নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রাজীব নুর

আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।

রাজীব নুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুয়া

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ২:২৫



১৯৬২ সালে আমাদের খিলগাও এলাকাটায় তেমন বাড়ি ঘর ছিলো না। কোনো পাকা রাস্তা ছিলো না। ছিলো শুধু জঙ্গল, ডোবা নালা, খাল বিল আর হাবিজাবি। কেউ কেউ জঙ্গল পরিস্কার করে চাষবাস করতো। গুটি কয়েক মানুষ বেড়া আর উপরে টিন দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকতো। বাসাবো'র দিকটা ছিলো পুকুর টুকুর দিয়ে ভরা। রামপুরা এলাকা ছিলো বিশাল একটা খাল। এই খাল গিয়ে মিশে ছিলো বালু নদীতে। খালটার চিহ্ন এখনো সামান্য আছে। শাহজাহানপুর এলাকার বেশির ভাগ জমি ছিলো আখ খেত আর ধানক্ষেত। মোটেও ঘনবসতি ছিলো না। এমন কি রাতের বেলা শিয়ালও ডাকতো। লোকজন ভয়ে বিকেলের পর আর ঘর থেকে বের হতো না। তবে ধানমন্ডি এলাকা বেশ জমজমাট ছিলো।

১৯৬৪ সালের কথা। আমার নানা নানী তখন ভারতের আসামে ব্যবসা করতেন। পিতলের থালা বাটি, মূর্তি, কলস আর শাড়ি লুঙ্গির ব্যবসা। খুব জমজমাট ব্যবসা ছিলো। নানা নানী তখন অনেক টাকার মালিক। যদিও নানা নানী বিক্রমপুরের মানুষ। কিন্তু ব্যবসা করতেন ভারতের নানান জায়গায়। ব্যবসার কারনে আসামে নানা নানী ভাড়া থাকতেন। তখন হঠাত ভারতে শুরু হলো দাঙ্গা। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা। নানা নানী বাধ্য হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে ঢাকায় ফিরলেন। তখন আমার মা নানা নানীর কোলে। নানা নানী ঢাকা ফিরেই এই আমাদের বাড়িটা কিনেন। তখন অবশ্য বাড়ি ছিলো না। খালি জমি ছিলো। নানা নানী তিনটা ঘর তুলে ফেললেন। এবং চলাচলের জন্য দুইটা বেবী টে্কসী কিনে ফেললেন। মাঝে মাঝে বিক্রমপুর থেকে এসে ঢাকা থাকেন। ঢাকা এসে আবার ব্যবসায় মন দিলেন।

ছোটবেলায় আমাদের এলাকায় সব বাড়িতেই প্রায় কুয়া ছিলো। কুয়া ব্যাপারটা আমার কাছে খুব রহস্যময় লাগতো। ধীরে ধীরে আমাদের এলাকার বাড়ি গুলোর কুয়া ভরাট হয়ে যেতে লাগলো। সবাই ওয়াসার লাইন নিয়েছে। কিন্তু একটা বাড়িতে ওয়াসার লাইন থাকা সত্ত্বেও সে তার কুয়া ভরাট করেনি। আমি সেই বাড়িতে প্রতিদিন যেতাম। কুয়ার পাশে বসে থাকতাম। ওয়াসার লাইন থাকা সত্ত্বেও তারা কুয়ার পানি ব্যবহার করতো। কুয়াটা অনেক গহীণ ছিলো। লম্বা একটা দড়ি ফেলতো কুয়ায়। দড়িতে একটা বালতি বাধা থাকতো। কুয়ার পানি খুব স্বচ্ছ ছিলো। আর কি ঠান্ডা। সেই সময় ওয়াসার পানি সব সময় পাওয়া যেত না। লোকজন রাত জেগে পানি তুলে রাখতো ড্রামে। সেই কুয়ার পানিতে আমি বেশ কয়েকবার গোছ্লও করেছি।

আমাদের বাড়ির তিনটা বাড়ির পরেই সেই বাড়িটা। যে বাড়িটায় কুয়া ছিলো। আমি রোজ কুয়াটার কাছে গিয়ে বসে থাকতাম। বেশ ভয় লাগতো তবু যেতাম। মাথা ঝুকে কুয়ার গভীরে তাকাতেও ভয় করতো। মনে হতো যদি পা পিছলে পড়ে যাই। কুয়ার চারপাশে প্রচন্ড শ্যাওলা। একটা পনের ষোল বছরের মেয়ে রোজ কুয়ার ধারে বসে গোছল করতো। আমি মেয়েটার পাশে বসে থাকতাম। তখন আমি অনেক ছোট। হাফ প্যান্ট পড়ি। তাই আমার সামনে গোছল করতে মেয়েটার কোনো সমস্যা ছিলো না। মেয়েটার ছবি আমার চোখে এখনও ভাসে। মেয়েটা চিকন করে। গায়ের রঙ ফর্সা। মাথার চুল অনেক লম্বা ছিলো। মুখটা ভিষোণ মিষ্টি। মেয়েটা গোছল করতে করতে আমার সাথে অনেক গল্প করতো। একদিন মেয়েটা বলল, আমি যদি কুয়ার মধ্যে পড়ে যাই তোমার মন খারাপ হবে রাজীব? তুমি কান্না করবে? আমি বলেছিলাম, তুমি কুয়ায় পড়ে গেলে আমি তোমাকে বাচাবো।

মেয়েটার নাম আজ আর আমার মনে নেই। মেয়েটা আমাকে তুমি করে বলতো। আমি ছোট তবু আমাকে 'তুই' না বলে 'তুমি' করে বলতো ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগতো। মাঝে মাঝে মেয়েটা আমাকে বলতো- আজ দুপুরে আমার সাথে ভাত খেয়ে যাবে। একদিন গেলাম মেয়েটার ঘরে ভাত খেতে। মেয়েটার বাবা মা বাসায় নেই। তারা দুইজনই চাকরি করেন। আমরা দু'জন ভাত খেতে বসলাম। ছোট ছোট টেংরা মাছ আলু বেগুন দিয়ে রান্না করা। আর ডাল। খাবার দেখেই আমার পছন্দ হলো না। আমি বড় মাছ ছাড়া ভাত খাই না। মূরগীর লেগ পিস ছাড়া আমার চলেই না। অথচ মেয়েটাকে কিছু বললাম না। চুপ করে টেংরা মাছ আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে নিলাম। মেয়েটা আমার মাথার চুল আচড়িয়ে দিতো। আমাকে বলতো তোমার চুল অনেক সুন্দর। চুলেরে ঘ্রানটাও সুন্দর।

একদিন শুনি বাইরে খুব হই চই। আমি ঘর থেকে বের হয়ে শুনি- মেয়েটা কুয়ার মধ্যে পরে গেছে। আমার ইচ্ছা করলো আমি কুয়ার মধ্যে এক্ষুনি লাফ দিবো। এবং মেয়েটাকে তুলে আনবো। আমি পারবো মেয়েটাকে বাচাতে। মেয়েটা কখন কুয়ায় পড়েছে কেউ জানে না। কুয়ায় লাশ ভেসে উঠার পর সবাই দেখলো, জানলো। পুলিশ এলো। মেয়েটাকে কুয়া থেকে উঠানো হলো। আমি সমস্ত ঘটনায় প্রচন্ড কষ্ট পেলাম। মেয়েটা আমার চেয়ে বয়সে বড় হলেও মেয়েটাকে আমার ভীষন ভালো লাগতো। আপন আপন লাগতো। কতদিন মেয়েটা সীমাহীন ভালোবাসা নিয়ে তার বু্কে আমার মাথা চেপে ধরেছে। মেয়েটার শরীরের সব সময় বেলী ফুলের গন্ধ থাকতো। এই ঘটনার পরে মেয়েটার বাবা মা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এবং বাড়িওয়ালা কুয়ার মূখ একেবারে টিন দিয়ে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমি প্রায়ই কুয়ার কাছে যাই। কুয়ার দুই হাত দূরে একটা ডালিম গাছ আর বড়ুই গাছ ছিলো। আমি চুপ করে ডালিম গাছে বসে থাকতাম। আমার মনে হতো মেয়েটাকে যেন আমি দেখতে পাচ্ছি। অনুভব করতে পারছি। বেশ আনন্দ হতো মনে।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০২০ ভোর ৪:০০

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: তখন মানুষ কম সচেতন ছিল।আমাদেরও কুয়া ছিল গ্রামের বাড়ীতে।সেটা ছিল চাক কুয়া।মাটির উপরে এক দুই হাত উঁচু ছিল।যাতে কেউ পড়ে না যায়।ঘটনাটা খুবই মর্মান্তিক।

২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: কুয়া খুব রহস্যময়।

২| ২৯ শে জুন, ২০২০ ভোর ৪:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


অনেক কষ্টকর ঘটনা

২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: মেয়েটা বেঁচে থাকলে একজন ভালোবাসার মানুষ বাড়তো।

৩| ২৯ শে জুন, ২০২০ ভোর ৫:২৭

আজাদ প্রোডাক্টস বলেছেন: So sad

২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।

৪| ২৯ শে জুন, ২০২০ ভোর ৬:৫৫

শুভ্রনীল শুভ্রা বলেছেন: কখনো কুয়া থেকে পানি উঠানো হয়নি। এক বাগানে দেখলাম কুয়ার ডেমো।



গল্পের শেষটা অমন করে শেষ না হলেই ভালো হতো।

২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী এই রকমই।

৫| ২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আমি এক সময় বরগুনার পাথরঘাটায় চাকরি করতাম ।
সেখানে নলকূপ ছিল না । সম্ভবত এখনো নলকূপ নেই ।
ওই এলাকায় পুকুর থেকে পানি তুলে বাসায় স্থাপিত ফিল্টার থেকে ছেঁকে নিয়ে পান করতে হত।
বিশেষ ধরনের এই ফিল্টার সব বাড়িতে থাকত না ।
অবস্থাপন্ন ঘরের লোকজন বাড়িতে পানির ফিল্টার স্থাপন করতেন।

২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি অনেক অভিজ্ঞ মানুষ।

৬| ২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: খিলগাঁও এর তিলপা পাড়াতে আমার ও আমার ছোট ভাইয়ের জন্ম। বাসাবোতেও থেকেছি। আহাম্মদবাগে ছিলাম। খিলগাঁর ঝিলে আমার বোন গোসল করেছে ১৯৭৩-১৯৭৪ সালের দিকে (পরে শুনেছি)। কুয়ার ঘটনাটা আপনাকে নিশ্চয়ই প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছে।

২৯ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: তিলপা পাড়াতে আমি আড্ডা দেই।
বাসাবো তে মাঝে মাঝে যাই। আমার বন্ধুর বাড়ি সেখানে।
খিলগাও ঝিলে এখন খুবই করুন অবস্থা।

৭| ২৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:০৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: খিলগাঁ এর ঝিলের মধ্যে একটা দ্বীপের মত বাড়িতে নৌকায় করে গিয়েছিলাম ছোটকালে ( ১৯৭৫-৭৫ সালে সম্ভবত)। এখন হালকা মনে পরে। নৌকা থেকে শাপলা তুলতে দেখেছি বড়দের। ঝিলের পানি তখন টলমল করত আর পরিষ্কার ছিল। ১৯৯০ সালে পুনরায় তিলপা পাড়াতে থেকে ছিলাম ১ বছর। আমাদের পরিবার ঐ এলাকায় প্রায় ১০ বছর ছিল।

২৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি এখন এসব এলাকা দেখলে চমকে যাবেন। চিনতেই পারবেন না।

৮| ২৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:২৫

করুণাধারা বলেছেন: সময় নিয়ে গোলমাল লাগলো। ১৯৬৪ তে আপনার মা কোলের শিশু আপনার জন্ম আশির দশকে। ঢাকা শহরে তখন কূয়া পেলেন ???

২৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: ৯০ দশক পর্যন্ত ঢাকা শহরে কিছু কুয়া অবশিষ্ট ছিলো।

৯| ২৯ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪

ইসিয়াক বলেছেন:
বাসাবোতে আমাদের জমি ছিলো। ছোটবেলাতে গাড়িতে করে একবার গিয়েছিলাম সবাই মিলে জমিটা দেখতে। কেমন যেন গ্রাম গ্রাম ছিলো। আর যাইনি।

২৯ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: জমিটা কই?

১০| ২৯ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৭

ইসিয়াক বলেছেন: কুয়া নিয়ে আমার আজব ধরনের ভয় কাজ করতো।আমাকে কাছাকাছি নিয়ে গেলেই ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতাম।

২৯ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: হুম।

১১| ২৯ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০

ইসিয়াক বলেছেন:
গল্পটা ভালো লাগলো। আবার মনও খারাপ হলো মেয়েটার জন্য। ভালো থাকুন।

২৯ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: মেয়েটা তো দুনিয়াতে নাই। আমি আছি। আমার জন্য মন খারাপ হয় না?

১২| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ৯০ সালে আমি খিলগায়ের একটা বাড়িতে কুয়া দেখেছি।

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমিও খুশি।

১৩| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:৫১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি বেড়ি ( যে দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়) ছাড়া কুয়া দেখেছি।

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ও মাই গড।

১৪| ৩০ শে জুন, ২০২০ ভোর ৬:৪৫

ইসিয়াক বলেছেন: লেখক বলেছেন: মেয়েটা তো দুনিয়াতে নাই। আমি আছি। আমার জন্য মন খারাপ হয় না?

না।

৩০ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো থাকুন।

১৫| ৩০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:০৪

ইসিয়াক বলেছেন: কি খবর?

৩০ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: বেঁচে আছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.