![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নারী, এই নারী। ওঠো তো। এত ঘুমালে চলবে। দ্রুত উঠে পড়। তোমার পরিচয় দাও। কে তুমি?
ছেলেটির ক্রমাগত চেষ্টা আর ডাকার ফলে এক সময় আড়মোড়া ভেঙ্গে মেয়েটি জেগে ওঠে। কিন্তু পরক্ষনেই নিজের নগ্ন দেহের সামনে একজন তরুনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। দু’হাত দিয়ে নিজের লজ্জাস্থান লুকাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে।
কিন্তু ছেলেটি নির্লিপ্ত, সে মেয়েটির বাহু ধরে তাকে সোজা হয়ে দাড়াতে সাহায্য করে। ছেলেটি বুঝতে পারে না মেয়েটির মনের ভাষা। সে অনুভব করতে পারে না যে মেয়েটি লজ্জা পাচ্ছে।
সহস্র বছর পর ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠা মেয়েটি সোজা হয়ে দাড়াতে পারছে না। অনেক দিন বিশ্রামে থাকা তার পা’দুটি শরীরের ভর সঠিক ভাবে নিতে পারছে না।
অলস চোখে মেয়েটি একবার ছেলেটির চোখে তাকায় পরক্ষনেই আবার নিজের নগ্ন দেহ দেখার চেষ্টা করে। ছেলেটি মেয়েটির মনের ভাষা বুঝতে পারে না কিন্তু মেয়েটি ঠিকই ছেলেটির মনের ভাষা বুঝতে পারে। মেয়েটি বুঝতে পারে ছেলেটির সরল দৃষ্টি যে দৃষ্টিতে নেই কোন কামনা –বাসনা। নেই কোন লোভ বরঞ্চ আছে দু’চোখ ভরা বিস্ময়!
আমি এখন কোথায়? প্রশ্ন করে মেয়েটি।
তুমি এখন সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ মঙ্গলের মিসোন সিটিতে।
মিসোন! অবাক হয় মেয়েটি; মিসোন, আমার ভালবাসা, আমার স্বপ্ন, আমার প্রেম, মাই ড্রিম ওয়েভার। বিড়-বিড় করে মেয়েটি আওড়াতে থাকে।
হ্যা। তুমি এখন মিসোন সিটিতে। কিন্তু তুমি এই নারী শুন্য মহাবিশ্বে এলে কি করে? রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে আবার প্রশ্ন করে ছেলেটি।
নারী শুন্য মহাবিশ্ব! প্রচন্ড অবাক হয় মেয়েটি।
হ্যা। মহাবিশ্বের বর্তমান সভ্যতা পুরুষ সভ্যতা কারন পুরুষই শ্রেষ্ঠ। প্রায় হাজার বছর আগে পৃথিবী তথা পুরো মহাবিশ্ব হতে নারী জাতিকে বিদায় জানানো হয়েছে কারন মহাবিশ্বের কোন ক্ষেত্রেই নারীর প্রয়োজন নেই। নারী হচ্ছে উটকো একটা ঝামেলা মাত্র। দুষিত আর্বজনা। তাদের কারনে শান্তি নষ্ট হয়। মহাবিশ্বের যত বিস্ময়কর যুদ্ধ, অপরাধ মুলক যত কর্মকান্ড আর যত অনৈতিক কাজ সংঘটিত হয়েছে নারীর কারনে। কিন্তু তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দাও, এই নারী শুন্য মহাবিশ্বে তুমি আসলে কেমন করে? কোন বিজ্ঞানী যদি ল্যাবরেটরীতে তোমাকে ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদন করে থাকে তবে জেনে রাখ এর পরিনতি খুবই ভয়াবহ হবে কারন কোন প্রকার গবেষনার জন্যও নারীর উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
লম্বা নিরবতার পর মেয়েটি মুখ খূলল।
হাজার বছর পুর্বের মানবী আমি। তুমি যে বললে মিসোন সিটি। মহামান্য বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. লিয়াকত আলী চৌধুরীর সহকারী হিসেবে আমি কাজ করতাম। ঘুমের মাধ্যমে হাজার বছর বেচে থাকার প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করলাম কারন আমি দেখতে চেয়েছিলাম হাজার বছর ভবিষ্যতের পৃথিবী। আর নিজেকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম হাজার বছরের জন্য। মেয়েটি বলে যেতে লাগল; কিন্তু নারী ছাড়া একটি সভ্যতা বেচে থাকে কিভাবে? সন্তান জম্নদান প্রক্রিয়া, মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা যৌন ক্ষুধার মত বিষয় গুলোকে মানুষ উপেক্ষা করে কিভাবে!?
ছেলেটি তার কক্ষের মধ্যে এক পাক ঘুরে এসে দাড়াল মেয়েটির সামনে; সন্তান উৎপাদন? ক্লোনিং প্রক্রিয়ার কথা নিশ্চয়ই জানে নারী। একজন পুরুষ একই সাথে এক্স [x] এবং ওয়াই [y] ক্রমোজম ধারন করে যার মাধ্যমে ছেলে অথবা মেয়ে উভয়ই তৈরা করা যেতে পারে। সভ্যতার যে কোন প্রয়োজনে আমরা নারী উৎপাদন করতে পারব। কিন্তু একজন নারী শুধু মাত্র এক্স (x) ক্রমোজমের ধারক যা শুধু মাত্র মেয়ে শিশুর জম্ন দিতে পারে। তাই একটি নারী সভ্যতা কখনোই একটি পুরুষ উৎপাদন করতে পারত না। ভেবে দেখ এক্ষেত্রে একজন পুরুষই কিন্তু পুর্নাঙ্গ সৃষ্টি। আর যৌন চাহিদার কথা বলছ? সে তা গত হয়েছে শতশত বছর। অতীতে এবং এখনো মনে করা হয় যৌন চাহিদা ছিল পুরুষের এক প্রকার দুর্বলতা ও ব্যাধি এবং এই ব্যাধিকে ঘিরেই দুজন নারী পুরুষের মধ্যে ভালবাসা তৈরী হত। ভালবাসা, প্রেম অবশ্যই ভাল কিন্তু বৃহৎ র্স্বাথে সব অনৈতিক কাজের মুলে থাকত নারীরা। তাই বিজ্ঞানীরা তাদের পরীক্ষার প্রথম ধাপ হিসেবে তারা যৌন নামক ব্যাধির প্রতিষেধক তৈরী করে সমস্থ পুরুষের মধ্যে পুশ করে দিলেন। পুরুষের মধ্যে এই অনুভুতির বিলুপ্তি ঘটায় নারীর চাহিদাও কমতে থাকল। এবং একদিন বিলুপ্ত হয়ে গেল নারী জাতি। কিন্তু অতীত সভ্যতার বিস্তার ও টিকিয়ে রাখার অবদান স্বরুপ নারীদের আমরা সম্মাননের সাথেই স্মরন করি। মহাবিশ্বের সমস্থ গ্রহের নামী দামি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নারী নামক বিষয়টি পড়ানো হয়। এখানে একজন নারী সর্ম্পকে পুর্নাঙ্গ শিক্ষা দেয়া হয়। কিন্তু তবুও নারীদের জন্য নিষিদ্ধ এই সভ্যতা কখনোই তোমাকে গ্রহন করবে না।
আমি এখন কি করব? ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় মেয়েটি।
ইষৎ হাসে ছেলেটি; তোমার এখন কিছুই করার নেই। তুমি শুধু অপেক্ষা করতে পার মুক্তির জন্য আমি তোমাকে মুক্তি দেব।
না। না। চিৎকার করে ওঠে মেয়েটি; দেখ যুবক, আমার চোখের তারায় দৃষ্টি রাখ, মহাবিশ্বের সমস্থ সুখকর অনুভুতি আমি তোমার পদতলে লুটিয়ে দেব। একটা সুখকর অনুভুতির মাধ্যমে আমরা একটা শান্তিময় ভুমি গড়ে তুলব। তুমি আমাকে মেরো না। অথবা আমাকে চলে যাবার সুযোগ দাও। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মেয়েটি।
শুন্যডিগ্রি সেলসিয়াসের এক শীতল হাসিতে লুটিয়ে পড়ে ছেলেটি; না। আমি তোমাকে সেই সুযোগ দিতে পারি না। আমি চাই না পৃথিবীতে আবার আর একটি *প্যান্ডোরার আর্বিভাব হোক, শান্তি বিনষ্ট হোক এই মহাবিশ্বের। তোমাকে আমি অব্যশ্যই মুক্তি দেব। তার পর ছুড়ে ফেলে দেব ব্লাকহোলের সীমানায়। তুমি জান না যোগ্যতমরা টিকে থাকে বাকীরা লোপ পায়? তাই বহু আগে নারী নামক প্রজাতি পৃথিবী তথা মহাবিশ্ব হতে লোপ পেয়েছে। তোমাকে বাচিয়ে রেখে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে অন্যের শান্তি নষ্ট করার কোন অধিকার আমার নেই।
সেলফ হতে ক্ষুদে অস্ত্রটি উঠিয়ে নিয়ে ছেলেটি দু’কদম এগিয়ে আসে। মেয়েটি চিৎকার করে ওঠে, অবাক দৃষ্টিতে তাকায় ছেলেটির চোখে তারপর নারীর নিথর দেহটি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।
*প্যান্ডোরা: গ্রিক মিথের অপুরুপ রুপবতী, স্বর্গের সেরা সুন্দরী, দেবতা কন্যা প্যান্ডোরা। শান্তিময় পৃথিবীতে দেবতারা প্যান্ডোরাকে পাঠান একটি বাক্স দিয়ে। প্যান্ডোরা পৃথিবীতে এসে সেই বাক্স খোলে এবং সমস্ত প্রকার অন্যায় আর অনৈতিতা, খুন, হিংসা, বিদ্বেষ, মিথ্যা ইত্যাদি ওই বাক্স হতে বেরিয়ে পড়ে। সব খারাপ বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে প্যান্ডোরা তড়িৎ বাক্সের ঢাকনা বন্ধ করে দেয় কিন্তু ততক্ষনে সব অনৈতিক কাজগুলো বের হয়ে গেছে কিন্তু আশা নামক অনুভুতিটা বের হতে পারে নি তাই বাক্সের ভিতর পড়ে রইল আশা। আর তারপর হতেই পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল হিংসা, বিদ্বেষ। কিন্তু এতকিছুর পরও মানুষ বেচে থাকার প্রেরনা পায় কারন আশা। আশা, মানে বেচে থাকার প্রেরনা।
©somewhere in net ltd.