![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“এই কবিতার জন্য আর কেউ নেই, শুধু তুমি,নীরা
এ-কবিতা মধ্যরাতে তোমার নিভৃত মুখ লক্ষ্য করে
ঘুমের ভেতরে তুমি আচমকা জেগে উঠে
টিপয়ের জল খেতে গিয়ে জিভ কামড়ে এক মুহূর্ত ভাববে
কে তোমার কথা মনে করছে এত রাত্রে...”
এই কবিতাটি দিয়েই লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। এর পরে ‘এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি?’ ‘কেউ কথা রাখেনি’ ‘অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ। কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না’
তারপর -
তার আর পর নেই...
কখনো মনে হয় নীলরক্ত ধারণ করেই জন্মেছিলেন এই প্রেমিক পুরুষটি যিনি সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তাঁর নীরাকে। প্রত্যকেটি পুরুষের জীবনে আছে একজন নীরা।
হয়তো প্রত্যেকটি নারীর মাঝেও লুকিয়ে থাকে কারো ‘নীরা’ হওয়ার এক প্রবল স্বপ্ন।
একজন লেখককে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁর লেখা একটা কবিতাই যথেষ্ট। নীললোহিত সৃষ্টি করেছেন এমন অনেক কবিতা যাদের সাথে আমরা নিজের অজান্তে মিশে যাই।
আজ ২৩শে অক্টোবর দেখতে দেখতে একটি বছর ঘুরে এলো। এমন দিনে একধরণের তাগিদ অনুভব করছি।
প্রিয় লেখকের স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ থেকে আমার কিছু ভালো লাগা অংশ তুলে ধরলাম -
“সুনীল ছিল রমণীমোহন। মেয়েদের কাছে ভারী প্রিয় –এ কথা সবাই জানে। মেয়েরা ওর জীবনে এসেছে।...
যদি অন্য কোনো নারীকে ওর ভালো লেগেও থাকে, ও আমাকে কখনো তার সম্পর্কে কোনো কথা বলেনি। আমি রাগ করেছি, কারো নাম করে প্রশ্ন করেছি ওকে। কিন্তু ও কখনো আমাকে কারো নাম বলেনি। আমি মানুষ, আমারও অভিমান হতো। অনেকভাবে আমি রাগ দেখিয়েছি, ক্ষোভ প্রকাশ করেছি। আবার এ-ও জেনেছি যে, আমার প্রতি সুনীলের যে ভালোবাসা আছে, বিশ্বাস আছে, আমাদের যে সম্পর্ক আছে, তা নষ্ট হওয়ার নয়। সে ভালোবাসা অনেক কিছুর উপরে।...
তবে ভালোবাসা নিয়ে একধরনের অতৃপ্ততা ছিল সুনীলের মধ্যে। ১৯৯০ সালে লন্ডনে একবার সুনীলের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, কোন থিমের কবিতা লিখতে পছন্দ করেন?
এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যর্থ প্রেম’।
আবার প্রশ্ন করা হয়, ‘জীবন থেকে নেয়া?’
সুনীল বলেন, ‘হ্যাঁ, সব সময় মনে হচ্ছে ব্যর্থ, সবকিছু ব্যর্থ। একটু ভালোবাসা চেয়েছিলুম, কেউ দিল না।’
একই প্রসঙ্গে আরো অনেক পরে সানন্দার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সুনীল বলেন, ‘ওটা (ভালোবাসা) পুরোপুরি পাওয়া যায় না। এ কষ্টটা থেকে যাবে। এছাড়া আর কী? আর সবই তো পেয়েছি।’
সুনীল লেখালেখি শুরু করেছিলেন কবিতা দিয়ে। তরুণ বয়সে পাশের বাড়ির একটি মেয়েকে ভালোবেসেছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে কিছুতেই তার ভালোবাসার কথা বলতে পারছিলেন না। অতঃপর সেই মেয়েটিকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেন তিনি। মেয়েটিদের বাসায় দেশ পত্রিকা রাখা হতো। সুনীল তার কবিতাটি দেশ পত্রিকায় পাঠিয়ে দেন এবং একদিন সেটা ছাপাও হয়। কিন্তু কবিতা ছাপা হলে কী হবে? মেয়েটি তখন কিছুতেই বিশ্বাস করেনি যে, এটি সুনীলের লেখা কবিতা। সে বলতো, এ নামের অন্য কেউ এ কবিতাটি লিখেছে।
নিজের লেখক হওয়ার বিষয়ে সুনীল তার একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি লেখক কিংবা কবি হওয়ার পেছনে ওই মেয়েটির কাছে ঋণী। সে কবিতা পছন্দ করতো বলেই আমি কবিতা লিখেছিলাম। সে যদি খেলাধূলা বা অন্যকিছু পছন্দ করতো তাহলে আমি হয়তো তা-ই হতে চাইতাম।’
তবে এ মেয়েটি-ই নীরা কি না এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কখনো কিছু বলেননি তিনি। তার কবিতার নীরাকে তিনি আড়ালেই রেখেছেন সারাজীবন।
নীরা প্রসঙ্গে যতবারই জানতে চাওয়া হয়েছে সুনীল বলেছেন, ‘কবিতায় যা বলেছি এর বেশি বলতে চাই না। কবিতার মধ্যে যেমন সে আছে, সেভাবেই সে থাক। প্রত্যেক পাঠকেরও নিশ্চয়ই একজন নীরা আছে। কোনো পাঠকের কল্পনায় যদি কোনো নীরা থাকে, তাহলে সে তাকে তার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারে।’...
অনেকবার বলেছি, আবার বলছি, আমি কিন্তু মোটেই ‘নীরা’ নই। নীরা কি মাত্র একজন মানুষ হতে পারে কখনো? আমার মনে হয়, নীরার মধ্যে অনেক মেয়ে মিশে রয়েছে। আমার কোনো অংশ আছে কি তার মধ্যে? তা-ও জানি না ঠিক করে। আমি কখনো নিজেকে নীরার সঙ্গে মেলাতে চাইনি।
সুনীল যে ‘নীললোহিত’, তা যেমন বলা যায়, আমাকে কথনোই ‘নীরা’ বলা যায় না। আমি ‘স্বাতী’ হয়েই থাকবো। তাই আমি চেয়েছি, নীরা থাক ‘নীরা’ হয়েই। থাক রহস্যে ঢাকা, থাক সকলের অচেনা। আমি সুনীলের স্বাতী।...
একজন মানুষকে তার সবটুকু নিয়েই আমি বুঝতে চেয়েছি। প্রাণখোলা, বন্ধুবৎসল, উদারচিত্ত, উপকারী, আনন্দময় সুনীল –যে কাউকে ‘না’ বলতে পারতো না, তার মনটা কি কেউ দেখার চেষ্টা করেছে? সেটা অতো সহজ কাজ নয়।
আসলে সুনীলকে যতটা খোলামেলা মনে হয়, লাইক অ্যান ওপেন বুক, সে রকম ও নয়। একসঙ্গে এতগুলো বছর কাটিয়েও আমিই হয়তো তাকে পুরোপুরি চিনতে পারিনি। সুনীলের মধ্যে একটা খুব ব্যক্তিগত একাকীত্বের জায়গা ছিল, সেখানে ঢোকার অধিকার ও কাউকে দেয়নি। আমাকেও নয়। হৈ চৈ করছে, গল্প করছে, গান গাইছে, একদল লোকের সঙ্গে মিলেমিশে আছে, কিন্তু তার মধ্যেও একটা নিজস্ব জায়গা রেখে দিয়েছে, যেটার হদিস কেউ জানে না।...
তবে একজন মানুষের তো অনেক দিক থাকে। আমার কাছে কয়েকটা দিক হয়তো অধরাই রইলো।...
এক জীবনে অজস্র স্মৃতি নিয়ে সুনীলের সঙ্গে আমার দীর্ঘ ৪৫ বছরের দাম্পত্য জীবন শেষ হলো। জীবন সাঙ্গ হলো দুর্গাপূজোর নবমীর দিনে। সুনীলের সঙ্গে একটা পূর্ণ জীবন কাটানোর পর আমার একটা অদ্ভূত কথা মনে হয়। আমার স্বামী সুনীল যেন সংসারে এক সন্ন্যাসী। আমার দেখা সুনীলের অনেকগুলো পরিচয় আছে। অনেক অভিধায় তাকে বর্ণনা করা যায়। কিন্তু আমি মনে করি, সুনীল আসলে এক নিঃসঙ্গ, উদাসীন মানুষ।...”
স্বামী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেছেন স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়।
আমার মতে একজন লেখক বা শিল্পীকে একটা ছকে বাঁধা যায় না আর যাকে বাঁধা যায় তিনি স্রষ্টা হতে পারেন না।
একজন লেখকের সব সৃষ্টিই তার ব্যক্তিগত ঘটনা এমনটি নাও হতে পারে। দৃশ্যমান উপলব্ধি হতে পারে অনেক সৃষ্টির মূল পাতিপাদ্য যা একজন লেখকের একান্তই নিজস্ব।
তিনি শুধু প্রেম নিয়েছিলেন প্রেম করেননি – একথা সত্য কিনা আমি জানি না।
শুধু জানি
এক একটা ঘাট কে নদী ছুঁয়ে যায় বলেই সৃষ্টি হয় অসংখ্য দৃশ্যপট।
ঘাট যেমন নদী বিনা পূর্ণ নয় তেমনি নদীও ঘাট বিনা অপরিপূর্ণ।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় চলে যান নি
সুনীলরা চলে যায় না
তিনি লুকিয়ে রয়েছেন নীল আকাশে
মিশে আছেন রক্তিম সূর্যে
রেখে গেছেন অন্তহীন এক নীরাকে।
২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: লেখাটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
অনেক শুভেচ্ছা আপু সুলতানা শিরীন সাজি
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪৬
সুলতানা শিরীন সাজি বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে আজকের এই দিনে প্রিয় কবিকে মনে করে লেখাটা শেয়ার করবার জন্য।
শুভেচ্ছা নিন।