নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
(প্রথমেই বলে নিচ্ছি, দুর্বল হার্টের কেউ এই লেখাটা পড়বেন না)
বাগেরহাট যাচ্ছি। সুন্দরবনের পাশে একটি গ্রাম।
গ্রামের নাম রসুলপুর। ঢাকা কমলাপুর থেকে সকাল দশটায় বাসে উঠলাম। রাস্তায় তিনবার বাস নষ্ট হলো। বিকেলে পৌঁছানোর কথা ছিল রায়েন্দা। আমি পৌছালাম রাত ৩ টায়। পনের বছর আগের কথা। তখন রাস্তাঘাট খুব উন্নত ছিল না। প্রচন্ড শীত। সুন্দবনের বিখ্যাত শীত উড়ে এসে গায়ে লাগছে। বাস থেকে নেমে আমি কাঁপছি। চারপাশে ঘুটঘুট অন্ধকার। আমার সাথে যে ক'জন বাস থেকে নেমেছিল তারা মুহুর্তের মধ্যে কে কোথায় চলে গেল। ঈদের ছুটিতে বন্ধুর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। তখন মোবাইল ছিল না। গত পাঁচ বছর ধরে যাব যাব করছিলাম, যাওয়া আর হয়নি।
বাজারের মতো একটা জায়গায় বাস নামিয়ে দিয়েছে।
চার পাঁচটা কুকুর একটা ভাঙ্গা চায়ের দোকানের সামনে জট পাকিয়ে বসে আছে। আমি ভীতু টাইপ মানুষ না। আমার আছে লজিক। কত কঠিন কঠিন ভূতের বই পড়ে আর মুভি দেখে ভয় পাইনি। যাই হোক, আমার বন্ধু বাবলু বলেছিল- তুই বাস থেকে নেমে দেখবি আমি তোর জন্য বাইক নিয়ে অপেক্ষা করছি। হয়তো বাবলু বাইক নিয়ে বিকেলে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে চলে গেছে। বাবলু ছেলে হিসেবে খুব ভালো। যথেষ্ট আন্তরিক। বন্ধু বাবলু বলেছিল- রায়েন্দা থেকে ভ্যানে করে রসুলপুর গ্রামে যেতে এক ঘন্টা লাগে। এত রাতে একটা ভ্যানও নেই। আমি সকাল হওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে হাঁটা শুরু করলাম। আমার হাতে দু'টা বড় ব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে আমার জামা কাপড় আর জুতো।
মাটির রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। চারিপাশে ভয়াবহ অন্ধকার।
প্রচন্ড কুয়াশা। নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরছে। বাতাসে গাছের পাতার শন শন শব্দ। কেমন ভুতুড়ে পরিবেশ! বন্ধু বাবলু বলেছিল- মাটির রাস্তাটা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানেই আমাদের গ্রাম শুরু। বাবলুর বাবা গ্রামের ডাক্তার। খুব নাম ডাক আছে। সুন্দরবন থেকে নানাবিদ জিনিসপত্র নিয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তারা বনের পশু দ্বারা আক্রান্ত হলে বাবলুর বাবার ফার্মেসীতে আসে চিকিৎসা নিতে। কেউ মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে গেছে, কেউ বাঘের থাবা খেয়েছে, কেউ সাপের কামড় খেয়েছে। শুনেছি গ্রামের লোকদের ভয়ডর খুব কম থাকে। আমি শহরের মানুষ আমার প্রচন্ড ভয়।
এই প্রচন্ড শীতেও আমি ঘেমে গেছি।
অনেকক্ষন ধরে হাঁটছি। পথ আর শেষ হয় না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। খুব ক্ষুধাও পেয়েছে। বিকেলের পর আর কিছুই খাইনি। ক্ষুধার সময় আমার মাথা কাজ করে না। ইচ্ছে করছে আশেপাশের কোনো বাড়িতে গিয়ে বলি- আমি অমুক, অমুক জায়গা থেকে আসছি। আমার খুব ক্ষুধা লাগছে আমাকে কিছু খাবার দিন। প্লীজ। যদি কিছু না থাকে- তাহলে গুড় মুড়ি দেন। আর চাপকল থেকে ঠান্ডা এক মগ পানি। সমস্যা হলো আশেপাশে কোনো বাড়ি দেখতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে আমি জংগলের মধ্য দিয়ে হাঁটছি। ঠিক এই সময় একটা ভ্যান গাড়ি দেখতে পেলাম। ভ্যানগাড়ির নিচে একটা হারিকেন মিটমিট করে জ্বলছে। আমি দৌড়ে ভ্যানগাড়ির সামনে গেলাম। এবং অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলাম।
ভ্যানগাড়িতে সতের আঠারো বছরের একটা রুপসী মেয়ে বসে আছে।
কিন্তু মেয়েটা কাঁদছে। খুব কাঁদছে। মেয়েটাকে দেখে খুব মায়া লাগলো। মেয়েটার পাশে একটা লোক শুয়ে আছে। তার সমস্ত শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা। আর বুড়ো মতো একলোক ভ্যান চালাচ্ছে। আমি ভ্যান চালককে বললাম- রসুলপুর গ্রামে যাব। ডা. শাহজাহান তালুকদারের বাড়িতে। মনে হয় আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি। দয়া করে কি আমাকে সেখানে নিয়ে যাবেন? প্লীজ। বুড়ো ভ্যান চালক- মেয়েটিকে দেখিয়ে বলল, শেফালি বুবুকে জিজ্ঞেস করেন। আমি শেফালি'র দিকে তাকাতেই, তিনি ভ্যানে উঠে বসতে ইশারা করলেন। এতটুকু আন্তরিকতা করার জন্য আমার ইচ্ছা করলো মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরি।
অন্ধকার রাস্তা আর প্রচন্ড বাতাস ভেঙ্গে ধীরে ধীরে ভ্যান চলছে।
বেশ ভালো লাগছে। মানুষের মনে এখনও মায়ামমতা আছে। এই মধ্যরাত্রে সাহায্য চাইতেই পেয়ে গেলাম। শেফালি এখনও কেঁদে চলেছে। শেফালি আর আমার মাঝখানে একটি লোক শুয়ে আছে। তার চোখ মুখ ঢাকা। এই মেয়েটি এই লোকটির কি হয়? আমি বেশিক্ষন চুপ করে থাকতে পারি না। শেফালিকে জিজ্ঞেস করলাম, বোন আপনি কাদছেন কেন? কি হয়েছে? শেফালি কান্না থামিয়ে বলল- যে লোকটি শুয়ে আশে, সে আমার স্বামী। সাপের কামড়ে সে আজ সন্ধ্যায় মারা গেছে। তাকে নিয়ে উত্তরপাড়ার শ্মশানে যাচ্ছি। হঠাত করে আমি প্রচন্ড ভয় পেলাম। আমার হাত পা কাঁপছে। আমি এতক্ষন একটা লাশের পাশে বসে আছি! ইচ্ছা করছে- একটা লাফ দিয়ে বাবাগো মাগো বলে ধানক্ষেতের মাঝখান দিয়ে দৌড় দেই।
আমি গল্পের একদম শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।
এরপর যা ঘটল, আমি তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ধুম করে লাশটি দাঁড়িয়ে গেল! তার হাতে ইয়া লম্বা একটা রাম দা। এই রাম দা দিয়ে সাত ফিট দূর থেকেও আমার গলা কেটে নিতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শেফালি বুবু'র হাতে একটা চাইনিজ কুড়াল। মিথ্যা বলব না, চাইনিজ কুড়াল হাতে মেয়েটিকে খুব সুন্দর লাগছিল। বুড়ো ভ্যানচালক আমার পেছন দিয়ে এসে আমাকে জাপটে ধরল। বুড়োর এত শক্তি আমি বুঝতেই পারিনি। তাকে দেখে তো মনে হচ্ছিল তার ভ্যান চালাতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।
মুহূর্তের মধ্যে আমার সব কিছু নিয়ে নিল।
গলার চেন, হাতের আঙটি। ম্যানিব্যাগ। দুই ব্যাগ ভরতি জামা কাপড়। শেফালি বুবু বলল- ওর শার্ট প্যান্ট খুলে, ওকে ন্যাংটা করে ধানক্ষেতে ফেলে রাখলে কেমন হয়? ভ্যানচালক আর রাম দা হাতে লোকটি শেফালির কথায় শায় দিল। আমি মেয়েটির নিষ্ঠুরতায় প্রচন্ড মর্মাহত হলাম। দুঃখ,কষ্ট আর অপমানে আমি জ্ঞান হারালাম।
ভোরবেলা গ্রামের কিছু মুরব্বী মসজিদে ফযরের নামাজ পড়তে গিয়ে আমাকে ধানক্ষেত থেকে উলঙ্গ অবস্থায় উদ্দার করেন। এরপর আমি টানা সাত দিন জ্বরে ভুগলাম। অনেক থানা পুলিশ হলো। সমস্ত গ্রামের মানুষ আমাকে দেখতে এলো। স্থানীয় সংবাদকর্মী আমার উপর এই বিরাট প্রতিবেদন লিখল।
২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:০০
রাজীব নুর বলেছেন: মানূষ যত আধুনিক হচ্ছে তত তাদের মধ্য থেকে ভয়ডর উঠে যাচ্ছে।
২| ২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:৪০
চাঁদগাজী বলেছেন:
গতদিন আপনার পোষ্টে রসুলপুরের একটি রাস্তার সামান্য অংশের ছবি দেখলাম, স্বর্গের মতো।
২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:০১
রাজীব নুর বলেছেন: রসুলপুর আমি অনেকবার গিয়েছি।
৩| ২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:৫৮
শেরজা তপন বলেছেন: ভয় লেগেনি, কিন্তু ভাল লেগেছে
২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:০১
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি সাহসী।
৪| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১১
শায়মা বলেছেন: লেখাটা পড়ে যা মনে এলো তা লিখলে তো আবার দুস্ক পেয়ে যাবে ভাইয়ু!!!
তবে দুঃখ দেখালে দোষ নেই তাই বললাম, আহারে ভাইয়া ......
২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ২:২১
রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী।
৫| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১১
পদ্মপুকুর বলেছেন: রিপোস্ট ক্যান, ব্লগারদের মেমোরি টেস্ট করছেন নাকি? আজকাল সবাই বিভিন্ন রকম টেস্ট করছে ব্লগে...
২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ২:২১
রাজীব নুর বলেছেন: অনেকটা তাই।
৬| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১:১৫
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সুন্দরবন আর সাবধানবানী দেখে ভাবলাম বাগের সাথে যুদ্ধ টুদ্ধর ব্যপার আছে।তাই সাবধানে পড়ছিলাম,ভাবখানা এমন যে বাগ দেখলেই দৌড় দিব।কিন্ত শেষ পর্যন্ত বাগের দেখা পেলাম না।অনেকটা মনে হল প্রাপ্তবয়স্ক দের জন্য এর মতো।
২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ২:২২
রাজীব নুর বলেছেন: জাস্ট ফান করলাম।
৭| ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ১:২৬
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: লিখি বাঘ হয়ে যায় বাগ
২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ২:২২
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।
৮| ২৮ শে জুন, ২০২০ ভোর ৪:৫৪
জোবাইর বলেছেন: আমিতো এতোদিন আপনাকেও দুর্বল হার্টের লোক মনে করতাম! যা-ই হোক, গল্পটি ভালো হয়েছে। তবে এটি আগে কোথায় যেন পড়েছি বলে মনে হচ্ছে।
২৮ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: হতে পারে।
৯| ২৮ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০
ইসিয়াক বলেছেন: আপনার ড্রেস লুট হবার কাহিনী তো আগেও পড়েছি।
তখন আমি ব্লগে নতুন। খুব মজা পাইছিলাম।
আরে বন্ধু রাগ কইরেন না মজা করলাম। যে লোক রাস্তার চিপায় চাপায় হিসু দেয় না তার ড্রেস আনড্রেস হইলে মজাই তো লাগে কি কন?
২৮ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।
১০| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ২:১৪
কল্পদ্রুম বলেছেন: এই লেখাটা দুর্বল হার্টের মানুষরা পড়লেও কিছু হবে না।বাগেরহাটের মানুষ এত খারাপ ডাকাত না যে জামা কাপড় খুলে নিয়ে যাবে।বিশেষত তরুণী ডাকাতের ক্ষেত্রে খুবই অবিশ্বাস্য।মনে হচ্ছে রসুলপুরের মানুষজনের উপর লেখকের একটা সুক্ষ্ম রাগ আছে।
২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা----
ঐ ডাকাত হয়তো বাগের হাট অঞ্চলের ছিলো না। অন্য কোনো অঞ্চল থেকে এসেছে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:৪০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আমার হার্ট খুবই দুর্বল। তারপরও পড়লাম।
এর আগেও আরেকবার পড়েছিলাম।
তখনও আমার হার্ট দুর্বল ছিল।
কিন্তু কেন যেন কোন প্রকার ভয় তো পেলাম না।
কারণ কী?
পৃথিবী থেকে ভয় ডর সব কি উঠে গেল নাকি?