নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের শাহেদ জামাল- (তিন)

২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩৭



১৯৭১ সাল!
দেশের অবস্থা ভয়াবহ। চারিদিকে যুদ্ধ। সারা দেশময় ছড়ানো ছিটানো লাশ। পচে গলে গন্ধ বের হয়েছে। পরিস্কার করার কেউ নাই। কেউ কেউ লাশ গুলো দেখে মুখে কাপড় দিয়ে না দেখার ভান করে চলে যায়। অন্যান্য নদীর মতোন- বুড়িগঙ্গা নদীর অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। নদীতে অসংখ্য লাশ ভেসে আছে। তাদের হাত পেছন দিক থেকে বাধা। কোনো কোনো লাশের বুকের উপর শকুন বসে আছে। খুবলে খুবলে খাচ্ছে। এই নদীতে কেউ কেউ নৌকা করে পার হচ্ছে। ঠিক পার হচ্ছে না, তারা পালাচ্ছে। অবশ্য পালানোর কোনো পথ নেই চারিদিকেই ওৎ পেতে আছে বদমাশ পাকিস্তানীরা। খেলতে খেলতে, হাসতে হাসতে, মজা করতে করতে- বাঙ্গালীদের মারছে। মানুষ হয়ে মানুষকে এভাবে নির্মম ভাবে মারতে একটুও বুক কাপছে না। ঈশ্বরও চুপ করে আছেন।

পাকিস্তানীদের হাতে লিস্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লিস্টে নাম ঠিকানা সব আছে। তারা লিস্ট ধরে ধরে লোকজন তুলে নিয়ে যাচ্ছে। মেরে ফেলছে। লাশ পড়ে থাকছে নর্দমায়, খালে, রাস্তার ধারে। পুরো দেশ হয়ে পড়েছে যেন মৃত নগরী। যারা গ্রামে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন তারাও ভালো নেই। কারন পাক বাহিনী গ্রামেও পৌছে গেছে। তারা বিপুল উৎসাহে তান্ডবলীলা চালাচ্ছে। তাদের তান্ডবলীলা চালাতে সহযোগিতা করছে এদেশেরই কিছু মানুষ। এই অমানুষ গুলো যে দেশে জন্মেছে সেই দেশের ক্ষতি করছে। পাক বাহিনিদের রান্না করে খাওয়াচ্ছে। মেয়েদের তুলে এনে দিচ্ছে। স্বচ্ছল পরিবারে ডাকাতি করে সোনাদানা এনে তুলে দিচ্ছে পাকিদের হাতে। বাঙ্গালী সহজ সরল। বড় অসহায়। তাদের ধারনার বাইরে ছিলো এরকম হতে! এদিকে বর বড় নেতারা কারাগারে বন্দী। কেউ কেউ ভারতে পালিয়ে গেছেন।

যুবতী মেয়েরা সবচেয়ে অসহায়।
প্রতিটা গ্রামে চিরুনী অভিযান চালিয়ে অল্প বয়সী মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের আটকে রেখে দিনের পর দিন রেপ করা হচ্ছে। কামড়ে কামড়ে মেয়েদের ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে পাক সৈন্যরা। যেন রাক্ষস কোনো পশুর মাংস খাচ্ছে। যারাই বাধা দিচ্ছে, বাপ হোক, মা হোক, মামা-চাচা হোক তাদেরই হত্যা করা হচ্ছে অতি নির্মম ভাবে। সৈনিকের বন্দুকের ঠিক মুখে ছুরির মতো যে ধাতব বস্তুটি দেখা যায়, সেটা হলো বেয়নেট। বেয়নেট দিয়ে মেয়েদের বুক, নিতম্ব ক্ষত বিক্ষত করেছে পাকি বাহিনী। একমেয়ে বহুবার ধর্ষিত হবার পর কাদতে কাদতে বলল, এবার আমাকে যেতে দিন। পাক সৈন্যরা মেয়েটাকে উলঙ্গ করে বলল, এবার যেতে চাইলো যাও। ধীরে ধীরে একটা দেশ তছনছ করে দিলো পাক বাহিনী।

অসংখ্য পরিবারের ধারনা ছিলো-
কোনো রকমে ভারতে পালিয়ে যেতে পারলে জীবনটা বেঁচে যাবে। তাই তারা নিজের বাপ দাদার ঘর বাড়ি ফেলে হেঁটে হেঁটে রওনা দিলো ভারতের উদ্দ্যেশে। কিন্তু ভারতে যাওয়ার পথ মোটেও মসৃন ছিলো না। রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা। বাস, গাড়ি রিকশা কিছুই নেই। সবচেয়ে বড় কথা বড় বড় প্রতিটা রাস্তার মুখে পাক বাহিনির চেকপোষ্ট। ধরা পড়লে নিশ্চিত মৃত্যু। আর মেয়েরা যাবে ক্যাম্পে। ক্যাম্পে মেয়েদের ধর্ষন করা হয় দিনের পর দিন। দেখার কেউ নেই। বলার কেউ নেই। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে সব শ্রেনী পেশার মানুষ চেষ্টা করলো ভারতে যেতে। ভারত মানেই যেন মুক্তি। সীমাহীন কষ্ট এবং জীবন হাতে নিয়ে বহু মানুষ ছুটছে ভারতের দিকে। তাদের নেই খাদ্য, নেই পানি, হাটতে হাটতে পা ব্যথা। শরীরে নেই শক্তি। অথচ যে করেই হোক ছেলেমেয়ে, বুড়ো বাবা মাকে নিয়ে বর্ডার পার হতেই হবে। বেঁচে থাকার এটাই একমাত্র পথ।

শাহেদ রমনা পার্কের তার প্রিয় বেঞ্চটায় শুয়ে আছে।
শাহেদ বেকার। বেকারদের কেউ ভালোবাসে না। বেকার হলো পরিবারের বোঝা। বন্ধু বান্ধবের কাছে বোঝা। সর্বোপরি দেশের বোঝা। তাই শাহেদ কোথাও যায় না। কাউকে বিরক্ত করে না। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পরিচিত কারো কাছে যায় না। সে রমনা পার্কে এসে চুপ করে শুয়ে বসে থাকে। ক্ষুধা পেলে এবং তখন পকেটে টাকা থাকলে রুটি কলা কিনে খায়। না থাকলে সোনামুখ করে চুপ করে বেঞ্চে শুয়ে বসে থাকে। বেঞ্চে শুয়ে পড়লেই কিছুক্ষনের মধ্যে শাহেদ জামাল ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে পড়লেও তার শান্তি নেই। ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে। এই দুঃস্বপ্ন তাকে আরামে ঘুমাতে দেয়। দুঃস্বপ্ন দেখে বুক কেপে উঠে। চোখে পানি আসে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই কত বছর হয়ে গেল। তখন তার জন্মও হয়নি। অথচ সেই সময়ের ঘটনা গুলো তাকে আজও যন্ত্রনা দেয়।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
বাবামার প্রচুর টাকা থাকলে বেকার জীবন খুব একটা খারাপ না।

২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: তা ঠিক।
তবে শাহেদ বাবা মায়ের টাকা নেই। আমি তো তাই জানি।

২| ২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৫০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী খুবই খারাপ কাজ করেছে।
তারা অমানুষ।

২৬ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০২

রাজীব নুর বলেছেন: ৭১ সাল তো পার হয়ে গেছে।
সেই সব পাকি তো কবেই মরে গেছে।
এখনও কি তারা অমানুষ?

৩| ২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:২৫

গুরুভাঈ বলেছেন: শাহেদ কোন সালে বেঞ্চে শুয়ে আছে?

২৬ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: বর্তমানে। এখন। শুয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। স্বপ্নে সেই সব যুদ্ধের খন্ড খন্ড ঘটনা তাকে যন্ত্রনা দেয়।

৪| ২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


শাহেদ জামাল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতো না?

২৬ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: জাজাবেই তো আজও সেই সব ঘটণা তাকে যন্ত্রনা দেয়।

৫| ২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:৩৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বর্তমান প্রজন্ম ৭১ সম্পর্কে এই জানে?জাতির ভবিষ্যত খুবই খারাপ।কারা পাক বাহিনীকে সাহায্য করেছে সবাই জানে,সাহায্য করার জন্য কয়েক জনের ফাঁসিও হয়েছে।অথচ আপনি লিখেছেন লিস্ট ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।লিস্ট কি বাতাস ধরিয়ে দিল?লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছিল জামাত,নেজামীইসলামী,মুসলিমলীগ এবং তাদের গঠিত শান্তি কমিটি।

২৬ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী। তা তো অবশ্যই।

৬| ২৬ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৩

ডার্ক ম্যান বলেছেন: আপনি শাহেদ জামাল ???

২৬ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমি??!!!
না না। আমি না।

৭| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৮:০১

সাইন বোর্ড বলেছেন: শাহেদ জামালের একটা চাকুরী হওয়া খুব জরুরী, অবশ্য ছোট-খাটো একটা ব্যবসার চেষ্টাও করতে পারে ।

২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৮:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমিও তাই মনে করি।
অবশ্য মাঝে মাঝে মনে হয় শাহেদ জামাল বেকারই থাকুক। সবার যে চাকরি বাকরি, ব্যবসা বানিজ্য করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

৮| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৯:১৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আয় রোজগার ছাড়া সংসার চালানোর উপায় কি?

২৬ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: উপায় নাই।
ধারধেনা। বাকি। আত্মীয় স্বজন দের কাছে হাত পাতা।

৯| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের শ্মশান করেছে কে,
শ্যামল বরণে সোনালী ফসলে ছিল যে সেদিন ভরা নদী
নির্ঝরে সদা বয়ে যেত পূত অমৃত ধারা অগ্নিদহনে সে সুখ স্বপ্ন দগ্ধ করেছে কে।
ইয়াহিয়া তোমায় আসামীর মত জবাব দিতেই হবে।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.