নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ভাল মানুষ বলেই নিজেকে দাবী করি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার সমস্যা।
১৯৮৪ সালের কথা।
সেদিন বাংলাদেশের বৃহত্তর সকল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ৭ দল, ৫ দল, ১৫ দল যুগপৎভাবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করত তাদেরই শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। স্কপ তখন খুবই শক্তিশালী সংগঠনে রুপ নেয়। তাদের শ্রমিক বান্ধব দাবি দাওয়ার চেয়েও বড় দাবি ছিল এরশাদকে স্বৈরাচার আখ্যায়িত করে ক্ষমতাচ্যুত করা যা তাদেরই মূল দল করে আসছিল। এদিকে স্কপ ২১ ও ২২ শে মার্চ, ১৯৮৪ দুইদিন ব্যাপী ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়ে সকল পেশাজীবি সংগঠনের সাথে তাদের আহুত ধর্মঘট কর্মসূচি সফল করার অংশ হিসাবে ১১ ই মার্চ, বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সাথে বাসদ কার্যালয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, আমরা সচিবালয় কর্মচারীরাও আমাদের দাবী দাওয়া যেমন- বেতন কমিশন গঠন, বেতনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ধাপ ১ঃ৫, উৎসব ভাতা, টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড, পেনশনের হার বৃদ্ধি, গ্রাচ্যুইটি বৃদ্ধি, হায়ার পারচেজ নীতিতে সরকারি কর্মচারীদের বাসস্থানের ব্যবস্হা ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলনে ছিলাম।
আমাদের অনেক নেতা সেদিন স্কপের সাথে বৈঠকের বিরোধিতা করলেও শেষাব্দি সিদ্ধান্ত হয়, আজিজুর রহীম, সৈয়দ মহীউদ্দীন, সামসুদ্দীন মিয়া ও আমাকে সচিবালয় কর্মচারীদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করার। আমরা যথাসময়ে বাসদ কার্যালয়ে গেলাম। স্কপের সকল শীর্ষ নেতার উপস্হিতিতে কমরেড তোয়াহার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়।
আমার যতদূর মনে পড়ে ঐ সভায় শ্রমিক দলের ইস্কান্দার ভাই, শ্রমিক লীগের সালাম ভাই, গনতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলনের নাসিম ভাই, নুরুল আনোয়ার ভাই, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম ভাই প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কুশল বিনিময়ের পর সভার শুরুতেই কমরেড তোয়াহা সাহেব প্রস্তাব দিলেন স্কপের ২১-২২ শে মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, আপনারা সচিবালয়ে পালন করলেই সরকার পতন হবে।
আমাদের নেতারা এ প্রস্তাব শুনে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। তখন আমি বললাম, ঠিক আছে আমরা আপনাদের প্রস্তাবে রাজি, তবে সরকার পতনের পর আপনাদের মুল দল সরকার গঠন করলে আমাদের দাবী দাওয়া মেনে নিবে, এ ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হলেই আমরা আপনাদের কর্মসূচি পালন করব। এ কথা বলার পর সভাপতি সাহেব বললেন- ঠিক আছে, আমাদের মূল নেতাদের সাথে আলাপ করে পুনরায় বৈঠকে বসব। ঐদিন সভা মূলতবী ঘোষনা করা হয়। এই সভা ছিল রুদ্ধদ্বার যার কারনে সভার সিদ্ধান্ত কোন সংস্থা জানতে না পারায় বাহিরে আসলে ডিজি এফআই, এসবি'র কর্তারা আমাকে জিজ্ঞেস করায় আমি তাদের বললাম, আলোচনা ফলপ্রসূ। এ ইংগিতে সকল সরকারি সংস্থা নড়েচড়ে বসলেন। তারা ঐ রাতেই স্কপের সাথে আমাদের বৈঠকের খবর রাষ্ট্রপতি এরশাদের নিকট পৌঁছালে তিনি চিন্তিত হয়ে যান এবং তার অত্যন্ত আস্থাভাজন মন্ত্রী ১৮ দফা বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব, স্হানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব মাহবুবুর রহমান সাহেককে দায়িত্ব দিলে তাঁর রাজনৈতিক সচিব জনাব নুরুজ্জামান মুন্না ভাইকে আমাদের সাথে সংযোগ তেরী করার দায়িত্ব দিলে, তিনি আমাদের সাথে কথা বলেন এবং মন্ত্রী মহোদয় কথা বলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন মর্মে আমাদের জানান। এখানে উল্লেখ্য যে, সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ ৩১ সদস্যের কমিটি থাকলেও আমরা চারজন সর্বজনাব আজিজুর রহীম, সৈয়দ মহীউদ্দীন, সামশুদ্দীন মিয়া ও কনিষ্ঠতম ব্যক্তি আমি মুঃ শাহ আলম।
১২ ই মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে রাত দশটায় মগবাজারে অবস্হিত লর্ডস ইন হোটেলের নীচতলার একটি কক্ষে হোটেল ম্যানেজার আমাদের চারজনকে বসালেন। ঘড়ির কাঁটায় তখন টিকটিক করে সময় সময় পার হতে লাগলো এবং অজানা ভবিষ্যতের ভাবনায় আমরা উৎকন্ঠিত ছিলাম যা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মাহবুব সাহেব মুন্না ভাইকে নিয়ে আমাদের সামনে যখন এলেন তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে দশটা। বর্তমানে এ রাত কোন রাতই না কিন্তু ভাবুন, এই থেকে ৩৪ বছর পুর্বের ঢাকা শহরের কথা। তখন এতো রাতে শহর কোলাহল শুন্য হয়ে নিরব হয়ে যেত। নিশিচর ছাড়া এতো রাতে কেউ চলাচল করতো না। যা হোক, মাহবুব সাহেব খুব সংক্ষিপ্ত আকারে বললেন, আমি তোমাদের এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেখানে গেলে তোমরা লাভবান হবে। আমরা ভাবলাম, আমরাতো ফেসে গেছি সুতরাং দেখি কোথায় ভিড়ে ওনার তরী। জনাব মাহবুব সাহেব মুন্না ভাইকে বিদায় দিয়ে নিজে ফ্লাগহীন গাড়ি ড্রাইভ করে রাত ১১ টায় সেনা সদরের গেইটে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে রক্ষীদের গেইট খুলতে বললেন এবং গাড়িতে স্যারের মেহমান আছেন। বলার সাথে সাথে সেনা সদরের দরজা খুলে গেল। আমরা পৌঁছলাম কোথায় এটা বুঝার আর বাকী রইল না।
আমরা চার জন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মুঃ আজিজুর রহীম, মহাসচিব সৈয়দ মহীউদ্দীন, সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ও উপ-মহাসচিব হিসাবে আমি এবং মাননীয় মন্ত্রী জনাব মাহবুবুর রহমান সেনা সদরের একটি বৈঠক খানায় অবস্থানরত অবস্থায় দেখলাম এক ভদ্রলোক হাতে চায়ের ট্রে নিয়ে আমাদের সামনে হাজির। তিনি সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা, সাদা নাগরা স্যু পরিধান করে আমাদের কক্ষে হাজির হলেন। তিনি আর কেউ নন আমাদের স্বপ্নের পুরুষ মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি আমাদের সামনে বসে বললেন, আপনারা আমার কাছে কি চান, তখন মহিউদ্দিন ভাই বললেন স্যার আপনি আমাদের তুমি বলে সম্বোধন করলই খুশি হবো। অতঃপর তিনি জানতে চাইলেন তোমরা আমার কাছে কি চাও? তখন মহিউদ্দিন ভাই বললেন, আমাদের পেশকৃত দাবী দাওয়া মেনে নিলেই আমরা খুশি হবো। তখন এরশাদ সাহেব বললেন ওরাতো তোমাদের সাথে আমি বসি সেটা চায় না (এখানে ওরা বলতে আমলাদের কথ বুঝাইয়াছেন)। তখন আমরা বললাম কালকের আমাদের সমাবেশ আছে, সেখান থেকে আমরা আপনার সাথে আলোচনার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখবো, তার আলোকে আপনি আমাদের ডাকার সুযোগ পাবেন। দাবী দাওয়া নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা করে আমরা রাত সাড়ে বারোটায় সেনা সদর ত্যাগ করলাম।
আমার কাছে সারারাত স্বপ্নের মতো লাগলো। পরের দিন ১৩ ই মার্চ, ১৯৮৪ তারিখ সকাল দশটায় সচিবালয়ের ৬ নং ভবনের পশ্চিম পাশে কর্মচারী জমায়েতে একক বক্তা সৈয়দ মহীউদ্দীন এবং সভাপতিত্ব করেন আজিজুর রহীম। সংক্ষিপ্ত সভায় বলা হলো, আমরা কারো সাথেই আলোচনা করবো না। একমাত্র রাষ্ট্রপতির সাথেই আমাদের আলোচনা হবে। পুর্বের রাতের কথামতো বিকেলে আমাদের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব আযহার আলী সাহেব লোক পাঠিয়ে জানালেন, রাষ্ট্রপতি মহোদয় আপনাদের সাথে আগামী কল্য তিনটায় বংগভবনে আলোচনায় বসবেন, আপনারা ৪০ জন প্রতিনিধির নাম স্বরাষ্ট্র সচিবের দপ্তরে আজকের মধ্যে জমা দিবেন।
তখন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলছে, তাই বাংলাদেশের কর্মচারীদের নেতৃত্ব দানকারী অন্যন্য সংগঠন যথা- অডিট পরষদের কাজিম উদ্দিন, মোঃ ইব্রাহিম খলিল, বাগসপের (বাংলাদেশ গনকর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ), মোশাররফ হোসেন ও লুইস এ কষ্টা, নন- গেজেটেড কর্মচারী ঐক্য ফ্রন্টের হারুনর রশীদ সহ সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের প্রতিনিধির নাম স্বরাষ্ট্র সচিবের নিকট পৌঁছে দিলাম।
১৪ই মার্চ, ১৯৮৪ তারিখ বিকেল ৩ টায় ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো কোনো সরকার প্রধান নিম্ন বেতনভুক কর্মচারী নেতাদের বঙ্গভবনে দরবার হলে আমন্ত্রণ জানিয়ে সন্মানিত করেছে কিনা আমার জানা নাই, তা এরশাদ সাহেব করে আমাদের সন্মানিত করেছেন। আমরা দরবার হলে বসলাম, একে একে ৫ জন সচিব যথাক্রমে মন্ত্রী পরিষদ সচিব এম এম,জামান, সংস্হাপন সচিব (বর্তমানে জনপ্রশাসন), শ্রম সচিব মোশাররফ হোসেন, স্বরাষ্ট্র সচিব কাজী আযহার আলী ও অর্থ সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী মাহবুবুর রহমানসহ দরবার হলে উপস্হিত হলেন।
আমরা তাকে দাঁড়ায়ি অভিবাদন জ্ঞাপন করলাম। অতঃপর প্রতিটি সংগঠন থেকে একজন করে বক্তব্য রাখার পর শেষ বক্তা সৈয়দ মহীউদ্দীন, তিনি তার বক্তৃতায় বললেন- মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমাদের দুই ঈদে বেতনের অর্ধেক অর্ধেক ঈদ অগ্রিম দেওয়া হয়, যা পরবর্তী ৮ কিস্তিতে কেটে নেয়া হয়, আমরা যে বেতন পাই তাতে সংসার চলে না, তার উপর অগ্রিম কেটে নিলে আমাদের মনে হয়, কে যেন আমাদের কলিজা ছিড়ে নিচ্ছে। সুতরাং আমরা এ অবস্থার অবসান চাই, আবেগপ্রবণ রাষ্ট্রপতি বললেন, মহিউদ্দিন স্টপ, স্টপ, আমি তোমাদের কষ্টের কথা শুনতে পারবো না। আমি তোমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে যাতে ঈদ করতে পার সে জন্য "ঈদ উৎসব ভাতা "প্রদান করলাম। দরবার হল সেদিন কর্মচারী নেতাদের আনন্দে মনের অজান্তে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হলো। ৫ জন সচিব দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো স্যার দেশে ফান্ড নাই, কিভাবে অর্থ সংকুলান হবে। তখন কর্মচারী বান্ধব এরশাদ সাহেব বললেন, প্রয়োজনে উন্নয়ন খাতে অর্থ কার্টেল করে এদের উৎসব ভাতা দিতে হবে। সূচনা হলো সরকারি কর্মচারীদের উৎসব ভাতার প্রচলন, যা হয়তো বর্তমান প্রজন্ম জানে না।
(লেখকঃ মুহম্মদ শাহ আলম, আইনজীবি।)
০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: কাকে বললনে?
২| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা পঁচে গিয়েছিলো,জিয়া ও এরশাদ তাদেরকে দলে নিয়েছিলো।
০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: বঙ্গবন্ধু কাদের নিয়েছিলেন?
৩| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: নেতারা সবসময় অনেক খারাপের মাঝে ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন- এরশাদ তার ব্যতিক্রম নন! তবে এদেশের রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়নের সূচনা তিনিই করেছেন।
=== কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক চরিত্রের দূর্বল দিক হচ্ছে আগের সরকারের সকল উন্নয়ন কার্যক্রমে দূর্নীতির গন্ধ খুঁজে তা বাতিল করা; আর নতুন করে ধান্ধা করা!
০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য করেছেন।
৪| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:২৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ছকিবতে এরশাদ সাবের সাথে কি আপনর
শ্বশুর ?
০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: জ্বী আমার শ্বশুর।
এবং একদম শেষের ছবিটায় শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন আমার শ্বশুর।
৫| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:২৯
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
এরশাদ সাহেব দেশের অনেক কিছু নষ্ট করে দিয়ে গেছেন।
০৯ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: কি কি নষ্ট করেছেন?
৬| ১০ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনার শ্বশুর মশায়ও একজন জাদরেল ব্যক্তি মনে হচেছ, একে নেতা, দুইয়ে লেখক...
১০ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: তিনি একজন ভালো মানুষ। সৎ মানুষ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:২১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: বিরাট নেতা।