![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব সাদামাটা একজন। সদা হাসি খুশি থাকি। সদ্য স্নাতক পাশ করা। স্রষ্টার সৃষ্টি জগত নিয়ে আমার যত ভাবনা।
অনেকেই হয়তো FGM (Female Genital Mutilation) এর নাম শুনেছেন, কিন্তু FGCS (Female Genital Cosmetic Surgery) এর নাম শুনেছেন কেউ?
প্রশ্নটা কেন করছি তা বলার আগে যাদের এ সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই তাদের জন্য একটু সংক্ষিপ্ত ব্রীফিং- FGM সোজা অর্থে ছেলেদের মত মেয়েদেরকে মুসলমানি করানো, তবে সমস্যা হলো, ছেলেদেরটা মেডিক্যালি এক্সেপ্টেড কারন তাতে কোনো ছেলের ফিজিক্যাল কোনো ক্ষতি হয়না, কিন্তু মেয়েদেরটা একটা মেয়ের মানসিক এবং শারীরিক ভয়ানক রকম ক্ষতি করে। যেসব দেশে FGM প্র্যাকটিস আছে সেসব দেশের স্টাটিস্টিক্স দেখলে বুঝবেন প্রচুর মেয়ের মৃত্যুর অন্যতম কারন FGM সংক্রান্ত ইনফেকশান বা রক্ত ক্ষরন। FGM এর সবচে বড় সমস্যা হলো, এটা প্রথমে একবার করালেই শেষ হয়ে যায় না, ঐ মেয়ের যখন বিয়ে হয় তখন যতবার তার হাজবেন্ড তার সাথে শারিরীক সম্পর্কে যাবে ততবার মেয়েটার মনে হবে তাকে নতুন করে আবার কাঁটা হচ্ছে। আস্তে আস্তে বছরের পর বছর যেতে যেতে একসময় হয়তো ব্যাথা ভোঁতা হয়ে যায়, কিন্তু মেয়েটা যদি এতকিছুর পর বেঁচে থাকে (আশ্চর্যজনক হলেও প্রচুর মেয়ে ঠিকই বেঁচে থাকে, এজন্যেই মনে হয় প্রবাদে আছে মেয়েদের প্রাণ কই মাছের মত শক্ত!), তাহলে শারিরীক এবং মানসিকভাবে সে এক ধরনের বিকলাংগ হয়েই বাঁচে।
FGM এর মূল উদ্দেশ্য খুব সিমপ্লি একটাই- মেয়েটা যেন বিয়ের আগে এবং পরে তার জামাই ছাড়া অন্য কারো সাথে শারিরীকভাবে মিলিত হতে না পারে। তার চরিত্র যেন ইনট্যাক্ট থাকে। এ কারনেই FGM করে তাকে এমনভাবে সেলাই করে দেয়া হয় যেন সে কোনোমতে স্রেফ ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব করতে পারে, নাথিং এলস। কথাগুলো শুনতে বিশ্রী শোনালেও পৃথিবীর লাখ লাখ মেয়ের জীবনে এটা বাস্তবতা।
তবে এটা শুধুমাত্র মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না, যেমন ইজিপ্টে মুসলিমদের পাশাপাশি খৃষ্টান পরিবারেও মেয়েদেরকে FGM করানো হয়। এবং সে দেশে FGM এর হার ৯০% এরও উপরে!
মেয়েদের শরীর-কেন্দ্রিক কালচার-লোকাচার আর পলিটিক্স আমার পড়ালেখার অন্যতম ইন্টারেষ্ট-পয়েন্ট। কারন সব কালচারেই/সমাজেই কোনো না কোনোভাবে মেয়েদের শরীর সে সমাজ এবং প্রতিটা পরিবারের ভ্যালু-ক্যারিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই শরীরকে হয় ঢাকতে ঢাকতে পুরাই একদম এমনভাবে ঢেকে ফেলা হয় যেন ঐ মেয়ে পাবলিক লাইফ থেকেই ডিটাচড হয়ে যায়, অথবা খুলতে খুলতে এমনভাবে খুলে ফেলা হয় যেন সে মেয়ে দরজার পাপোশের মত সস্তা হয়ে যায় (কেউ এখানে মিস-ইন্টারপ্রেট করবেন না প্লীজ, আমি সোশাল ও কালচারাল অবজার্ভারের পজিশন থেকে এই কমেন্ট করেছি)।
তো, সেই শরীর-কেন্দ্রিক কালচারে FGM এর মতই আরেক ওয়েষ্টার্ন প্র্যাকটিসের নাম হচ্ছে FGCS, কসমেটিক সার্জারী করে মেয়েদের প্রাইভেট পার্টকে "স্বাভাকিক"-করন অপারেশন। এই সংক্রান্ত বিভিন্ন স্টাডিজ এই "স্বাভাবিক" এর স্ট্যান্ডার্ড খুঁজতে গিয়ে বের করেছে বেশীরভাগ অপারেশনে মেয়েটা/মহিলাটা চায় তার প্রাইভেট পার্ট দেখতে পর্ণোগ্রাফীর মেয়েদের প্রাইভেট পার্টের মত "নীট" & "আকর্ষণীয়" লাগুক।
বেশ কিছুদিন আগে পর্ণোগ্রাফীর ইফেক্ট নিয়ে একটা স্ট্যাটাস লিখেছিলাম, তখন কল্পনাতেও চিন্তা করিনি পর্নোগ্রাফের এমন বিদঘুটে রিএকশান-ও হতে পারে! অনেক স্কলার আর "ওয়েষ্ট'র-সবকিছুই-ভাল-আর-দারুন"-ভাবে যারা তারা আবার FGM এর সাথে FGCS এর তুলনায় বিরক্ত, কারন তাদের কথা হলো informed consent আরে forced cutting এক হতে পারেনা। কিন্তু তারা পুরো "peer pressure discourse"কে ভুলে যান যখন informed consent এর কথা বলেন! একটা মেয়ের কেনো মনে হবে তার প্রাইভেট পার্ট ন্যাচারাল না, অন্যেরটা ন্যাচারাল? কেনো একটা মেয়ে এত কষ্টে উপার্জন করা কামাই থেকে হাজার হাজার ডলার দিয়ে তার প্রাইভেট পার্টকে অপারেশন করে ফেইক-লুক্স বানাতে যাবে?
বেশ কিছুদিন আগে একটা ওয়ার্কশপে একটা প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম Forced veiling যেমন একজন মানুষের বেসিক অধিকারের লংঘন, Forced unveiling তারচে' এক বিন্দুও কম না। এখন ভাবছি, FGM যেমন যতটা অমানবিক, বর্বর একটা প্রথা, FGCS-ও তার চাইতে এক ফোঁটা কম অমানবিক না, যতই তা informed consent এর illusion এ ঢাকা থাকুক না কেনো।
লেখাটি ফারজানা মাহবুবা'র ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া
©somewhere in net ltd.