নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পিশাচালয়

পিশাচদেব

পিশাচদেব › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটা রঙের আত্মকথা

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৪:০১

১৯৮৫ সাল সকালবেলা জন্ম হয় আমার। ঠিক সকাল না, ভোর আর সকালের ঠিক মাঝামাঝি। সূর্য তখনো ওঠেনি কিন্তু একটা লালিমা ছিল পূর্বাকাশ জুড়ে। দেখতে নাকি বেশ ফুটফুটে ছিলাম। তাই সবার আদরে বড় হতে থাকলাম।
বয়স তখন ৫, মায়ের হাতে হাতেখড়ি অ আ ক খ এর। লিখতে শুরু করি বাঁ হাতে। মা বলে বাবা বাঁ হাতে লিখতে নাই। বাঁ হাত শয়তানের হয়। কোন ভাল কাজ নাকি বাঁ হাতে করতে নাই। প্রথম প্রথম বেশ কষ্ট হতো ডান হাতে লিখতে। তবুও এক সময় শিখে গেলাম।
তারপর শুরু হল স্কুল জীবন। বাবা মা দুজনই চাকরি করত তাই স্কুল শেষেও বাড়িতে একাই কেটে যেত দিন। বেশির ভাগ দিন বাবাকে দেখতেই পেতাম না, কখন সে বাসায় আসতো বা কখন বেড়িয়ে যেত বুঝতামই না। একটু একটু করে বড় হতে থাকলাম। একসময় প্রাইমারী স্কুল শেষ করে ভর্তি হয়ে গেলাম হাইস্কুলে। নতুন নতুন বন্ধু হতে থাকলো। মেয়েদের সাথে আমার তেমন কোন কথা হতো না। মেয়েদের প্রতি কেন জানি কোন আকর্ষণ বোধও করতাম না।
তখন ক্লাস নাইনে। নব কৈশোরে পা দিয়েছি। বন্ধুরা ক্লাস শেষে মেয়েদের নিয়ে গল্প করত। মেয়ে শরীর নিয়ে বিভিন্ন কথাও থাকতো সে গল্পে। কিন্তু সে গল্পগুলো আমায় টানতো না। আমি বলতাম মেয়েরা তো মায়ের মত তারা পবিত্র হয়। তারা আমাকে একটু বেশিই বোকা ভাবতো তাই তারা বিভিন্ন জ্ঞান দিতে শুরু করলো। আমি শুধু শুনে যেতাম। সবকিছুর পরেও কোন নারী শরীর আমাকে টানেনি। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়াটার রূপ কিংবা তার উন্নত বক্ষ আমার একটুও আগ্রহের জন্ম দেয়নি।
তবে একটা সময় আমার একটা বন্ধুকে ভাল লাগতে শুরু করে। না সে কোন মেয়ে বন্ধু না। সে আমার মতই একজন ছেলে বন্ধু। তার কথা বলার সময় তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ভাল লাগাটাকে গভীর করতে তার সাথে বেশি ভাব জমাতে শুরু করলাম। একটা সময় সে আমার খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায়। শুধু ভাল বন্ধু বললে ভুল হবে বলা যায় একটা সময় সে আমার একমাত্র বন্ধুর মত হয়ে ওঠে। তার সাথে থাকতে একটু বেশিই ভাল লাগতো আমার। তাকে ছুয়ে দেখার ইচ্ছা হত, তার নগ্ন শরীরের এক কাল্পনিকতা আমাকে ঘিরে থাকতো। এমনি ভাবে চলতে চলতে একদিন তাকে মনে কথা বলে ফেলি। প্রথমে সে রাজি হয়নি। বেশ কিছুদিন আমার সাথে কথা বলেনি সে। তবে একদিন সে রাজি হয়। আমরা একসাথে থাকি। এই প্রথম আমি কোন নগ্ন শরীর দেখছি। তবে তা কোন নারী শরীর না। সে আমার মত একজন ছেলে। তার পুরুষ শরীর আমাকে বেশ পুলকিত করছিল সেদিন। আমরা মিশে গিয়েছিলাম একে অন্যের শরীরের সাথে। তবে আমি তাকে দেখেছি বেশ আড়ষ্ট হয়ে থাকতে। বুঝতে পারছিলাম তার এসব ভাল লাগেনি। হয়তো আমার মত তার ভাবনা নয় তাই তার ভাল লাগেনি। সে হয়তো নারী শরীর কামনা করে। এসবের পর সে আর কোন দিন আমার সাথে কথা বলেনি। অনেক বার তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু ফিরে আসতে হয়েছে। নিজেরও খুব খারাপ লাগা শুরু হয়। মা বলতেন নামাজ পড়লে আল্লাহ সব সমস্যা দূর করে দেন। তাই নামাজ পড়তে যেতাম। আল্লাহকে বলতাম তুমি আর সব ছেলেদের মত আমাকে বানিয়ে দাও। আমি বুঝতাম আমি আর সবার মত নই। প্রতিদিন নামজা পড়ে একটাই চাওয়া ছিল। মনে মনে ভাবতাম কাল সকালের ঘুম ভেঙ্গে দেখবো আমি নারীদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করছি। কিন্তু হয়নি। স্কুল শেষ করে কলেজে উঠলাম। কলেজও শেষ করলাম একটা সময়। এর ভিতর দু একজন ছেলের সাথে কিছু দিনের শারীরিক সম্পর্ক ছিল।
একটা সময় পড়াশোনার জন্য পরিবার বন্ধু পরিচিত সমাজ দেশ ছেড়ে চলে যেতে হল দুরের দেশে। এখানকার মানুষ বেশ উন্নত। পড়াশোনা চলতে থাকে। ধিরে ধিরে পরিচিত হতে থাকি নতুন সমাজের সাথে। একসময় পরিচয় হয় এখানেরই একটা বিশেষ গ্রুপের সাথে। সেখানে সবায় পুরুষ। তারা একসাথে আড্ডা দেয়, পান করে, আর পছন্দসই বন্ধু সাথে রাত কাটায়। আমিও তাদের একজন হয়ে উঠি। সময় গুলো বেশ ভালই কাটতে থাকে। নিজের পছন্দ মত থাকতে পারায় দেশে যেতাম না বললেই চলে। পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি করতে থাকি। এর ভিতর সিটিজেনশিপও পেয়ে যাই।
চাকরি পাওয়ার পর থেকে বাড়িতে থেকে বারবার বিয়ের চাপ দেয়া শুরু করে। আমি বারবার পিছাতে থাকি, না করে দেই। এমন করেই বেশ কিছু বছর চলে যায়। আগের চেয়ে চাপ বেড়ে যায়। বাসার সাবার সাথে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়তে থাকে। কয়েকদিন পর পর কথা হতে শুরু করলো। একদিন হুট করে বাসায় থেকে ফোন আসে মা খুব অসুস্থ, হাসপাতালে আছেন। দুদিন থেকে জ্ঞান নাই। মায়ের কথা শুনে সব ফেলে দেশে চলে আসি। কিন্তু এসে দেখি মা ঠিক আছেন। আমাকে মুলতো বিয়ে দেয়ার জন্য আনাটাই ছিল তাদের মুল লক্ষ্য। মা মেয়ে দেখতে শুরু করে, বেশির ভাগ মেয়ে আর তার পরিবার আমাকে পছন্দ করতে শুরু করে। আমি কাউকে বলতে পারছিলাম না আমার নিজের কথা। তারা আমার কথা ভালভাবে নিতে পারতো না জানতাম আমি। যে ছেলেটা বাঁ হাতে লেখার সুযোগ পায়নি সে কিভাবে বলতে পারতো সে নারী শরীর পছন্দ করে না।
অনেক চাপের ভিতর বিয়ে হয়ে যায় আমার। আল্লাহকে বলি আল্লাহ এবার অন্তত আমায় আর সবার মত বানিয়ে দাও। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করো না তুমি। কিত্নু হয়নি। বিয়ের প্রথম রাত, খুব ভয়ে ছিলাম। কি হবে কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শুধু আল্লাহকে বলছিলাম আল্লাহ সব ঠিক করে দাও। অবশেষে বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম। ঘরে ঢুকে দেখি পুতুলের মত এক সুন্দর মেয়ে চুপ করে বসে আছে। আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। ভাবছিলাম সব তাকে খুলে বলব। মনে মনে সাহস যোগানর চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম কিন্তু পারিনি। তবে তাকে বলেছিলাম আমরা যেহেতু দুজন দুজনকে এখনও তেমন জানি না আমাদের কিছুটা সময় নেয়া দরকার। সে মাথা নেড়েছিল। তারপর ঘুমিয়ে গিয়েছিল সে। আমি ঘুম নিয়েও জেগে ছিলাম আর ভাবছিলাম। আমার জন্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সুন্দর একটা জীবন। আমি শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম। এর ভিতর কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারিনি। বিয়ের পর কিছুদিন এভাবেই যেতে লাগলো। একটু আকটু করে নিজেদের ভিতর বোঝাপড়া গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম আর আল্লাহর কাছে আমার স্বাভাবিক জীবন কামনা করছিলাম।সবার সামনে একরকম অভিনয় করে যাচ্ছিলাম। বাইরে সবায় বুঝতেছিল আমরা ভাল আছি। মাস খানেক এভাবে চলে। বউ এবার একটু একটু মন খারাপ করে থাকা শুরু করে। তেমন কিছু না বললেও বুঝতাম তার মনের অবস্থা। কিন্তু আমার মনের কথা চাপা পরে থাকে। হুট করে একদিন বউ তার বাবার বাড়ি চলে যায় পরে আর আসতে চায়নি। তার বাড়িতে সে বলছিল আমি হয়তো তাকে পছন্দ করিনি। কিন্তু সত্যিই তেমন কিছু না। আমি বলতে পারিনি আসল সমস্যা কি। একদিন গিয়ে বউকে বুঝিয়ে নিয়ে এলাম। সেদিন রাতে প্রথম কোন নারীর সামনে নগ্ন হয়েছিলাম। অনেকটা আগ্রাসী ভাবে ঝাপিয়ে পরেছিলাম তার সুন্দর নরম শরীরে। শুধু মনে মনে বলছিলাম এইটার জন্যই তো চলে গিয়েছিলে। রাত শেষ হয়ে যায়। সত্যি বলছি একটুও ভাল লাগেনি তার সাথে এভাবে থাকতে। যতটা ভাল একটা পুরুষের সাথে লাগে আমার। সকালে বউ শুধু বলেছিল এমনটা চাইনা আমি আপনার কাছে। আমি ভালাবাসা চাইছিলাম। কিন্তু আমি জানি না কিভাবে একটা নারী শরীরকে ভালবাসতে হয়। এরপর আর মাস খানেক দেশে ছিলাম। রাতে বউয়ের সাথে ঘুমিয়েছি। ভালবাসার অভিনয় করেছি চেষ্টা করেছি তাকে ভাল রাখতে। আর তাকে জানার চেষ্টা করেছি, আপন করার চেষ্টা করেছি। একদিন আবার পাড়ি দিলাম দুরের দেশে সবায়কে রেখে।
দুরের দেশে আবার আমার সেই চিরচেনা জীবনে ফিরে আসি আমি। চাকরি আর আমার সেই পুরুষদের গ্রুপ। বেশ ভালই কাটতে থাকে আবার জীবন। ইচ্ছে করেই বউকে আনতে দেরি করছিলাম। কি করব বুঝে উঠতে পারিনি আমি। প্রার্থনা করতাম যেন আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মত হই। হইনি আমি। একসময় বউকে নিয়ে আসি। একসাথে থাকি আমরা। শরীর না হক চেষ্টা করে গেছি মনের দিক থেকে তার কাছে যেতে। গল্প করতাম, চা খেতাম, ঘুরতে যেতাম আমরা। একসময় আমরা ভাল বন্ধু হয়ে উঠি। ভেবেছি এখন হয়তো বলা উচিৎ, কিন্তু তবুও পারিনি। তবে এই প্রথম কোন নারীর প্রেমে পরতে শুরু করেছিলাম আমি। তার সাথে থাকতে ভাল লাগতে শুরু করে। কখনো কখনো আমরা বারান্দায় বসে মধ্যরাত পর্যন্ত চাঁদ দেখতাম। গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরতাম ছুটির দিনগুলোতে দুজন। আবার কখনো রাতে চাদের আলোয় হাটতে বেড়িয়েছি। বড্ড ভালবেসে ফেলি একটা নারীকে। শরীর না হক একটা নারী মন এই প্রথম আমাকে খুব করে আকৃষ্ট করে। অভিনয়টা শুধু রাতের অধ্যায় হয়ে রইলো। আর শরীরের চাহিদা মেটাতে মাঝেমাঝেই যেতাম সেই যায়গায়। এই প্রথম তার প্রতি ভালবাসা আমাকে স্বাভাবিক হওয়ার ইচ্ছাটাকে প্রবল করে তোলে। একের পর এক ডাক্তারের কাছে ছুটে গিয়েছি, মুক্তি চেয়েছি। কিন্তু হয়নি। এমনি করেই চলতে থাকে দিন মাস বছর। বছর খানেক পরে হুট করেই বউ জানায় সে মা হবে। অনেক বেশি ভাবনায় পরে গেলাম। কি করব বুঝে উঠতে পারিনি। শুধু মনে হচ্ছিল একটা ছোট্ট শিশুকে ঠকানোর কোন অধিকার আমার নাই। প্রতিদিন বলতে চেয়েছি বউকে আমি আর সব মানুষের মত নই। সময় যেতে থাকে। আমি বলার শক্তি পাইনি। আমি তার সুন্দর হাসি মুখটাকে কোন দিন মলিন দেখতে চাইনি। সত্যিই খুব ভালবাসতাম আমার বউকে। অভিনয়, নিজের চাপ আর হারানোর ভয় নিয়ে থাকাটা যে কত কষ্টের সেটা হয়তো কেউ জানবে না কোনদিন।
অবশেষে সেই দিন এলো বউকে বসার ঘরে বসিয়ে রেখিছিলাম। তাকে বললাম আমি তোমায় একটা কথা বলতে চাই। অনেক দিন আগে থেকে বলতে চেয়েছি পারিনি। সে বেশ হাসি মুখ নিয়ে কৌতুলে ছিল। সে বুঝতেও পারেনি আমি কি বলতে যাচ্ছিলাম। আমি দু মিনিট চুপ করেছিলাম তারপর বলে ফেললাম, আমি আর সবার মত নই আমি একজন সমকামী। এইটুকু শোনা মাত্র বউ খুব কেঁদেছিল। বলেছিল সব ছেড়ে তোমার সাথে এত দূরে আসলাম আর তুমি এত বড় ধোকা দিলা আমায়। সত্যিই আমি কিচ্ছু বলতে পারিনি আর। তার কান্না দেখে যাচ্ছিলাম শুধু। আমি সেদিন বলতে পারিনি সবকিছুর পরেও আমি তোমায় খুব ভালবাসি। বলতে পারিনি তুমিই প্রথম কোন নারী যে আমার ভালবাসার সবটুকু জুড়ে আছো।
এক নিমিষেই আমাদের সুন্দর সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। আমি ভালবাসা শব্দটাকে ঠকাতে চাইনি। তারপর আর কিছুদিন সে আমার সাথে ছিল। আজ দশদিন হল সে আমার থেকে আলাদা। সে অন্যকোথাও থাকে। আমি পারিনি তার ফোনে একটা ফোনকল করতে। খুব ইচ্ছা জাগছে আমাদের অনাগত সেই ছোট্ট বাবুটাকে একবার দেখতে। কিন্তু তা আর হবে না। আর কিছুক্ষণের ভিতর আমি এই রঙ্গিন পৃথিবীকে বিদায় জানাতে চলেছি।
জানি না এই লেখাটা কে পড়ছো। তুমি কি বন্ধু, তুমি কি পরিবার, তুমি কি সমাজ, তুমি কি দেশ নাকি তুমি স্রষ্টা। তুমি যেই হও একটা প্রশ্ন করার ছিল তোমায় জানি উত্তর আর কোন কাজে আসবে না আমার তবুও। আমি বা আমার মত মানুসগুলো কি নিজের মত সাধারণ জীবন নিয়ে বেচে থাকতে পারে না?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.