![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেকে জানার একটা মাধ্যম হচ্ছে লিখে যাওয়া।লেখালেখি করার অভ্যাস নেই বললেই চলে,মাঝে মাঝে "আউল ফাউল"লেখার চেষ্টা করি একটু.....
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিল এবং সকলেই ধরে নিয়েছিল এই যুদ্ধ শুরু হলে এর কারন হবে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঝের স্নায়ুযুদ্ধ যা আমাদের কাছে কোল্ড ওয়ার নামে পরিচিত।ভিয়েতনাম যুদ্ধ,বার্লিন প্রাচীর,আফগান যুদ্ধ,কিউবা পরিস্থিতি,চার্লস দ্যা গল সমস্যা,স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ,চাঁদে যাওয়া,ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালাস্টিক মিসাইল তৈরি-এই সব কিছুই হয়েছে এই কোল্ড ওয়ারের জন্য।১৯৫১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়ন সামরিক ক্ষেত্রে একের পর এক নতুন সংযোজন করে গেছে।দুই দেশ দুই রকম ভাবে প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা,মিলিটারি টেকনিক গড়ে উঠে,শয়ে শয়ে নিউক্লিয়ার মিসাইল বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়ে যায় শুধু মাত্র এই কোল্ড ওয়ারের কল্যাণে।দুই দেশই নিজস্ব কিছু টেকনিক ব্যাবহার করার কারনে এই সমরসজ্জা এক অসাধারন বৈচিত্রের দিকে মোড় নেয়।তাই আজকে মূলত কোল্ড ওয়ারের জন্য রাশিয়া কিরকম প্রস্তুতি নিয়েছিল সেটা নিয়েই লিখতে চাই।আগেই জানিয়ে রাখছি এই বিষয়ে উইকিতে তেমন কিছুই বলা নাই,এমনকি ইন্টারনেটেও বিক্ষিপ্ত ভাবে তথ্য দেয়া।তাই মাসুদ রানার চারিদিকে শত্রু,The Expendables 2 মুভি,হান্ট অফ দ্যা রেড অক্টোবর মুভি,কুয়াশা সিরিজ,আমিই রানা,রাশিয়ান ডিফেন্স টেকনিক,অ্যামেরিকান মুভমেন্ট এগেইনস্ট হস্টাইল কান্ট্রি,কিউবান পলিটিক্স,হোআট ক্যাস্ট্রো থিংকস,ওয়ারশ প্যাক্ট,ন্যাটো ট্রিটি,বার্লিন ট্রিটি,এসএপিএস প্যাক্ট,অ্যামেরিকান ফরেইন পলেসি-উক্ত উৎস থেকে তথ্য সমন্বয় করে লিখে দিচ্ছি......
কোল্ড ওয়ারের শুরু থেকেই আমেরিকা,সোভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধু দেশগুলোকে চাপে রাখার চেষ্টা করে কারন আমেরিকা জানতো যে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আমেরিকাতে ম্যাসিভ এয়ার স্ট্রাইক করার শক্তি নেই কারন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে কোন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নেই,যেই একটি মাত্র এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আছে সেটাও অ্যামেরিকান এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার গুলোর তুলনাতে অনেক ছোট।তাই তারা রাশিয়ান এয়ারফোর্সকে তেমন বড় হুমকি হিসেবে না ভেবে নিজেদের এয়ারফোর্সকে শক্তিশালী করে তুলেছিল,অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের তার স্থলবাহিনীকে অস্বাভাবিকমাত্রায় বড় করে তোলার কাজে লেগে যায়।তারা জানতো যে তারা অ্যামেরিকাকে আকাশযুদ্ধে হারাতে পারবে না,এবং অ্যামেরিকা প্যাসিফিক এবং অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরে নিজেদের পূর্ণ প্রভাব খাটাতে চাবে,তাই সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা হাতে নেয় যাতে বাল্টিক সাগর,ব্ল্যাক সি,উত্তর সাগর,প্যাসিফিকের পশ্চিম অংশ,অ্যাটল্যান্টিকের পূর্ব অংশ যেন তাদের অধীনে থাকে।এই উদ্দেশ্যে তারা ব্যাপক হারে সাবমেরিন,ডেস্ট্রয়ার,ব্যাটলশিপ,ব্যাটল ক্রুজার তৈরি করা শুরু করে।তাদের নৌবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে গর্ব করা হতো যে সকল সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবমেরিন যদি অ্যাটল্যান্টিকে সারি করে রাখা হয় তাহলে একজন রাশিয়ান সৈন্য হেটে হেটেই অ্যাটল্যান্টিক পাড়ি দিতে পারবে।
নিজেদের চারপাশের সাগরের পূর্ণ নিশ্চয়তা পাওয়ার পরে রাশিয়ানরা তাদের সাগরতীরের অংশ অর্থাৎ কোস্টাল ডিফেন্স নিয়ে কাজ করা শুরু করে।চীনের মিং ডাইনেস্টির রাজারা যেমন গ্রেট ওয়াল বানিয়েছিলেন,সোভিয়েত ইউনিয়ন ঠিক একই কাজ করে ফেললো তাদের সমুদ্র তীরের অংশে।তবে চীনা রাজারা যেই প্রাচীর বানিয়েছেন পাথর দিয়ে,সোভিয়েত ইউনিয়ন সেই প্রাচীর বানাল মিসাইল সিস্টেম,গ্রেড সেভেন রকেট প্রোপাইলার,১০০ মিটার অন্তর অন্তর এন্টি এয়ারক্রাফট গানপোস্ট বসিয়ে।এমনকি এই আয়োজন দেখে অ্যামেরিকানরাও স্বীকার করতে বাধ্য হল যে রাশিয়ান কোস্টে হামলা চালানো আত্মহত্যার সামিল...............
রাশিয়ান ল্যান্ড বর্ডার?ফিনল্যান্ডের বর্ডারে রাশিয়ানরা কিরকম পাহারা বসিয়েছিল ভুলে গেছেন?অনেকেই ধারনা করে যে পার্বত্য অঞ্চলের বর্ডারে রাশিয়ান ডিফেন্স অপেক্ষাকৃত দুর্বল যেমনটা কিনা অ্যামেরিকান-মেক্সিকান বর্ডারের মতো,কিন্তু এই ধারনা সম্পূর্ণ ভুল।ইজমির,কাজাখ বর্ডার,ইউরাল পার্বত্য অঞ্চল,ইউগোস্লাভিয়ান বর্ডার অঞ্চলে রাশিয়ানরা তালেবানদের মতো পাহাড়ের খাজে খাজে এন্টি এয়ারক্রাফট গানপোস্ট,স্নাইপিং পোস্ট,পেট্রোল পার্টি,মিসাইল লঞ্চার বসিয়ে রেখেছে।তাদের বর্ডার দেখে মনে হয় তারা যেকোনো মুহূর্তে নিউক্লিয়ার হামলার আশঙ্কা করছে।
রাশিয়ার অভ্যন্তরে যেহেতু কোন বড় জলভূমি নেই,তাই রাশিয়ান অঞ্চলের ভিতরে ন্যাভাল ফোর্স তেমন একটা নেই।কিন্তু বিস্তীর্ণ পার্বত্য অঞ্চল,উচুনিচু প্রেইরিভূমির অঞ্চলে তারা জনমানবহীন শহরগুলোতে এয়ারবেস বানিয়ে রেখেছে।বিচিত্র কোন কারনে রাশিয়ার অভ্যন্তরে কিছু কিছু মফঃস্বল ধরনের শহর সম্পূর্ণ জনমানবহীন।এইসকল শহরের এয়ারবেসগুলোও আকাশ থেকে দেখতে একদম পরিত্যাক্ত।কিন্তু বেজমেন্টে লুকিয়ে রাখা শয়ে শয়ে ফাইটার স্কোয়াড্রন নিয়ে একেকটি এয়ারবেস এখনও সম্পূর্ণ সচল এবং মুহূর্তের নোটিশে দুনিয়া তোলপাড় করে রাখার ক্ষমতা রাখে।এর নমুনা আমরা দেখতে পেরেছি রানা যখন মিগ নিয়ে পালাচ্ছিল,ঠিক তখন.........
রাশিয়ান মিলিটারি অর্থাৎ রাশিয়ান স্থলবাহিনী পুরো রাশিয়ায় ছড়িয়ে আছে।তাদের টহল দেয়ার পদ্ধতি,মহড়া,যুদ্ধ প্রস্তুতি,সব কিছু দেখে মনে হয় রাশিয়াতে যেন সামরিক শাসন চালু রয়েছে,আসলে ব্যাপারটা সেরকম না।এইটা তাদের সেনাবাহিনীর নীতি যে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি থাকতে হবে কারন অ্যামেরিকানরা ১ মিনিটের মাঝে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে পারে......
এইরকম কঠোর এবং আগ্রাসী সামরিক পদ্ধতি চালু রাখার একটাই কারন,কোল্ড ওয়ার।এই কোল্ড ওয়ার সমগ্র বিশ্বের রাজনীতিকে বদলে দিয়েছে এমনকি আমাদের দেশের জন্মের ক্ষেত্রেও এই কোল্ড ওয়ারের ভুমিকা রয়েছে।মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সাহায্যে যখন সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল অ্যামেরিকা,তখন নিউক্লিয়ার মিসাইলবাহী সাবমেরিন পাঠিয়ে অ্যামেরিকান নৌবহরকে ভারত-মহাসাগরে ঢুকতে বাধা দিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন।কিউবা নামের দেশটা সামরিক ভাবে আমাদের চেয়েও দুর্বল কিন্তু আজ পর্যন্ত কিউবাকে অ্যামেরিকা ভয় পায় কারন কিউবার গায়ে একটা টোকা দিলেও অ্যামেরিকার চামড়া ছুলে ফেলবে রাশিয়া।ইরানকে অ্যামেরিকা যতোই অবরোধ দিয়ে রাখুক,শুধুমাত্র রাশিয়ার ভয়ে অ্যামেরিকা এখনও ইরান আক্রমন করেনি।আর একটা সত্যি অথবা গুজব শোনা যায় রাশিয়ান ডিফেন্স নিয়ে।সমগ্র রাশিয়া একটা নিউক্লিয়ার মাইনফিল্ড!!!!!!!!!!!!
রাশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরিত্যাক্ত খনি,বিভিন্ন পার্বত্য গুহা,সমতল ভুমিতে থাকা প্রাকৃতিক ফাটল গুলোতে রাশিয়া রেখে দিয়েছে অসংখ্য নিউক্লিয়ার মিসাইল/ডিভাইস এবং বিপুল পরিমাণ প্লুটোরিয়াম এবং ইউরেনিয়াম।যদি কোনভাবে অ্যামেরিকান সেনাবাহিনি রাশিয়ার মাটিতে পা রাখে,তাহলে রাশিয়া এই মাইনফিল্ড ট্রিগার চাপ দিয়ে উড়িয়ে দিবে।যদি এইটা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে একবার আসলেই রাশিয়া ঘুরে আসা উচিত...............
©somewhere in net ltd.