নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
সময়ঃ দুপুর দুইটা।
স্থানঃ রমনা পার্ক। মধ্যদুপুরে পার্কে লোকজন কম থাকে। আমাদের শাহেদ জামাল বসে আছে রমনা পার্কে। আসলে সে বসে না শুয়ে আছে। শাহেদ জামালের মন মেজাজ আজ খুব ভালো আছে। দুপুরে খাওয়ার চিন্তা নেই। শফিক হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যেই হাজীর বিরানী নিয়ে এসে হাজির হবে। শাহেদ সকালে যখন রমনা পার্কের দিকে হাটা দেয় তখন শফিক ফোন করে জানালো তার দরকারী কথা আছে। শাহেদ বলেছে দুপুর দুইটায় বিরানী নিয়ে রমনা পার্কে আসতে। শফিক খুব ভালো ছেলে। ভদ্র। শিক্ষিত। অমায়িক। মোটামোটি গোছের একটা চাকরি করে। শফিক প্রেম করে বিয়ে করেছে সুবর্নাকে। সুবর্না খুব ভালো মেয়ে। সহজ সরল বলা যায়। শফিক-সুবর্নার এখনও কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। কোনো এক বিচিত্র কারনে শফিক শাহেদকে খুব পছন্দ করে। শাহেদও শফিককে পছন্দ করে। স্কুল কলেজে তারা একসাথে লেখাপড়া করেছে।
শফিক বিরানী নিয়ে এসেছে।
সাথে পানির বোতল এনেছে। একটা স্প্রাইট এবং এক পেকেট বেনসন সিগারেট। বেশ গোছানো ছেলে। শাহেদ জামাল আরাম করে খেল। খাবার এখনও গরম আছে। দুই পেকেট এনেছে। শফিক খেলো না। অন্য পেকেট ফুল বিক্রেতা মেয়েটাকে দিয়ে দেওয়া হলো। শাহেদ বোতলের অর্ধেক পানি খেয়ে নিলো। স্প্রাইটের বোতলে একটা চুমুক দিয়ে, একটা সিগারেট ধরালো। শাহেদের অনেক ক্ষুধা পেয়েছিলো। সকালে বাসা থেকে নাস্তা করে বের হয়নি। বেকার ছেলে সকালে নাস্তা খেলো কি খেলো না সেটা নিয়ে কারো ভাবার সময় কারো নেই। এখন বেশ শাহেদের নিজেকে সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছে। পেট ভরা থাকলে দুনিয়ার সব শান্তি শান্তি লাগে। শফিক চুপ করে বসে আছে। তাকে দেখে মায়া লাগছে। শাহেদ শফিকের দিকে তাকিয়ে বলল, ঘটনা কি বল? তোকে দেখে মনে হচ্ছে তোর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে! মুখ চোখ এরকম কালো করে রেখেছিস কেন বন্ধু? সমস্যা থাকলে সমাধানও আছে। এত চিন্তা করিস না। যা হবার হবে। কথায় আছে- ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন।
শফিক বলা শুরু করলো।
সুবর্নাকে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ছাদ থেকে লাথথি মেরে নিচে ফেলে দেই। ওর কোনো কিছুই আমার ভালো লাগে না। ওর রান্না, ওর কথা। ওর খাওয়া বা শোয়ার স্টাইল কিচ্ছু ভালো লাগে না। যখন ঘুমিয়ে থাকে তখনও ওর দিকে তাকালে মায়া লাগে না। সারাদিন খাচ্ছে আর মোটা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনবার মিসক্যারেজ হয়েছে। এখন আবার প্রেগন্যাট হয়েছে। আমি সিউর এবারও মিসক্যারেজ হবে। দুই মাস চলছে। তিন মাসের বেলায় মিসক্যারেজ হবে। আগেও এমনটা হয়েছে। একটু পরপর বমি করছে। মাথা ঘুরায়, দুর্বল লাগে নাকি। মানে নানান সমস্যা। বললাম, তোমার বাপের বাড়ি চলে যাও। সে তার বাপের বাড়িও যাবে না। আসলে সুবর্নার বাপ মেয়ে বিয়ে দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলেছে। এদিকে ওর দেখভাল করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি এসব পারি না। যতক্ষন ঘরে থাকি ততক্ষন দম বন্ধ লাগে আমার। আমি আর পারছি না। এত কিছুর মাঝেও আমি সুর্বনাকে ভালোবাসতে চাই। অথচ বুকের ভেতর থেকে কিছুতেই ভালোবাসা আসে না।
শফিকের কথা শেষ হয় নাই।
সে বলল, দোস্ত আমার বাপ মানুষটা ভালো না। তিনটা বিয়ে করেছে। অনেক গুলো তার ছেলে মেয়ে। শেষ বয়সে তৃতীয় বিয়েটা করেছে। সেখানেও তার দুইটা ছেলে হয়েছে। বড় ছেলেটার বয়স এখন আট। আমার বাপ শালা সারাটা জীবন ভন্ডামি করেছে। ছোটবেলা খেয়ে না খেয়ে অভাবে অভাবে বড় হয়েছি। তুই চিন্তা করে দেখ বন্ধু, সে আমার পরীক্ষার ফিস না দিয়ে রাতে মদ খেয়ে বাসায় ফিরতো। আমার জুতো নেই আমি খালি পায় থাকি। অথচ সে জমিদারি স্টাইলে জীবনযাপন করে। দামী মদ খায়। এটা কেমন বাপ? দিনের পর দিন তার কোনো খোজ পাওয়া যেত না। আমরা খেয়ে আছি না মরে গেছি তার খোজ নিতো না। এখন আমার বাপের পরিস্থিতি অনেক খারাপ। অনেক অসুস্থ। তার দেখভাল করছে তার ভাইয়েরা। অবশ্য আমি মাঝে মাঝে তাকে দেখতে যাই। তখন যা পারি তার হাতে গুজে দেই। অথচ তার কাছ থেকে দু শ' টাকা চেয়েও কখনও পেয়েছি বলে মনে পড়ে না।
শাহেদ জামাল মন দিয়ে শফিকের কথা শুনে যাচ্ছে।
মানুষের সুখ দুঃখের কথা শুনতে তার বড় ভালো লাগে। শফিক বলল, আমার মা খুব উন্নত মনের মানুষ না। তার মধ্যেও সমস্যা আছে। আমরা অনেক গুলো ভাইবোন। মা তার সব সন্তানকে সমান চোখে দেখেন না। তার যে ছেলে বেশি ইনকাম করে এবং তাকে বেশি টাকা হাত খরচ দেয় সে তাকেই বেশি ভালোবাসে। অথচ আমার ধারনা ছিলো মায়ের কাছে তার সব সন্তান সমান। আমার মা আমার কোনো খোজ খবর নেয় না। আমি নিজে থেকেই তার কাছে যাই সে টিভি দেখায় ব্যস্ত থাকে। দূরের আত্মীয়র মতোন মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খোজ খবর নেয় আমাদের। আমার মনে হয়, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু তিনজন। আমার মা, আমার বাবা আর আমার স্ত্রী। অথচ এই তিন জনই আমার সবচেয়ে আপন হওয়ার কথা ছিলো। এখন আমি নামাজে দাড়িয়ে বলি- হে আল্লাহ আমার মায়ের মতো মা, আমার বাবার মতো বাবা আর আমার স্ত্রীর মতো স্ত্রী তুমি কাউকে দিও না। এরা আমার জীবনে যেন অভিশাপ হয়ে এসেছে।
দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে শফিক থামলো।
এখন চুপ করে বসে আছে। তার কথা শেষ হয়েছে। বাতাসে তার মাথার সুন্দর চুল উড়ছে। শাহেদ জামালকে শফিক তার বুকের জমানো দঃখ কষ্টের সব কথাগুলো বলার পরেই যেন তার মুখের কালো মেঘ কেটে গেছে। এখন তার বেশ ভালো লাগছে। দীর্ঘদিন ধরে শফিক তার গোপন কথা গুলো বলার মানুষ খুজছিলো। মানুষ বলতে চায়। মানুষের অনেক কথা জমানো আছে। বলতে পারলেই তার শান্তি-শান্তি লাগে। তবে কথা বলতে হয় ভালো মানুষদের। যে মানুষ কখনও হঠাত করে সাপ হয়ে যাবে না। এরকম মানুষ দুনিয়াতে খুব অল্প আছে। এই অল্প মানুষদের একজন শাহেদ জামাল। শাহেদ জামাল হলো গাছের মতোন। যে গাছ কোনো দিন কারো ক্ষতি করে না।
বিকেল হয়ে গেছে। পার্কে লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। শাহেদ একটা সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। না, আকাশে কোনো মেঘ নেই। আজ বৃষ্টি হবার সম্ভবনা নেই। বৃষ্টি হলে আজ সে নীলার কাছে যেত।
০১ লা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: এটা কোনো ব্যাপার না।
২| ০১ লা জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৫১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।
ভালো লাগলো।
০১ লা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ০১ লা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৯
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
শাহেদ হচ্ছে বাংলাদেশের চিত্র।
শাহেদের মন ভালো করার উপায় কি?
শাহেদ কি সিনেমা দেখে?
শাহেদকে নিয়ে একদিন সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখলে কেমন হয়?
০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৮:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: শাহেদ প্রচুর মুভি দেখে।
এবং খেতে ভা্লোবাসে।
কেউ শাহেদকে দাওয়াত দিলে শাহেদ খুশি হয়।
৪| ০১ লা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬
কল্পদ্রুম বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে।শাহেদ চরিত্র নিয়ে কোন উপন্যাস লিখছেন?
০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৮:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: আরে না ভাই।
৫| ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৮:১৯
নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার লেখা । বর্তমান সমাজের চিত্র।
০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৮:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: আমি সব সময় বাস্তবেই থাকি। তাই বাস্তব লিখি।
৬| ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ১০:০৭
কলাবাগান১ বলেছেন: বাহ ..শফিকের মুখ দিয়ে নিজের মনের কথা গুলি কেই বলে দিলেন....আপনি অনেক 'বোকা' নিজের পরিবারের কথা এমন ভাবে কেউ বলে না..নিচের এই লাইন আপনি বহুবার বিভিন্ন পোস্টে নিজের কথা বলেই চালিয়েছেন...মায়ের মেজাজ বুঝে নিচে যান টাকা আনার জন্য মায়ের কাছ থেকে সেটা আপনি ই বলেছেন...
সব মা ই চায় নিজের ছেলে স্বাবলম্বী হোক..। মা কেন ছেলের সংসার চালাবে? ছেলের উচিত মায়ের সংসার চালানো
"তার যে ছেলে বেশি ইনকাম করে এবং তাকে বেশি টাকা হাত খরচ দেয় সে তাকেই বেশি ভালোবাসে। তার যে ছেলে বেশি ইনকাম করে এবং তাকে বেশি টাকা হাত খরচ দেয় সে তাকেই বেশি ভালোবাসে। "
০১ লা জুন, ২০২০ রাত ১০:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা----
উফ আল্লাহ।
৭| ০২ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০০
ইসিয়াক বলেছেন: পড়ে মন্তব্য করবো।
০২ রা জুন, ২০২০ রাত ৮:০২
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৪২
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
০৩১৩ পোস্ট দেওয়া লেখাতে এখন ০৩৪০ পর্যন্ত মন্তব্য নেই। অথচ ব্লগার রাজীব নূর সকলের পোস্টে আগ্রহ নিয়ে মন্তব্য করেন।