![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিশর এক রহস্যের দেশ। ৫০০০ হাজার পরেও সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এর কৌতুহল একবিন্দুও কমেনি।
এই মিশর নিয়ে সত্যজিৎ রায় যেমনি লিখেছেন "শেয়াল দেবতা" তেমনি সৈয়দ মুজতবা আলী তার বইয়ে লিখেছেন, " ‘আজ যদি সেই ফারাওরা বেঁচে থাকতেন তবে তাঁর প্রতি জাগতো ভীতি। এই পিরামিড যে তৈরী করতে পেরেছে, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবার কল্পনাও তো মানুষ করতে পারে না"।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই ফারাওরাও ভয় পেত দেবতাদের। প্রাচীন মিশরে ছিল প্রায় শ খানেক দেবতা। চলুন আজ এর ভিতর কিছু দেবতা সম্পর্কে জানা যাক।
"রি" বা "রা"
মিশরের সূর্যদেবতার নাম ছিল ‘রি’ বা ‘রা’। রা’র শরীর মানুষের মত হলেও, তার চেহারা ছিল শিকারী বাজ পাখির মত। রা’র মাথায় থাকতো একটি সাপ-জড়ানো গোলাকার মুকুট। পরবর্তীতে, দেবতা রা’য়ের নাম পরিবর্তন করে মিশরীরা একে ‘আমন’ বা ‘আটন’ নামেও ডাকতো। সূর্যদেবতা রা’য়ের ছিল শু, টেফনুট ও নুট নামে তিনটি ছেলে এবং ‘শেব’ বা গেব নামে একটি মেয়ে। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, ‘শেব’ হচ্ছে পৃথিবী, আর তিন ছেলে হচ্ছে যথাক্রমে আকাশ, পাতাল ও বায়ুমন্ডল।
দেবতা "রা" ছিলেন দেবতাদের প্রধান। তাঁর অবস্থান ছিলো অনেক উপরে। উড়ন্ত বাজপাখি যেমন মাটি থেকে অনেক উপরে বিচরণ করে, ‘রা’ও তেমন বিচরণ করতেন সকলের ঊর্ধ্বে। এই দেবতার প্রধান উপাসনা স্থল ইউনু বা হেলিওপোলিস (সূর্যনগরী)।
আমুন
আমুন মিশরীয়দের কাছে অন্যতম ক্ষমতাশালী দেবতার নাম। মিশরের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এক সময় তাকে দেবতাদের রাজা বলেও মনে করা হতো। কখনো কখনো সূর্য দেবতা রা’র সাথে মিলিত হয়ে তিনি ‘আমুন-রা’ নাম ধারণ করতেন।
আমুন ছিল থিবস শহরের প্রধান দেবতা, অনেকেই গ্রিক দেবতা জিউসের সাথে একে একে তুলনা করে থাকেন। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো, আমুনের আদেশেই বায়ু প্রবাহিত হয়। আমুন দেখতে অনেকটা অভিজাত পরিবারের ছেলের মতো। এর মাথায় রয়েছে লম্বা (হামানদিস্তা সদৃশ) মুকুট। আমুনকে রাজহংস বা মেষের মাধ্যমেও প্রকাশ করতো প্রাচীন মিশরীয় পুঁথিলেখকগণ।
খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩৯–১২৯২ অব্দ পর্যন্ত আঞ্চলিকভাবে আমুনের উপাসনা চললেও। মিশরের রাজধানী থিবসে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকেই সারাদেশে আমুনচর্চা শুরু হয়।
দেবতা বেস
দেবতা বেস ছিলেন প্রাচীন মিশরের সাংসারিক নিরাপত্তা এবং সন্তান জন্মদানের দেবতা। এই দেবতা আকৃতিতে ছিলেন দানব আকৃতির বামন, বিশাল ভুঁড়িবিশিষ্ট এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাস্যোজ্জ্বল।
প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো, সাংসারিক বিভিন্ন দুর্ঘটনা এবং অশুভ শক্তির প্রভাব হতে একমাত্র দেবতা বেসই তাদের রক্ষা করতে পারেন। এই জন্যে তারা ঘরের দরজায় বেসের মূর্তি বা মুখোশ ঝুলিয়ে রাখতো। দেবতা বেসের কোন মন্দির বা উপাসনালয় ছিল না। তবে দৈনন্দিন বিভিন্ন সমস্যায় প্রাচীন মিশরীয়গণ দেবতা বেসকে স্মরণ করতো।
আনুবিস
মিশরের নাম কেউ বললেই দুটি জিনিস আমাদের মাথায় আসে যার একটি হল পিরামিড আর অন্যটি হল মমি।
মমি বা মৃত্যুর দেবতা হিসেবে পরিচিত দেবতা আনুবিস। দেবতা আনুবিসের দেহ মানুষের মত হলেও মাথা ছিল শেয়ালের মত । প্রাচীন মিশরে প্রায়ই শেয়ালদের দেখা যেত কবরস্থান থেকে মৃতদেহ তুলে খাচ্ছে। এখান থেকেই আনুবিসের শেয়ালের মতো মাথার ধারণাটি এসেছে বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন মিশরীয় রাজাদের দেহ মমিকরণের সাথে যুক্ত পুরোহিতরাও আনুবিসের অনুকরণে মুখোশ পরতেন।
বাস্ট বা বাস্টেট
দেবী বাস্ট বা বাস্টেটকে রক্ষাকর্ত্রী দেবী হিসেবে ভাবা হতো। প্রথম দিকে তাকে মিশরের নিচু অঞ্চলের রক্ষাকর্ত্রী দেবী দেবী হিসেবে পুজা করা হলেও পরবর্তীতে তাকে নিরাপত্তা ও আশীর্বাদের দেবী এবং নারী-শিশু ও বিড়ালের রক্ষাকর্ত্রী মনে করা হতো। একই সাথে সঙ্গীত, নৃত্য, আনন্দ, পরিবার, উর্বরতা ও জন্মের দেবীও ধরা হতো। প্রথম দিকে দেবী বাস্টেটকে প্রথম দিকের সিংহী রূপে দেখা গেলেও পরবর্তীতে তাকে বিড়াল রূপেই বেশি দেখা যায়।
আইসিস
প্রাচীন মিশরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক দেবী ছিলেন আইসিস। প্রাচীন মিশরীয়রা জাদুর চর্চা করতেন। আর দেবী আইসিসকে ভাবা হত জাদুর দেবী। জীবন দানকারী, আরোগ্য প্রদানকারী এবং রাজাদের প্রতিরক্ষক হিসেবে ভাবা হতো তাকে।
আইসিসের মূর্তিগুলোতে কখনো মাথায় একটি সিংহাসন বহন করতে, আবার কখনো পুত্র হোরাসকে স্তন্যদানরত অবস্থায় দেখা যায়।
খ্নুম
প্রাচীন মিশরীয়রা মনে করতো ভেড়ার মাথাওয়ালা খ্নুম নামের এই দেবতা নীলনদ সৃষ্টি করেছেন। সেই সাথে জলপ্রপাত, উর্বরতা ও সৃষ্টির দেবতা হিসেবেও ভাবা হত তাকে। প্রাচীন মিশরীয়রা মনে করতো দেবতা খ্নুমের কাছে থাকা কুমোরের চাকাতেই তিনি নীলনদের তীরের মাটি থেকে প্রথম মানুষ সৃষ্টি করেছেন।
ওসাইরিস
ওসাইরিস প্রাচীন মিশরের দেবতাদের মাঝে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম। মিশরের প্রথম রাজা বা ফারাও হিসেবে তাকে কল্পনা করা হত। সেই সাথে শস্যের দেবতা হিসেবেও পুজা করা হত। বলা হয় ফারাওয়ের ক্ষমতা দখলের লড়াই নিয়ে নিজ ভাই সেথের কাছে খুন হয় এই দেবতা। পরে অবশ্য সেথকে পরাজিত করে ফারাও হয়েছিলেন ওসাইরিসের ছেলে হোরাস।
মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, স্ত্রী আইসিস ওসাইরিসকে পুনরায় জীবিত করেছিলেন। এরপর তিনি পাতালপুরিতে চলে যান শাসক হিসেবে এবং মৃতদের বিচার করতে!
সময় হলে মিশর নিয়ে ভিন্ন কোন তথ্য নিয়ে আবার আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্যকোন দিন। সবায়কে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.