নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
আমার চোখের সামনে, আমার স্ত্রী এবং বাচ্চা মারা গেল। আমি কিছুই করতে পারলাম না। স্ত্রীর হাত ধরে বসে থাকলাম, স্ত্রীর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। ডাক্তার বললেন- যে কোনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব হবে। এক মিনিটের মধ্যে ভেবে বলুন- আপনি কাকে চান? আমি বললাম- আমি দু'জনকেই চাই। একটুপর ডাক্তার বললেন- দুঃখিত আমরা কাউকেই বাঁচাতে পারব না। ঈশ্বরকে ডাকুন। প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পেটের মধ্যে বাচ্চা দু'টি মরে গেল। তার দুই মিনিট পর মরে গেল আমার স্ত্রী। এমন নিষ্ঠুর সময় যেন আল্লাহ কাউকে না দেন। আমি আমার স্ত্রীর হাত শক্ত করে ধরে বসে আছি। আমি কাঁদছি কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। বুকের মধ্যে আর গলার মধ্যে কি যেন দলা পাকিয়ে উঠছে বারবার। সতের মিনিটের মধ্যে সব শেষ।
আমার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর আমি নিয়মিত ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার বলেছেন- আপনার স্ত্রী খুব ভালো আছেন। কোনো প্রকার সমস্যা নেই। ডাক্তার জেরিন খান, আমার স্ত্রীকে সব সময় বলতেন- আপনার স্বামী আপনার অনেক কেয়ার করেন। আপনি অনেক ভাগ্যবতী। আমি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী- নয় মাস আমার স্ত্রীকে ডাবের পানি খাইয়েছি। চুলে তেল দিয়ে আঁচড়ে দিয়েছি। রাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতাম। সময় মত ওষুধ খাওয়াতাম। আমার স্ত্রী বারবার একটা কথা বলত- আমার খুব ভয় করে, আমি যদি মরে যাই। তুমি একা কিভাবে বাচ্চাকে পালবে? আমি বলতাম- দূর বোকা মেয়ে, কিচ্ছু হবে না। প্রতিদিন অসংখ্য মেয়ের বাচ্চা হয়। কোনো ভয় নেই। আমি আছি না!
আমার স্ত্রী ছিল একদম সহজ সরল একটি মেয়ে। তার চোখে মুখে সারাক্ষণ খেলা করত- এক আকাশ মায়া আর সরলতা। মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখলে কেঁদে ফেলত। আমি আমার স্ত্রীকে আদর করে- বাবু বলে ডাকতাম। আর আমাকে বাবুই বলে ডাকতো। তিন বছর প্রেম করেছি আমরা। তারপর বিয়ে। লঞ্চে করে বরিশাল যাওয়ার পথে প্রথম পরিচয়। তখন রাত আড়াইটা। শীতকাল। তিনতলা লঞ্চের ছাদে আমি অন্ধকারে বসে ছিলাম, হঠাৎ দেখলাম একটি মেয়ে একা একা হাঁটছে। বাতাসে তার চুল-ওড়না পতাকার মতন উড়ছে। মেয়েটি পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সময়- আমি বাংলা সিনেমার নায়কের মতন করে মেয়েটিকে ধরে ফেলি। সময় মত না ধরতে পারলে- মেয়েটি কীর্তনখোলা নদীতে পড়ে যেত।
আমরা দু'জন মিলে আমাদের বাচ্চার জন্য অনেক কেনাকাটা করেছি-গুলশানের একটা মার্কেট থেকে। এই মার্কেটে শুধু বাচ্চাদের নানান জিনিসপত্র পাওয়া যায়। সাত মাসের সময় জানতে পারি যমজ বাচ্চা হবে। আমরা দু'জন অনেক চিন্তা ভাবনা করে- দু'টি নাম ঠিক করি। টাপুর-টুপুর। টাপুর-টুপুরকে নিয়ে আমরা দু'জন অনেক স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। আমার স্ত্রীর অনুরোধেই আমি অপরেশন থিয়েটারে যাই। 'ও' শুধু বলতো- তুমি আমার হাত শক্ত করে ধরে থাকবে, তাহলে আমার কোনো ভয় লাগবে না। হাসপাতালে ভরতি হওয়ার দু'দিন আগেও আমি আমার স্ত্রীর পেটে কান রেখে শুনেছি- টাপুর-টপুরের নড়াচড়ার শব্দ। আমাদের পরিবার আমাদের প্রেমের বিয়ে মেনে নেয়নি। আমরা আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকতাম। দুই রুমের ছোট্র একটা ফ্লাট। খুব সুখের সংসার ছিল আমার।
আমার স্ত্রী এবং বাচ্চারা মারা গেল আজ প্রায় দুই বছর হলো। আমি ভাবি- আমি কেন মরলাম না? এই কষ্টটাই আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। গত দুই বছরে আমার সমস্ত আত্মীয় স্বজন আর বন্ধু বান্ধব অনেক শান্ত্বনার কথা বলেছে। দুই বন্ধু মিলে- আমার মনের অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য আমাকে নিয়ে গেল ইন্দিরা রোডের এক বাসায়। সেখানে গিয়ে দেখি- বেশ কয়েকটা আধুনিক সুন্দরী মেয়ে। আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি। আমার এক মুহূর্তের জন্যও ইচ্ছা করে নি- কোনো মেয়েকে জড়িয়ে ধরি অথবা একটি চুমু দেই। আমি কিছুতেই আমার স্ত্রী আর বাচ্চা দু'টার কথা ভুলতে পারছি না। প্রায়ই স্বপ্নে দেখি- বাচ্চা এবং বাচ্চার মাকে। স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারপর সারারাত ব্যালকনিতে কাটিয়ে দেই। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ে।
এরপর থেকে ঈশ্বরের উপর আমার অনেক রাগ। আমি ধর্মকর্ম পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি নামাজ রোজা করবো না। মূর্খ ঈশ্বর মানুষের সুখ কেড়ে নিয়ে কি শান্তি পায়? কি সুন্দর সুখের সংসার ছিল আমার। বেঁচে থাকলে এই দুই বছরে আমার বাচ্চা দু'টা অনেক বড় হয়ে যেত। তারা সারা ঘর ছোট ছোট পায়ে হেঁটে বেড়াত। আমাকে বাবা-বাবা বলে ডাকতো। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতাম। পড়াতে বসাতাম। পার্কে বেড়াতে নিয়ে যেতাম। বোকা ভূতের গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতাম। গোছল করিয়ে দিতাম। ছুটির দিন গুলোতে আমরা সবাই মিলে বেড়াতে যেতাম। বাচ্চার মা বাচ্চাদের বকা দিলে- আমি বাচ্চার মাকে আচ্ছা করে বকে দিতাম। সুখে- আনন্দে দিন চলে যেত। আসলে কিছু কিছু মানুষের জীবনে সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
(গল্পটি আমার 'টুকরো টূকরো সাদা মিথ্যা' গ্রন্থে প্রকাশিত)
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: পড়তে হবে। কারন এরকম ঘটনা ঘটে।
২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১৫
মুহাম্মদ সুমন মাহমুদ বলেছেন: খুবই কষ্টদায়ক,
সুন্দর লিখেছেন,
ভালো লেগেছে।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন ভাই।
৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২১
ফেক রুধির বলেছেন: তবুও না পাওয়া সুখ গুলো আন্দলিত হোক মনে,
বেঁচে থাকুক অনন্তত অপেক্ষার প্রহর..
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী। অবশ্যই।
৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৩
ইসিয়াক বলেছেন: ইচ্ছে হলো একদিন প্রচণ্ড কষ্টে আঁধারের পথে হাটবো
ঈশ্বরের উপরে সারাটা জীবন অভিমান করে কাটাবো ।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: ঈশ্বরের উপর অভিমান করা ঠিক হবে না।
৫| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৯
করুণাধারা বলেছেন: যারা স্যাডিস্টিক তাদের কাছে এ গল্প ভালো লাগবে। আমি দুই লাইন পড়েই পড়া বাদ দিলাম।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: শুকরিয়া।
৬| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৯
বিজন রয় বলেছেন: সুখ-দুঃখ এই আছে, এই নেই।
এটা নিয়ে চিন্তা করি না।
+++++
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৭| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০২
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার প্রকাশিত এই গল্প পড়ে, কেহ এই গল্প নিয়ে আপনাকে ফিডব্যাক দিয়েছিলো?
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: না।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে অনেক আগের কথা। ভুলে গেছি। কেউ কেউ কিছু বলেছিল। মনে নেই।
৮| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: স্বপ্নেরা বেঁচে থাকুক।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ স্বপ্ন দেখে। মানুষ বেঁচে থাকে স্বপ্ন গুলো সত্যি করার জন্য।
৯| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৬
ল বলেছেন: লেখক বলেছেন: ঈশ্বরের উপর অভিমান করা ঠিক হবে না।----আবার বলেছেন মূর্খ ঈশ্বর..............
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ রাগে দুঃখে ঈশ্বরকে তো কত কথাই বলে।
১০| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৩১
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: রাজীব নুর ভাই, ঈশ্বর যাদের বেশী ভালোবাসেন তাদের তাড়াতাড়ি ঈশ্বরের কাছে নিয়ে নেন। আপনাকে আমাকে ভালোবাসেন না বলে রেখেছেন অনন্তকাল।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: আমার অনেক কাজ বাকি। আমি এখনই ঈশ্বরের কাছে যেতে চাই না।
১১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:১৭
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
প্রথম লাইন পাঠে দু:খ ভারাক্রান্ত মনে বেশ ঘাগরিয়ে গিয়েছিলাম ।
যাহোক, কারো পক্ষে এমন শোক কখনো ভুলার নয় ।
ঈশ্বরের উপর অভিমান করে লাভ নেই , তিনি
মানুষের জন্য মঙ্গলদাতা , তিনিই ভাল জানেন
সৃস্টি জগতের মঙ্গলের জন্য কার প্রয়োজন কি ।
মাঝে মাঝে এমন গল্প উপহার দিলে ভাল গাগবে ।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: শেষ মেষ একজন মানুষের সব রাগ গিয়ে পড়ে ঈশ্বরের উপর।
রাগই তো দরিদ্র মানুষের শেষ হাতিয়ার। অন্য কারো উপরে রাগ দেখানো যায় না বলেই তো ঈশ্বরের উপর রাগ জমে।
১২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০১
হাফিজ বিন শামসী বলেছেন: অনেক ভালোলাগা ভালোবাসার জিনিস হারানোর পর মানুষ চিন্তা শক্তি হারিয়ে ফেলে। অতি প্রিয় জিনিস কেউ হারাতে চায় না। তবে, তাই বলে ঈশ্বরকে গালি দিতে নেই। মানুষকে তার বাকী জীবনের জন্য সহনশীল হতে হয়।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে রাগে শোকে মানুষের মাথা আউলায়ে যায়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: এ ধরনের লেখা আর পড়বো না।