নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
সকাল নয়টা।
গুল্লু গভীর ঘুমে। গুল্লুর বড় ভাইয়ের মেয়ে- পরী, যার বয়স ১৪ মাস, সে গুল্লুকে ডাকছে। চাচুই...চাচুই চাচুই, চাচুই মানে চাচা। পরী চাচুই বলে ডাকে, চাচা বলতে পারে না। গুল্লু ঘুম থেকে উঠে পরীকে কোলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিল। ঠিক তখনই গুল্লুর মনে হলো- আরে...আজকের দিনটা এত সুন্দর কেন? আজ কি কোনো বিশেষ দিন? গুল্লু ব্যালকনিতে গিয়ে দেখল- কী সুন্দর স্বচ্ছ রোদ, গাঢ় নীল আকাশ। শান্ত নরম বাতাস। গুল্লু ভাবলো- এই রকম দিনে ঘরে বসে থাকার কোনো মানে হয় না। সে গোছল সেরে ঝটপট বের হয়ে গেল। কোথায় যাবে সে জানে না। আজ তার ম্যানিব্যাগে দু'টা পাঁচ শো টাকার নোট আছে। অনেক টাকা। খুব কম দিনই তার সাথে এত টাকা থাকে। রাস্তায় বের হয়ে গুল্লুর মনে পড়লো- আজ হরতাল। যারা হরতাল দেয় গুল্লু তাদের ঘৃনা করে।
ইদানিং হরতালের দিনে পুলিশ রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকান বসতে দেয় না। এজন্য গুল্লুকে অনেকটা দূর হেঁটে যেতে হয়। পনের মিনিট হাঁটার পর গুল্লু একটা চায়ের দোকান পায়। কিন্তু সে আরাম করে চা খেতে পারেনি। চায়ের দোকানের সামনে এক লোক একটা রিকশাওয়ালাকে খুব মারছে। বাংলা সিনেমার গুন্ডাদের মতন খুব মারছে। দূরে গিয়ে দৌড়ে এসে বারবার রিকশাওয়ালার বুকে লাথথি মারছে। রিকশাওয়ালার ঠোট কেটে রক্ত পড়ছে। কেউ রিকশাওয়ালাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না বরং সবাই দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে। আজকে একটি সুন্দর দিন- তাই গুল্লু গিয়ে লোকটিকে বলল- ভাই আসুন চা খান। আর মারার দরকার নেই। রিকশাওয়ালার শিক্ষা হয়ে গেছে। গুল্লু লোকটিকে হাত ধরে টেনে চায়ের দোকানে নিয়ে আসে। তারপর গুল্লু রিকশাওয়ালাকে ম্যানিব্যাগ বের করে একটা পাঁচ শো টাকার একটা নোট দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তারপর ওই লোককে বলল- আজকের দিনটা অনেক সুন্দর, তাই আপনাকে কিছু বললাম না। তা-না হলে আজ আপনার খবর ছিল! লোকটি হা করে তাকিয়ে থাকল গুল্লুর দিকে। লোকটি গুল্লুর চোখ দেখে হয়তো ভয় পেয়েছে।
দুপুর বারোটায় গুল্লু পল্টন মোড়ে এসে দাঁড়ায়। হরতালের দিন এই এলাকায় খুব গেঞ্জাম হয়। গুল্লু রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাবছে- হরতাল দিলে কি লাভ হয় বিরোধী দলের? দরিদ্র দেশে হরতাল হলো অভিশাপ। ঠিক এই সময় গুল্লুর পায়ের কাছে দুইটা কোকটেল বিস্ফোরন হয়। চারিদিক ধোয়ায় ভরে যায়। মানুষজন এলোমেলো ছুটছে। গুল্লু ভেবে পাচ্ছে না সে এখন কি করবে? কোন দিকে ছুটবে! গুল্লু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই পুলিশ এসে গুল্লুকে ধরে ফেলে। তারপর টেনে হেচড়ে গাড়িতে তোলে। গুল্লু মনে মনে ভাবে টেনে হেঁচড়ে নেওয়ার কি দরকার- আমাকে বললেই তো আমি খুব সুন্দর করে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ি। গুল্লুকে টেনে হেচড়ে নেওয়ার দৃশ্যটা দু'টা টিভি চ্যানেল ভিডিও করে নিল- হয়তো কোনো চ্যানেলে লাইভ দেখিয়ে থাকতে পারে। গুল্লুকে নিয়ে যাওয়া হল পল্টন থানায়। আগে এখানে ছিল মতিঝিল থানা। এই থানায় আগে গুল্লু একবার এসেছিল।
সেকেন্ড অফিসার গুল্লুকে বললেন- কোনো ধানাই-পানাই করবি না। যা জিজ্ঞেস করবো- ঠিক ঠিক জবাব দিবি। বল- কোকটেল কবে থেকে তৈরি করিস? গুল্লু চুপ। অফিসার আবার বললেন- আজ কয়টা কোকটেল ডেলিভারী করলি? তুই কি দলের লোক না বাইরের? গুল্লুকে চুপ থাকতে দেখে পুলিশ অফিসার বললেন- রুলের ডলা খাওয়ার আগে সব স্বীকার কর। নইলে আজ তুই প্যান্ট নষ্ট করে ফেলবি। গুল্লু শান্ত গলায় বলল- আমাকে এক গ্লাস পানি দেন, পানি খাবো। অফিসার গুল্লুর দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে। গুল্লু পুলিশের কঠিন চোখকে অগ্রাহ্য করল।
এই পুলিশ অফিসার গুল্লুর বাবাকে খুব ভালো করে চিনে। কিন্তু গুল্লুকে চিনে না। গুল্লু যদি একবার তার বাবার নাম বলে তাহলে পুলিশ অফিসার গুল্লুকে চা আর কেক খাইয়ে আদর করে বাসায় নামিয়ে দিতে আসবে। কিন্তু গুল্লু তার বাবার নাম বলতে চাচ্ছে না। গুল্লুর বারবার মনে হচ্ছে- আজকের দিনটা এত সুন্দর কেন? ইদানিং গুল্লুর সময় ভালো যাচ্ছে না। রাস্তায় বের হলেই পুলিশ ধরে।
সন্ধ্যা সাত টায় গুল্লু পল্টন থানা থেকে ছাড়া পায়। তার অনেক ক্ষুধা পায়। সারাদিনে কিছুই খাওয়া হয়নি। সে ঠিক করলো- উত্তরা যাবে হিমির বাসায়। অনেকদিন হিমির সাথে দেখা হয় না। সারা দুনিয়াতে শুধু হিমিই গুল্লুকে অনেক ভালোবাসে। একদম খাটি স্বচ্ছ ভালোবাসা। গুল্লুকে দেখে হিমি অনেক খুশি হয়। হিমি বলে- আমি জানতাম আজ তুমি আসবে। এজন্য আজ আমি নিজের হাতে রান্না করেছি। ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে করলা ভাজি, ডাল চচ্চরি, মুরগী ভূনা আর কলমি শাক ভাজি। গুল্লু খুব আরাম করে খায়।
হঠাত লোডশেডিং হয়- তখন হিমি গুল্লুকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস দিয়ে দেয়। খাওয়া শেষ করে গুল্লু- দুই হাত তুলে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল- " হে আল্লাহ, এই অভাগাকে যে এত আদর যত্ন করে খাওয়ালো, তাকে খুশি করো, তার মনের তিনটা ইচ্ছা পূরণ করে দাও। তারপর হিমি দুই মগ চা বানিয়ে, গুল্লুকে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে।
রাত এগারোটায় গুল্লু হিমির বাসা থেকে বের হয়। হিমি ছাদে দাঁড়িয়ে গুল্লুর চলে যাওয়া দেখে। হিমির চোখ থেকে দু'ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। গুল্লু একবার হিমিকে বলেছিল- তুমি সব সময় চোখে কাজল দিবে, কপালে টিপ পড়বে আর দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ী পড়বে। এরপর সারা ঢাকা শহরের মেয়ে গুলো- এই কথা কিভাবে যেন জেনে যায়- তারা শুরু করল- কপালে টিপ দেওয়া, চোখে কাজল দেওয়া এবং কাঁচের চুড়ী পরা। কিন্তু বোকা মেয়ে গুলো চোখে হিমির মত কাজল দিতে পারে না। তারা দু'চোখে সমান করে কাজল দিতে পারে না। এক চোখেরটা চিকন হয় আরেক চোখেরটা মোটা হয়। গুল্লু বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে- এই সময় হঠাত করে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। গুল্লু বাসের জন্য আর অপেক্ষা না করে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাঁটতে শুরু করলো। গুনগুন করে গান গাইছে- "জানি আমি তোমায় পাব নিরন্তর/ লোকলোকান্তরে যুগযুগান্তর/ তুমি আর আমি মাঝে কেহ নাই/ কোনো বাধা নাই ভুবনে...
সে রাতে গুল্লু আর বাসায় ফিরতে পারেনি। একটা ট্রাক গুল্লুকে ধাক্কা মেরে ফেলে চলে যায়। ঝুম বৃষ্টির পানিতে সব রক্ত ধুয়ে মুছে যায়। রাস্তার মধ্যে পরে থাকে গুল্লুর লাশ। ঠিক এই সময় হিমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ভাবে- আজকের দিনটা এত সুন্দর কেন? ঝুম বৃষ্টির পানি আর হিমির চোখের পানি মিশে একাকার।
২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৩
কাছের-মানুষ বলেছেন: গল্প ভাল হয়েছে তবে একটু তাড়াহুড়া ছিল মনে হয় ।
৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৪২
মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আগে এছিলাম শেষের কয়েক লাইন পড়ে পড়তে ইচ্ছা হয়নি, না হওয়ার কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম খুব সুন্দর একটা গল্প হলেও খুব কষ্টের শেষ!
৪| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫২
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি আজকাল করুণ করুণ গল্প লিখছেন
৫| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২৫
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: দুঃখিত
৬| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:০৫
বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: সুন্দর হইসে নূর ভাই, কিন্তু অতি তাড়াতাড়ি শেষ করলেন
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:২০
প্রতিভাবান অলস বলেছেন: বেশ ভাল গল্প। তবে উপস্থাপন খুব দ্রুত!