নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস \'নূরজাহান\' রিভিউ

২১ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:৩৩



বইটি পড়তে পড়তে কখনও হয়তো আপনার মনে হবে- লেখক অযথাই উপন্যাসটি টেনে-টেনে লম্বা করেছেন।
মাসের পর মাস পড়ছি, পড়েই যাচ্ছি। শেষ আর হয় না। একসময় পড়তে পড়তে খুব বিরক্ত লেগেছে। তিন খন্ড একসাথে কিনেছি (অখন্ড)। ৯৭৪ পৃষ্ঠা। আর তিন খন্ড আলাদা কিনলে পৃষ্ঠা হতো প্রায় ১২০০। আমার অভ্যাস হলো বিছানায় আরাম করে শুয়ে শুয়ে বইপড়া। এত মোটা বই বুকের উপর নিয়ে পড়তে বেশ বেগ হতে হয়েছে। লেখক এই উপন্যাস অযথা টেনে লম্বা না করলে ৩২০ পৃষ্ঠার মধ্যে লেখা সম্ভব ছিল। অবশ্য লেখক নিজেই বলেছেন, বিক্রমপুরের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে একটা বিশাল উপন্যাস তার লেখার ইচ্ছা। তিনি বিশাল উপন্যাস লিখেছেন। তিন খন্ড একসাথে দাম নিয়েছে ১১ শ' ত্রিশ টাকা।
রিভিউ আমি লিখতে জানি না। আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আমার মতোন করে লিখবো, এলোমেলো আর ভীষন অগোছালো ভাবে। নূরজাহান' ১ম পর্ব বের হয় ১৯৯৫ সালে, ২য় পর্ব ২০০২, এবং শেষ পর্ব ২০১১ সালে। মানূষের সাথে মানূষের সম্পর্ক, আন্তরিকতা, প্রেম ভালোবাসা, পাওয়া-নাওয়া, ফতোয়া, ধর্মীয় গোঁড়ামি, লোভ আর কুটিলতা-জটিলতা দূর্দান্ত ভাবে ফুটে উঠেছে পুরো উপন্যাসে।


উপন্যাসে দুইজন মাওলানা আছেন। একজন ভালো মাওলানা, একজন মন্দ মাওলানা।
মন্দ মাওলানা শুধু মিথ্যা বানোয়াট ফতোয়া দেয়। অসামাজিক কাজ করে। কাজের মেয়ের সাথেও ফস্টি-নস্টি করার সুযোগ খুজে। মেদেনী মন্ডল গ্রামের এক বৃদ্ধ মহিলা (ছনুবুড়ি) মারা গেলে তাকে কবর দেওয়া যাবে না। কারন ওই মহিলা চোর ছিলেন ইত্যাদি বলে ফতোয়া দেন মান্নান মাওলানা। এই মন্দ মান্নান মাওলানা একদিন তার কাজের ছেলেকে (কাশেম) খুব মারধর করেন। এবং জেলে পাঠান।
মান্নান মাওলানার পুত্রের নাম আতাহার। আতাহারও তার বাবার মতো বিরাট বদ। সে তার মৃত বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে বছরের পর বছর ধরে অসামাজিক সম্পর্ক করে যাচ্ছে। তিনটা সন্তানও হয়। আতাহার পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে এক ট্যারা মেয়েকে। যাই হোক, অন্যদিকে ভালো মাওলানা (মহিউদ্দিন) দারুন সব হাদীস বলে মানুষকে সঠিক পথে দেখান। ভালো মাওলানা খান বাড়ির মসজিদের ইমাম। এই মাওলানার কথা শুনে আজিজ গাওয়াল নামের এক কৃপণ লোক ভালো হয়ে যায়। নামাজ রোজা শুরু করে। অবশ্য এই মাওলানা শেষে গলায় ক্যান্সার হয়ে মারা যায়।

এরশাদ সাহেব মাওয়া পর্যন্ত রাস্তা পাকা করবেন।
এবং এই কাজ তিনি খুব দ্রুত শেষ করতে চান। এই রাস্তা মাটি ফেলে উঁচু করার দায়িত্ব পেয়েছে ঠিকাদার আলী আমজাদ। সে বিরাট বদ লোক। অযথাই সে শ্রমিকদের বকাবকি করে। মারে। তার বউ বাচ্চা আছে অথচ গল্পের নায়িকা 'নূরজাহান'কে ভোগ করতে চায়। বন্ধু বান্ধব নিয়ে প্রচুর মদ খায় সে। উপন্যাসে একজন দুষ্টলোকের সাথে আরেকজন দুষ্টলোকের মন-মানসিকতায় খুব মিলে যায়। আতাহার (দুষ্ট মাওলানার ছেলে) আর আমজাদ বিরাট দুষ্টলোক। মান্নান মাওলানার ছেলে আতাহার আবার ঠিকাদার আলী আমজাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড। তারা নিয়মিত মদ খায়। সাথে মূরগীর কষানো মাংস। শেষে ঠিকাদার আলী আমজাদের খুব ভয়াবহ অবস্থা হয়। সড়কের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে পারেনি। তার নামে মামলা হয়। তাকে পালিয়ে যেতে হয়। পুলিশ তাকে সিলেট মাজার থেকে গ্রেফতার করে।

নূরজাহান উপন্যাসের প্রধান চরিত্র নূরজাহান
গ্রামের নাম মেদিনী মন্ডল। গ্রামের একটা হাসি খুশি প্রানবন্ত সহজ সরল মেয়ে নূরজাহান। তার বয়স ১৪/১৫ বছর। সে সারাদিন পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়াতে চায়। তার বাবার নাম দবির গাছি। দবির গাছি খেজুরের রসের ব্যবসা করেন এবং তার এক খন্ড জমি আছে। নিজেই চাষবাস করেন। নূর জাহানের মা হামিদা। দরিদ্র একটি পরিবার। দুষ্ট মৌলনার কারনে নূরজাহানের জীবনটা তছনছ হয়ে যায়।
উপন্যাসে গ্রামীন জীবন যাপন লেখক সফল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। পুরো উপন্যাসটির সকল ঘটনা, ভাষা ও চরিত্র গুলো বিক্রমপুরের। বিশাল একটি উপন্যাস। অনেক গুলো চরিত্র। লেখক পুরো উপন্যাস জুড়ে বিক্রমপুরের ভাষা ব্যবহার করেছেন। অতি সহজ সরল মিষ্ট ভাষা- বুঝতে কারো বেগ পেতে হবে না। আমার নিজের বাড়িও বিক্রমপুর। এই উপন্যাসে 'কামারগাও' আমার গ্রামের বাড়ির নামও অনেকবার এসেছে। বদ মান্নান মাওলানা কিশোরী নূরজাহানকে বিয়ে করতে চায়। অথচ মান্নান মাওলানা নূরজাহানের দাদার সমান বয়স।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখক এই উপন্যাস লিখেন।
তবে এই ঘটনা ঘটে সিলেট জেলায়। লেখক ইমদাদুল হক মিলন সিলেটের ভাষা জানেন না। লেখকের বাড়ি গ্রেট বিক্রমপুর। তাই তিনি বিক্রমপুরের ভাষায় পুরো উপন্যাস লিখেছেন। অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়েও লেখক পাতার পর পাতা লিখে গেছেন। এই উপন্যাসে বেশ কয়েকটা বিষয় আমার দারুন লেগেছে। যেমন- কিশোরী মেয়ে নূরজাহান মান্নান মাওলার মুখে সমস্ত গ্রামবাসীর সামনে থু থু ছিটিয়ে দেন। যা পুরো গ্রামের মানুষ অবাক হয়ে যায়।
নুরজাহানের বাবা দবিরগাছি অনেকটা পথ সাতার কেটে তার বাড়িতে আসেন। এক ঘটনার কারনে সে মানসিকভাবে আঘাত পান। বর্ষাকাল ছিল। নৌকা ছাড়া কোনো উপয়ায় নেই। কিন্তু দবিরগাছি রাগ করে সাতরে অনেক পথ পাড়ি দেন।
মরনি নামে এক নারী আছেন- যার মন আকাশের মতো বিশাল। অতি ভালো মানুষ। এই মহিলার স্বামী সন্তান নেই। বোনের ছেলেকে পেলে পুষে বড় করেছেন। বোনের ছেলের নাম মজনু। মজনু ঢাকায় টেইলার্সে কাজ করে। নূরজাহান মনে মনে মনজুকেকে পছন্দ করে। যদি মনজুর খালা মরনি নূরহাজানের সাথে মজনুর বিয়ে দিতেন তাহলে পুরো উপন্যাসের ঘটনা বদলে যেত। হয়তো নূরজাহানকে বিষ খেয়ে মরতে হতো না।

উপন্যাসে ছনুবুড়ি নামে একটা চরিত্র আছে।
দুঃখী বৃদ্ধা মহিলা। ছেলের বউ তাকে খাবার দেয় না। সে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায় খাবারের সন্ধানে। সুযোগ পেলে ক্ষুধার জ্বালায় চুরীও করে। ছনুবুড়ি চরিত্রটা লেখক কি শীর্ষেন্দু মুখোপাধায়ের চক্র উপন্যাস থেকে নিয়েছেন? চক্র উপন্যাস ছনুবুড়ি টাইপ 'ধীরেন' নামে এরকম একটা লোক ছিল। সে যাকগে, এই ছনুবুড়ির এক ছেলে আছে নাম আজিজ। আজিজ গাওয়াল খুব কৃপণ লোক। তার অনেক গুলো ছেলে মেয়ে। সে বাড়ি বাড়ি কাসার থালা বাটি, কলস ইত্যাদি বিক্রি করে। একসময় সে মায়ের (ছনুবুড়ি) জন্য খুব আহাজারি করে। সে তার বউ এর ভয়ে মায়ের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করে নি। খান বাড়ির মাওলানার সাথে কথা বলার পর আজিজ গাওয়াল পুরোপুরি বদলে যায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করেন। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ায় মন দেন।

যাই হোক, প্রতিটা গ্রামে একটা পাগল থাকে।
এই উপন্যাসেও তছি নামে একটা পাগল আছে। যুবতী কন্যা। গায়ের কাপড় ঠিক থাকে না। একবার এক রিকশাওয়ালা তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রেপ করার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রেপ করতে পারেনি। তছি তাকে জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে। গলায় গামছা পেচিয়ে মেরেই ফেলেছে। তারপর তছি আর ঘর থেকে বের হয় না। মাথার চুল কামিয়ে ফেলে। তছির ধারনা সে যে এক রিকশাওয়ালাকে মেরে ফেলেছে এই তথ্য পুলিশ জেনে যাবে এবং তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। এনামুল নামের একজন ঢাকা শহরে থাকে। ঢাকায় ঠিকাদারী ব্যবসা করে। তিনি গ্রামে একটা মসজিদ করেন। এই মসজিদের দায়িত্ব দেওয়া হয় মান্নান মাওলানাকে। ঠিকাদার এনামুল মাত্র দুই মাসে মসজিদ নির্মান শেষ করেন। মসজিদের ইমাম মান্নান মাওলানা। তার বেতন আঠারো শ' টাকা।

উপন্যাসে একটা চোর আছে। তার নাম মোকসেদ চোরা।
লোকে বলে মোকসেইদ্দা চোরা। সে বিরাট চোর। চুরী করতে গিয়ে সে অনেকবার ধরা খেয়েছে। প্রচুর মাইর খেয়েছে। এই মোকসেদ চোর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সে সরাসরি তার গ্রামে চলে আসে। মাওয়া এক সেলুনে চুল দাড়ি কাটে। সে একবার নূরজাহানদের বাড়িতে চুরী করতে যায়। অবশ্য শেষমেষ চুরী করে না। কারন সে বাড়িতে কেউ নেই। খালি বাড়িতে সে চুরী করে না। এটা তার নিয়মের মধ্যে পড়ে না। উপন্যাসের শেষের দিকে এই মোকসেদ চোরা ভালো হয়ে যায়। দরিদ্র স্কুল শিক্ষক মতি স্যারের পরিবারের সাথে মিশে যায়। তার প্রতিবন্ধী দুই পুত্রের দেখভাল করে।

পুরো উপন্যাসে অনেক গুলো চরিত্র।
তবে সবার সাথে সবার সামঞ্জস্য আছে। সবচেয়ে বড় কথা তারা একই গ্রামের সবাই। এই গ্রামে আরেকজন মহিলা আছেন, নাম বানেছা। আজিজ গাওয়ালের স্ত্রী। (ছনুবুড়ির ছেলের বউ) বানেছা প্রতি বছর বছর বাচ্চা প্রসব করেন। একবার তার বাচ্চা হবে অথচ বাড়ির কারো মধ্যে কোনো টেনশন নাই। তার স্বামী আজিজ (লোকে বলে আইজ্যা)। বানেছার ব্যথা উঠেছে। অথচ তার স্বামী চুপচাপ। সে ঘুমানোর জন্য ব্যস্ত। বানেছা বলে আমার এমন সময়ে আপনি ঘুমাবেন? যান, ধাই ডেকে আনেন। আজিজ তার ছোট দুই পুত্রকে (হামেদ আর নাদের) ধাই (আলার মা) ডেকে আনতে পাঠালো ভোরে। দুই ভাই হাতে হারিকেন নিয়ে চলল গ্রামের পথ ধরে। তখনও আকাশ ফর্সা হয়নি।

পুরো উপন্যাসে ছয় জন চরিত্র মারা যায়।
একজন আলার মা, খান বাড়ির মসজিদের ইমাম, ছনুবুড়ি, বানেছার সাত দিনের শিশু, আদিল উদ্দিন, দেলোয়ারা আর মারা যায় মান্নান মাওলানার স্ত্রী। প্রতিটা মৃত্যু আমাকে কষ্ট দিয়েছে। উপন্যাস পড়তে পড়তে মনে হয়েছে- কোনো কাছের আত্মীয় যেন মারা গেছে আমার। আলার মা একজন ধাই। কথিত আছে উনার হাতে কখনও বাচ্চা মরে না। বানেছার কন্যা সন্তান জন্মের সাত দিন পর মরে যায়- পিতার অবহেলার কারনে। ছনু বুড়ির মৃত্যুর পর তার ছেলে আজিজ গাওয়াল মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন না করার জন্য তার আত্মগ্লানি হয়। আদিল উদ্দিন মাটি কাটে। রাস্তা তৈরির জন্য। ভোরে ফযজের নামাজ পড়া অবস্থায় তার মাটি চাপায় তার মৃত্যু হয়। খুব মর্মান্তিক মৃত্যু। ইচ্ছা করলে তাকে বাঁচানো যেত। একসময় জানা যায় এই আদিল উদ্দিন মজনুর বাপ। যে মনজুকে নূরজাহান মনে মনে পছন্দ করতো।

উপন্যাসে হাসু নামের একটি মেয়ে ১৭ দিনের জ্বরে পড়ে নারী থেকে পুরুষ হয়ে যাওয়া আমাকে বেশ ধাক্কা দিয়েছে। জ্বর থেকে সেরে উঠে হাসু একটা গেঞ্জি আর লুঙ্গি পড়ে ঘরে থেকে বেড়িয়ে যায় শহরের উদ্দ্যেশে। উপন্যাসে দুজন ঘটক আছে। লেখক দারুন ভাবে ঘটকের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। ঘটকের ভন্ডামির কারনে নূরজাহানের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।
কুট্রি এবং আলফু নামে গিরস্ত বাড়ির দু'জন কাজের লোক আছে তাদের চরিত্রও লেখক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। মান্নান মাওলানার তিন ছেলে। এক ছেলে থাকে জাপান। অসংখ্য চরিত্র পুরো উপন্যাসে। এবং সবার সাথে সবার যোগাযোগ আছে। বিশাল ক্যানভাসের উপন্যাস ‘নূরজাহান’। হুমায়ুন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারসহ আরো প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিকদের মতে; ইমদাদুল হক মিলনের লেখা শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এটি ।

শেষে উপায়ন্ত না দেখে এবং মান্নান মাওলানার হাত থেকে নূরজাহানকে বাচানোর জন্য রব্বান নামের এক যুবকের সাথে মেয়ের বিয়ে দেয় দবিরগাছি। সমস্ত খরচ দবিরগাছি'ই করে। ঘটক এখানে দবিরের সাথে প্রতারনা করে। রব্বান বাজারে চায়ের দোকানদারি করে। এই চায়ের দোকানও করে দেন নূরজাহানের বাপ। বিয়ের এক বছর পর ভোরবেলা কাউকে কিচ্ছু না বলে চলে যায় রব্বান। তবে চলে যাওয়ার আগে রব্বান টাকা পয়সা বা গহনা কিছু নেয়নি। শেষে অনেক খোজাখুজি করে জানা যায়- রব্বান মালখানগরে অনেক আগেই বিয়ে করেছে। তার এক কন্যা সন্তান আছে। সে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে এসেছিল মেদিনী মন্ডল গ্রামে। এখানে এসে নূরজাহানকে বিয়ে করে। এক বছর পর নূরজাহানকে ছেড়ে চলে যায় তার আগের বউ বাচ্চার কাছে। এজন্য সে দবিরগাছির কাছে মাফ চায়। এবং তালাক দেয় নূরজাহানকে। লেখকের রব্বান চরিত্রটা বেশ রহস্যময়।

তারপর নূরজাহানের বিয়ে হয় এক বয়স্ক লোকের সাথে।
তার আবার তিন কন্যা সন্তান আছে। অসুস্থ স্ত্রী আছে। অসুস্থ স্ত্রী এবং তিন কন্যা সন্তানের দেখা শোনা করার জন্য নূরহাজানকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। অবশ্য বিয়ের আগেই এককানি জমি লিখে দেয় নূরজাহানকে। দ্বিতীয় বিয়েতে নূরজাহানের জীবন ভালোই চলছি। কিন্তু মান্নান মাওলানা ফতোয়া জারি করেন এই বিয়ে অবৈধ। রব্বান নিখোঁজ, সে তালাক দেয়নি। তালাকের কাগজ নকল। বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। বিচারে নূরজাহানকে গর্ত খুড়ে গাছের সাথে বাঁধা হয়। তারপর এক শ' টা ইটের টুকরো মারা হয়। এই কাজ মান্নান মাওলা নিজের হাতে করেন। মান্নান মাওলানা বলেন, যেহেতু পাথর নেই, হাতের কাছে টুকরো ইট আছে। ইটের টুকরার আঘাতে নূরজাহানের সারা মুখ-শরীর রক্তে মাখামাখি হয়ে যায়। সে বাড়ি ফিরে বিষপানে আত্মহত্যা করে। শাস্তি নূরজাহানের বাপ, মা এবং বিয়েতে যারা সাক্ষী ছিল তারাও শাস্তি পায়।

শেষমেষ মান্নান মাওলানাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
কোমরে দড়ি বেধে মান্নান মাওলানাকে নিয়ে যাওয়ার সময়, ওসির ইশারাতে গ্রামের ছোট ছোট পিচ্চি পোলাপান মাটির চাকা উড়িয়ে মারে মাওলানার গায়ে। একসময় মান্নান মাওলা একটা গর্তে পড়ে যায়। গ্রামের সমস্ত পিচ্চিরা এক হয়ে তাকে, ইটের টূকরা, মাটির চাকা উড়িয়ে মারে। মান্নান মাওলানার মুখ রক্তে মাখামাখি হয়। ঠিক নূরজাহানের যেরকম হয়েছিল। উপন্যাসে দুষ্টলোক শাস্তি পেয়েছে। কিন্তু একজন দুষ্টলোক মান্নান মাওলানার ছেলে আতাহারের কোনো শাস্তি হয়নি। সে পালিয়ে চলে যায় শ্বশুর বাড়ি। আতাহারের শাস্তির দরকার ছিল।

মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:৩৭

নজসু বলেছেন:


নূরজাহান এর তিনটে খন্ডই আমার কাছে পিডিএফ ‌আছে।
আলসেমি করে পড়া হচ্ছে না।
আসলেই বিশাল।
আমার এক বড় ভাই বলেছেন এটি নাকি আগে ইত্তেফাকে ধারাবাহিকভাবে
প্রকাশিত হয়েছিল। উনি পড়েছিলেন। খুবই নাকি চমৎকার।

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৮:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: পড়ে ফেলুন।

২| ২১ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:৫৮

নতুন নকিব বলেছেন:



এত বড় রিভিউ আপনি লিখলেন? বাহ! ধন্যবাদ। আপনার অনেক ধৈর্য্য!

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৮:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: বিশাল উপন্যাস আমি খুব ছোট করে লিখেছি। আরো অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল।

৩| ২১ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৩

পথিক প্রত্যয় বলেছেন: সাহিত্য বোদ্ধাদের মতে, এটা লেখকের সেরা সৃষ্টি । এটা নিয়ে চ্যানেল আইতে একটা দীর্ঘ ধারাবাহিক হয়েছিল

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৮:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: হুম।

৪| ২১ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৭

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন.... পড়ার আগ্রহ থাকল।


বেশিরভাগ মানুষই ইমদাদুল হক মিলনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এটিকেই বলেন।

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৮:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: তার আরও কিছু চমৎকার উপন্যাস আছে।

৫| ২১ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৬

শান্তির দেবদূত বলেছেন: ইমদাদুল হক মিলনের লেখা আমার কখনোই ভালো লাগে নাই। অবশ্য খুব একটা যে পড়া হয়েছে তেমনটিও বলা যাবে না। নাইন-টেনে থাকতে কি যেন একটা বই হাতে নিয়েছিলাম, এতোই অখাদ্য লেগেছে যে এর পর থেকে আর ওপথ মড়াইনি। লেখার ধরন
প্রাইমারি স্কুল পড়ুয়াদের জন্যে উপযুক্ত মনে হয়েছে। আর লুতুপুতু প্রেম এগুলো কোনও সময়ই ভালো লাগে না। তবে একটা নাটক হতো বিটিভিতে, রূপনগর খুব সম্ভবত নাম। সেটা ভালোই লেগেছিলো।

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:০০

রাজীব নুর বলেছেন: নূরজাহানটা পড়ে ফেলুন। ভালো লাগবে।

৬| ২১ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৫

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: বিশাল উপন্যাসের বিশাল রিভিউ। রিভিউ পড়ে মনে হল এত বড়তো না হলেও চলত, আড়াইশো-তিনশো হলে পড়ার আগ্রহ পেতাম। এত বড় শুনলেই আলসেমি ধরে।

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:০২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি খুশি বিশাল এই উপন্যাস পড়ে শেষ করেছি বলে।

৭| ২১ শে মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


এত বড় বই নিশ্চয় খুবই শ্লো; প্লট আমার কাছে ভালো লাগেনি

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:০১

রাজীব নুর বলেছেন: আজ আমি অনেক খুশি।
বইটা সম্পূর্ন পড়ে শেষ করতে পেরেছি।

৮| ২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:০৩

শেহজাদী১৯ বলেছেন: দারুন বই।

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: পড়েছেন?

৯| ২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:০৪

বলেছেন: অসাধারণ রিভিউ

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া।

১০| ২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:৩৫

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আপনার রিভিউ পড়া হয়ে গেলো, বইটি আর পড়া লাগবে না।
ধন্যবাদ

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: হে হে

১১| ২২ শে মে, ২০১৯ রাত ১২:১১

কালো যাদুকর বলেছেন: রাজিব নুর তাহলে আমার আত্বইয় হবে। "কামার গাও" আমার ও নানার বাড়ি। ইমদাদুল হকের এই বইটা পরতে হবে।

২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা----
কামার গাও শেষ কবে গিয়েছেন?
তিনদোকান, আলামিন বাজার, বালাসুর চিনেন?

১২| ২২ শে মে, ২০১৯ রাত ১২:৩১

রোকসানা লেইস বলেছেন: প্রথম পর্বটা পড়েছিলাম প্রকাশের সাথে সাথেই । খুব ভালোলাগার কথাটা লেখকে সরাসরি জানাতেও পেরেছিলাম।
পরের দুই পর্ব পরেছিলাম মনে হয় সচিত্র সন্ধানীর ঈদ সংখ্যায় । প্রথম পর্বের মতন ভালোলাগেনি।
আসলে না লিখলেও চলত মনে হয়। তবে গ্রাম্য জীবনের জটিলতা কুটিলতা ভালো প্রকাশ পেয়েছে। মানুষের ধারনা গ্রাম্য মানুষ মাত্রই সরল সোজা এটা ঠিক না।
অনেক বড় গল্পের অনেক বড় রিভিউ লিখেছো তবে একই কথা কয়েকবার এসে গেছে।
চেষ্টা করলে ভালোই লিখতে পারো।অনেক সময় আধামাধা লিখে ছেড়ে দাও।

২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ বোন।

১৩| ২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:০৩

তাজেরুল ইসলাম স্বাধীন বলেছেন: :>

২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: !

১৪| ২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৫০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: মিলনের এক অনবদ্য সৃষ্টি নুরজাহান।

যখন পড়েছিলাম কি যে ভাললেগেছিল।

আপনার রিভিও ভাল হয়েছে।

২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

১৫| ২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৩

জাহিদ অনিক বলেছেন:
আপনি অনেক প্লট'ই লিখে ফেলেছেন উপন্যাসের। এত বড় উপন্যাসের মূলভাব হয়ত ধরতে পেরেছি।
নূরজাহান- জাহান এর নূর, বিশ্বের আলো।

ইমদাদুল হক মিলনের লেখা পড়া হয় নাই খুব একটা। রিভিউএর জন্য ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: নূর মানে আলো
আর জাহান মানে দুনিয়া
অর্থ্যাত দুনিয়ার আলো।

১৬| ২২ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:২৭

কালো যাদুকর বলেছেন: ২০১৪ শালে। সবই চিনি, ও জায়গা গুলোর সাথে আত্বার সম্পর্ক।

২২ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আলামিন বাজারের আগে আমাদের বাড়ি।

১৭| ২২ শে মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩০

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: বিশাল পোষ্ট।

২২ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: তারপরও অনেক কথা বাদ পড়ে গেছে।

১৮| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২১

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
খুব ভাল লিখেছেন। প্রচলিত ধারার বাইরে লেখা রিভিউ। আরো অনেক ঘটনাই মনে আসছে। কিছু যৌনতা আছে, কষ্টের কথা আছে। তবে এই উপন্যাস মিলনকে উজ্জ্বল করে রাখবে। আমি তাকে পরবাস, অধিবাস ও নুরজাহান লেখার জন্য ধন্যবাদ দেই। অধিবাসও বিক্রমপুরের পটভূমিতে লেখা ছোট উপন্যাস। তবে ভাল লাগবে।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: উপন্যাসটা লেখককে দীর্ঘদিন বাচিয়ে রাখবে।

১৯| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৪

আমি সাজিদ বলেছেন: বিক্রমপুরের ভাষা সম্পর্কে ধারনা নেই। যেহেতু উপন্যাসের ভাষা তাই বোধ করি বেশ মিষ্টি।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: বিক্রমপুরে ভাষা অতি সহজ এবং মিস্টি। বুঝতে আপনার বেগ পেতে হবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.