেমরা এলাকায় । এতে চারজন বিমান ও সেনা গোয়েন্দা নিহত হয় । তাদের কাগজপত্র , পরিচয় পত্র ও রিভলবার উদ্ধার করে হেডকোয়ার্টারসে পাঠিয়ে দেয় তারা ।
পাক সেনাদের ঝিনারদি ক্যাম্পে আক্রমন করে আরেকটি গেরিলা দল । আড়াইঘন্টার যুদ্ধে একজন পাকসেনা নিহত হয় এবং পনেরো জন পাকসেনা আত্মসমর্পন করে । গেরিলারা একটি মেশিনগান , ১১ টি রাইফেল , সাড়ে চার হাজার গুলি , ১৭ ব্যাগ আটা এবং ১১ পেটি দুধ জব্দ করে ।
২০ আগস্ট
নরসিংদী গেরিলা ইউনিটের একটি দল তিতাস গ্যাস পাইপ লাইন উড়িয়ে দেয় । ফলে ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্র তথা সমগ্র শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যায় ।
৩০ ও ৩১ আগস্ট
গেরিলাদের একটি দল আড়াইহাজার থানা আক্রমণ করে দালাল দারোগাকে হত্যা করে । থানার সব অস্ত্র নিয়ে আসে ।
এর পরেরদিন এক পাকিস্তানী দালালের ২ লাখ টাকা মূল্যের সূতাবাহী নৌকা ডুবিয়ে দেয় । পাকিস্থানী একটি দল ঘটনাস্থলের দিকে অগ্রসর হলে পূর্ব পরিকল্পিত গেরিলা এমবুশে পরে এবং ৩৩ টি মৃতদেহ ফেলেই পালিয়ে যায় ।
২ সেপ্টেম্বর
পাক সেনাদের গজারিয়া চৌকি আক্রমন করে একটি গেরিলা টিম । এতে তিনজন ইপকাফ নিহত হয় এবং প্রায় ১৫০ টি গুলি হস্তগত হয় ।
পাক সেনারা ভবেরচর সেতু পুনরুদ্ধারে ফেরির ব্যবস্থা করেলা গেরিলারা ফেরিটি ধ্বংস করে দেয় । ফেরির চারটি ব্যাটারি খুলে নিয়ে আসে ।
৬ সেপ্টেম্বর
৫০ জনের একটি গেরিলা দল নরিয়া থানা আক্রমন করে । ১৭ জন পাক সেনা নিহত হয় ।থানার তিরিশটি রাইফেল হস্তগত হয় ।
২১ সেপ্টেম্বর
জুন মাসের পর পুনরায় পালং থানা আক্রমন করা হয় । প্রায় ৩০০ গেরিলার এই আক্রমনের শতাধিক রাজাকার ও পাক সেনা নিহত হয় এবং পুরো এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে ।
অক্টোবর
পাকসেনাদের একটি শক্তিশালী দল নারায়ণপুরের দিকে অগ্রসর হয় । তারা সেখানে অসংখ্য নারী ধর্ষণ করে । নারায়ণপুরের মাত্র ১৩ সদস্যের গেরিলা দল সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিশোধ নেয়ার । তাদের আক্রমনে ১৪ জন পাকসেনা ও ২৯ জন রাজাকার নিহত হয় । গুলি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা আক্রমন চালিয়ে যায় । এ যুদ্ধে পাঁচজন গেরিলা যোদ্ধা শহীদ হয় । এই আক্রমন গেরিলাযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।।
নভেম্বর মাসে গেরিলা তত্‍পরতা অনেকটা কমিয়ে আনা হয় এবং ব্রিগেড ফোর্স গুলো সরাসরি আক্রমনে পাক বাহিনিকে কোণঠাসা করে ফেলে । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গেরিলা ওয়ারফেয়ার ছিলো অবিচ্ছেদ্য এক অংশ । আমাদের অস্ত্র ছিলো না । আমাদের ট্রেনিং ছিলো না । পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করতে তাই গেরিলা আক্রমনের বিকল্প ছিলো না । হলিউডের একশন মুভির মতো স্মার্ট গেরিলা না , আমাদের গেরিলারা ছিলো লুঙ্গি পরা ছেঁড়া জামার সাধারণ ছাত্র বা কৃষক । একবেলা খেয়ে বা না খেয়ে অপারেশনে যেতো তারা। তবুও এক মুহুর্তের জন্যে মাতৃভূমীর প্রতি তাদের ভালোবাসার কমতি ছিলো না । এমনকি সম্মুখযুদ্ধেও শহুরে ছাত্র, বেঙ্গল রেজিমেন্ট পুলিশ ইপিআর নিয়ে মোট যোদ্ধার কুড়ি ভাগ হতো না। এদেশের জন্যে যারা জীবন দিয়েছেন, আমাদের সুখ আর সমৃদ্ধির জন্যে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের অবদান স্বীকার না করে আমরা কোনোদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবো না।
কার্টেসি - অর্ফিয়াস রিবর্ন ভাই

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৭

চলন বিল বলেছেন: ঠিক আছে

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: একনজরে যুদ্ধের অংশবিশেষ। লেখাটা ভাল ছিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.