![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চুলায় চায়ের পানিটা চড়িয়ে আঁচটা কমিয়ে দিলেন আলেয়া,হাতের কাজ টা শেষ করেই নামাবেন বলে।বাসায় আজ দুই দিন যাবত একা সে। তার স্বামী ব্যবসার কাজ এ দিল্লী গেছেন। মেয়ে প্রমিলার সাথে স্কাইপ এ কথা হয়েছে সকালে । মুনিরার কথা জিজ্ঞেস করছিলো সে।
আজ ও নিজের মনের প্রতিটা কল্পনা,ভাবনা,স্বপ্ন ডায়েরি তে লিখে রাখেন তিনি। কবির কিংবা প্রমিলার শত অনুরধেও তিনি নোটবুক এ টাইপ করেন না।
প্রায় ১০ বছর ধরে লিখছেন কিন্তু কোনভাবেই বই ছাপাতে ইচ্ছুক নন তিনি।প্রমিলা প্রায় ই বলে "মা!তুমি এত ভাল লেখ কিন্তু এটা মানুষ কে জানাতে চাওনা কেনো? যে প্রতিভা তোমার আছে তার বিকাশ না করাটাও কিন্তু ভুল" ।তবুও আলেয়া প্রচার বিমুখ।গত ৭ দিন ধরে আলেয়ার লেখার মুড টা নেই।কারন তার প্রিয় বান্ধবী মুনিরা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আইসিউ তে আছেন।
চায়ের কাপ এ চুমুক দিতে দিতে ভাবছিলেন পুরনো দিন গুলর কথা,তাদের একসাথে বেড়ে ওঠার কথা।ভাবছিলেন কিভাবে ছোটো বেলার সৃতি গুলকে তার লেখার মাধ্যমে আরও জীবন্ত করা যায়,যেন হাত বাড়ালেই শৈশব টাকে ছুঁতে পারা যায়।
মুনিরা বরাবর ই হতকপালি মেয়ে।বাবা মার একমাত্র সন্তান হয়েও আদর পান নি। কোন একটা কারনে মুনিরার ১০ বছর বয়শে তার মা বাবার বিচ্ছেদ হয় ।সমাজের কটাক্ষ সইতে না পেরে তার মা আত্বহত্যা করেন। সেই থেকে নানার বাড়ি খালার বাড়ি এথায় সেথায় আস্রয় নেয়ার চেষ্টা। পড়াশোনার ক্ষতি ও কম হয়নি।
অবশেষে আলেয়ার বাবা টাকে নিজ দায়িত্বে তাঁর বাসায় নিয়ে আসেন। আলেয়ার মা বাবা বরাবর ই অর্থের চাইতে মানুষের সম্পর্কের দাম দিয়েছেন,তাই হয়তো মুনিরার মত একজন মানুষ কিছুটা হলেও নিজেকে সামলে নিতে পেরেছিল।১৮ বছর বয়সে সারোয়ার নামে একজন সরকারী চাকুরের সাথে আলেয়ার বাবা মুনিরার বিয়ে দেন।আলেয়ার বিয়ে হয় তার ঠিক ১ বছর পর অর্থাৎ তার বিএ পরীক্ষার পর। বিয়ের ঠিক দুই বছরের মাথায় সারয়ার মারা যান। টাকা পয়সার অভাব খুব একটা না থাকলেও মুনিরা মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েন। কিছুদিন পর একটা স্কুল এ সঙ্গীতের শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন।এভাবেই চলছিল তার জীবন।প্রমিলা কেও গান শিখিয়েছেন তিনি ই।
২ বছর আগে ক্যান্সার ধরা পরে তার শরীরে।মুনিরা তাকে বলেছিল "ভাবিস না পুরোটা জীবন এত কষ্ট যখন সইতে পেড়েছি এটাও পারব তাছাড়া শরিরের কষ্টের চাইতে মনের কষ্ট সহ্য করা বেশী কঠিন" ।
চোখের কোণার জল মুছে নিয়ে চায়ের কাপ টা রান্নাঘরে রেখে আসেন আলেয়া।দুপুরের খাবার তৈরি হয়নি এখন ও। মন ভাল না থাকলে খেতেও ভাল লাগেনা অনেকের।তার ও এরকম ই অবস্থা।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল গেলেন তিনি।তাকে দেখেই ডাক্তার এর মন্তব্য "ওহ আপনি এসেছেন? রোগীর অবস্থা কিন্তু একদম ভালোনও! যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে,প্রস্তুত থাকুন"
"হুম"আলেয়ার নির্লিপ্ত উত্তর।
বুকের ভিতরে একটা হাহাকার,চাপা কান্না সামলে আইসিইউ এর দরজার কাঁচ দিয়ে ভিতরে উঁকি দেয়ার চেষ্টা তার। দেখলেন একটা জীর্ণ শরীর বিশাল কিছু যন্ত্রের আড়ালে অস্পষ্ট প্রায়,ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টা রোগীটির জীবন বাঁচানোর।
কিছু সময়ের মাঝেই সব শেষ।
ঠিক এক বছর পর বই মেলায় আলেয়ার বই টি প্রকাশিত হলো।নাম "বন্ধুতা"। মূলত মনিরার সৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আলেয়ার বই টি ছাপানো।রিয়েলিস্টিক লেখা দেখেই মনে হয় বইটির কাটতি অনেক বেশি হয়েছে।
স্টলের এক পাশে বসে আলেয়া ভাবছিলেন "কিছু মানুষ তার মৃত্যুর পর ও আশেপাশের মানুষের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকে, মুনিরা তুই সত্যি ই "ক্ষণজন্মা"
©somewhere in net ltd.