নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফোটোগ্রাফী

০৫ ই জুন, ২০২০ রাত ৩:১৭



"ক্যামেরার কথা ভুলে যাও, লেন্সের কথা ভুলে যাও, এই সবকিছুর কথা ভুলে যাও। যেকোনো চার ডলারের ক্যামেরা দিয়ে তুমি সেরা ছবি তুলতে পারবে।"
---আলোকচিত্রীদের অনুপ্রেরণা যোগাতে আলবার্তো কোর্দার উপদেশ ।
ভূমিকা
মানুষের একটাই তো মাত্র ছোট্র জীবন, যার যেটা ভালো লাগে সেটাই তো করা উচিত।
আমরা যারা এ যুগে জন্মেছি তারা খুবই ভাগ্যবান। ভাগ্যবান নানা কারনে। তার মধ্যে একটা বড় কারণ হলো এই যে, মানুষ এত হাজার হাজার বছর ধরে সভ্য হয়ে উঠেছে, এত কথা জেনেছ, এত রকম কলকব্জা আবিষ্কার করেছে তার সব আজ আমাদের হাতের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পূর্ব পুরুষরাতো এত সব কিছুর কথা মোটেই জানতো না। তাদের জীবন ছিল আমাদের তুলনায় একেবারে সাদামাটা।পৃথিবীর পরিবর্তন ঘটছে এবং ঘটবে। কোনো কোনো পরিবর্তন ধীরে ধীরে এসেছে, আবার কোনটি এসেছে অনেক দ্রুত। যতদিন পৃথিবী থাকবে, ততদিন এই পরিবর্তন চলতেই থাকবে।
অনেক কাল আগে, একসময় শিল্পী-সাহিত্যিকদের রিয়েলিজম বা বাস্তববাদ শব্দটি খুব পীড়িত করেছে। রেনেশাঁসের সময় সকলের দৃষ্টি ফিরে গিয়েছিল ক্লাসিকাল যুগের দিকে। তারপরেও তো আবার কয়েকশো বছর কেটে। এখন সবাই বুঝতে পেরেছে, সমসাময়িক কালকে বাদ দিলে শিল্প হয় না। চোখের সামনে যা দেখছি, তার থেকে চোখ ফিরিয়ে অতীত ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে থাকাটা একঘেয়েমি পর্যায়ে এসে যায়। সৌন্দর্যনির্মানই শিল্পের শেষ কথা, কিন্তু আধুনিক জীবন, বাস্তব জীবনে কি সৌন্দর্য নেই? কোন পদ্ধতিতে ফুটিয়ে তোলা হবে সেই বাস্তব? সেটা খুঁজে পাওয়াই তো শক্ত। বাস্তব মানে কি হুবহু বাস্তব? আমরা চোখের সামনে যা দেখি, সবসময় কি তার সামগ্রিক গভীরতা দেখতে পাই? সাহিত্য, শিল্প কি শুধু আয়না? কিংবা সেই আয়নার প্রতিফলনের ওপর একটা বক্তব্য চাপিয়ে দেওয়াই কি বাস্তবতা? অনেকেই হয়তো বলবেন, চাক্ষুষ দৃশ্যই আসল সত্য, তার বাইরে আর কিছু শিল্প হতে পারে না। তাহলে, পরীদের আর আঁকা যাবে না। কারণ, পরীদের কেউ দেখতে পায় না। 'কুরবে' নামে একজন শিল্পী যেমন জোর দিয়ে ঘোষনা করেছিলেন, 'শিল্প হচ্ছে একটা বস্তুগত ভাষা, যার শব্দগুলি দৃশ্যমান জিনিস। 'তবে অনেকেই মেনে নিতে পারেননি শিল্প মানেই বাস্তবের প্রতিচ্ছবি।

১৮৩৯ সালে এলজেএম ডাগের নামে এক ভদ্রলোক হঠাৎ এক গোপন খবর জানিয়ে দিলেন। সিলভার নাইট্রেট মাখানো তামার পাতের ওপর সূর্যের আলো নিয়ে পরীক্ষা করতে করতে তিনি যে কোনও জিনিসের ছবি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। কালি, কলম, রং দিয়ে আঁকা নয়, তবু ছবি! এ যেন ম্যাজিক! তামার পাতের ওপর যে-কোনও জিনিস, যে কোনও মানুষের প্রতিচ্ছায়া স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে। এই জিনিসটার নাম প্রথম ছিল ডাগেরোটাইপ, কিছুদিনের মধ্যেই তা ফোটোগ্রাফি নামে পরিচিত হয়। এই আবিস্কার শুধু বিজ্ঞানের জগতে নয়, মানুষের সভ্যতার ইতিহাসেও একটা বিস্ফোরণের মতন। উনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের বিস্ময়ের মধ্যে ফোটোগ্রাফি যে অন্যতম প্রধান তাতে কোনও সন্দেহ নেই। শিল্পের ইতিহাসেও এর গুরুত্ব অসাধারণ। যারা বাস্তবতার দাবি তুলেছিল তাদের তখন অনায়াসে বলা যেতে পারে, এবার নাও, কত হুবহু বাস্তব চাও! ফোটোগ্রাফ মিথ্যে বলে না। চোখের সামনে যা দেখছ, তা সবই ফুটে উঠেছে, তা হলে রং-তুলি নিয়ে আঁকাবেটা কী? যারা শুধু পোর্ট্রেট এঁকে দু'চার পয়সা রোজগার করত তাদের ভাত মারা যাওয়ার উপক্রম হলো। সাধারণ মানুষ ফোটোগ্রাফির অভিনবত্বই লুফে নিল।

প্রথম যুগে কেউ কেউ অবশ্য ফোটোগ্রাফিকে 'প্রকৃতির ওপর জোচ্ছুরি' বলে আখ্যা দিয়েছে। আবার অনেক শিল্পীও ফোটোগ্রাফির দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। নাদার নামে একজন সে খুব সাহসী অ্যাডভেঞ্চারার, তেমনই ভালো ফোটোগ্রাফার, বেলুনে চড়ে সে আকাশ থেকে প্যারিস শহরের ছবি তুলেছে, এরকম দৃশ্য কেউ আগে দেখেনি, তাই নাদারের অনেক খাতির ছিল। এই নতুন জিনিসটার প্রতি কৌতুহল রইল বটে, কিন্তু অনেক শিল্পী ও কবি নিছক বাস্তবতার দায়িত্ব ফোটোগ্রাফির কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফেরাল। দর্পনের ছবির বদলে এলো বিমূর্ত রুপ।

শিল্পীরা ফোটোগ্রাফির ব্যাপারটা মেনে নিতে পারলেন না। কিন্তু যারা পন্ডিত, যারা বিশেষজ্ঞ, যারা সমাজের হর্তাকর্তা, ওরাও দারুন খেপে উঠলেন, তাদের মনে হলো, এ যেন শিল্প-সাহিত্যের ব্যভিচার। যে ছবি সুন্দর, নিঁখুত করে আঁকা নয়, তা কী করে শিল্প হবে? যে কবিতা পড়া মাত্র বোঝা যায় না, তা আবার কী কবিতা? সবাইকে মানতে হবে শিল্প ও সাহিত্য পাশা-পাশি হাত ধরাধরি করে চলে, একটা পেছনে পড়ে থাকলে অন্যটা বেশি দূর এগোতে পারে না। ফোটোগ্রাফি জনপ্রিয় হতে লাগল দিন দিন। কিন্তু বাস্তবতা ও বিমূর্ততার লড়াই চলতেই থাকল। একদল ধরে রইল যে বাস্তবের প্রতিচ্ছবিকে শিল্প-সাহিত্যে কিছুতেই অস্বীকার করা যাবে না। আর একদল লেখক-শিল্পী বাস্তবের কোনও রকম অনুকরনকেই শিল্প বলতে রাজি নয়। চাক্ষুষ দৃশ্যের চেয়ে অবচেতনের অনুভূতিই তাদের কাছে মুখ্য।

নিঁখুত শিল্প, সুন্দর শিল্প এবং ফোটোগ্রাফির বাস্তবতা থেকে সরতে সরতে শিল্প-সৃষ্টি এত বেশি বিমূর্ততায় চলে যায় যে তা চূড়ান্ত দুর্বোধ্যতায় পৌছে যায়। ছবির মধ্যে কোনও কাহিনী থাকবে না, চরিত্র থাকবে না, এই নীতি মানতে মানতে ছবি হয়ে যায় একটা আয়তনের মধ্যে কিছু রঙের ছোপ। বিশেষ এক শ্রেনীর শিল্পবোদ্ধা ছাড়া সেসব ছবির রস গ্রহন করা সাধারণ মানুষের সাধ্যের অতীত হয়ে গেল। সমাজতান্ত্রিক এবং বাস্তবতার দর্শনে বিশ্বাসী, তারা এক সময় উচ্চ গলায় বলেছিলেন, এত কাল ছবি আঁকা হতো দেবতা এবং রাজা-বাদশাদের জন্য। কিন্তু এখন সময় এসেছে শিল্প হবে সাধারণ মানূষের জন্য। বাস্তববাদীদের মতবাদ আঁকড়ে রইলেন সমাজতান্ত্রিক দেশের নীতি-নির্ধারকেরা। সেখানে এর নাম হলো সোসালিস্ট রিয়েলিজম, যার মধ্যে আবার বিমূর্ততার কোনও স্থান নেই। কল্পনার খেলা নিষিদ্ধ। সেখানেও বাস্তবতার নামে যেসব রাশি রাশি ছবি আঁকা হতে লাগল, তা গতানুগতিকতারই নামান্তর। তার দু-চারখানা দেখার পরেই মনে হয়, এর বদলে রঙিন ফোটোগ্রাফই বা মন্দ কী!

প্রায় এক যুগ আগে ক্যামেরা হাতে নিয়েছি। আজও সব কিছু শিখে উঠতে পারিনি। চলার পথে যে সব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, সেই সব সমস্যার সমাধান নিজেই খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেছি। আর সেই সমাধান গুলো নিজের মতো করে লিখতে চেষ্টা করেছি। ব্লগে নিয়মিত লিখেছি। ছয় বছর ধরে একটু একটু করে এই বইটি প্রস্তুত করেছি। বইটি আরও তিন বছর আগে বের হওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ একদিন কম্পিউটারের সব ফাইলের সাথে পান্ডুলিপিটি মুছে যায়। সেদিন খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। পরে আবার লেখাটি দাঁড় করাতে আমাকে খুব বেগ পেতে হয়েছে।

রাজীব নূর খান
ফটোসাংবাদিক ঢাকাটাইমস ও সাপ্তাহিক এই সময়
[email protected]


ফোটোগ্রাফী নিয়ে আলোচনা শুরু করছি।
খুব সহজ সরল্ভাবে ফটোগ্রাফির সকল বিষয় আপনাদের সামনে হাজির করবো। কোনো পন্ডিতগিরি নয় বরং ঘরোয়াভাবে আলোচনা করবো। কোনো কোনো বিষয় এক বা একাধিক বার আলোচনাস করবো- যাতে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হয়। গল্পের ছলে ফোটোগ্রাফির নানান দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
আমার কখনও বিখ্যাত মানূষদের ছবি তুলতে ইচ্ছা করে না। তাদের ছবি তোলার তো লোকের অভাব নেই। নেট সার্চ করলেও তাদের অনেক ছবি পাওয়া যাবে। আমার শুধু খুব ইচ্ছা হয় একবার যদি তসলিমা নাসরিনের ছবি তুলতে পারতাম! তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ করা যায়? রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি তোলার আগে অনেক ধরনের নিয়ম পালন করতে হয়। যাই হোক, আমার কখনও কারো ছবি তুলতে হলে তাকে বলি- আপনি আমার কথা ভুলে যান, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আপনি আপনার খুব প্রিয় একজন মানুষের দিকে তাকিয়ে আছেন, এটা ভাবেন। এই কথাটা বললেই সবাই একটু মিষ্টি করে হাসেন। ওই হাসির মধ্যেই আমি আমার কাজ শেষ করে এই।
মানূষের ছবির চেয়ে গাছ-পালা, নদী, পাহাড়, জঙ্গল, পশু পাখি এদের ছবি তোলা অনেক সহজ। আর পোট্রের্ট তোলা তো অসহ্য। তারপরও আমি আমার মতো করে অনেক ছবি তুলি। জানি সেসব ছবি কোনোদিন কাজে লাগবে না। তবে কিছু কিছু ছবি তুলে খুব আনন্দ পাই। বিশেষ করে বাচ্চাদের ছবি। বাচ্চারা ছবি তোলার সময় বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায়। কিছু কিছু ছবি আমাকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। প্রতিটা ছবি আমি বিশ্লেষন করার চেষ্টা করি। এক্সপেরিমেন্টেশন করি। একটা ছবি তোলার আগে মনের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। নিজের সীমাবদ্ধতা বারবার আমাকে কষ্ট দেয়।
আমি একজন ভালো আলোকচিত্রী হতে চাই। ইচ্ছা থাকলেও অনেক ভালো ভালো কাজ করতে পারি না। একজন ফোটোগ্রাফার যেমন চাইলেই এক বস্তিতে গিয়ে ছবি তুলতে পারে খুব সহজেই। কিন্তু ধানমন্ডিতে এক বাড়িতে কিন্তু ইচ্ছে করলেই ঢুকে ছবি তুলতে পারে না।
আমি একবার একটা অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। আমাকে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছিল। আমার ক্যামেরার ব্যাগ তন্নতন্ন করে সার্চ করা হলো। আমার উপরও তল্লাশি চালানো হলো। কিছুক্ষন পর সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিলো। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না, সমস্যা টা কোথায়! একটু পরে জানতে পারি, প্রধান অতিথির চেয়ারে আমি বসে পড়েছিলাম।

একটা ফ্যাশন শো’তে দেখে ছিলাম, দশ জন মেয়ে বোরকা পড়ে নানান রকম অঙ্গ ভঙ্গি করছে, ভদ্র ভাষায় ‘ক্যাট ওয়াক’ করছে । ছবি তুলতে গেলে যেটা করি যেকোনো রাস্তার অলি-গলি দিয়ে হাঁটি, মিসির আলির চোখ দিয়ে সব কিছু দেখার চেষ্টা করি। নিজের মতো করে ঘোরা-ফিরা করি। নানান রকম অভিজ্ঞতা হয়। ভোর বেলা ছবি তোলা দারুন মজার ব্যাপার। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল ফোটোগ্রাফার হয়ে ছবি তোলা অনেক আনন্দের। অনেক প্রাধান্য পাওয়া যায়। অন্য ফোটোগ্রাফারদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে হয় না। নিজের সাফল্যর জন্য অনেক সময়- লোকজনদের বোঝাতে হয় যে ভাই আমি গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া দরকার। অনেকের ইচ্ছা থাকে আহ ! আমার যদি টাইম- পত্রিকায় ছবি ছাপাতো অথবা লন্ডনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায়! এই রকম আমার কখনোই মনে হয় নাই। ইংল্যান্ডে রসায়ন বিদ্যায় PHD করেও আলোকচিত্রীর জীবন বেছে নিয়েছে এমন উদাহরণও আছে ।

মাঝে মাঝে মনে হয়, যে ছবি আমি তুলতে চাই, সেই ছবি কি তুলতে পেরেছি? অথবা যেসব ছবি তুলেছি তা কি আসলে ছবি? ছবি আসলে কী? নানান ভাবনায় অস্থির জীবন। আমার সবচেয়ে আনন্দময় সময় হলো ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া। কর্মাশিয়াল কাজ, বিখ্যাতদের ছবি আমাকে টানে না। যে চিন্তাকে আমরা ধারন করতে পারি না, তার ছবি তুলতে চাই।

অনেক ছেলে-মেয়ে আমার কাছে ফোটোগ্রাফী শিখতে আসে। তাদেরকে আমি বলি- সবার আগে ক্যামেরা ধরার নিয়মটা শিখুন। অনেকেই হয়ত মনে মনে ভাবছেন 'ক্যামেরা ধরা'য় আবার শেখার কী আছে ? আমিও প্রথমে এমনই ভেবেছি কিন্তু পরে বুঝলাম এটাই বেজ, ক্যামেরার কাপা-কাপি বন্ধ করা গেলে খুব সহজেই ভালো লাগা মুহূর্ত গুলো সুন্দরভাবে ফ্রেমে বন্ধী করা যায়। ফোটোগ্রাফী বিষয়ক ওয়েব সাইট গুলো খুব মন দিয়ে দেখুন, পড়ুন।

আমি বাঙালী, আমি বাংলাদেশী কিন্তু সবার উপরে আমি একজন মানুষ। মনে রাখবেন, বই পড়ে সাঁতার শেখা যায় না। সাঁতার শেখার জন্য আপনাকে পানিতে নামতে হবে। তেমনি ভালো ছবি তোলার জন্য আপনাকে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে রাস্তায় বের হতে হবে। শুধু বই পড়লেই হবে না। যাই হোক, টাইমিং হচ্ছে আপনি ছবিটা ঠিক সময়ে ফ্রেম বন্ধি করতে পারলেন কিনা। মাত্র এক মিলি সেকেন্ড এদিক ওদিক হলেই আপনি খুব সুন্দর একটা শর্ট হারাতে পারেন। কাজেই চলন্ত কিছুর ছবি তোলার সময় বা চলন্ত অবস্থায় বাস, ট্রেন, পাখি ইত্যাদি ছবি তোলার সময় আপনার মস্তিস্ককে ছোটখাটো একটা ডুয়াল কোরের সমগতিতে কাজ করাতে হবে।

ছবি তোলার জন্য আপনি সকালে একরকম আলো পাবেন, বিকালে পাবেন অন্যরকম আলো। আবার রাতে খুবই কম আলো পাবেন। বেশি আলোতে ছবি তোলার সময় ফ্ল্যাশ বন্ধ করে অটো শাটার স্পিড সিলেক্ট করুন আর কম আলোতে ছবি তোলার সময় কাছের বস্তুর ক্ষেত্রে ফ্ল্যাশ চালু রেখে অটো শাটার স্পিড রাখুন এবং দূরের বস্তুর ক্ষেত্রে ফ্ল্যাশ বন্ধ রেখে ম্যানুয়াল শাটার স্পিড নির্বাচন করুন ১ সেকেন্ড। আবার ধরুন আপনি দ্রুতগতির কোন বাস বা ট্রেনে করে চারপাশের ছবি তুলতে তুলতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আলো এবং দ্রুত শাটার স্পিড অত্যন্ত জরুরী। মনে রাখবেন, শাটার স্পিড বেশি না থাকলে এবং আলো কম থাকলে ছবি স্পষ্ট আসবে না।

সাদা কালো ছবিতে রং নিয়ন্ত্রন করা রঙ্গিন ছবির তুলনায় অনেক সহজ। একজন দক্ষ ফোটোগ্রাফার ক্যামেরার মাধ্যমে হোক আর ফোটোশপের কারিগরি ব্যবহার করেই হোক, রং নিয়ন্ত্রন করে একটি অসাধারণ ছবি বের করে নিয়ে আসতে পারেন। রং এর আধিক্য না থাকার কারণে বিষয় বস্তুকে মনোযোগের কেন্দ্রে আনা তুলনামূলক সহজ।

ফ্রেমিং সম্পর্কে বর্তমানে আপনার নূন্যতম ধারনা না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। ফ্রেমিং কি? যদি এক কথায় বলি- যতটুকু ছবি তুলতে চান ততটুকুকে ফ্রেমে নিয়ে আসাই হচ্ছে ‘ফ্রেমিং।‘

মনে রাখবেন, কবিতা লিখলেই কবি না আর ছবি তুললেই ফটোগ্রাফার না। তাহলে স্টুডিওর ক্যামেরা ম্যানরাই হতো সবচেয়ে বড় ফটোগ্রাফার। আজকাল দু্‌ই হাজার টাকার মোবাইলে ক্যামেরা থাকে। তারাও ছবি তুলে। কিন্তু ফটোগ্রাফী সর্ম্পুন আলাদা একটি একাডেমিক বিদ্যা। আমাদের দেশে দক্ষ ফটোগ্রাফারের সংখ্যা খুবই কম। হাতে গোনা কয়েকজন। বিশ্বের অনেক দেশ আছে যেখানে ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে অনেকেই।

ডাক্তারী পড়াশোনায় যত জন ভর্তি হয় সবাই ডাক্তার হয়না। হিসেব করলে দেখা যাবে তার দশ ভাগের এক ভাগ ফটোগ্রাফীতে র্ভতি হয়না। আর পেশা হিসেবে ফটোগ্রাফী নাই বললেই চলে। মানুষের প্রতিভা ভিন্ন মুখী। সবাই একরকম হয়না । একেক জন একেক পেশায় নিজের প্রতিভা তুলে ধরতে পারে। আমাদের উচিত মানুষের সৃজন শীল প্রতিভাকে মুল্যায়ন করা। উৎসাহ দেয়া। আমি একজন দক্ষ আলোকচিত্রী নই। তবে একজন ভালো আলোকচিত্রী হওয়ার তীব্র ইচ্ছা পোষন করি। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে- তরুণ তরুনীরা ছবি তুলতে আগ্রহী হচ্ছে। প্রিয় বন্ধুরা গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলি- ফটোগ্রাফি শেখার জন্য আলাদা কোনো যোগ্যতার দরকার নেই। তবে দরকার হলো আগ্রহ। ফটোগ্রাফি একটি বড় আকারের শিল্প যা শুধু ক্যামেরা ক্লিক করে-করে ফটো তুলে বেড়াইলে হবে না। এটা চর্চা ও সাধনার বিষয়।
ম্যাক্রো ফটোগ্রাফী কি? সহজ ভাষায় খুব কাছে থেকে ছবি তোলাকে বলে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফী। দ্রুতগতি ফটোগ্রাফী বা হাই স্পীড ফটোগ্রাফী দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এটি আবার কোন ধরনের ফটোগ্রাফী ? হাই স্পীড ফটোগ্রাফী হচ্ছে খুব দ্রুত ঘটে যাওয়া কোন কিছুকে ফ্রেমে বন্দি করা।

বর্তমান সময়ে প্রায় সকলের হাতে হাতেই আছে ক্যামেরা মোবাইল। হোক তা চাইনিজ বা হোক যে কোনো কোয়ালিটির, ক্যামেরা মোবাইল বলে কথা। অনেকেরই ধারণা যে মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ভালো ছবি তোলা সম্ভব না, কিন্তু আসলে ধারণাটি ভুল। আপনার ছবি তোলার বিষয় বস্তু ভালো হতে হবে। নিজেই নিজের ছবি তোলা ভালো বিষয় বস্তু না। চেষ্টা করবেন প্রকৃতির ছবি তুলতে বা বৈচিত্রময় কিছুর ছবি তুলতে, এতে ছবি তোলার প্রতি আপনার আগ্রহ বাড়বে এবং একই সাথে ছবি তুলে মজাও পাবেন আপনি। নিজের ছবি যদি তুলতে চান তবে নিজে না তুলে অন্য কাউকে দিয়ে তোলান, যদি সম্ভব না হয় তবে সতর্কতার সাথে নিজেই তুলুন। কোন বিষয়ের শুধু একটি ছবি না তুলে একাধিক ছবি তুলুন, এতে ভালো শট পাবার সম্ভাবনা থাকে।

আমরা বেশিরভাগ লোকজনই ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা আসলে ফটোগ্রাফির মূল উদ্দেশ্যটা কী? কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন এটা নির্ভর করে ঐ ছবির বাস্তব ব্যাবহার ও উপস্থাপনার উপর। কেউ যদি একটা ট্রু ফ্যাক্টকে সবার সামনে অবিকৃত অবস্থায় নিয়ে আসতে চায় সেটার আবেদন ও উপস্থাপন এক জিনিশ এবং কেউ যদি কোনো ল্যান্ডস্ক্যাপ, পোর্টেট বা লাইফস্টাইলের মাধ্যমে বা স্যুরিয়েল লং এক্সপোজারের মাধ্যমে তার নিজস্ব ধারনা তুলে ধরতে চায় সেটার আবেদন ও উপস্থাপন আবার ভিন্ন জিনিশ। এছাড়াও এদের ব্যাবহারিক দিকটিও কিন্তু ভিন্ন। কিন্তু আমরা কী করি? একটা ছবিকে জাজম্যান্ট করার সময়, সেটা যে ছবিই হোক না কেনো, তার জার্নালিস্টিক এটিচ্যুডকে প্রাধান্য দেই। ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে না।

একদিকে অগনিত মানুষ দুমুঠো ডাল-ভাতের জন্য গায়ে সামান্য দুটুকরো কাপড় জড়ানোর জন্য, ছোট একটা কুড়ে ঘরে মাথা গোজার ঠাইয়ের জন্য জীবিকার আশায় হন্যে হয়ে জলে স্থলে ছুটে বেড়ায়, কঠোর পরিশ্রম করে মাথার ঘাম মাটিতে ফেলে, আবার অন্য দিকে কিছু মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে নিতান্তই শখ পুরনের জন্য যন্ত্রপাতি কিনে জলে স্থলে ঘুরে বেড়ায় পানির নিচে ছবি তোলার জন্য- মানুষকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। তাদের টাকা গুলো মনে হয় অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে। কি বিচিত্র এই দুনিয়া !! দুনিয়ার মানুষ গুলো।

একবার হুমায়ূন আহমেদকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- আপনি কি ঈশ্বর বিশ্বাস করেন? উত্তরে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন- ঈশ্বর বিশ্বাস আমার আছে। ধরা যাক, তুমি একটি গ্রহে গেছো। গ্রহটা দেখে তোমার মনে হতে পারে, চিরকাল ধরে গ্রহটা একই রকম আছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তুমি যদি একটা নাইকন ক্যামেরা দেখ, তোমাকে সেটা হাতে নিয়ে বলতেই হবে, এটার একজন কারিগর বা মেকার আছে। সামান্য একটি প্লাষ্টিকের ক্যামেরা দেখে তুমি বলছো এর একটা মেকার আছে। ক্যামেরার কিন্তু অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তোমার পেছনে একটা মানুষ আছে। ক্যামেরার পেছনের মানুষটকে ফোকাস করার সঙ্গে সঙ্গে তুমি হয়ে যাবে আউট অব ফোকাস। আবার তোমাকে ফোকাস করার সঙ্গে সঙ্গে পেছনের জন হবে আউট অব ফোকাস। মানুষের চোখের কিন্তু এই অসুবিধা নেই। চোখ ক্যামেরার চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী। আমাদের শরীরে একটা যন্ত্র আছে, যার কাজ শরীরের সুগার লেভেল ঠিক রাখা। মানুষের পুরো শরীর এমন বিচিত্র আর জটিল যন্ত্রপাতিতে ভরপুর। এসব জটিল ব্যাপার- একদিনে এমনি এমনি হয়ে গেছে, এটা আমার মনে হয় না।


আমরা যে দৃশ্যের ছবি তুলবো সেটা ফ্রেমের মধ্যে কেমন দেখাচ্ছে তা ভিউ ফাইন্ডারের মাধ্যমে অথবা এলসিডি ডিসপ্লেতে দেখে সন্তুষ্ট হলেই শাটার বাটন চাপ দিয়ে ছবি তুলি। এছাড়া ছবি তোলার পর ডিসপ্লেতে দেখতে পারি ছবিটি ভালো হয়েছে কিনা, নাহলে ডিলিট করতে পারি। সুর্যের প্রকট আলোতে ডিসপ্লের পরিবর্তে ভিউ ফাইন্ডার ভাল। সুতরাং ভিউ ফাইন্ডার ও ডিসপ্লে দুটিই প্রয়োজনীয়। ডিসপ্লের ব্যবহারে ব্যাটারী তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় ।

ছবির ক্ষেত্রে লাইটটাই বেশি দরকারি। ছবি তোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে আলোর যথাযথ প্রভাব থাকে। যদি ফ্ল্যাশ না থাকে তবে অবশ্যই আলোর দিকে বেশি খেয়াল করতে হবে। আলোটাই মুলতঃ ছবির প্রাণ। তাই বলে অন্ধকারের ছবি তুলতে গিয়েও কিন্তু আলো ব্যবহার করবেন না ছবি তোলার সময় অবশ্যই। ক্যামেরাটিকে ভালো করে ধরতে হবে যাতে ছবি ব্লারি বা ঘোলা না ওঠে।

বিষয় নির্বাচন ছবি তোলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনার ছবি তোলার বিষয় বস্তু ভালো হতে হবে। নিজেই নিজের ছবি তোলা ভালো বিষয় বস্তু না। চেষ্টা করবেন প্রকৃ্তির ছবি তুলতে বা বৈচিত্রময় কিছুর ছবি তুলতে, এতে ছবি তোলার প্রতি আপনার আগ্রহ বাড়বে এবং একই সাথে ছবি তুলে মজাও পাবেন আপনি। নিজের ছবি যদি তুলতে চান তবে নিজে না তুলে অন্য কাউকে দিয়ে তোলান, যদি সম্ভব না হয় তবে সতর্কতার সাথে নিজেই তুলুন। কোন বিষয়ের শুধু একটি ছবি না তুলে একাধিক ছবি তুলুন, এতে ভালো শট পাবার সম্ভাবনা থাকে ।

নতুন মডেলের ক্যামেরা বাজারে আসছে, আসবে। তবে ভালো ছবির ব্যাপারে শেষ কথা হচ্ছে, ভালো ছবি শুধু ক্যামেরার জন্য হয় না, এর জন্য প্রয়োজন ক্যামেরার পিছনে একজন দক্ষ মানুষ। ডিজিটাল ক্যামেরা আপনার জীবনের মধুরতম স্মৃতি ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো স্বপ্নীল এলবামে সাজিয়ে রেখে আগামী দিনগুলোকে আরো অর্থময় ও আনন্দময় করুক।

আজকাল সাধারন ভদ্র মানুষ SLR ক্যামেরাধারীদের কাকের সাথে তুলনা করে। কেউ আবার তুলনা করে বানরের সাথে। কিছু মানুষের মন মানসিকতা খুব ছোট। তারা কটু কথা বলবেই। কাজেই তাদের কথায় কান দিবেন না। যাই হোক, এখন স্ট্রিট ফোটোগ্রাফি নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাক। স্ট্রিট ফটোগ্রাফি কি ? এর মানে কি পথে পথে ছবি তুলে বেড়ানো? অনেকটা তাই। এর বৈশিষ্ট্য হলো ক্যান্ডিড শট। হতে পারে বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে যেমন পথে, পার্কে, সি বিচে, শপিং মলে এমনকি পলিটিকাল মুভমেন্টে। একেবারে হালকা মেজাজে টুরিস্টের মতো ছবি তুলতে বের হন এরা। ফলে আশপাশের লোকজন এদের দিকে তেমন মনোযোগ দেয় না। অবশ্য বাংলাদেশে এতেই লোকজনের আগ্রহ বেড়ে যেতে পারে অনেক গুণ। ছবি তোলার উদ্যোগটি নিতে হবে আপনাকেই। এ তথ্য থেকে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা। সেটি হলো এটি কোনো লাজুক ফটোগ্রাফারের কাজ নয়। আর যদি লাজুকতা থাকেই তবে তা দূর করার কাজটি নিজেকেই করতে হবে। যেমনটা পেরেছিলেন ফোটোগ্রাফার ব্রেসো। মজার ব্যাপার হলো, অতীত ঘাটলে দেখা যায় অনেক বিখ্যাত স্ট্রিট ফটোগ্রাফারই ক্যারিয়ারের শুরুতে যথেষ্ট শাই বা লাজুক ছিলেন।


সাধারণ দৃশ্যমান জগতে আমরা যে চিরায়ত লীলার অভিজ্ঞতা লাভ করি তাকে প্রকৃতি হিসেবে অভিহিত করা হয়, তা শিল্প নয়। এই প্রকৃতির সৌন্দর্য্য অবলোকন করে মানব মন যখন বিমুগ্ধ, বিস্মিত ও বিমূঢ় হয়ে যায় তখন সে তাকে নিজের মধ্যে আপন করে পেতে চায়। এরই ধারাবাহিকতায় সে চায় এই নৈসর্গিকতাকে একটি স্বাভাবিক রুপ দিতে। আর এর মাধ্যমেই জন্ম হয় শিল্পের। অন্য কথায় দৃশ্য বা অদৃশ্যকে শিল্পীর চিত্তরসে রসায়িত করে যে স্থিতিশীল রূপ মহিমা দান করা হয় তাই শিল্প।


মানুষ না থাকলে শিল্পের সৃষ্টির প্রশ্নই উঠত না এবং শিল্পের ইতিহাস ও মানবসন্তানের ইতিহাস একই ধারায় প্রবাহিত। শিল্পের মাধ্যমে শিল্পীমন ও দ্রষ্টার মনের পরিচয় হয়ে যায় এবং তা হয় অত্যন্ত গভীর। এর ফলে দেখা যায় শিল্পের সৌন্দর্য্য দেখে দ্রষ্টা শিল্পীমনের অতি কাছাকাছি আসে এবং এর ফলে আত্মপরিচিতি আবিষ্কারের পথ খুঁজে পায়। একজন শিল্পী ততটুকু স্বাধীন যতটুকু স্বাধীনতা দেশ অথবা সমাজ দিয়ে থাকে। শিল্পীর স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ। মানুষ একান্তই অনুকরণপ্রিয়। সাধারণ মতে এই অনুকরণের প্রবৃত্তি হতেই শিল্পের জন্ম।

পাবলো নেরুদা বলেছিলেন, Speake in the name of those who cannot write, if the poet did not make himself the spokesman of the human condition, what else was there for him to do. শিল্প একটি মাধ্যম, সৃজনশীলতা সেই মাধ্যমকে পূর্ণতা দেয়। কোনো সৃজনশীল মানুষই জীবনের বিরুদ্ধাচরণ করে না। কারণ শিল্পের সবচেয়ে বড় উপাদান মানুষ এবং তার বহমান জীবন। শিল্প একটি মাধ্যম, সৃজনশীলতা সেই মাধ্যমকে পূর্ণতা দেয়। কোনো সৃজনশীল মানুষই জীবনের বিরুদ্ধাচরণ করে না। কারণ শিল্পের সবচেয়ে বড় উপাদান মানুষ এবং তার বহমান জীবন। একজন ফোটোগ্রাফারের দেখার চোখ থাকতে হবে। অর্থ্যাৎ শিল্পবোধ।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশের অপরূপ চিত্র কেবলমাত্র পরিচ্ছন্ন ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তুলে আনা সম্ভব। ফটোগ্রাফী এখন আর সখের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটা পেশায় পরিণত হয়েছে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের এই পেশায় যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে।

ফোটোগ্রাফী শিল্পের প্রধান উপকরণ ক্যামেরা। এই শিল্প সৃষ্টিতে যে জিনিষটি খুব গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আলো। এই আলো আর ছায়ার যুগলবন্দীতেই সৃষ্টি হয় অপূর্ব সব শিল্পকর্ম। ফটোগ্রাফী ব্যয়বহুল একটা শিল্প মাধ্যম বিশেষতঃ প্রফেশনাল ফটোগ্রাফী সত্যিই খুবই ব্যয়বহুল একটা ব্যাপার যা আমাদের অনেকের সামর্থের বাইরে। ফটোগ্রাফীর কাজে ব্যবহৃত সবকিছুই ব্যয় সাপেক্ষ। ক্যামেরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের লেন্স, ফ্লাশ, ফিল্টার, ট্রাইপড এমন কি ক্যামেরা ক্যারিং ব্যাগ ও ক্যামেরার কভার কিনতেও বেশ পরিমান অর্থ ব্যয় করতে হয়।
একটা ছোট্র টিপস দেই- শারটার টেপার সময় ক্যামেরা যেন না নড়ে ওঠে সেদিকে খুব লক্ষ্য রাখবেন।

আমি খুব ভালো ছবি তুলতে পারি না। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি যখন ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় বের হই, তখন মাথার মধ্যে এই গান টা খুব বাজতে থাকে- ‘আমি এক যাযাবর, পৃথিবী আমাকে আপন করেছে, ভুলেছি নিজের ঘর''। আমি বিশ্বাস করি একটা ভালো আলোকচিত্র আগামীদিনের ইতিহাসের পাতা৷ একেকজনের রুচি একেক রকম ফলে একজনের কাছে যে ছবি ভাল বলে স্বীকৃত তা অন্যের কাছে ভাল নাও হতে পারে। আর এখানেই গন্ডগলটা বাঁধে।

এখন অনেকের হাতে ক্যামেরা আছে আর আছে বড় বড় কথা কিন্তু তাদের মধ্যে থাকে না শিল্পবোধ। অনেকে গুরু বা তথাকথিত বড় ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে চেষ্টা করছে। অন্যের কাছ থেকে আর কতটুকু শেখা যায়। তাছাড়া বই পড়ে কি আর সাঁতার শেখা যায়? তারা রাস্তার শুয়ে থাকা একটা ভিক্ষুকের ছবি তোলে আর খুব ভাব দেখায়- যেনো দুনিয়া জয় করে ফেলেছে ! কিন্তু তারা সত্য থেকে কেন এক আকাশ দূরে থাকে ? সবাই এক রকম ছবি তোলে । ভিন্নতা পাই না ।আর কিছু লোভী পুরস্কারের আশায় আমাদের দেশের দরিদ্রতা পশ্চিমাদের দেখায় । বুঝায় যায় তাদের মধ্যে সততার খুব অভাব । অন্যের চোখ দিয়ে নয় নিজের মনের চোখ দিয়ে দুনিয়াকে দেখতে হবে ।

“To take photographs means to recognize – simultaneously and within a fraction of a second – both the fact itself and the rigorous organization of visually perceived forms that give it meaning. It is putting one’s head, one’s eye and one’s heart on the same axis”। (বলুন তো উক্তিটি কার?)




Just focus on whats important,
Capture the good tyms,
Develop from the negatives,
And if things don't turn out,
just take another shot!

ভালো ফটোগ্রাফার হতে হলে সময়ের প্রয়োজন আছে। কেউ যদি আপনার তোলা ছবি নিয়ে হাসাহাসি করে, তাদের উপর রাগ করে ফটোগ্রাফি ছেড়ে দেওয়া বোকামি হবে।



ব্রাজিলিয়ান ফটোগ্রাফার সালগাদ, যিনি ইকোনমিক্সে ডক্টরেট করেছেন, তিনি নিজ চেস্টায় আজ বিখ্যাত ফটোগ্রাফার এবং স্তিভ ম্যাকারি সহ অনেকেই আছেন। 'এলেন ভন আনওয়ার্থ' একজন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার। তার নগ্ন ফটোশুটে অংশ নিয়ে রেচেল এখন বিশ্বমিডিয়ার সংবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন। ইউএস পাবলিকেশন্সের জন্য করা এই ফটোশুটে রেচেল ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন এক টুকরো সাদা কাপড়ে। আর শরীরের উপরিভাগে কোন পোশাকই পরেননি তিনি। মূলত ফটোগ্রাফারের অনুরোধেই এ ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন এবং নগ্ন হয়েছেন রেচেল। এই ছবি তোলা ও ফটোগ্রাফার এলেন বিষয়ে সমপ্রতি নিজের টুইটার ওয়ালে রেচেল বলেছেন, অনেক ভাল একটি ফটোশুট হয়েছে এটি। আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম শুট। তবে যে কারও সামনে এতটা কম কাপড়ে দাঁড়াই না আমি। ফটোগ্রাফার এলেন বলে কথা। আর তাকে আমি না করতে পারি না। শুধু তার জন্যই নগ্ন পোজ দিয়েছি। তার কাছে আমি কোন কিছুই লুকাতে চাই না।

ফোটোগ্রাফিতে নিজের দক্ষতার পাশাপাশি শৈল্পিক জ্ঞানের সমন্বয়ে যে কেউ গড়তে পারেন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। সে জন্য সবার আগে প্রয়োজন সৃষ্টিশীল ও শৈল্পিক মন। শৈল্পিকতা কোনো নিয়ম মানে না। আমি মনে করি একজন ফটোগ্রাফারের সর্ব প্রথম ক্যামেরার ব্যবহার, এক্সপোজার নিয়ন্ত্রণ, হোয়াইট ব্যালেন্স, লাইটিং, স্টুডিও এবং আউটডোর ফটোগ্রাফি, ডিজিটাল ছবির এডিটিং এবং নান্দনিকতার ওপর তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতেই হবে।

১৯১১ সালে উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী বড় ছেলে সুকুমারকে বিলাতে পাঠান ফোটোগ্রাফী ও মুদ্রণ সম্বন্ধে উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্যে। সুকুমার রায়ের পুত্র খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। সুকুমার বিলেতে আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন।





১৮৮৮ সালের দিকে কাউকে ক্যামেরায় ছবি তুলতে দেখলে ইট মেরে তা ভেঙে ফেলা হতো। এমনটি ঘটেছিল কোডাক প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ইস্টম্যানের বেলায়।

ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড ম্যাককোলাফ এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘পাহাড়ে ওঠার অর্থ হলো তুমি যাতে পৃথিবীটাকে দেখতে পারো।

‘এই যে আসুন, তারপর কী খবর?
আছেন তো ভাল? ছেলেমেয়ে?’ কিছু আলাপের পর
দেখিয়ে সফেদ দেয়ালের শান্ত ফটোগ্রাফটিকে
বললাম জিজ্ঞাসু অতিথিকে–
‘এই যে আমার ছোট ছেলে, যে নেই এখন,
পাথরের টুকরোর মতন
ডুবে গেছে আমাদের গ্রামের পুকুরে


ছবি এক ধরণের চিত্রকর্ম যা সাধারণত দুই মাত্রার চিত্র হয়ে থাকে। ছবি মূলত কোন বস্তুর ছোট আকারের প্রতিকৃতি। ছবি কোনো বস্তু বা ব্যক্তির হতে পারে। ফটোগ্রাফির আজকে অবস্থানের পেছনে বহু আলোকচিত্রীর পরিশ্রম ও মেধা জড়িয়ে আছে।


একটা শকুনটা অপেক্ষা করছে ছোট্ট শিশুটার মৃত্যুর জন্য। কারন মৃত্যুর পর শকুনটা এই শিশুটার শরীরের মাংস খাবে। এই ছবিটা তখন সারা দুনিয়াতে আলোড়ন তুলেছিল। ছবিটা Pulitzer Prize পেয়েছিল। ফটোগ্রাফার Kevin Carter এই ছবিটা তোলার ৩ মাস পর সুইসাইড করে মারা গিয়েছিলেন। পরে জানা গেছে ছবিটা তোলার পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন এবং এই কারনেই তিনি সুইসাইড করেন। আত্মহত্যার আগে Kevin Carter নিন্মলিখিত বাক্যগুলো তার ডায়রিতে লিখে যান-

"Dear God, I promise Iwill never waste my food no matter how bad it can taste and how full i may be. I pray that He will protect this little boy, guide and deliver him away from his misery. I pray that we will be more sensitive towards the world around us and not be blinded by our own selfish nature and interests. I hope this picture will always serve as a reminder to us that how fortunate we are and that we must never ever take things for granted."









আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ছবি যারা তুলেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম রশীদ তালুকদার, আনোয়ার হোসেন, মোজাম্মেল হোসেন, মনজুর আলম বেগ, মোহাম্মদ আলম, আফতাব আহমেদ প্রমুখ। বিদেশি ফটোগ্রাফারদের মধ্যে ছিলেন ডন ম্যাককালিন, রেইমন্ড ডিপারডন, মার্ক রিবান্ড, ম্যারি অ্যালেন মার্ক, রঘু রাই, মেরিলিন সিলভারস্টোন, কনটাক্ট প্রেসের ডেভিড বার্নেট, ইরানী ফটোগ্রাফার আব্বাস এবং সে সময়ে ঢাকায় দায়িত্ব পালনরত বিদেশী ফোটোসাংবাদিকরা।


ক্যামেরা নয়, আপনার কম্পোজিশনের উপর নির্ভর করে আপনার ছবি কতখানি ভালো হবে। ফটোগ্রাফীতে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য অনেক কিছুই শিখতে হয়, অনেক উপাদান সম্পর্কে সাহিত্যিকের মতো গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হয়। দ্রুততার সাথে ছবি না তুলে একটু সময় নিয়ে কয়েকবার ছবি তোললে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। শট নেওয়ার জন্য কোন সাবজেক্ট নির্বাচন করার পর ভালো ফটোর জন্য আরো কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। যেমন সাবজেক্টটির উপরে, নিচে, ডানে, বামে কতটুকু এরিয়া ফ্রেমে আসবে, কোন পাশকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রাখা হবে, সাবজেক্টটর অবস্থান ফ্রেমের কোন জায়গায় হবে ইত্যাদি। কম্পোজ ফটোগ্রফির খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।

যদি ফটো জার্নালিস্ট হতে চান তবে আপনাকে মেধাবী হতে হবে। মুহূর্তেই ফ্রেমিং বুঝে ছবি তুলে আনতে হবে। হয়ত আপনার হাতে সময় আছে ১ মিনিট এ সময়ের মধ্যেই কাঙ্খিত ছবিটি তুলে আনতে হবে। এজন্য প্রচুর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাই ফটো জার্নালিস্ট হতে চাইলে শুরুতেই দামি ক্যামেরা না নিয়ে সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে চর্চা শুরু করে দিন। আসুন আমরা ভালো ফটোগ্রাফার, ভালো শিল্পী, ভালো ইন্জিনিয়ার হওয়ার সাথে সাথে একটুখানি মানুষ হই।

বিখ্যাত এই ছবিটি তোলেন চারবার পুলিত্জার পুরস্কার বিজয়ী মহিলা ফটো গ্রাফার ক্যারল গিউজি। এই ছবিটি দুনিয়াজুড়ে যুদ্ধ ও দাঙ্গার ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার প্রতীক।ছবিটিতে দেখা যাওয়া বাচ্চাটির নাম অ্যাজিম শালা, যে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তার পরিবারের বাকি সদস্যরা কসোভোতে যুদ্ধ চলার সময় আশ্রয় নেয় আলবেনিয়ার সীমান্তবর্তী শহর কুকসের রিফিউজি ক্যাম্পে। পরে বাচ্চাটিকে এক ফ্রেঞ্চ নাগরিকের সহায়তায় তার বাবা-মা ফিরে পায়। কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে বাচ্চাটিকে তার বাবা-মার হাতে তুলে দেয়ার সময় ছবিটি তোলেন ক্যারল। যে ছবির জন্য তিনি ২০০০ সালে নিউজ ফটোগ্রাফি বিভাগে আবারও পুলিত্জার জেতেন।

"একজন লেখক সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করেন এবং সেই সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করেন। একজন ফটোগ্রাফারও সৌন্দর্য আবিষ্কার করেন কিন্ত ব্যাখ্যা করেন না।
ক্যামেরায় বন্দি করে ফেলার চেষ্ঠা করেন। বেশির ভাগ সময়ই তারা তা পারেন না। কারণ সৌন্দর্য কখনো বন্দি করা যায় না। ফটোগ্রাফাররা এই তথ্য জানেন না বলে ক্রমাগত ছবি তুলে তুলে এক সময় হতাশগ্রস্ত হয়ে পড়েন। একজন লেখক বা একজন কবি কখনো হতাশগ্রস্ত হন না, কারণ তারা কখনো সৌন্দর্য বন্দি করতে চান না। তাদের আগ্রহ ব্যাখ্যায়। "

রুমালী @ হুমায়ূন আহমেদ

কিছু কথা যা কখনো একজন ফোটোগ্রাফারকেকে বলা উচিত নয় ! বললে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে তার একটি বিশ্লেষণ -

১। বাহ ! আপনার ক্যামেরাটা তো দারুন ছবি তুলে...
প্রতিক্রিয়াঃ হ ! তুলবে না আবার !!! আমি তো ক্যামেরাডারে সব হাতে কলমে শিখায় দিসি ! এখন ঐ নিজে নিজে গিয়া ফটো তুইলা আনে...
২। ওয়াও ! ইউ হ্যাভ এ গ্রেট ক্যামেরা..
প্রতিক্রিয়াঃ ভাই ! থামেন !!! নান্নায় বিরানি খায়া ভাল লাগলে কি বাবুর্চিরে ডাইকা বলেন ‘ওয়াও ইউ হ্যাভ এ গ্রেট চুলা’ ?
৩। এহ মা ছবিতে আমার চেহারা কি বাজে আসছে !!! (এইটা মেয়েরা বেশী বলে)
প্রতিক্রিয়াঃ বাস্তবের অপু বিশ্বাস কি ক্যামেরায় শ্রী দেবী হয়ে যাবে নাকি ? এইটা ক্যামেরা আলাউদ্দিনের চেরাগ না সিস্টার...
৪। সামনে আমার অমুক নানাত ভাইয়ের তমুকের বিয়া ! আপনারে ইনভাইট দিলাম ! আসার সময় ক্যামেরাটা নিয়া আইসেন...
প্রতিক্রিয়াঃ বাঙ্গালির ফ্রি কাম করনের অভ্যাস আর গেলো না...
৫। আপনের ক্যামেরার megapixel কতো ?
প্রতিক্রিয়াঃ আইছে আমার আইনস্টাইন ! megapixelদেইখা ক্যামেরা বিচার করা আর জার্সির রঙ দেইখা টিম সাপোর্ট করা একই কথা...৬. ৬। ৬। আমার দাঁত উঁচা-উচা আসছে ! এগুলা photoshop দিয়ে ঠিক করে দিবা...
প্রতিক্রিয়াঃ মনটা চায় একটা থাবড়া দিয়া দাঁতগুলা permanently ঠিক কইরা দেই...
৭. ছবি তোলার জন্য আবার টাকা দিতে হবে কেন ?
প্রতিক্রিয়াঃ আপনের কি ধারনা আমি ক্যামেরা লেন্স-ফ্ল্যাশ এগুলা লাক্স সাবানের লগে ফ্রি পাইছি ?!?
৮। বেশীর ভাগ মেয়ে বলে থাকেন- আমার ছবি যেন সুন্দর হয়।
প্রতিক্রিয়াঃ সুন্দর হবে কিভাবে ? মুখে একগাদা আটা লাগিয়ে রাখলে।
৯। ছবিতে যেন আমাকে মোটা না লাগে ।
প্রতিক্রিয়াঃ ক্যামেরা কি যাদুর বাক্স ? মোটাকে চিকন বানিয়ে ফেলব । আজিব ।
১০।আপনি অনেক সুন্দর ছবি তুলেন।
প্রতিক্রিয়াঃ যে ছবি তুলে সে ভালো করেই জানে তার দৌড় কোন পর্যন্ত।

একজন ভাল ফটোগ্রাফার হতে হলে আপনাকে ধৈর্য্য থাকতে হবে। থাকতে হবে পড়ার ও সেই মতে চেষ্টা করার ইচ্ছা।ছবি তোলার সময় যদি ক্যামেরা কেঁপে যায়, তাহলে ছবিটি ব্লার হয়ে যেতে পারে। যদিও দিনের বেলায় প্রচুর আলোতে তুললে এটি নাও হতে পারে, তবে রাতের বেলায় এক চুল নড়া মানেও ছবির দফা রফা হয়ে যাওয়া!সূর্যের আলো যখন প্রখর তখন আপনার ক্যামেরার এ্যাপাচার ঠিক করুন f/16 এবং ক্যামেরার সাটার স্পিড কম পক্ষে 1/100 রাখুন। ছবি তোলার সময় সঠিক ISO নির্বাচন করাটা একটা গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। সাটার স্পিড কমিয়ে বাড়িয়ে বেশ সুন্দর ছবি পেতে পারেন।

বিয়েবাড়িতে ছবি তুলতে হলে ফ্ল্যাশ লাইট কম ব্যবহার করুন। বিয়েবাড়িতে সাজগোজের ক্ষেত্রে মেকআপের ব্যবহার বেশি হওয়ায় ফ্ল্যাশের আলো দিয়ে ছবি তুললে ছবি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্যামেরার সঙ্গে থাকা (বিল্ট-ইন) ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি তুললে ছবি ভালো পাওয়া যাবে।কম্পোজিশনের উপর নির্ভর করে আপনার ছবি কতখানি ভালো হবে।

আজ নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ফোটোগ্রাফী নিয়ে কিছু কথা বলব। গত তিন মাস ফোটোগ্রাফী নিয়ে কিছুই লিখিনি। প্রথমে একটা কথা বলে রাখি- আমি মনে করি, বই পড়ে-পড়ে ফোটোগ্রাফী শেখা সম্ভব না। যেমন আপনি বই পড়ে সাঁতার শিখতে পারবেন না। সাঁতার শেখার জন্য আপনাকে পানিতে নামতে হবে। আর ফোটোগ্রাফী শেখার জন্য ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে আপনাকে মাঠে ঘাটে নেমে পড়তে হবে। প্রচুর ছবি তুলতে হবে। অন্যের ছবি দেখতে হবে। কথায় বলে- 'গাইতে গাইতে গায়েন' ঠিক ছবি তুলতে তুলতে আপনি ভালো একজন ফোটোগ্রাফার হয়ে যাবেন।

আজ একজন পরিচিত ইমামের সাথে আমার দেখা মালিবাগ মোড়ে। এই ইমাম আমাকে ছোটবেলা থেকে চিনেন। অনেক বছর পর আজ দেখা। অনেক কথার পর ইমাম জানতে চাইলেন- আমি এখন কি করি । আমি বললাম- ফোটোগ্রাফী। ইমাম বলল- অটোগ্রাফী আবার কি জিনিস! আমি বললাম অটোগ্রাফী না ফোটোগ্রাফী। ছবি তুলি। ইমাম প্রচন্ড অবাক হয়ে বললেন- ছবি তোলা বন্ধ করো, এই কাজ হারাম। একদম জাহান্নামে যাবে। তারপর সে আরবী'তে কি-কি যেন বলল। আমি বললাম- আপনি যদি হজ্বে যেতে চান, তখন আপনার ছবি তুলতে হবে। পত্রিকাতে ছবি লাগে- আমরা যদি ছবি না তুলি- তাহলে কিভাবে হবে? ইমামের শেষ কথা হলো- অন্য কাজ করো, কিন্তু ছবি তোলা বাদ দিয়ে।

ইদানিং আমার কাছে অনেক ছেলে-পেলে আসে। তারা নতুন ক্যামেরা কিনেছে বা কিনবে। তারা অনেক রকম প্রশ্ন করে। আমি খুব বুঝদার মানূষের মত তাদের প্রশ্ন শুনি। তারা ভাবে আমি অনেক বড় ফোটোগ্রাফার। ফোটোগ্রাফী'র সব বিষয় খুব ভালো জানি। সত্যি কথা বলতে- ফোটোগ্রাফী'তে আমি এখনও শিশু। গত তিন বছরেও একটা অসাধারন ছবি তুলতে পারিনি। আমার অভিজ্ঞতা বলতে অল্প কিছুদিন যুগান্তর আর সমকাল পত্রিকাতে কাজ করেছি। এর আগে এক বছর অনলাইন পত্রিকাতে কাজ করেছি। পত্রিকাতে কাজ বাদ দিয়েছি- এখন সব মনোযোগ দিয়েছি ওয়েডিং ফোটোগ্রাফী'তে।যারা নতুন ক্যামেরা কিনে আমার কাছে আসে- সবার প্রথমে আমি তাদেরকে ক্যামেরা কিভাবে ধরতে হয়, সেটা শিখাই।

ইদানিং অনেক ছেলে পেলে ফোটোগ্রাফী নিয়ে খুব বেশী লাফা লাফি করছে! হেং করেংগা- তেং করেংগা টাইপ। আসলে এটা ওদের বয়সের দোষ। কিছুদিন এমন লাফালাফি করে একদম চুপ হয়ে যাবে। ক্যামেরার আগে অনেকে গিটার নিয়ে খুব লাফালাফি করত। ছোটবেলা সব বাচ্চা'রাই ক্রিকেট খেলে- কয়জন আর জাতীয় দলে চান্স পায়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই চলতে পারে না। তবে যারা ভালো কিছু করতে চায়- তাদের আমি খুব সম্মান করি। একদিন একছেলে এসে আমাকে বলল- ভাইয়া ক্যামেরা কিনব, কোন ক্যামেরাটা ভালো হবে? 'কোন ক্যামেরা কিনব'- খুবই বোকা'র মত একটা প্রশ্ন। একজন দক্ষ ফোটোগ্রাফারের জন্য ক্যামেরা কোনো সমস্যা না, সে মোবাইল দিয়ে দারুন ছবি তুলতে পারেন। দামী ক্যামেরা হলেই- যে আপনি ভালো ছবি তুলতে পারবেন- এই রকম ধারনা মন থেকে মুছে ফেলাই উত্তম ।

একদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তুলতে গেলাম। 'কনে' আমাকে বলল- ভাইয়া- এমন ভাবে ছবি তুলবেন, যেন আমাকে চিকন লাগে দেখতে। বিয়ের অনুষ্ঠান গুলোতে বেশীর ভাগ মেয়েই ছবি তোলার আগে বলে- ছবি যেন সুন্দর হয়। তখন আমি মনে মনে বলি- মুখে এক গাদা ময়দা মেখে সুন্দর হতে পারিস নাই- তাহলে ক্যামেরায় কি করে সুন্দর করি। একদিন এক বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলছি- এমন সময় এক আন্টি এসে ফিস ফিস করে বললেন, আমার ভাইয়ের মেয়ের কয়েকটা ছবি তুলে দাও তো। বিয়ের জন্য।ছবিটা যেন সুন্দর হয় । মজার ব্যাপার হলো- আন্টির ভাইয়ের মেয়ের বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দিয়েছিলাম। সেই ছবি বরপক্ষ দেখে খুব পছন্দ করে ফেলে। মেয়েটিকে বিয়ে করে কানাডা নিয়ে যায়।

একবার এক শিল্পপতি'র মেয়ের বিয়েতে ছবি তুতলছি- কম করে হলেও তিন হাজার মানুষ এসেছে- বিয়েতে। স্টেজে দুই পরিবারের সবাই উঠেছে। গ্রুপ ছবি তোলা হবে। বুড়ো দাদা, নানীকে কোলে করে স্টেজে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে একজন মন্ত্রী আছেন। সরকারী দলের মন্ত্রী। সবাই রেডী। ঠিক তখন আমার ক্যামেরাটি নষ্ট হয়ে গেল । কিছুতেই কাজ করছে না। স্টেজে সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আরেকবার- এক বিয়ের অনুষ্ঠানে আমার ছবি তোলার কথা। ছবি তুলতে সময় মতই গেলাম । কিন্তু হঠাত করে আমার প্রেশার উঠে গেল । গাড় ব্যাথা করতে লাগল। চোখে সব কিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম- সেই অনুষ্ঠানে- কথা ছিল তিন শো ছবি তুলে তাদের দিতে হবে- আমি তাদের মাত্র পনের টা ছবি তুলে দেই। তারা তো আমার সাথে অনেক রাগারাগি- আমাকে জেলে দিবে, আমি ফোটোগ্রাফী কি করে করি দেখে নিবে, ইত্যাদি ইত্যাদি... ।

ইদানিং ফোটোগ্রাফী'তে আমার অনেক নাম ডাক হয়েছে। আমার বাসার আশে পাশে সবাই আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। আমার মেয়ের জন্মদিন, আমার ছেলের বিয়ে, অমু্ক অনুষ্ঠান, অমুক উদ্ববোধন ইত্যাদি ইত্যাদি... । অনেক সময় মন না চাইলেও নানান অনুষ্ঠানে যেতে হয়। অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। বেশ কয়েকবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছি। নানান অনুষ্ঠানে ছবি তুলি, কিন্তু নিজের জন্য ছবি তোলা হয় না। ঠিক করেছি এবার থেকে তিন মাস পর-পর নিজের জন্য ছবি তুলব। ক্যামেরা নিয়ে বের হয়ে যাব- অচেনা কোনো গ্রামে। নিজের ইচ্ছা মত ছবি তুলব। কারো ইচ্ছায় ছবি তোলাতে অনেক যন্ত্রনা। আমি সবার আগে একজন ফোটোগ্রাফার কিভাবে তার ক্যামেরা ধরেন- তা খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করি। সত্যি কথা বলতে- ইদানিংকার অনেক ছেলে পিলে ঠিক ভাবে ক্যামেরাই ধরতে জানে না।

যারা ভালো ছবি তুলতে চান- তাদের জন্যন কিছু টিপস দিলাম। ছবি তোলাটা শুধুমাত্র ক্লিক করলাম আর ছবি উঠল এমন কিছু না এটা মনে হয় আর বলার দরকার নাই। মনে তীব্র ইচ্ছা রাখুন- আমি ভালো ছবি, তুলতে চাই।মন থেকে হিংসা বিদ্বেষ বাদ দিন। লোভী হবেন না। হাসি খুশি থাকুন। দিনের বেলায় manual setting বুঝতে সমস্যা হলে বা সময় কম পেলে camera এর P option টা ব্যবহার করুন ।আলো যাতে সবার চেহারায় একইভাবে পরে তার প্রতি লক্ষ রাখতে পারেন। বিশেষ করে গ্রুপ ছবি তোলার সময়- আলোর দিকে বেশী লক্ষ্য রাখবেন। প্রতিদিন প্রচুর ছবি তুলতে থাকুন। ছবি তুলতে তুলতে একদিন ভাল ফটোগ্রাফার হয়ে যাবেন । ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন জায়গায় ছবিতুলতে বেশ কিছু ঝামেলায় পড়ে। অনেকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে,ছবি তোলা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হয়নি এমন ফটোগ্রাফার নেই বললেই চলে।
মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার সময় মোবাইলটিকে কোন প্রকার নাড়াচাড়া করবেন না তাহলে ছবি ভালো আসবেনা ।

সবাই-ই ভালো ছবি তুলতে চান। দুর্দান্ত সব ছবি তুলে সবাইকে অবাক করে দিতে চান। মুগ্ধ করে দিতে চান। কিন্তু হয় না। আপনি মনে মনে- নিজের উপর রাগ করেন। কেন পারছি না! ফেসবুকে অনেককে দেখেন দারুন দারুন ছবি পোষ্ট করতে আর সেইসব ছবিতে অনেক কমেন্ট আর লাইক। ...হতাশ হবেন না। আমি আছি, কি করতে হবে- তা আমি বলে দিচ্ছি। আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা আছে। আমার কথা মন দিয়ে শুনুন। যদিও আমি পাচ বছর ধরে ফোটোগ্রাফী করছি কিন্তু আজও তেমন একটা ভালো ছবি তুলতে পারিনি গর্ব করার মতন। তবে আমি আশাবাদী মানুষ।

ফেসবুকে অনেক গ্রুপ আর পেজ মাঝে মাঝে বলে টাকার বিনিময়ে ফোটোগ্রাফী নিয়ে অমুক ক্লাশ, অমুক ফোটোওয়াক করার আহবান জানায়। এগুলো করে খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না। শুধু শুধু টাকা টাই নষ্ট। আর একটা বাস্তব সত্য কথা বলি- অনেক ফোটোগ্রাফী গ্রুপ বা পেজ এক্সজিবেশন করে। ধরুন, আপনার তোলা দুই চারটা খুব ভালো ছবি আছে- আপনার দুই একটা ছবি এক্সজিবিশনে গেল ( অবশ্যই একটা বিশেষ কারণ আছে)। এক্সজিবিশনের জন্য কখনও তাড়াহুড়া করবেন না। আগে বেশ কিছু ভালো ছবি জমান। আপনার তোলা ভালো ছবি গুলো আপনার আত্মবিশ্বাস হাজার গুন বাড়িয়ে দিবে। খুব চেষ্টা করবেন ছবিতে- ফোটোশপ না করতে। খারাপ ছবি গুলো এডিট করে সুন্দর করার চেষ্টা করা আমার পছন্দ নয়। ছবি এডিট করবে পত্রিকাওয়ালারা।

গুছিয়ে লিখতে আমি পারি না। এটা আমার ব্যর্থতা। দয়া করে আপনারা আমার লেখাটা এবং আমার অপূর্ণা গুলো আপনারা আপনাদের গুন দিয়ে বুঝে নিবেন। যাই হোক, হাজার হাজার ছবি তোলেন, ফেসবুকে দেন- এতে কোনো লাভ নাই। ফেসবুকে ছবি দিলে, লাইক আর কমেন্ট পেলে- পেটের ক্ষুধা কমে যাবে না। কিভাবে ছবি তুলে টাকা আয় করবেন সেই চিন্তা করুন। টাকা পেলে জন্মদিন, বিয়ে, সেমিনার সব অনুষ্ঠানের ছবি তুলে দিবেন। টাকা না দিলে কারো একটা ছবি তুলে দিবেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কঠোর হতে হবে। এই কঠোরতাই আপনাকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে একদিন। অন্যের কাছে সস্তা হবেন না। অন্যের মিষ্টি কথায় ভুলবেন না। মুরুব্বিরা বলেছেন- দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথা। কোনো পত্রিকাতে ফোটোগ্রাফীর কাজ করে বলেই তাকে তেল দিতে যাবেন না। তেল দিয়ে আপনি লাভবান হবেন না। উপরে উপরে তারা হাসি মুখে কথা বলবে আপনার সাথে কিন্তু তাদের ভেতরের মুখোশটা দেখলে আপনি বমি করে দিবেন।

তথাকথিত বড় ভাইদের কাছ থেকে দূরে থাকুন। পাকনা বড় ভাই গুলো আপনার মাথা আরও গুলিয়ে দিবে। ফোটোগ্রাফী নিয়ে অনেক মানূষের সাথে কথা বলবেন- একজন এক-এক রকম কথা বলবে, এক-এক রকম করে ব্যাখ্যা করবে। তারা খুব সচেতনভাবে আপনার মাথা গুলিয়ে দিবে। শুধু একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখবেন- বই পড়ে কখনও কেউ সাতার শিখতে পারে না। ঠিক তেমনি আপনি বই পড়ে ফোটোগ্রাফী নিয়ে কিছু শিখতে পারবেন না। তবে প্রাথমিক একটা ধারনা পেতে পারেন। কাজেই প্রতিদিন কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন, প্রচুর ছবি তুলুন। ছবি গুলো কম্পিউটারে নামিয়ে মন দিয়ে দেখুন। দোষ ত্রুটি গুলো খুজে বের করুন। ফোটোগ্রাফী বিষয় নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে, কোনো বড় ভাইয়ের কাছে না গিয়ে- নেটে বসুন। এ ব্যাপারে নেট আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু।

মনে তীব্র বিশ্বাস রাখুন- আমি ভালো ছবি তুলবো। সময় যতই লাগুক। কবি বলেছে- দেরী হোক/ যায়নি সময়। প্রতিদিন ফ্লিকারে প্রচুর ছবি দেখুন। খুব মন দিয়ে দেখুন। ফ্রেমিং লক্ষ্য করুন। কম্পোজিশন লক্ষ্য করুন। ছবিতে আলোর ব্যবহার লক্ষ্য করুন। নতুন নতুন ছবি তোলার বিষয় খুজে বের করুন। কবি বলেছেন, যেখানে দেখিবে ছাই/উড়াইয়া দেখ তাই পাইলেও পাইতে পারো... । পথে ঘাটে, ঘরে বাইরে ছবি তোলার বিষয়ের অভাব নেই। কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি বা সিলেট যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। একজন ফোটোগ্রাফারের চোখ হবে চিলের মতন, মিসির আলীর মতন। রাতে ঘুমানোর আগে মনে মনে ভাবুন- আমাকে সুন্দর করে ছবি তুলতে হবে। এমন সব সুন্দর ছবি তুলবো- যে ছবি গুলো আমাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। নেট থেকে আপনি বিখ্যাত ফোটোগ্রাফাদের জীবনী পড়ুন। তাদের তোলা ভালো ছবি গুলোর রহস্য জানুন।

সারটার স্পীড, এপেচার, আইএসও, ফোকাস এবং আলো সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারনা থাকতে হবে। দিনের বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন রকম সারটার স্পীড, এপেচার, আইএসও দিয়ে প্রচুর ছবি তুলুন। তাহলে আপনি ধারনা পেয়ে যাবেন দিনের কোন সময়ে কোন ছবি- সারটার স্পীড, এপেচার, আইএসও এবংকত দিতে হবে। তাছাড়া প্রচুর ছবি তুলতে-তুলতে ফ্রেমিং আমার হাতে চলে আসবে। তখন কোনো ছবির সাবজেক্ট পেলেই- আপনি অটোমেটিক বুঝতে পারবেন- ছবিটা কিভাবে তুলতে হবে। কাজেই আমি মনে করি, ভালো ছবি তোলার প্রথম শর্ত হলো- প্রচুর ছবি তোলা এবং প্রচুর ভালো ভালো ছবি দেখা। বাদ দেন বড় ভাই ধরা। তাদের পেছন-পেছন ঘুরে কোনো লাভ নাই। টাকা দিয়ে ক্লাশ করেও, ফোটোওয়াক করেও কোনো লাভ নাই। কেউ কাউকে মুখে বলে বলে ভালো ছবি তোলাতে পারে না। কথায় বলে, আপনার ঢোল আপনাকেই বাজাতে হবে।

ছবি তোলার সময় মাথায় নানান চিন্তা, অশান্তি এবং ক্ষুধা থাকলে ভালো ছবি তোলা সম্ভব নয়। এমনি কি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত থাকলে ভালো ছবি তোলা সম্ভব নয়। হাসি খুশি মন নিয়ে ছবি তুলতে হবে। তাহলেই ভালো ছবি পাওয়া যাবে। একজন ফোটোগ্রাফারকে সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তাকে হতে হবে কোমল এবং সাহসী। বিশেষ করে মুখে থাকতে হবেসব সময় হাসি। কুটিলতায় ভরা মানুষ ভালো ছবি তুলতে পারে না। ভালো ছবি তোলার জন্য সর্বোপরি আপনাকে সহজ সরল ভালো মানুষ হতে হবে। একজন ভালো মানুষই পারে ভালো ছবি তুলতে। কথায় বলে, যে খাবার দেখতে সুন্দর, সে খাবার খেতেও মজা। পৃথিবীর বিখ্যাত ফোটোগ্রাফাররা কখনও ফোটোগ্রাফী নিয়ে কোনো ক্লাশ করেন নি। কোনো সমস্যায় পড়ে বড় ভাইদের কাছে যান নি। তারা নিজের বুদ্ধি, স্বচ্ছতা এবং সরলতা দিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন।

আড় চোখে তাকাও। এটাই চোখকে পরিণত করার উপায়, তাকাও আবারো। এবার খুটিয়ে দেখার মতো করে। এমনভাবে দেখো যেন এর ওপরই তোমার জীবন নির্ভর করছে। কারণ এখানে তুমি দীর্ঘক্ষণ থাকছো না।
- ওয়াকার ইভানস (১৯০৩-১৯৭৫)
আমেরিকান ফটোগ্রাফার

আজকে আমি আলোচনা করবো স্ট্রীট ফোটোগ্রাফী নিয়ে। 'Alex Webb' একজন স্ট্রিট ফোটোগ্রাফার। তার স্ট্রিট ফোটোগ্রাফী গুলো আমার কাছে দারুন লাগে। ( নেটে সার্চ দিয়ে তার স্ট্রিট ফোটোগ্রাফী গুলো অবশ্যই দেখে নিবেন।) 'Alex Webb' এর জন্ম ১৯৫২ সালে। ফোটোগ্রাফীর মধ্যে সবচেয়ে আনন্দময় বিষয় হচ্ছে- স্ট্রিট ফোটোগ্রাফী করা, বলেন-'Alex Webb' । তিনি আরও বলেন- স্ট্রিট ফোটোগ্রাফী দেখলে- একই সাথে আনন্দ হবে, নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে গল্প তৈরি হবে এমনকি চোখে পানি চলে আসবে। একেকটা ছবি, একেকটা ইতিহাস ।

আমি মনে করি, একজন আলোকচিত্রীর সব ধরনের ছবি তোলার যোগ্যতা থাকতে হয়। স্ট্রিট ফোটোগ্রাফীর মধ্যে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। একজন স্ট্রিট ফোটোগ্রাফারকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়। স্ট্রিট ফোটোগ্রাফারের এক-একটা ছবি হতে হয়- এক-একটা গল্প, জীবনের গল্প। একজন স্ট্রিট ফোটোগ্রাফার ফুটপাতে শুয়ে থাকা ছোট্র শিশু অথবা পার্কে বসে থাকা বুড়োর ছবি তার ক্যামেরায় ধারন করবে- এবং অন্যরা যখন এই ছবি দেখবে- তখন তারা এই ছবির মধ্যে একটা জীবনের গল্প খুঁজে পাবে। এখানেই স্ট্রিট ফোটোগ্রাফারের কারসাজি।

ব্রেসোঁর এক বিখ্যাত উক্তি – “To take photographs means to recognize – simultaneously and within a fraction of a second – both the fact itself and the rigorous organization of visually perceived forms that give it meaning. It is putting one’s head, one’s eye and one’s heart on the same axis”। ১৯৪৮ সালে গান্ধীর শেষকৃত্যের ছবি তুলে পুরো পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দেন ব্রেসোঁ।

স্ট্রিট ফোটোগ্রাফাররা ভালো ফোটোসাংবাদিক হতে পারে। তাদের মুহূর্তের মধ্যেই ছবি ক্যামেরায় ধারন করতে হয়। ধরুন, কোথাও আগুন লেগেছে, বিল্ডিং ধ্বসে পড়েছে অথবা কোথাও মানব বন্ধন বা অনশন এর ছবি, এমন কি পুলিশের সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ। এ ধরনের ছবি তুলতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। একজন ফোটোগ্রাফার তার ইচ্ছে মত ছবি সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজনে ছবি সাদা কালো করতে পারেন। কোন ছবি রঙ্গিন থাকবে, কোন ছবি সাদা-কালো রাখবেন এই রকম দ্বিধা থাকলে আপনি ভারতের রঘু রায় ভোপালের ছবি গুলো দেখতে পাবেন।

গ্যারি উইনোগ্র্যান্ড একজন অসাধারণ স্টিট ফোটোগ্রাফার। তিনি ৩০ বছরে প্রায় এক মিলিয়ন ছবি তুলেছেন। তার সময় মেমরি ছিল না। তার অনেক ছবি এখনও ডেভেলপ করা হয়নি। তার মানে এই না যে, আপনাকে ৩০ মিলিওয়ন ছবি তুলতে হবে। আমার মতে, প্রতিটি ছবির থাকা উচিত একটা আলাদা গল্প। গ্যারি উইনোগ্র্যান্ড এর প্রতিটা ছবি যেন গল্প।

বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি এগিয়েছে অনেক দূর। ফটোগ্রাফ যেকোনো রিপোর্টের অক্ষরগুলোকে নিয়ে যায় আরেক মাত্রায়। রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ে যায় অনেক যখন পাঠক একটা ছবিও দেখে ভাষ্যের সাথে । কে না জানে; “Seeing is believing”। বিশ বছর আগে ডার্ক রুম ছাড়া যেখানে কোন সংবাদপত্রের অফিস কল্পনাই করা যেত না, আজ সেখানে বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও ডার্ক রুম নেই ।

ইচ্ছা আছে সামনের দিন গুলোতে আলোচনা করবো- এভিয়েশন ফটোগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল ফটোগ্রাফি, ক্যানডিড ফটোগ্রাফি, ক্লাউডস্কেপ ফটোগ্রাফি, ফ্যাশন ফটোগ্রাফি, ফায়ার ফটোগ্রাফি, ফুড ফটোগ্রাফি, ফরেনসিক ফটোগ্রাফি, ফটোজার্নালিজম, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, ট্রাভেল ফটোগ্রাফি, আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি এবং ভার্নাকুলার ফটোগ্রাফি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।

একজন দক্ষ আলোকচিত্রী হতে চাইলে- কম পক্ষে পাঁচ লাখ ছবি তোলার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সময়, তীব্র ইচ্ছা এবং এক আকাশ ভালোবাসা থাকতে হবে ভালো ফোটোগ্রাফীর জন্য। অতি তুচ্ছ জিনিসও দেখার চোখ থাকতে হবে। অন্য দশ জনের চেয়ে আপনার দেখার চোখ অবশ্যই আলাদা হতে হবে।
দীর্ঘদিন ছবি তোলার ফলে, ক্যামেরার সব বিষয় অটোমেটিক আপনার হাতে চলে আসবে। নিয়মিত বিখ্যাত ফোটোগ্রাফারদের ছবি দেখুন। তাতে আপনার জানার পরিধি বাড়বে এবং নতুন নতুন আইডিয়া পেয়ে যাবেন।

বেশীর ভাগ মানূষ লেখা পড়ার চেয়ে ছবি দেখতে বেশী পছন্দ করেন। এজন্য সংবাদপত্রে প্রচুর ছবি ব্যবহার করা হয়। বই পড়ে যেমন অনেক কিছু শেখা যায়- তেমনি ছবি দেখেও অনেক কিছু শেখা যায়। ছবি এমন ভাবে তোলা উচিত- যেন ফোটোশপ না করতে হয়। একজন চিত্রকর যেমন ছবি আঁকেন, ফটোগ্রাফারও তাঁর ছবিতে আবেগ, জীবনবোধ কিংবা অনুভতি বন্দি করেন।

আজকে আমি আলোচনা করতে চাই- 'ল্যান্ডস্কেপ' নিয়ে। অনেকেই ল্যান্ডস্কেপ ফোটোগ্রাফী ভালোবাসেন। সহজ ভাষায়- বিশাল মাঠ, নদী, প্রকৃতি অথবা আকাশ ইত্যাদি ফোটোগ্রাফীকেই ল্যান্ডস্কেপ বলা হয়। ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার, তাদের কাজ শুধু বিভিন্ন স্থানকে দর্শনীয় স্থানের মতো করে ছবি তোলা।
ল্যান্ডস্কেপ ছবি তোলার সময় হলো সকাল এবং বিকাল। সকালে ও বিকালে সূর্যের আলো কিছুটা হেলে পড়ার কারণে আলো-ছায়ার পার্থক্য অনেক ভালভাবে ধরা যায়। রুল অফ থার্ড মেনেই সব সময় ছবি তোলা উচিত। ল্যান্ডস্কেপ ছবির জন্য আপনি যেতে পারেন- কক্সবাজার, বান্দারবান অথবা সুন্দরবন। আরাম করে ছবি তোলার জন্য ট্রাইপড ব্যবহার করতে পারেন। এপেচার কম এবং শাটার স্পীড বেশী রাখাই ভালো।

''ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি'' ম্যাগাজিন নিয়মিত সংগ্রহ করে পড়ুন। ভালো ফটোগ্রাফির কোনো গোপন ফর্মুলা নেই।ফ্রান্সের বিখ্যাত ফটোগ্রাফার রবার্ট দসিনেসুর মতে, ‘যদি আমি জানতাম কিভাবে একটি ভালো ছবি তুলতে হয়, তাহলে আমি সবসময়ই সেভাবে তুলতাম।’ আমার কাছে সেই ছবিটিই গুরুত্বপূর্ণ যাতে আমি আমার ভাষা খুঁজে পাই।আর ভালো ছবি সেটাই যা আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকবে।

্যারা ল্যান্সস্কেপ ভালোবাসেন তারা এনসেল এডামস এর তোলা ছবি গুলো দেখতে পারেন। এন্সেল এডামসের জন্ম ১৯০২ সালে সানফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়ায়। এনসেল এডামস কোন দৃশ্যের ছবি নেবার আগে সেটাকে মনের চোখে অন্যভাবে দেখতেন। ক্যামেরা দিয়ে চেষ্টা করতেন মনের চোখোড়ি দেখা দৃশ্যটার কাছাকাছি যেতে। এন্সেল এডামস মারা যান ১৯৮৪ সালে।
আগে চোখ এবং মন দিয়ে দেখ। এর পর লেন্সের ভেতর দিয়ে দেখ। এন্সেল এডামসের বিখ্যাত প্রিভিজুয়ালিজেশন এর থিওরী। সৃষ্টিশীল কাজের জন্যই তিনি আজ পৃতিবীতে বিখ্যাত একজন ফটোগ্রাফার। অবাক লাগে ডিজিটাল ক্যামরা ছাড়া তিনি এত সুন্দর ছবি তুললেন কি ভাবে? কতটা অভিজ্ঞ হলে এ ধরনের কাজ করা যায় তার ছবি গুলো দেখেই বুঝা যায়। সাদা কালো ছবি যে কত সুন্দর হতে পারে তা বুঝার জন্য এনসেল এডামসের ছবি দেখুন।

ইচ্ছা ছিল ল্যান্ডস্কেপ নিয়ে অনেক আলোচনা করবো কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখছি আমি কিছুই জানি না।

ক্যামেরা মোডগুলো আপনাকে দেখাবে ঠিক কি কি ভাবে আপনি ক্যামেরায় ছবি তুলতে পারেন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে ফোকাস একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পারফেক্ট ফোকাস করতে পারলে- ছবি সুন্দর হয়। ঝামেলা যেন না হয় এজন্য আজকাল অনেকেই অটো-ফোকাস ব্যবহার করেন। তবে অল্প আলোতে (বিশেষ করে রাতে অটো-ফোকাস না ব্যবহার করাই ভালো।) ক্যামেরা আপনার পছন্দ অপছন্দ বুঝবে না। তাই আপনিই ঠিক করুন কোনটা ফোকাস করবেন। নিয়মিত চর্চা থাকলে যে কেউ ভালো ছবি তুলতে পারবে। ডিজিটাল ক্যামেরা বা মোবাইল এর ক্যামেরায় অটো-ফোকাস থাকায়, কিভাবে ফোকাস করবো, কোথায় ফোকাস করবো- এই নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারন নেই।

সিঙ্গল-লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরায় (এসএলআর) ভিউফাইন্ডারে একাধিক অটোফোকাস পয়েন্ট থাকে। (ম্যাক্রো লেন্স বলে একধরনের লেন্স পাওয়া যায়। এর বৈশিষ্ট হচ্ছে খুব কাছে থেকে ফোকাস করা যায়, একেবারে ফুলের সাথে লাগিয়ে। একটি মাছির ছবি উঠানোর সময় তার মাথা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, অথচ সামান্য দুরে তার শরীর ঝাপসা হয়ে গেছে। ম্যাক্রো লেন্স নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো।) প্রথমে ভেবে নিন আপনার সাবজেক্ট কি। ফোকাস কোথায় করবেন। পেছনটা কি ব্লার করবেন নাকি পেছনটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। নাকি পুরো ছবিটাকেই ফোকাস করবেন বুঝে নিন। যদি লেন্সে কোন দাগ বা আঁচড় থাকে তবে তা ক্যামেরা ছবির ফোকাসের উপর প্রভাব ফেলবে।

সামনে ও পেছনে অবস্থিত দুটি সাবজেক্টের ছবি তুললে উভয়কেই ফোকাস করা অসম্ভব। একটি ফোকাস হবে, আরেকটি আউট অফ ফোকাস। দুটি সাবজেক্টকে একই সাথে মোটামুটি ফোকাস করতে দুজনের মধ্যকার দূরত্বের মাঝামাঝি ফোকাস করতে হবে।

ক্যামেরার এই ‘ফোকাস’ এর ব্যবহার জীবনের ক্ষেত্রেও বহুল ব্যবহৃত। জীবনের লক্ষ্য কি হবে, কি করতে চাই, কি হতে চাই – ইত্যাদি মিলিয়ে জীবনের ফোকাস। একটি প্রেম করা, কিংবা একটি সরকারী চাকরী পাওয়া জীবনের ফোকাস হতে পারে না। তেমনি একটি প্রেম করা, একটি সরকারী চাকরি পাওয়া, একটি বাড়ি করা, একটি কোম্পানির ডিরেক্টর হওয়া – ইত্যাদিও ফোকাস হতে পারে না। এর সাথে বরং অ্যামেচার ফিল্মমেকারদের ডিএসএলআর ক্যামেরায় ইচ্ছেমত ফোকাস-ব্লার করার সাথে মিলে যায়। একটু ভেবে নেয়া উচিত – সেট ইয়োর ফোকাস, দেন রান ইয়োর ফিল্ম। আপনি ক্যামেরার কথা শুনবেন না, ক্যামেরা যেন আপনার কথা মতো চলে, এজন্য নিজের মনের মত করে ক্যামেরার সব অপশন সেটিং করে নেন।

ফোটোগ্রাফী একটি মহান পেশা। যদিও বেশীর ভাগ মানুষ একজন ফোটোগ্রাফারের প্রাপ্য সম্মান দিতে কুন্ঠিত বোধ করেন। এত সংকুচিত হবে কেন মানুষের মন? সাধারন মানূষের ধারনা নেই- একজন ফোটোগ্রাফারকে একটা ছবি তোলার সময় কত দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। যেমন- এক্সপোজার, কম্পোজিশন, শাটার স্পীড, আইএসও, অ্যাপারচার, ফোকাস ইত্যাদি। একজন ফটোগ্রাফার তার ক্যামেরা ব্যবহার করে যথেষ্ট পরিশ্রম করেই ছবি তোলেন। তার ন্যায্য মূল্য তাকে দেয়া উচিৎ, তিনি সম্পর্কে যিনিই হোন না কেন।

ফ্রেমের ভেতর সুন্দর করে ছবি সাজানোই হচ্ছে কম্পোজিশন। হুম, আজ আলোচনা করবো কম্পোজিশন নিয়ে। আমি খুব চেষ্টা সহজ সরল ভাবে লিখতে, যেন কারো বুঝতে সমস্যা না হয়। কঠিন ভাবে লিখে, শুধু শুধু আমি পন্ডিত সাজতে চাই না। আমার লেখা যদি কেউওই বুঝতেই না পারলো- তাহলে লিখে লাভ কি? ফোটোগ্রাফী নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের অনেক আগ্রহ। আমার সস্তা লেখা গুলোও অনেকে আগেহ নিয়ে পড়েন। আমার কাছে এসে অনেকেই বলেন, ভালো ছবি কিভাবে তুলবো? আমি তাদের কে বলি- অস্থির হবেন না, অনেক বেশী ধৈয্যশীল হোন। কম্পোজিশন মজাদার করতে হলে আগে আপনাকে কম্পোজিশনের বেসিক কিছু রুল জানতে হবে।

সব কিছু মিলিয়ে আপনি যদি একটা ভালো ছবি তুলতে পারেন- তাহলে মানুষ আপনার তোলা ছবি মুগ্ধ হয়ে দেখবে, আলোচনা করবে। কাজেই ভালো ছবি তোলার জন্য আপনার ফোটোগ্রাফীর সব বিষয় জানতে হবে, বুঝতে হবে, শুধু বড় ভাইদের পেছনে ঘুরলে হবে না। কম্পোজিশন ভালো না হলে, আপনার তোলা ছবির মান অনেকখানি কমে যাবে। ফ্রেম থেকে ছবির সাথে সামঞ্জস্য নেই এমন কিছু বাদ দিলেই আপনার ছবির মান অনেকখানি বেড়ে যাবে। সহজ ভাবে বলা যায়- একটা সুন্দর ছবির প্রান হলো কম্পোজিশন। যদি ছবি তোলার সময় দেখেন ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো না, তাহলে আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করে দিতে পারেন।

ভালো ছবি বলতে কি বুঝায়? আপনি অনেক ছবি তুলেছেন, এর মধ্যে কিছু ছবি আপনার ভালো লেগে যাবে। আপনার ভালো লাগা ছবি গুলোই ভালো ছবি। একটা নিখুঁত ভালো ছবি তুলতে পারলে- সবার আগে তা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। কিছু নিয়ম মেনে চললেই- ভালো ছবি তোলা সম্ভব। দর্শকদের আপনি কি দেখাতে চান- সেটা মাথায় রেখেই ছবি তুলুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্যামেরায় বন্ধী না করাই ভালো। ফ্রেমের চারপাশে যদি অপ্রয়োজনীয় কিছু দেখা যায়- তাতে অবশ্যই আপনার ছবির সৌন্দর্য কমে যাবে। সব সময় একই ভঙ্গিতে ছবি না তুলে নানান এঙ্গেলে ছবি তোলা উচিত। নতুন কিছু সৃষ্টি করার মনোভাব গড়ে তুলুন এবং তা উপভোগ করুন।

মানুষের চোখ দু'টা কিন্তু ক্যামেরার চোখ একটি। দুই চোখ দিয়ে আমরা যতটা দেখি, এক চোখ দিয়ে ততটা দেখা যাবে না। (যদিও আপনি মনের চোখ দিয়ে অনেক বেশী দেখতে পাবেন।) দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সবার এক রকম নয়। ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রাখার পর, যা দেখবেন সেটাই আপনার ছবিতে থেকে যাবে, কাজেই খুব ভালো করে দেখুন, মন দিয়ে দেখুন, খুটিয়ে খুটিয়ে দেখুন। ফ্রেমের চারপাশ ভালো করে দেখুন- সব ঠিক-ঠাক আছে কিনা। যদি ফোটোগ্রাফীর নিয়ম মানতে আপনার ভালো না লাগে, তাহলে আপনি আপনার মতন করে ছবি তুলুন, কারন শিল্প এবং শৈল্পিকতা কোনো নিয়মের ধার-ধারে না। আপনি সুন্দর ছবি তোলার জন্য নানান রকম গবেষনা করুন নিয়মিত। ছবি তোলা নির্ভর করে আপনার চিন্তা শক্তির গভীরতার ওপর।

আপনার ছবির সাবজেক্টকে যে সবসময় ফ্রেমের মাঝখানেই রাখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ভিউ ফাইন্ডারে চোখ লাগিয়ে সঠিক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে, একটা ভালো ছবির জন্য। নো অস্থির। একটা ছবিতে যদি দুইটা বা তিনটা বিষয় থাকে তাহলে ছবিত গ্রহনযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। অ্যাঙ্গেল অব ভিউ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন। মাটিতে শুয়ে পড়ুন, গাছে উঠে পড়ুন। বুক পর্যন্ত পানিতে নেমে যান, টাকাপয়সা থাকলে হেলিকপ্টারে উঠে বার্ডস আই ভিউ ও তোলার চেষ্টা করুন! পরিশ্রম করুন, প্রচুর পরিশ্রম করুন। পরিশ্রম করলেই না আপনি ভাল ছবি পাবেন।

রাস্তায় বেরোলেই দেখবেন, কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে ছবি তুলতে তুলতে হেঁটে বেড়াচ্ছে ছেলে-মেয়ের দল। লাইট, ফ্ল্যাশ, ফ্রেমিং, কম্পোজিশন কিছুই হয়তো তারা জানে না। ছবি তোলাতেই তাদের আনন্দ। কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে অনেকেই তো ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু বহু আকাক্সিক্ষত একটা মুহূর্তকে খুব অল্প কজনই পারে হাতের ক্যামেরায় বন্দি করতে। ক্যামেরার মুন্সিয়ানা দেখিয়ে কোনো মুহূর্তকে বন্দি করার নামই ফটোগ্রাফি।

আমি অনেক প্রাউড ফিল করি, আমি একজন ফোটোগ্রাফার কারন আমার একটা ক্লিক আপনার মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট, যেটা টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না।

ক্যামেরায় কতখানি আলো প্রবেশ করবে সেটা নির্ভর করে এপাচার এর উপর। এপেচার বাড়িয়ে কমিয়ে অনেক চমক দেখানো যায়। অনেকেই চান, ছবির নির্দিষ্ট কিছু অংশ ব্লার (ঝাপসা) করতে, বাকি অংশ স্পষ্ট রাখতে। ফটোশপে এটা সহজেই করা যায়। ক্যামেরা যেই বস্তু বা বিন্দুর উপর ফোকাস করে, সেটি পরিস্কার ভাবে ছবিতে আসে, আর যেটার উপর ফোকাস করতে পারে না, সেটা ‘আউট অব ফোকাস’ বা ঘোলা হয়ে যায়। এই ঘোলা হওয়ার ব্যপারটি এসএলআর ক্যামেরায় খুব তীব্র ভাবে ধরা পড়ে।

যত জুম করে ছবি তোলা হবে, তত সামনে পিছনের বিষয় ঘোলা হয়ে যাবে। শাটার স্পিড কমিয়ে বাড়িয়ে বেশ সুন্দর ছবি পেতে পারেন। প্রতিটা লেন্সর একটা নিদৃষ্ট সর্বনিম্ন দূরত্ব থাকে যার থেকে কাছের বস্তু আর ফোকাস করতে পারে না।

ছবি তোলার পর- ছবিটার দিকে তাকাও .... মনোযোগ আকর্ষনকারী কোন জিনিস কি খুজে পাও? তার মানে তোমার ছবিতে সেন্টার অব ইন্টারেষ্ট নাই। তাই দর্শক বিভ্রান্ত হইবে।

ক্যামেরার প্রতি আতিরিক্ত মায়া দেখান যারা তাদের জন্য। এ শ্রেণীকে বড় আঘাত দিয়েছেন ডন ম্যাককালিন। তিনি বলেছেন -
আমি একটা টুথব্রাশকে যেভাবে ব্যবহার করি, সেভাবেই ব্যবহার করি ক্যামেরাকে। এটা কেবল আমার কাজটি করে দেয়।

আইএসও (ISO) বলতে বুজায় ক্যামেরার ফিল্ম বা সেনসর আলোর প্রতি কততা সংবেদনশীল! যেখানে আলো বেশী আছে, যেমন বিয়ে বাড়ি, ISO রাখতে পারেন ১০০ বা ২০০। এবং অনেক অন্ধকার হলে ISO রাখতে পারেন ৮০০ অথবা ১৬০০।

ইনডিয়ান ফটোগ্রাফার রঘুবীর সিং খুব ভালো একটি কথা বলেছেন ফটোগ্রাফির বিগিনার এবং হতাশ ফটোগ্রাফারদের জন্য। তিনি যে কথাটি বলেছেন তার বাংলা এরকম -
ফটোগ্রাফি অনেকটা খনি এলাকায় সোনা খোঁজার মতো। বার বার আপনি খুঁজতে থাকবেন এবং কখনো হয়তো ছোট এক টুকরা পেতে পারেন।

১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহনকারী আলোকচিত্র শিল্পী আনোয়ার হোসেন ১৯৯১ সালে বেলজিয়ামে অনুষ্ঠিত এক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক লাভ করেন। এই পদক নিয়ে ৪৯ বছর বয়স্ক আনোয়ার হোসেনর সর্বমোট আন্তর্জাতিক পুরস্কারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১টি। বাংলাদেশী আলোকচিত্র শিল্পীর জন্য এটি অবশ্যই সাফল্যের রেকর্ড। এই আলোকচিত্রী যে শহর এবং সমাজে জন্মেছিলেন- সেই শহর এবং সমাজে ফোটোগ্রাফী চর্চা খুব সহজ ছিল না।

১৮৪০ সালের মার্চ মাসে উপমহাদেশের বোম্বে শহরে প্রথম ক্যামেরা আনা হয়। ড. এফ জে মৌয়ট জোসিয়াকে উপমহাদেশে আলোকচিত্রের জনক বলা হয়। ফোটোগ্রাফীখুব ব্যয় সাপেক্ষ ও সৌখিন বিধায় সেই সময় শুধু সমাট্র, লর্ড, জমিদার, ধনী এবং শিক্ষিতরাই এর চর্চা করতেন। উপমহাদেশে প্রথম মুসলমান আলোকচিত্রী হলেন- আলী আহমদ খান। তিনি ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। তার তোলা কয়েক 'শ ফোটোগ্রাফীর নমুনা রয়েছে লন্ডনস্থ ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে।১৮৫৬ সালের জানুয়ারীতে 'ফোটোগ্রাফী সোসাইটি অব বেঙ্গল' স্থাপিত হয়। এই ফোটোগ্রাফী সোসাইটির বেশির ভাগ সদস্য'ই ছিলেন বাঙ্গালী। ড. এফ জে মৌয়ট জোসিয়া ছিলেন এই সংগঠনের প্রথম সভাপতি।

ঢাকার জমিদার ও ব্যবসায়ী খাজা আলীমুল্লাহর পোট্রেটই ঢাকার আদি আলোকচিত্র। আলীমুল্লাহ ১৮৫৪ সালে মারা যান। তার একটি প্রোট্রেট এর প্রতিলিপি তারই বংশধর খাজা লতিফুল্লাহর ময়মনসিংহ বাসভবনে আছে। সেই সময়টাতে শুধু ধনী ও এলিট শ্রেণীর লোকেরাই বিজ্ঞানের আবিস্কার ক্যামেরা ব্যবহার করতো। বাংলা ভাষায় ঢাকা থেকে আলোকচিত্র বিষয়ক প্রথমগ্রন্থ রচনা করেন আনন্দ কিশোর ঘোষ। বইটির নাম ছিল ‘প্রভাচিত্র’। প্রকাশিত হয় ১৮৯৫ সালে।


১৯১০ সালে ঢাকায় প্রথম স্থাপিত হয় ফোটোগ্রাফী স্টুডিও। নাম ছিল- আর সি দাস অ্যান্ড সন্স। এই স্টুডিওতে ক্যামেরার সরঞ্জাম পায়া যেত। যেমনঃ ক্যামেরা ফ্লিম, প্লেট ইত্যাদি। ১৯৬০ সালে মঞ্জুর আলম বেগের উদ্যেগে ঢাকায় স্থাপিত হয় আলোকচিত্র শিক্ষা বিষয়ক ‘বেগাট ফোটোগ্রাফী স্টুডিও’।

আলেকজান্ডার ফরবেস সাংবাদিকতার সুত্রে আলোকচিত্র চর্চা করেছিলেন। ফরবেস ছিলেন ঢাকার প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ঢাকা নিউজ’ (১৮৫৬)- এর সম্পাদক। পরে তিনি কলকাতার ‘হরকরা’ পত্রিকার সম্পাদক হন। আলেকজান্ডার ফরবেস তার স্মৃতিকথায় আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, সাংবাদিকতা না করে শুধু ফোটোগ্রাফী চর্চা করেই অনেক বেশি আয় করতে পারতাম।

কলকাতার একজন দর্জি ছিলেন ডবলিউ এ খান। পরে তিনি ফোটোগ্রাফী শিখেঅবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ব্যাক্তিগত ফোটোগ্রাফার নিযুক্ত হন। সেই সময় ডবলিউ এ খান সব ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশের ছবি তুলেছেন।

১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সালে দশ বছর ফোটোগ্রাফী করে কলকাতার অন্নপূর্ণা দত্ত খুব সুনাম অর্জন করেন। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছবি তুলতেন। বিশেষ করে মুসলিম পরিবারের। এই আলোকচিত্রী কবি জসীমউদ্দীন, গায়ক আব্বাস উদ্দীন আহমদ বেগম রোকেয়ার অনেক ছবি তুলেন। অন্নপূর্ণাই প্রথম বাঙ্গালী মহিলা ফোটোগ্রাফার যিনি ফোটোগ্রাফীকে জীবিকা হিসেবে গ্রহন করেন। অন্নপূর্ণার জন্ম ১৮৯৪ সালে এবং মৃত্যু ১৯৭৬ সালে। তার বাবা অম্বিকা চরণ মিত্র ছিলেন অধ্যাপক। আর বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যেফরিদপুরের সাঈদা খানমই প্রথম মহিলা আলোকচিত্রী। ৫০ দশকে তিনি আলোকচিত্র চর্চা শুরু করেন। তিনি ঢাকার সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকায় কাজ করতেন।

( যারা ফোটোগ্রাফী ভালোবাসেন এবং যারা ফোটোগ্রাফীকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন অথবা ফোটোগ্রাফীকে পেশা হিসেবে নিবেন ভাবছেন আমি মনে করি তাদের প্রত্যেককে ফোটোগ্রাফীর খুব তুচ্ছ ইতিহাসও জানা প্রয়োজন। আমি আপনাদের এই রকম নানা তথ্য জানাতে চাই। ইদানিং অফিসে কাজের চাপে 'ফোটোগ্রাফী' নিয়ে লিখতে সময় পাই না। আজ প্রায় আট মাস পরে গোটোগ্রাফী নিয়ে লিখলাম। ফোটোগ্রাফী নিয়ে লিখে আমি নিজেও অনেক শান্তি পাই। তবে এখন থেকে নিয়মিত লিখব।)

পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাবার দায়িত্ব আমাদের। হাজার হাজার বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিলো এই পৃথিবী। অথচ কয়েক শতাব্দি আগে পর্যন্ত অর্থাত ক্যামেরা আবিস্কারের আগে এই পৃথিবী ডুবে ছিলো গভীর অন্ধকারে বলা যায়। ক্যামেরা এমন একটি যন্ত্র- যা বাস্তবকে হুবুহু স্থায়ীভাবে ধরে রাখে। যা অন্যকোন মাধ্যমে সম্ভব নয়। প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগে মানুষ অঙ্কন করে স্মৃতি ধরে রাখতো। মানুষের মনের প্রেক্ষাপটে জেগে ওঠা নানান চিন্তাধারা ফুটে উঠেছিলো সেই অঙ্কন বা খোদাই করা গুহা চিত্রের মধ্য দিয়ে। সভ্যতার সাথে সাথে এগিয়ে চললো শিল্পী মনের পরিবর্তন। তুলি চিত্র থেকে শুরু আলোক চিত্রের প্রবাহ। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মহা বিজ্ঞানী এবং মনিষীদের মহৎ কর্মকান্ডের অনুশীলনে পৃথিবী আজ গর্বিত এবং ধন্য।

কোডাক কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা জর্জ ইস্টম্যান ক্যামেরা এবং ফিল্মের সহজতর উৎপাদনে পৃথিবীময় বিস্ময়কর খ্যাতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলো। বর্তমান বিশ্বে নানা ধরনের ক্যামেরা আজ প্রগতিশীল পৃথিবীকে দারুনভাবে সমৃদ্ধ করেছে। বিশ্বে আজ বহু রকম ক্যামেরা ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু সকল ক্যামেরা কোম্পানির লক্ষ্য একই।

আলোকচিত্র বিভাগটি অতিসুক্ষ্ম কর্মশৈলী এবং অতি অনুভূতি সম্পুর্ন কর্মকান্ড। আমরা জানি যে, সুইচ ক্লিক করলেই ছবি উঠবে বা যেমন তেমন আলোর ব্যাবহার থাকলেই ছবি ঊঠবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই আলোকচিত্রের কোন সঠিক মুল্যায়ন ব্যাক্ত হবে না। যেমন বলা বা ধরা যেতে পারে- একটি হারমোনিয়ামে অনেকগুলো 'রিড' থাকে। 'রিড' এ চাপ দিলে অবশ্যই শব্দবা সুর বা ধনি বের হবে কিংবা শোনা যাবে। কিন্তু তাতেই কি বিমুগ্ধ সুরের সৃষ্টি হবে? ঠিক সেইভাবে সাদা কাগজে কতগুলি রং দিয়ে তুলির আঁচর টানলেই কি সুন্দর ছবি হবে? তাই ভালো সুর সৃষ্টি করতে হলে যেমন ভালো বা দক্ষ যন্ত্রীর আবশ্যক তেমনি ভালো বা সুন্দর ছবি আঁকতে হলে বিজ্ঞ শিল্পীর প্রয়োজন। অনুরুপ ও সুন্দর নিখুঁত আলোকচিত্র গ্রহন করতে হলে ফটো্গ্রাফারের বিচক্ষনতা ও দক্ষতার গুরুত্ব অপরিসীম।

লেন্স অর্থ দৃষ্টি সহায়ক কাঁচ। লেন্সকে ক্যামের চোখ বলা যেতে পারে। অনেকেই ক্যামরাকে মানুষের চোখের সাথে তুলনা করেছে। ক্যামেরার সামনে কি ধরনের লেন্স ব্যাবহার করলে কি হতে পারে বা কোনধরনের ছবির জন্য কি ধরনের লেন্স ব্যাবহার করা উচিত- তা পরিপূর্ন ভাবে জানতে হবে এবং সঠিক লেন্স নির্বাচন করতে হবে। লেন্সের সামনে যা থাকে তাই সে তুলে ধরে।ফলে এ বিষয় প্রমানিত হয় যে,ক্যামেরা মিথ্যা বলে না বা দেখায় না। প্রতিটি লেন্স তিনটি উপাদান নিয়ন্ত্রন করে থাকে। অথবা বলা যেতে পারে যে, তিনটি উপাদানে গঠিত প্রতিটি লেন্স। যেমন, 'ফোকাল লেংথ', 'ফোকাস' এবং 'এক্সপোজার' তিনটি উপাদান

ফোকাল লেংথ বিষয় বস্তুকে মুল্যায়ন করে, আপেক্ষিক বক্তব্যকে প্রকাশ করে এবং দৃষ্টিকোনকে সচেতন করে। সর্বোপরি সীমাবদ্ধতার মাপকাঠিতে নির্নয় করে বিষয় বস্তুকে। ফোকাস বিষয় বস্তুর পরিস্কারভাব দৃষ্ট করে অর্থাত স্বচ্ছ জ্যোতি প্রকাশে সুন্দর ভাব ব্যাক্ত করে। আবার অস্বচ্ছ জ্যোতি প্রকাশে সচ্ছতার বিঘ্ন ঘটায়। এক্সপোজার মান বিষয় বস্তুর উপরে পতিত আলোক নিয়ন্ত্রন করে এবং স্বাভাবিক দৃষ্টি (সময়) প্রতিষ্ঠিত করে।

সূর্যের আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল। সূর্যের আলোকে সাধারনত সাদা বলে ধরা হয়। বিশেষ করে মধ্যবর্তী সময়ের পরিস্কার আকাশ যখন থাকে। সূর্যের আলোর ভিতর দিয়ে প্রচুর 'লাল উজানী আলো', 'অতি বেগুনী আলো', এবং 'নীল বেগুনী আলো'- নামক তিন প্রকার অদৃশ্য রশ্মি নির্গত হয়। এই তিন প্রকারের রশ্মি খালো চোখে দেখা যায় না। তবে ছবিতে ধরা পরে স্পষ্টভাবে। একজন আলোচিত্রির বিভিন্ন রং সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জানা দরকার। কোন রং কেমন? কি কাজ করে? বা কি ভাব প্রাকশ করে? ফটপর্গ্রাির মধ্যে লাল রঙ কে অন্যতম সুন্দর রং হিসেবে গন্য বা নির্বাচন করা হয়। লাল রঙকে চিহ্নিত করা হয়েছে 'গরম রঙ' হিসেবে। আগুন যেমন গরম এবং আকর্ষনীয় তেমনি লাল রঙ অতি গরম ও আকর্ষনীয় যা সহজেই প্রলুব্ধ করে। লাল রঙের পাশাপাশি কমলা রঙ বিমুগ্ধ সৃষ্টির আনুভূতি প্রকাশে সক্রিয় কাজ করে। হলুদ রঙ লাল বা কমলা রঙের মত উত্তেজক নয়। তবে শীতল পরশেরো ধার ধারেনা। সবুজ ও নীল অথবা মেজেন্টা না গরম না শীতল, আলোকচিত্র গ্রহন ক্ষেত্রে সবচেয়ে মাঝারি নিয়ন্ত্রনে উল্লেখযোগ্য রঙ হিসেবে ভায়োলেট তথা মেজেন্টা রঙকে স্বীকার করা হয়েছে সর্বক্ষেত্রে। সকল রঙের ধ্বংশকারী হিসেবে কালো রং স্থিরভাবে সিহ্নিত। উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে যে, একটি সুন্দর মুখের (মেয়ে) আলোকচিত্র গ্রহন করতে হবে। মুখের রঙ সাধারনত হালকা গোলাপি/হলুদ বর্ণ ধরা যায়। এবং মেয়েটির পিছনের দিকে থাকছে সবুজ গাছ-পালা বা সবুজ ঘাস অথবা সবুজ ঝোপঝাড়। মুখমন্ডলের উপরে পিছনের সবুজ রঙের যথেষ্ট প্রভাব থাকবে। অবশ্যই এই প্রভাব খালি চোখে দেখা যায় না কিন্তু রঙিন ছবিতে ধরা পড়বে।

''পাহাড়ে ওঠার অর্থ হলো তুমি যাতে পৃথিবীটাকে দেখতে পারো। এর অর্থ এই নয় যে পৃথিবী তোমায় দেখবে। অর্থাৎ অযথা ক্যামেরা ক্লিক না করে বিষয়বস্তুর সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে চেষ্টা করুন।''

কোন এক বিচিত্র কারনে মানুষ ছবি দেখতে খুবই পছন্দ করে। যদি কখনও কাউকে বলা হয় যে ছবি ভাল হয়নি কেন, তখন স্বাভাবিক ভাবে যা উত্তর আসে তা হল, “আমারতো ভাই দামী ক্যামেরা না”, “যদি আমারে কেউ ঘোরাঘুরির জন্য টাকা দিতে, তাইলে হয়ত আর একটু সময় নিয়ে ভাল কিছু করতে পারতাম”, “আমার যদি আর একটু সময় থাকত” ইত্যাদি ইত্যাদি। সরল কথায় এই গুলা হল অজুহাত। আর হুমায়ুন আহম্মেদের ভাষায় বাঙ্গালীর তিন হাত, ডান হাত, বাম হাত এবং অজুহাত। মূল বিষয় হল আপনি যদি পারেন, এমনিই পারেন, না পারলে কোন ভাবেই পারেন না। সুতরাং, আপনার যা নেই তার জন্য কান্নাকাটি না করে, আপনার যা আছে তাকেই আয়ত্ব করুন।

বাংলা ভাষায় লেখা ফটোগ্রাফীর বই খূবই কম। যারা ফটোগ্রাফার এবং যাদের এই বিষয়ে আগ্রহ আছে তাদের জন্য ফটোগ্রাফি নিয়ে কিছু পড়াশোনা করা অত্যাবশ্যকীয়। ইংরেজী ভাষার ফটোগ্রাফি বই 'Fundamentals of Modern Photography' – লেখক Tom Ang বইটি সকল ফটোগ্রাফারদের অন্তত একবার হলেও পড়ে নেয়া দরকার।
বই পড়ার সাথে ফটোগ্রাফি বিষয়ব টিউটোরিয়াল ভিত্তিক ওয়েবসাইট আছে সেগুলো নিয়মিত ভিজিট করুন। ফটোগ্রাফিক টিউটোরিয়ালগুলো দেখতে ইউটিউবে আপনি আপনার প্রশ্নগুলো সার্চ করুন সেখানে আপনি ভিডিও দেখতে পারবেন যার ফলে আমরা কনফিউশানগুলো দূর হয়ে যাবে। ইন্টারনেটে অসংখ্য ওয়েবসাইট বিনামুল্যে ফটোগ্রাফির বিভিন্ন টিউটোরিয়াল, টিপস, রিসোর্স দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া Flickr, 500px, YourShot ইত্যাদি ওয়েবসাইটে প্রচুর ছবি দেখে শিখতে পারবেন।

অনেকরকম ফটোগ্রাফার কাজ করে আমাদের আশপাশে। প্রত্যেকের কাজের ক্ষেত্র আলাদা। যেমন ফ্যাশন ফটোগ্রাফাররা ফ্যাশন শুট করে, ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফাররা জীবজন্তুর ছবি তুলে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফটোগ্রাফাররা মেশিনের ছবি তুলে, আবার ফরেনসিক ফটোগ্রাফারদের কাজ বিভিন্ন অ্যাসপেক্ট থেকে কোনো ক্রাইমের ছবি তোলা, যেমন কোনো খুন হলে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে লাশের ছবি তোলা, যাতে ছবি দেখে তদন্ত করতে সুবিধে হয়। সায়েন্টিফিক ফটোগ্রাফাররা আবার রিসার্চ ওয়ার্কের ছবি তুলে। এর বাইরেও রয়েছে ন্যাচার অর্থাত্ প্রকৃতির ছবি তোলা। ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার, তাদের কাজ শুধু বিভিন্ন স্থানকে দর্শনীয় স্থানের মতো করে ছবি তোলা।

খুব স্বাভাবিক ভাবে কোথাও ছবি তুলতে গেলে আপনি যদি একটু বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে সহজেই মানুষের সাথে মিশে যেতে পারবেন। অনেককে দেখেছি, ক্যামেরা হাতে নিয়ে কঠিন ভাব নিতে চেষ্টা করেন, এটা ঠিক নয়। মানুষ হয়ে জন্মেছেন, মানুষের মত ব্যবহার করুন।

ভাল ফটোগ্রাফার হতে চাইলে দশটি টিপস মনে রাখা দরকার-

১। নিজের দুর্বল দিক খুজে বের করা।
২। সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে হবে। এবং ছবি তুলার সময় ভিউফাইন্ডার এর ভিতরের লাইট মিটার এর দিকে সব সময় খেয়াল রাখবেন।
৩। ধর্য্য ধারন করুন এবং সময় নিয়ে ছবি তুলুন।
৪। আপনার সেই দেখার দৃষ্টি থাকতে হবে যেটা একটি সাধারন মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে। তাহলেই আপনি একজন ফটোগ্রাফার হতে পারবেন।
৫। ফটোগ্রাফার আর ক্যামেরা ব্যবহারকারীর মধ্যে অনেক পার্থক্য। কোনটা হতে চান, সেটা আপনার ব্যপার।
৬। ক্যামেরা, দৃষ্টিভঙ্গী এবং সময় জ্ঞান।
৭। অবশ্যই ছবি তোলার চোখ থাকতে হবে। যাকে বলে ফটোগ্রাফি আই। এবং ক্রিয়েটিভ আই অর্থাৎ সৃজনশীল চোখও থাকতে হবে। ছবির মাধ্যমে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে।
৮। সঠিক সময়ে, সঠিক পরিস্থিতিতে, সঠিক স্থানে থাকতে হবে।
৯।লক্ষ্যে স্থির থেকে উপযুক্ত পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।
১০। আগের দিনের শ্রেষ্ঠ ফটোগ্রাফারের পাশাপাশি বর্তমানের ফটোগ্রাফারদের সম্পর্কেও জানুন। তারা কিভাবে গড়ে উঠলেন সেটাও আপনার ফটোগ্রাফিতে কাজে দিবে।

ফটোগ্রাফি ভালো করার জন্য বা ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক নয়। একজন সফল ফটোগ্রাফার হতে চাইলে আপনাকে স্থানীয়, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক যে কোনো প্রদর্শনী বা সেমিনারে অংশ নিতে হবে। সব সময়ই ফটোগ্রাফিকে আনন্দের সঙ্গে নিবেন। বিরক্ত হবেন না, ধৈর্য্য হারাবেন না। দেখুন কত আনন্দ এই সৃজনশীল কাজটির মাঝে। ক্যামেরা দিয়ে যাচ্ছেতাই ভাবে ছবি তোলাটা সৃষ্টিশীল ফটোগ্রাফি নয়।

একটু খানি, শুধু একটু খানি আলসেমি করে ঘরে ক্যামেরা রেখে বের হবেন, দেখবেন আপনার মাথার উপরে আকাশটা আজকে কত্তো সুন্দর দেখাচ্ছে। হয়ত এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে, যা আপনার হাতে ক্যামেরা থাকলে তুলে রাখতে পারতেন। কিন্তু আফসোস, আপনিতো আলসেমি করে ক্যামেরা ঘরে রেখে গেছেন। অথবা হয়ত ছিনতাইকারির ভয়েই ক্যামেরা রেখে গেছেন। কি আর করা, মিসতো মিসই। তাই না? তাই ক্যামেরা কখনই ঘরে ফেলে রেখে যাবেন না। সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যামেরার ইকুয়িপমেন্টে জং না পড়লেও ফাঙ্গাস পড়ে, তাই কিনে বসিয়ে রেখে কোন লাভ নেই।

অনেকেই আছেন যে মাত্র ১/২টা গ্রুপে ছবি শেয়ার করেই বসে থাকেন। বা শুধুমাত্র ফ্লিকারে ছবি আপলোড করে বসে থাকেন। এমনটা করা উচিত না। উচিত হল যত যায়গায় পারা তত যায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া। যতগুলো ব্লগ, ছবি শেয়ারিং সাইট, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি, সব খানে ছবি আপলোড করুন।

এটা খুবই কমন যে একটা ছবি তুলেই চিন্তা করা যে এটা ফটোশপে ঠিক করে নিব। মনে রাখবেন, চিন্তা করার সময় সহজ মনে হলেও বেশীর ভাগ সময়ই ফটোশপে সব ঠিক করা এতটা সহজ না। ছবি তোলার সময় কখনো ভয় পাবেন না। ভুল করাটাই স্বাভাবিক, কারন ভুল না করে আপনি শিখতে পারবেন না। বিশ্বের সব বিখ্যাত ফটোগ্রাফার শুরুতে ভুল করে তা থেকে শিক্ষা নিয়েই আজ এই পর্যায়ে এসেছে। তাহলে এখনই ক্যামেরা হাতে বেড়িয়ে পড়ুন আর শুরু করে দিন ফটোগ্রাফি।

ফেসবুকে একজনের চমৎকার স্ট্যাটাস দেখেছিলাম। ফটোশপ দিয়ে কবিতা লেখা গেলে দেশে ফটোগ্রাফার নয়, কবির সংখ্যা বেশি হতো। মানুষের ছবি যদি কোনও কারণে মন্দ লাগে তবে “তোমাকে দিয়ে হবেনা” টাইপ কথা না বলে কেন মন্দ লাগলো সেটা জানান। কারণ ক্রিটিসিজম শুনলেই বুঝা যায় আপনি কোন ক্লাসের চিড়িয়া।

কিতাবে লিখা আছে বলে তাই চোখ বুজে ফলো করতে হবে এটা যদি আপনার ধারনা হয়, তাইলে উপরের লেখা সবকিছু আপনার জন্য নয়। গ্রামার অবশ্যই জানতে হবে, যতটা সম্ভব মানতে হবে। তবে তার মধ্যেই আটকে পরে থাকলে জেনে রাখুন -জীবনে অনেক কিছু মিস করে ফেললেন, দাদা।

সারাদিনে হয়তো শত শত ছবি তুলতে পারেন কিন্তু সবাইকে দেখানোর সময় শুধু নিজের সেরা কাজটাই দেখান। ফেসবুকে ঘন ঘন ছবি আপলোড না করে চিন্তা ভাবনা করে ছবি শেয়ার করুন। আর ফটোগ্রাফি সাইটগুলো যেমন ফ্লিকার বা 500px এসব জায়গায় কোন ভাবে সব ধরনের ছবি শেয়ার করবেন না। দরকার হলে মাসে একটা করে ছবি শেয়ার করুন এবং সেরাটা করুন।

প্রতিটি ছবিকে একটি গল্প হিসেবে চিন্তা করুন আর ছবি দিয়ে নিজের গল্পটাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। ছবিতে যেন থাকে একটি গল্প। হোক সেটা এক লাইনের বা হোক সে কোন প্রবন্ধ। ফ্রেমিং এর ক্ষেত্রে গতানুওগতিক ধারা থেকেও বের হয়ে আসতে পারেন নতুন কোন গল্প ফুটিয়ে তোলার জন্য।

যারা শিক্ষিত এবং সৃজনশীল কাজের প্রতি যাদের আগ্রহ আছে তাদের জন্যই মূলত এই পেশা। যদি টাকা আয় করাই তার মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে মোটেও এই পেশায় আসা উচিত নয়। সৃজনশীলতা আর ব্যবসা একসঙ্গে কখনোই খাপ খায় না। কেউ যদি সম্পূর্ণ ভালোলাগা থেকে এই পেশায় আসেন, তাহলে তিনি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন। ব্যবসায়িক চিন্তা বাদ দিয়ে শিল্প মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে।

ফটোগ্রাফার হতে হলে যেসব বিষয়ে পড়াশোনা করে হাতে কলমে শিখে দক্ষ হতে হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: বেসিক কোর্স অন ফটোগ্রাফি, স্টুডিও ফটোগ্রাফি, ডিপ্লোমা ইন ফটোগ্রাফি, ডিপ্লোমা ইন ফটো জার্নালিজম, বেসিক কোর্স অন ভিডিওগ্রাফি, বেসিক কোর্স অন ফটো এডিটিং ইত্যাদি। পাশাপাশি বিভিন্ন ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করা জরুরি।

একজন যখন হুমায়ূন আহমেদ বা অন্য প্রিয় লেখকের লেখা পড়েন, তখন কি ভাবেন তিনি কি কলম বা কত দামী কলম দিয়ে লিখেছেন! তাই বলি- কত দামী ক্যামেরা বা লেন্স দিয়ে ছবি তুললেন সেটার চেয়ে বড় হলো ছবি কথা বলে কি’না বা ভাল কিছু প্রকাশ করে কি’না!

আমি সময় পেলেই চলে যাই- রমনা পার্কে। পার্কে গেলেই দেখা যায়, অনেক ছেলে- মেয়ে খুব মন দিয়ে ছবি তুলছে। তারা নিজেরা বিভিন্ন সাবজেক্ট খুঁজে খুঁজে অনেক আগ্রহ নিয়ে ছবি তুলছে। অনেকে আবার নিজের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে যায়। নানান ভঙ্গিমায় তাদের ছবি তুলছে। কেউ খুব আগ্রহ নিয়ে ছবি তুলছে, এই দৃশ্যটা আমার খুব ভালো লাগে। খুব মন দিয়ে আমি তাদের ছবি তোলা দেখি আর বিপুল আনন্দ পাই।

সুন্দর ফটোগ্রাফির জন্য DSLR থাকা জরুরি নয়। সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে আপনি আপনার মোবাইল দিয়েও অনেক সুন্দর ছবি তুলে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন সবাইকে । একটি ছবিতে প্রধানত দুটি এলিমেন্ট থাকে। একটি স্টোরি আর অন্যটি ভিজ্যুয়াল এলিমেন্ট। এই এলিমেন্টগুলোর কারনেই আমরা ছবির অন্তর্নিহিত বক্তব্য খুঁজে পাই। ক্যামেরা নয়, আপনার কম্পোজিশনের উপর নির্ভর করে আপনার ছবি কতখানি ভালো হবে। ধরুন আপনার কাছে হয়তো ক্যানন মার্ক থ্রী আছে কিন্তু আপনার শট কম্পোজিশন খুব দূর্বল, তার মানে আপনি ভালো ফটোগ্রাফার হতে পারবেন না।

প্রতিনিয়তই আমরা নেতিবাচক চিন্তা করে যাচ্ছি কম বেশি সব কিছু নিয়েই। আমাকে দিয়ে এটা হবে না, ওটা হবে না, আমি পারি না, আমি খারাপ ইত্যাদি আরো নানান রকম মনগড়া নেতিবাচক চিন্তাভাবনা সফলতাকে আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত নিজেকে ছোট ভাবতে ভাবতে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছি আমরা। সারাবিশ্বে অসংখ্য প্রতিযোগিতা হয় ফটোগ্রাফির ওপর। সেসবে অংশগ্রহণ করে বিশ্বব্যাপী একটা খ্যাতিও অর্জন করে নিতে পারেন। সঙ্গে পাওয়া টাকার অঙ্কটাও খারাপ নয়!

বর্তমানে ফটোগ্রাফির চূড়ান্ত ফলাফল যেহেতু অনেকাংশে কম্পিউটারনির্ভর, তাই দক্ষ ফটোগ্রাফার হতে হলে প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকা জরুরি। ছবিতে বিভিন্ন মাত্রা যোগ করতে, ছবিকে প্রাণবন্ত করে তুলতে ফটোশপের নানা ভার্সনে কাজ করার দক্ষতা থাকতে হবে।

এবার মেয়েদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে কিছু টিপস -

- আপনার মডেল বা সাবজেক্টকে ইনভলভ করুন। তাকে বোঝান আপনি কি চাচ্ছেন। আপনি কিভাবে ফটো তুলতে চাচ্ছেন সেটা জানতে পারলে সাবজেক্ট কনফিডেন্টলি পোজ দিবে এবং আপনার কাজ সহজ হবে।
- আপনার সাব্জেক্টকে বলবেন তার থুতনী যেনো একটু নীচে নামায়া রাখে। মুখ না চেপে লুজ করে দেয় যেনো
- অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলবেন। সোজা সামনে থেকে ছবি তুললে অনেক সময়েই ফ্লাট আসে।
- সাবজেক্ট কে বলবেন তার মাথাটা একটু নামায়া রাখতে। মানে একটু ঝুকে।
- যদি মোটা কোন মেয়ের ছবি তুলতে চান তাহলে তার হাতে বা আশেপাশে কিউট কোন প্রপ রাখুন। যেমনঃ ছোট্ট কোলবালিশ অথবা টেডিবিয়ার
- মেয়েদের শোল্ডার সমান রেখে ছবি না তুলাই ভালো। একটু বাকা রেখে বা অ্যাঙ্গেলে ট্রাই করেন
- বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের হাই অ্যাঙ্গেল বা আই লেভেল এর উপর থেকে ছবি তুললে কিউট আসে।
- এক্সাক্টলি স্কেচ ফলো করতেই হবে তা নয়, আপনি নিজস্ব স্টাইলে হাতের পজিশন, মাথার পজিশন, অ্যাঙ্গেল ইত্যাদী পরিবর্তন করে দেখতে পারেন।
- এক্সট্রা লাইট নেই? জানালা বা দরজা দিয়ে ঢোকা আলোকে কাজে লাগান। কাজে লাগাতে পারলেই কাজে লাগবে, ট্রাস্ট মি।
- এই টিপসটা মনে রাইখেন - কেউ যখন ঘাড় বাঁকা করে তাকায় (বিশেষ করে পিছন দিকে) তখন ঘাড়ে কিছু ভাঁজ পরে। ছবিতে এই ভাঁজটা দেখতে খারাপ লাগে। আপনাকে কি করতে হবে? সহজ বুদ্ধি, মেয়েটার চুল ঘাড়ের উপর এমন ভাবে ফেলে রাখুন যাতে ভাঁজগুলো না দেখা যায়। কলারওয়ালা কিছু পড়ে থাকলে কলার উঠিতে দিতে পারেন। আর হ্যাঁ, সাব্জেক্ট যেনো পুরোপুরি ঘাড় বাঁকা করে পিছনে না তাকায়। ৪৫ অ্যাঙ্গেল টা সুইট।

ফুল বডির ছবি তোলার ক্ষেত্রে আপনি আপনার বন্ধুকে এভাবে দেয়ালের দিকে পিঠ দিয়ে দাড়াতে বলতে পারেন। এভাবে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে এবং পা ভাজ করে দাড়ানোটা খুবই কমন হলেো বেশ কার্যকরী পোজ। তিনটে জিনিস খেয়াল রাখবেনঃ
এক - আপনার বন্ধু যেনো ৪৫ ডিগ্রীতে মুখ করে থাকে অর্থাৎ সে সোজাও তাকাবেনা এবং আপনার দিকেও তাকাবেনা, এর মাঝামাঝি...
দুই- আপনি যেহেতু তার ফুল বডি নিচ্ছেন (৩ ভাগের এক ভাগ নিলেও) মাথার উপর রুম রাখবেন এবং ফ্রেমের ডানে রুম রাখবেন (আপনি যদি সাব্জেক্টের ডান পাশ থেকে ছবি তুলেন তাহলে বামে রুম রাখবেন)... এই রুম রাখার ব্যাপারটা নির্ভর করছে আপনার উপর... এখানে কোন রুল নেই তবে খেয়াল রাখবেন আপনার সাব্জেক্ট যেনো রুল অফ থার্ড এর কোন একটা বিন্দু তে থাকে ...
তিন - ব্যাকগ্রাউন্ড অতীব সৌন্দর্য না হলে আনার প্রয়োজন নেই; ডিএসএলআর ইউজ করলে ব্লার করে দেবার সুযোগ তো আছেই...

রঙই হচ্ছে ছবির প্রাণ। আপনাকে ছবির রঙ পছন্দের ব্যাপারে ক্রিয়েটিভ হতে হবে। কোন রঙ কি ধরনের এ্যাপিলসৃষ্টি করে সেটা জানা থাকলে আরো ভালো হয়। যেমন – সাধারণত উজ্জল রঙ ছবি ভাইব্রেশান, এনার্জি এবং আকর্ষন সৃষ্টি করে থাকে। সবুজ এবং নীল রঙ দর্শকের মনে প্রশান্তির সৃষ্টি করে থাকে। তবে পছন্দ এবং ক্রিয়েটিভিটি সম্পূর্ন আপনার। অনেক নিয়ম কানুনই আমরা ফটোগ্রাফিতে মেনে চলি তবে মজার আরেকটা নিয়ম হল আমরা যে কোন সময়েই নিয়মে ব্রেক আনতে পারি। সেটা সম্পূর্ণ ফটোগ্রাফারের মনের খুশি।

ফিল্মের যুগে বেশিরভাগ ক্যামেরাই ছিল এস এল আর। ডিজিটাল যুগে হলো ডি এস এল আর; ‘ডি’ দিয়ে কি বোঝায় বলেন তো?

নিখুঁত ছবি তোলার চাবিকাঠি হচ্ছে প্রচুর ছবি তোলা। আর এর জন্যই ছবি তুলতে কার্পন্য না করাই ভাল।

আপনার ডিএসএলআর ক্যামেরার ব্যাটারীর চার্জিং ক্ষমতা বৃদ্ধি যেভাবে করবেন- আপনি আপনার ক্যামেরা দিয়ে ছবি উঠানোর সময় লাইভ ভিউ এবং বিল্ট ইন ফ্লাস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। লাইভ ভিউ ব্যবহারের সেন্সরের উপর প্রভাব পরে অন্যদিকে অতিরিক্ত ব্যাটারী খরচ হয়। অনেক সময় আমরা ক্যামেরা দিয়ে ছবি উঠানোর পর ছবিটাকে স্কিনে ক্ষণিক সময় দেখতে পাই । এই ইমেজ রিভিউ অপশন বন্ধ রেখে ব্যাটারী চার্জ দীর্ঘস্থায়ী করতে পারি।
দিয়ে ছবি উঠানোর পর অনেকে ক্যামেরা অফ করতে ভুলে যাই । আপনার ক্যামেরায় যদি অটো পাওয়ার অফ অপশনের টাইম সর্বনিম্ন থাকে তবে ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হবে এবং পাওয়ার সেভিং মোড চালু থাকবে ।আপনি যদি আবার চালু করতে চান তাহলে সাটার রিলিজ বাটনে হার্ফ প্রেস করার সাথে সাথে ক্যামেরা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। এভাবে প্রচুর পরিমান ব্যাটারী সঞ্চয় করা সম্ভর।
ক্যামেরার বাটন প্রেস করার সময় অথবা ক্যামেরার অপশন ব্যবহার করার সময় যে সাউন্ড (বিফ) শুনতে পাইসেটি বন্ধ রাখা। এই সাউন্ড আসলে কোন কাজে লাগে না । বিফ অফ রেখে ব্যাটারীর চার্জ রক্ষা করতে পারি।

মেগাপিক্সেলের সঙ্গে ছবির মানের সম্পর্ক খুব একটা নেই। ক্যামেরার মেগাপিক্সেল বেশি হওয়া মানে ওই ক্যামেরার ছবির সাইজ বেশি বড় আসবে। মাত্র পাঁচ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায়ই ১২ বাই ১৮ ইঞ্চি মাপের ছবি ধারণ করা যায়। তাই পাঁচ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাকেই স্ট্যান্ডার্ড বলা যায়। ক্যামেরা কেনার সময় তাই মেগাপিক্সেলের দিকে চোখ না দিয়ে ক্যামেরায় অন্য কী সুবিধা আছে, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।

ক্যামেরা কেনার সময় মনে রাখবেন আপনার ভালো একটা ক্যামেরার ব্যাগ কিনে নেয়াটা খুবই জরুরি। অবশ্যই সূর্যের আলো কিংবা বৃষ্টির পানি যেন ভেতরে ঢুকে আপনার লেন্সের ক্ষতি না করতে পারে এমন ব্যাগ। অনেকেই সাংবাদিকতা করার জন্য ক্যামেরা কিনেন। মনে রাখবেন, যদি ফটোজার্নালিস্ট হতে চান তবে আপনাকে মেধাবী হতে হবে। মুহূর্তেই ফ্রেমিং বুঝে ছবি তুলে আনতে হবে। হয়তো আপনার হাতে সময় আছে ১ মিনিট এ সময়ের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত ছবিটি তুলে আনতে হবে। এজন্য প্রচুর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাই ফটোজার্নালিস্ট হতে চাইলে শুরুতেই দামি ক্যামেরা না নিয়ে সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে চর্চা শুরু করে দিন।

অনেকেই জানতে চান, ভালো নতুন ক্যামেরা কোথায় কিনতে পাওয়া যায়, তাদের জন্য বলছি- আমাদের দেশে শুধু ক্যামেরার জন্য আলাদা কোনো বাজার গড়ে ওঠেনি। তবে কম্পিউটার মার্কেটগুলোতে সাধারণত ক্যামেরা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে 'নাইকন' ক্যামেরার পরিবেশক ফ্লোরা লিমিটেড। 'ক্যানন' ক্যামেরার পরিবেশক জেএএন অ্যাসোসিয়েটস। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে তাদের শোরুম রয়েছে। ক্যানন ক্যামেরার খোঁজখবর এখান থেকেই পাওয়া যাবে। প্যানাসনিকের পরিবেশক এসিআই লিমিটেড। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে তাদের একটি শোরুম আছে। সনি ক্যামেরার পরিবেশক র্যাংেগস ইলেকট্রনিকস। ক্যামেরার খোঁজ পেতে সনির শোরুমে যেতে হবে। এ ছাড়া আইডিবি ভবনের বিসিএস কম্পিউটার সিটির অনেক দোকানে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের ক্যামেরাই পাওয়া যাবে। ক্যামেরার জন্য সুনাম আছে এমন কয়েকটি দোকান বসুন্ধরা সিটিতেও রয়েছে। এই মার্কেটের লেভেল ৬-এ রয়েছে সনি ব্রাভিয়া স্টোর। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম, এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার ও স্টেডিয়াম মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্যামেরা পাওয়া যায়।

ক্যামেরা কেনার আগে ইন্টারনেট থেকে রিভিউ দেখে নিন। একসঙ্গে দু-তিনটি ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট ক্যামেরার রিভিউ দেখলে ক্যামেরার কোয়ালিটি সম্পর্কে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। এখানে পেয়ে যাবেন ব্যবহারকারীদের মন্তব্যও।http://www.dpreview.com,http://www.reviews.cnet.com/digital-cameras,http://www.trustedreviews.com,http://www.cameralabs.com,http://www.pcmag.com/reviews/digital-cameras I Click This Link ক্যামেরা রিভিউয়ের নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট।

আপনার ক্যামেরাটি পরিষ্কার ও ঝকঝকে রাখার জন্য সবসময় ক্যামেরা ব্যাগে যে জিনিষগুলো থাকা প্রয়োজন তা হল-
• মাইক্রোফাইবার কাপড়- আঙ্গুলের ছাপ ও নোংরা দাগ মোছার জন্য।
• ডাস্ট ব্লোয়ার- ময়লা ও ধুলার স্তর দূর করার জন্য।
• ক্লিনিং পেন এবং ব্রাশ কম্বো- যথাযথ ভাবে ফিঙ্গার প্রিন্ট পরিষ্কারের জন্য।

ক্যামেরা ক্রয় করার পরে আপনাকে মেমরি কার্ড, লেন্সের ফ্লিটার, স্কিন প্রটেকটর, বহনের জন্য ব্যাগ কিনতে হবে। মূল ক্যামেরার বাজেটের বাইরে আপনাকে আর হাজার তিনেক টাকা যুক্ত রাখতে হবে এই জন্য।

ঘন কুয়াশার মধ্যে ক্যামেরা ব্যবহার না করা ভালো। এতে কুয়াশার জলকণা ঢুকে ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ক্যামেরায় সমস্যা দেখা দিলে নিজে ঠিক করার চেষ্টা না করে ভালো সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া উচিত। লেন্সে ধুলো পড়লে হাত দিয়ে, ঘষে বা ফুঁ দিয়ে সরানোর চেষ্টা না করে ব্লোয়ার ব্যবহার করুন। ব্লোয়ার না থাকলে নরম কাপড় (যেমন ফ্লানেল) ব্যবহার করুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে বের হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে ক্যামেরাটি ব্যাগে ভরে রাখুন। ক্যামেরা খোলা অবস্থায় বের করা হলে লেন্সে বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয়। ফলে প্রথমে কিছুটা ঝাপসা মনে হবে এবং পরে লেন্সে স্থায়ী দাগ পড়তে পারে।

মনে রাখবেন, ডিএসএলআর মোটেও কোনো খেলনা না। যত্ন করতে হবে মন থেকে। সবসময় ক্যামেরার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিন খেয়াল করবেন ক্যামেরার সবকিছু ঠিক আছে কিনা। লেন্সগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে, সেন্সরে কোনোভাবেই ধুলোবালি ঢুকতে দেয়া যাবে না। মোট কথা ধুলোবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে।

- একজন ভালো ফটোগ্রাফার হিসাব করেন ইঞ্জিনিয়ারের কলম দিয়ে, চিন্তা করেন দার্শনিকের মন দিয়ে এবং দেখেন একজন কবির চোখ দিয়ে।
- ভালো ক্যামেরা সেটিই, যার ওপর একজন ভালো ফটোগ্রাফার আস্থা রাখেন।
- প্রথমে শিখে নিন ফুল কাকে বলে। তারপর বুঝুন আপনার সামনে যা আছে সেটি কোন ফুল এবং তার পর ফটো তুলুন।

একটি ভালো দৃশ্যের জন্য ফটোগ্রাফাররা ছুটে যান বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকেন মনের মতো একটি দৃশ্যের; যা এক পলকেই অনেক মানুষকে আকর্ষণ করবে। দীর্ঘ ৬ বছর চেষ্টার পর মনের মতো একটি ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন ফটোগ্রাফার অ্যাল্যান ম্যাকফেডেন । মাছরাঙার মাছ শিকারের একটি ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন ফটোগ্রাফার অ্যাল্যান। ৭ লাখ ২০ হাজার বার ক্যামেরায় ক্লিক করে- মনের মতো একটি ছবি ধারণ করতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬ বছর।লক্ষ্য ঠিক থাকলে সাফল্য অর্জন অসম্ভব নয়। পানি থেকে মাছ নেওয়ার সময় মাছরাঙার একটি ছবি ক্যামেরায় ধারণ করতে সময় দিতে হয়েছে ৪ হাজার ২০০ ঘণ্টা।

নেটে সার্চ দিয়ে এই ফটোগ্রাফারদের ছবি দেখুন খুব মন দিয়ে- নবুয়্যোশি আরাকি, রঘু রাই, স্টীভ, ডেবিট লাজার রবার্ট ফ্রাঙ্ক, ল্যারি ক্লার্ক এবং উইলিয়াম ক্লেইন আরো অনেকই আছে ।

প্রয়োজনে ISO বাড়িয়ে ছবি তুলুন। আর সবচেয়ে ভালো হয় যদি auto-ISO আপনি কাজে লাগাতে পারেন। Auto-ISO আপনার বিরাট বন্ধু হতে পারে। কিন্তু, বন্ধু থেকে কাজ বাগাতে হয় কিভাবে, জানেন তো। বন্ধুকে সময় দিন, বন্ধুকে জানুন।যে ছবি ক্যামেরাতেই দেখে বুঝতে পারছেন, বাজে (অস্পষ্ট, মূল-বিষয় কাটা পড়েছে, ঠিকমত এক্সপোজ হয়নি ইত্যাদি) হয়েছে, সেটা ক্যামেরাতেই মুছে ফেলেন। পিসিতে নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না।

একজন ভাল শিক্ষক অথবা গাইড পওয়া এত সহজ নয়। ভরসা বই। বাংলায় এ বিষয়ে বেশি বই নেই। ইংরেজিতে অনেক আছে অবশ্য। কিন্তু পাচ্ছেন কোথায়? পেলেও, হাজার হাজার বই এর ভীড়ে আপনি জানছেন কিভাবে আপনি সত্যিই কিছু শিখতে পারবেন সেই বই থেকে? সব বইই ভাল নয়, ভাল বই খুজে নিতে হয়।

এইযে পৃথিবীকে একটু অন্যরকম ভাবে দেখা – সেটা কি মানুষ জন্ম থেকে নিয়ে আসে? না, আসে না। এই ব্যপারটি অনেকখানি নির্ভর করে শৈশবে আপনি কি রকম পরিবেশে বড় হয়েছেন তার উপর। আমরা জানি যে অনেক সঙ্গীত শিল্পীর সন্তানরাও ভাল শিল্পী হন, অনেক ফটোগ্রাফারের সন্তানেরা ফটোগ্রাফীকে আঁকড়ে ধরেন।
আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই শিল্পীসত্ত্বা ঘুমন্ত আছে – কে আছে যে গান শোনে না? সিনেমা/নাটক দেখে না? মূল বিষয়টি হলো আগ্রহের যায়গাটিতে লেগে থাকা। প্যাশনটা বেশি জরুরী।

প্রচুর বই পড়ুন – বিশেষ করে উপন্যাস। বইয়ের শব্দের গাঁথুনির অন্যতম উপাদান হলো ‘ডিটেইলস’। খেয়াল করলে দেখবেন একজন লেখক কোন ছো্ট বিষযের বর্ণনা দেয়ার সময়ও অনেক পারিপ্বার্শিক ডিটেইলস তুলে নিয়ে আসেন। যখন তিনি একটা সকালের বর্ণনা দেন তখন চায়ের কাপের ধোঁয়া, পাতায় প্রথম রোদের খেলা, দূর্বাঘাসের উপর শিশির বিন্দুর ঝকমকানি – এরকম সব ডিটেইলস এর বর্ণনা দেন। উদাহরণ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর 'শেষের কবিতা’ হতে কিছু লাইন তুলে দিলাম:

“আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা, ডান দিকে জঙ্গলে ঢাকা খাদ। এ রাস্তার শেষ লক্ষ্য অমিতর বাসা। সেখানে যাত্রী-সম্ভাবনা নেই, তাই সে আওয়াজ না করে অসতর্কভাবে গাড়ি হাঁকিয়ে চলেছে। ঠিক সেই সময়টা ভাবছিল, আধুনিক কালে দূরবর্তিনী প্রেয়সীর জন্যে মোটর-দূতটাই প্রশস্ত-- তার মধ্যে "ধূমজ্যোতিঃসলিলমরুতাং সন্নিপাতঃ" বেশ ঠিক পরিমাণেই আছে-- আর, চালকের হাতে একখানি চিঠি দিলে কিছুই অস্পষ্ট থাকে না। ও ঠিক করে নিলে আগামী বৎসরে আষাঢ়ের প্রথম দিনেই মেঘদূতবর্ণিত রাস্তা দিয়েই মোটরে করে যাত্রা করবে, হয়তো বা অদৃষ্ট ওর পথ চেয়ে "দেহলীদত্তপুষ্পা" যে পথিকবধূকে এতকাল বসিয়ে রেখেছে সেই অবন্তিকা হোক বা মালবিকাই হোক, বা হিমালয়ের কোনো দেবদারুবনচারিণীই হোক, ওকে হয়তো কোনো-একটা অভাবনীয় উপলক্ষে দেখা দিতেও পারে। এমন সময়ে হঠাৎ একটা বাঁকের মুখে এসেই দেখলে আর-একটা গাড়ি উপরে উঠে আসছে। পাশ কাটাবার জায়গা নেই। ব্রেক কষতে কষতে গিয়ে পড়ল তার উপরে-- পরস্পর আঘাত লাগল, কিন্তু অপঘাত ঘটল না। অন্য গাড়িটা খানিকটা গড়িয়ে পাহাড়ের গায়ে আটকে থেমে গেল।

একটি মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। সদ্য-মৃত্যু-আশঙ্কার কালো পটখানা তার পিছনে, তারই উপরে সে যেন ফুটে উঠল একটি বিদ্যুৎরেখায় আঁকা সুস্পষ্ট ছবি-- চারি দিকের সমস্ত হতে স্বতন্ত্র। মন্দরপর্বতের নাড়া-খাওয়া ফেনিয়ে-ওঠা সমুদ্র থেকে এইমাত্র উঠে এলেন লক্ষ্মী, সমস্ত আন্দোলনের উপরে-- মহাসাগরের বুক তখনো ফুলে ফুলে কেঁপে উঠছে। দুর্লভ অবসরে অমিত তাকে দেখলে। ড্রয়িংরুমে এ মেয়ে অন্য পাঁচজনের মাঝখানে পরিপূর্ণ আত্মস্বরূপে দেখা দিত না। পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না।



পড়ে দেখুন – কি পরিমাণ ডিটেইলস তিনি তুলে ধরেছেন! বই পড়লে পৃথিবীকে এইভাবে দেখার ক্ষমতা আপনারও তৈরী হবে। আর ফটোগ্রাফীতে ছোটখাট ডিটেইলস যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মানুষের ছবি তোলার একটা পূর্বশর্ত হচ্ছে মানুষের ‘বডি ল্যাংগুয়েজ’ বুঝতে শেখা – বিশেষ করে মুখের অভিব্যক্তি। ভিন্ন ভিন্ন অভিব্যক্তি ভিন্নভিন্ন মানসিক অবস্থাকে তুলে ধরে, সেই জিনিসগুলো বুঝতে হবে।

যেহেতু আমি একটা পত্রিকা অফিসে ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করি, তাই ফটোগ্রাফী নিয়ে অনেকের নানান রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তাদের প্রশ্ন গুলো এই রকমঃ
১। পুরান ঢাকায় কি কোনো ভালো প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি কোর্স করায়?
২। ফটোগ্রাফি শেখার ভালো কোন বই আছে কী?
৩। দেশে কারা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি কোর্স করায়?
৪। ফটোগ্রাফি করতে চাইলে কোন ধরনের ক্যামেরা কিনতে হবে?
৫। উড়ন্ত পাখীর ছবি তোলার জন্য কোন ফোকাসিং মোড ইউজ করবো?
৬। নয়েজ রিডাকশন এর কাজ কী?
৭। নাইকন ভালো না ক্যানন ভালো?
৮। পেছনে ঘোলা করে কিভাবে?
৯। ক্যামেরার ISO কি?
১০। ফটোগ্রাফি শিখতে চাই কিভাবে শুরু করব ?
১১। কোন লেন্স কিনব?
১২। একটি ক্যামেরা কিনতে চাই। বাজেট ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কী ক্যামেরা কেনা যায় ?
১৩।ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে সর্বোচ্চ কতটি ছবি তোলা যায়?



এখন একজন মানুষের পক্ষে তো ছবিতে জীবন দেয়া সম্ভব না।এ হাদীস টা বলছে আসলে হাতে আঁকা ছবি ও ভাস্কর্যের কথা। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন যে এর মধ্যে ফটোগ্রাফ ও পরবে। তবে পরে যখন ফটোগ্রাফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। এ হাদীসটা ফটোগ্রাফ এর কথা বলছে না কারণ ফটোগ্রাফি হল আসলে প্রতিবিম্ব, যেটা ধারণ করা হয় কাগজে।ভিডিওগ্রাফি ও একি রকম,ভিডিওগ্রাফি এক ধরনের প্রতিবিম্ব যেটা হয়ত ধারণ করা হয় ফিল্মে। নবীজির সময় কোন সাহাবী যদি পানিতে প্রতিবিম্ব দেখে চুল আচরাতেন। নবী (সা তাকে কখনই বাঁধা দেন নি, তিনি কখনো মুসলিমদের আয়না দেখতে নিষেধ করেন নি। এ ভাবে আমরা জানতে পেরেছি যে ফটোগ্রাফি এ ক্যাটাগরিতে পরে না ছবি আঁকার যে ক্যাটাগরিটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখানে মুলত বলা হচ্ছে হাতে আঁকা ছবি ও ভাস্কর্যের কথা। ফটোগ্রাফি জিনিসটা আসলে নিষিদ্ধ না। তবে এখানে আমাদের এটা দেখতে হবে যে কোন উদ্দেশ্যে সেটা ব্যাবহার করছি।

এখন যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ছুরি জিনিসটা ভাল না খারাপ, যদি ছুরি দিয়ে শাক-সবজি কাটা হয় তাহলে ভাল, যদি ডাকাতির জন্য ব্যবহার করা হয় তাহলে খারাপ, একি ভাবে ফটোগ্রাফির ব্যাপারেও। যদি ফটোগ্রাফি ব্যাবহার করেন কোন ভাল উদ্দেশ্যে, তাহলে অবশ্যই অনুমতি আছে, তবে যদি ফটো ব্যবহার করেন খারাপ উদ্দেশ্যে যেমন - [পর্নোগ্রাফি, অশ্লীলতা] ইত্যাদি, তাহলে ইসলামে এটা নিষিদ্ধ এবং কেউ যদি অশ্লীল ফটো তুলে, যেটা শরিয়ত বিরোধী। তাহলে এর দ্বারা উপার্জিত অর্থও হারাম হবে।

শুধু ছবি তুললে হবে? ধাঁধাও জাণোটে হবে- রফিক সাহেব কিছু খরগোশ নিয়ে বাগানে বেড়াতে গেছেন। তার এক বন্ধু তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, সে জিজ্ঞাসা করল, আপনার কয়টি খরগোশ? রফিক সাহেব একটি ধাঁধার মাধ্যমে উত্তর দিলেন, তিনি বলেন, “দুইটি খরগোশের ডানে দুটি খরগোশ, দুইটি খরগোশের বামে দুটি খরগোশ, দুইটি খরগোশের সামনে দুটি খরগোশ, দুইটি খরগোশের পিছনে দুটি খরগোশ।"
তখন তার বন্ধু সাথে সাথে উত্তরটি সঠিক ভাবে বলে দিলেন। বলুন তো রফিক সাহেব এর কয়টি খরগোশ? আর তার বন্ধুই বা এত দ্রুত উত্তর কিভাবে দিলেন?

যারা নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে না, তাদের মাঝে প্রতিভা থাকলেও তার মুল্যায়ন হয় না। যে যত বেশি নিজেকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে সে তত বেশি রুচিশীল কাজ করেন।
একজন ফটোগ্রাফারকে অনেক কিছু জানতে হয়, শিখতে হয়। ভালো ছবির স্বার্থে মানুষকে ইমপ্রেস করতে হয়।
আপনি কথাটা বলার আগেই ধরে নেন যে অন্যজন হয়তো কথাটা খারাপভাবে নিবে। যা বলতে চান সেটা আগে একটু ভেবে নিন, তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে স্পষ্ট করে বলুন যা বলতে চান। একটু খেয়াল রাখবেন যা বলছেন তাতে যুক্তি আছে কতটা। ভাল করে গুছিয়ে কথা বলতে হলে আপনাকে প্রতি দিন গল্প, উপন্যাস ,কবিতা পড়তে হবে । উচ্চারণ ঠিক করুন। কথার ধরনে মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠে।

জীবনের এক কঠিন সত্য হচ্ছে, নিজেকে আপনি যে মূল্য দেবেন, দুনিয়া আপনাকে সে মূল্যই দেবে। কোয়ান্টামে বলি, আপনি নিজেকে যা পাওয়ার উপযুক্ত মনে করবেন, আপনি তা-ই পাবেন। ১৫ শত বছর আগে নবীজী বলেছেন, কারো সাথে দেখা হলে সালাম বিনিময়ের পরে কুশল জিজ্ঞেস করলে বলবে, শোকর আলহামদুলিল্লাহ! বেশ ভালো আছি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীরা সবাই সুভাষী ছিলেন। যত সুন্দর কথা বলার অভ্যেস করবেন তত মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে পারবেন। আপনার প্রভাব বলয় ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। যারা সুন্দর করে কথা বলে তাদের দেখবেন কিভাবে বলে। কিভাবে শব্দ চয়ন করে। আর উচ্চারণে সমস্যা থাকলে খবর শুনতে পারেন।

কথা বলার সময় মার্জিত ও শোভন হোন। মধুর শব্দ প্রয়োগে অনুচ্চ স্বরে কথা বলুন। শব্দ উচ্চারণে স্বর এত নিচু হওয়া উচিৎ নয় যাতে শুনতে কষ্ট হয়, আবার এত উচ্চ হওয়া উচিৎ নয় যা গাধার ডাকের মত শুনায়। নিজেকে স্মার্ট ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করতে হলে আগে মনের সকল সংকীর্ণতা পরিহার করে, ভয়, লজ্জা দূরে ঠেলে মন থেকে সাহসি হয়ে উঠুন। আসল কথা হচ্ছে নিজেকে যুগোপযোগী ভাবে তৈরি করে উপস্থাপন করা। মনের অস্থিরতা উদ্বিগ্নতা চাঞ্চলতা পরিহার করে ধীরস্থির ভাবে কথাগুলো বলে যান যেখানে গেলে আনিজিফিল হয় বার বার সেখানেই যান। চর্চা করুণ দেখবেন সাহসি হয়ে উঠেছেন।

এছাড়াও যা অবশ্যই করবেনঃ
সালাম দিয়ে কথা বলুন এবং হাসি মুখে কথা বলুন। প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলে কথা বার্তায় আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা ত্যাগ করুন।
সম্মান রেখে বা শ্রদ্ধাপূর্ণ কথা বলুন। বিনয় ও মমতাপূর্ণ কথা বলুন। আন্তরিক বিনয় সকল সৎ গুণের উৎস। কৃতজ্ঞতাপূর্ণ কথা বলুন। যে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারে না সে আসলে স্রষ্টার প্রতিও কৃতজ্ঞ নন। তাই প্রথম সুযোগেই অন্যের যেকোনো শুভ সংবাদে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ জানাবেন। দৈনন্দিন কথায় নেতিবাচক কথা ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ নেতিবাচক কথা হতাশা সৃষ্টি করে এবং শূন্যতা তৈরি করে। বিতর্ক করবেন না। এর মানেই আরেক পক্ষকে হেয় করা। হেয় বা অসম্মান করে আসলে কখনও কারো হৃদয়কে জয় করা যায় না। বুদ্ধিমান মানুষ কখনও বিতর্কে লিপ্ত হয় না বরং তারা বুদ্ধিকে ব্যবহার করে বিতর্ক এড়ানোর জন্যে। কোমল ভাবে কথা বলুন। এতে মানুষ আপনার কথায় মনোযোগ দিবে এবং মানবে। বুঝে কথা বলুন, কাকে কী বলছেন। যেন হিতের বিপরীত না হয়।

ছবি তুললেই তো আর হল না। বাংলা ইংরেজি ভাষার মতো ফটোগ্রাফিরর -ও তো একটা ব্যাকরণ আছে নাকি! তাই ছবি তোলার আগের ব্যকরণ জেনে নিন। চোখ দিয়ে কোনো কিছু সরাসরি দেখা এবং ক্যামেরার সাহায্যে দেখার অনেক পার্থক্য রয়েছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০২০ রাত ৩:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


কত ঘন্টার জন্য জেনারেল করেছে আপনাকে?

২| ০৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ৭:০০

ইসিয়াক বলেছেন: অসাধারণ!
আরো বেশি এধরনের লেখা চাই।
৥কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে পরবর্তী লেখা কবে দেবেন?
শুভকামনা।

০৫ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: আজই দে্ব।

৩| ০৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ৮:৩৬

কল্পদ্রুম বলেছেন: ফটোগ্রাফি আমার শখ নয়।তবুও লেখাটা পড়া শুরু করেছিলাম ভোরে।পড়া শেষে আজিম সালা এর ছবিটা দেখতে গেলাম।খুঁজে পাইনি।কিন্তু অনেকগুলো অসাধারণ ফটোগ্রাফি দেখলাম।তাদের পিছনের ইতিহাস পড়লাম।সময় যেন কোত্থেকে পার হয়ে গেল!
মন্তব্য করতে দুইটা কথা বলতে, আপনার ফটোগ্রাফির উপর লেখা বইয়ের নাম কি? আজিম সালার ছবির লিংকটা দিবেন।নাহলে ব্লগে পোস্ট করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.