![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেকে জানার একটা মাধ্যম হচ্ছে লিখে যাওয়া।লেখালেখি করার অভ্যাস নেই বললেই চলে,মাঝে মাঝে "আউল ফাউল"লেখার চেষ্টা করি একটু.....
মোটামুটি বলা যাচ্ছে যে এই খবরটা এখন বাংলাদেশের ওয়ান অফ দ্যা হেডলাইন।ব্যাঙ্ক থেকে কতোটাকা চুরি হয়েছে,কিভাবে হয়েছে সেটা তো আপনারা খবরে দেখেই ফেলেছেন।কিন্তু এই চুরিটা কেন এই ব্যাঙ্কে হয়েছে,চোর কেন এবং কিভাবে করেছে এই চুরি-সেটা অনেক চিন্তা করে আপনাদের সাথে শেয়ার করার চিন্তা করছি।আমার দেশের বাড়ি কিশোরগঞ্জ এবং এই শাখাতে আমিও গিয়েছিলাম এবং চোরের বুদ্ধির তারিফ করেই আমার মতামত শুরু করছি.........
সোনালী ব্যাঙ্কের এই শাখাটা কিশোরগঞ্জের মেইন শাখা।সাধারণত সরকারী ব্যাঙ্কের শাখার ভল্টে ২৫-৩০ কোটির বেশি টাকা রাখার নিয়ম নেই কিন্তু কিশোরগঞ্জের সমস্ত সরকারী ব্যাঙ্কের সাথে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিত্ব করে সোনালী বাঙ্কের এই শাখা।তাই এই ব্যাঙ্কে প্রায় আড়াইশ কোটির মতো টাকা রয়েছে।ব্যাঙ্ক ভল্টের ভিতরে আলাদা আলমারিতে ২৪০ কোটির মতো টাকা আছে।প্রতিদিন ব্যাঙ্কে যেই লেনদেন হয় সেই লেনদেনকৃত টাকা ব্যাঙ্ক ভল্টে ঢুকাতে তিন জন ব্যাঙ্ক কর্মকর্তার চাবি লাগে।এরা হচ্ছে ম্যানেজার,ক্যাশিয়ার এবং ট্রেজারার।মূলত এই টাকা ভল্টের ভিতরে আলমারিতে রাখার নিয়ম হলেও অধিকাংশ সরকারী ব্যাঙ্কের ভল্টের ভিতর বড় একটি টেবিলে দৈনিক লেনদেনের টাকাটা রেখে দেয়া হয়।এমনকি সপ্তাহের শেষে যখন ভল্টের ভিতর আলমারিতে টাকা রাখা হয় তখনো পরের কার্যদিবসে লেনদেন হতে পারে সেইরকম একটা সম্ভাব্য অঙ্কের টাকা সেই টেবিলে রেখে দেয়া হয়।এইটা আসলে নিয়মের মাঝে নেই কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্মকর্তাদের কষ্ট লাঘব করতে বাংলাদেশের সকল ব্যাঙ্কে এই অলসতার নমুনা চলে আসছে।এতদিন এইটা কোন সমস্যা ছিলোনা।সমস্যাটা হয়েছে এখন সেটা নগ্ন ভাবে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরে..................
যেই বাসা থেকে সুরঙ্গ খোঁড়া হয়েছে সেই বাসার মালিক উত্তরাতে থাকেন।বাড়িওয়ালা একজন ডাক্তার এবং বাড়িওয়ালী একজন শিক্ষক।তারা কেয়ারটেকারের তত্তাবধানে বাড়ির দায়িত্ব দিয়ে এখন ঢাকাতে আছেন।তাই সন্দেহের তালিকাতে আপাতত তাদের আমি খুব বড় করে রাখবো না।
সুরঙ্গটা খুব দক্ষ ভাবে খোঁড়া হয়েছে।মিনিমাম একমাস ধরে এটা খুব আস্তে আস্তে করে খোঁড়া।ডাকাতির রাতের আগেই তারা খোঁড়ার মাধ্যমে ভল্টের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল,সেই রাতে তারা খালি ভল্টের নিচের মাটি,বালুর স্তর,দুই প্রস্থ ইট এবং সিমেন্টের সুরকি সরিয়েই ভল্টে ঢুকে যায়।এই শাখাটি অনেক পুরানো এক দালানে অবস্থিত এবং ব্যাঙ্ক ভল্ট একতালাতে থাকার নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও এই ব্যাঙ্কের ভল্ট একতালাতে।এই সুবিধার কারনেই কিশোরগঞ্জের এই ব্যাঙ্কটি বেছে নেয়া হয়েছে কারন এই সুবিধা অনেক রেয়ার।
বাড়ির কেয়ারটেকার অবশ্যই জানতো।কারন তার সহায়তা ছাড়া এই কাজ চাক নরিসের বাপেও করতে পারবে না।পাশের ভাড়াটিয়াও জানতো।নাহলে এই সুরঙ্গের মাটি সরানোর সময় কারো চোখে পড়েনাই-এইটা আমারে বিশ্বাস করতে বলেন?
আমার বিশ্বাস-ব্যাঙ্কের ভিতরের একজন কর্মচারী সমস্ত তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে।কিন্তু সেই একজন ব্যাঙ্কের বর্তমান কর্মচারী-মানতে ইচ্ছা করেনা।ক্যাশিয়ার,ট্রেজারার,ম্যানেজারকে প্রতিদিন ১০ কোটির উপরে টাকা হাতাতে হয়।এদের কাছে টাকার গন্ধ অনেকটা দুর্গন্ধের মতো।এই তিনজন রাতে ঘুমানোর আগে দয়া করে যেন তাদের পোস্টিং থাকা অবস্থাতে এইরকম কিছু না হয়।আমার ধারনা-এই ব্যাঙ্কের কোন সাবেক কর্মকর্তা ব্যাঙ্কের ভিতরের সব তথ্য যোগার করে দিয়েছেন।এমনকি ভল্টের ভিতরের সব আলমারি টাকা দিয়ে ভর্তি/নতুন আলমারি রাখার মতো স্পেস নাই দেখে অনেক টাকা ভল্টের ভিতরে টেবিলে রাখা হয়-এই তথ্যগুলা যোগার করে দেয়ার মতো মানুষ শুধুমাত্র ব্যাঙ্কের একজন কর্মকর্তাই দিতে পারেন,এবং আমার ধারনা সত্যি হলে তদন্ত বের হবে যে সেই একজন মানুষ এই ব্যাঙ্কের সাবেক কোন কর্মকর্তা............
নিরাপত্তাকর্মীদের দোষ দিবোনা কারন এইরকম আধুনিকতার সাথে চুরি হতে পারে,এটা তারা ভাবেনি।তাদেরকে বেশি করে ফাস্ট ফাইভ,ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান,প্রিজন ব্রেক-টাইপের মুভি দেখানো হোক এবং এই রকম মুভিগুলো তাদের প্রশিক্ষনের অংশ করে রাখা হোক;কারন এতে তাদের সৃজনশীলতা বাড়বে......
"শত্রুপক্ষ" বইয়ের জ্ঞান থেকেই বলছি,সুরঙ্গ খোঁড়া থেকে টাকা বের করা পর্যন্ত মিনিমাম ছয়জন মানুষ সারাক্ষন কাজ করেছে।এইটা দুইজন মানুষের কাজ না।তাই আরও অপরাধী বের হবে।
আমার ধারনা-বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্ক আওয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার পর আনুমানিক রাত নয়টার পরে থেকে ভল্টের নিচের মাটি সরানো শুরু হয় এবং শেষ ৫ ফুটের মতো মাটি সরিয়ে ভল্টে ঢুকা হয়।মফঃস্বল শহর,শীতের রাত-সুতরাং বেশির ভাগ মানুষ কম্বলের নিচে।তাই সিমেন্টের প্লাস্টার করা মেঝে খোঁড়ার শব্দ অধিকাংশদের কানে যায় নাই।আর যাদের কানে গেছে,তারা তো চোরদের সাথেই।
অনেক পুরানো বিল্ডিং,তাই ঢালাই মেঝের বদলে সিমেন্টের প্লাস্টার করা মেঝে;চোরদের আরও সুবিধা......
টাকা উদ্ধার হওয়ার পর দেখা গেছে ২০ লাখ টাকার উপরে টাকা পাওয়া যায়নাই।সোজা হিসাব।এতদিন যাদের সাথে কাজ করেছে-তাদের ভাগ দিতে হয়েছে......
©somewhere in net ltd.