![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা সময় আমাদের হাত ফসকে ক্যাচগুলো পড়ে যেত। সহজ সহজ ক্যাচ, ধরে রাখতে পারতাম না। প্রাণান্ত চেষ্টার পরেও কিভাবে যেন আঙ্গুলের ফাঁক গলে বলটা পড়েই যেত।আমাদের ফিল্ডাররা অদ্ভুত অবিশ্বাসে তাকিয়ে থাকতো পড়ে যাওয়া বলটার দিকে, মানুষ হাসতো, মানুষের মত দেখতে ভিনদেশী দালালেরা... খ্যাক খ্যাক করে হাসতো... বলতো, ওই দেখ, গাধাগুলা টাকি মাছ ধরে... আমরা কেবল শুনতাম, কষ্ট হত খুব... কিছু বলতে পারতাম না... কিচ্ছু না...
একটা সময় আমাদের পেসারদের বলগুলো বিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা তারিয়ে তারিয়ে সীমানার বাইরে পাঠাতো। বাউন্সারগুলো শর্ট বল হয়ে ব্যাটসম্যানের সামনে উপাদেয় খাদ্য হয়ে হাজির হত, অনেক হিসাব করে ফেলা বলটা হঠাৎই কিভাবে যেন হাফভলি হয়ে যেত, জোরের উপর করতে গিয়ে অজান্তেই ফুলটস দিয়ে ফেলতো ওরা। আপ্রান চেষ্টার পরেও কিভাবে যেন বলটা জায়গামত পড়তই না। চারের বন্যা বয়ে যেত, একের পর এক বল গিয়ে পড়ত গ্যালারীতে।পাকিস্তানের দালালগুলা বলতো, বাংলাদেশের আবার পেসার? ফাজলামির একটা লিমিট আছে ব্যাটা। পেস বোলিং ওয়াসিম-ওয়াকার-শোয়েব ছাড়া কেউ করতে পারে নাকি? চুপচাপ শুনে যেতাম, কথা খুঁজে পেতাম না। বোলারটার ফলো থ্রুটা দেখাত, বিষণ্ণ ক্লান্ত মুখটা বড় অদ্ভুত যন্ত্রণায় তাকিয়ে আছে বলের দিকে... উড়তে উড়তে গিয়ে পড়ছে গ্যালারীতে... একজন পেসারের বল...
একটা সময় আমাদের ব্যাটসম্যানরা কেবল আসতো আর যেত।টিকে থাকার লড়াই করতে করতে হঠা ৎ কেউ একজন হঠাৎ খুব ভালো কিছু শট খেলে ফেলতো, ধারাভাষ্যকাররা অবাক বিস্ময়ে এমন একটা ভাব করত যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য ঘটনা ঘটতে দেখেছে তারা। তাদের প্রশংসায় কটাক্ষের তীব্র বিষ লুকিয়ে থাকতো, তীরের ফলার মত বিঁধত, চুপচাপ সয়ে যেতাম। বিপক্ষের ক্যাপ্টেন মাঝে মাঝে ম্যাড়ম্যাড়ে খেলাটায় একটু বিনোদন দিতে ফিল্ডারের ছাতা বানাত আমাদের ব্যাটসম্যানগুলোকে ঘিরে। বাউন্ডারিতে দু একজন বাদে সবাই মিলে ঘিরে ধরতো আমাদের ব্যাটসম্যানদের, বেশ একটা উত্তেজনা তৈরি হত। কে কার আগে বেশি উইকেট নিতে পারে... সেই উত্তেজনা... আমরা পারতাম না, পারতাম না ঘিরে ধরা সেই ফিল্ডারগুলোর ব্যূহ দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে বলটা সীমানার বাইরে পাঠাতে... আউট হয়ে ফিরে আসতাম... ক্লান্ত, ধীর পায়ে... বারবার...
তাই আজকে যখন তামিমকে চার পায়ে ঝাঁপিয়ে ডাঊন দ্যা উইকেটে এসে ছক্কা মেরে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দেখি, মুশফিককে ফেদেরারের মত ফোর হ্যান্ড ব্যাক স্লাপে চার মারতে দেখি, মুস্তাফিজকে দুর্দমনীয় আগ্রাসনে সব চুরমার করে রেকর্ড বুক তোলপাড় করে দিতে দেখি, ওর অব্যর্থ কাটারের বিষাক্ত জালে খাবি খেতে খেতে হাঁসফাঁস করতে দেখি পৃথিবীর সেরা ব্যাটসম্যানগুলোকে, সাব্বির নামের এক ক্ষিপ্রগতির ঈগলকে দেখি নাসির নামের আরেক শিকারি বাজের সাথে উড়ে গিয়ে ক্যাচ ধরতে, মাশরাফি নামের এক অসম্ভব অকুতোভয় দুর্ধর্ষ নেতাকে দেখি মাঠের সবগুলো ফিল্ডারকে স্লিপে এনে ব্যাটসম্যানকে ঘিরে ধরতে, তখন হঠাৎ ধাক্কা লাগে... চমকে উঠি... অজান্তেই ঝাপসা হয়ে ওঠা চোখটা বারবার ডলে নিয়ে ভালোমতো দেখতে চেষ্টা করি, বুঝতে চেষ্টা করি, যা দেখছি, সব সত্যি তো? নাকি মরীচিকা? ঠিকঠাক দেখতে পাই না, বুঝতে পারি না, চোখটা আবার ঝাপসা হয়ে আসে। হতেই থাকে... যতবার মুছি, ততবার...
কত যন্ত্রণা ... না পাওয়ার বুক ভাঙ্গা হাহাকার... পেতে পেতে হারিয়ে ফেলা দুঃসহ আক্ষেপ... ভৎসনা... টিটকারি... পরিহাস... তামাশা... কত অকল্পনীয় দুঃস্বপ্নে ভরা দীর্ঘ দিনরাত্রিগুলো... সত্যিই কি শেষ হয়েছে হতাশায় মোড়া হাজারো ব্যাথার ক্ষনগুলো? স্বপ্ন দেখছি না তো?
সত্যি তো সব?
লেখা - রাহমান রাআদ
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩১
বাংলার জামিনদার বলেছেন: চোখ মোছেন ভাই। সামনে আরো অবিশ্বাস্য কিছু দেখার জন্য রেডি হন। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।