![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেকে জানার একটা মাধ্যম হচ্ছে লিখে যাওয়া।লেখালেখি করার অভ্যাস নেই বললেই চলে,মাঝে মাঝে "আউল ফাউল"লেখার চেষ্টা করি একটু.....
গতকাল সারারাত সজাগ ছিলাম।আসলে অনেকদিন রাত জেগে গেম খেলা হয় না।আর আজকে শুক্রবার ছিল দেখে এতো চিন্তা ছিলোনা।সারারাত গেম খেলার পর ভোরে জগিং করে ঢুকলাম স্বপ্নে,বাজার করতে,একটা হেভি বাজারের পরে বাসাতে এসে আরাম মতো খেয়েদেয়ে গোসল করে গেলাম মসজিদে।জুম্মার নামাজ পড়ে বাসাতে এসে কাপড় চেঞ্জ না করেই ঘুম...............
সমস্ত শরীরে যেন কেউ কাঁটা দিয়ে খোঁচাচ্ছে,আমার চোখে তারা গলিত লাভা দিয়ে পিষছে কিন্তু আমি কিছু করতে পারছিনা,আমার চোখ খুলছে না।এর মধ্যে আমার আম্মু আমাকে খুব দূর থেকে ডাকছে আর আমি সেটা শুনতে পাচ্ছি।খুব কষ্টে চোখ খুলে দেখলাম আম্মু ডাকছে আর বলছে,"বাবা,ভাত খাবানা?বিকাল হয়ে যাচ্ছেতো"।চোখ খোলার সাথে সাথে যন্ত্রণার চোটে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কারন আমি মাত্র দেড় ঘণ্টা ঘুমিয়েছি,বাজে পোঁনে চারটা।এখন ঘুমে আমার মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গেছে,মগজ রিবুট করতে একটু ফেসবুকে ঢুকলাম মোবাইল দিয়ে।ঢুকেই দেখি নোটিফিকেশনে লিটা আপুর পোস্ট।সুতরাং প্রায়োরিটি বিবেচনা করে পোস্টে ক্লিক করে দেখি আপু লিখেছে আজকে নাকি নাজিম ভাই আর শিহাব ভাই আসছে বইমেলাতে,বিকালে।ধুর!!!আজকে এতো ভিড়ের মাঝে কিভাবে যাই?চারটার মতো তো বেজেই গেছে।একুশে ফেব্রুয়ারির দিন তো বইমেলায় পা ফেলার উপায় নাই।পোস্টের একটু নিচে নেমে দেখি লেখা সেখানে টেস্টিং সল্টও থাকবে!!!!!!!!!!!
মাত্র ঘুম থেকে উঠার কারনে আমার মাথা ঠিক মতো কাজ করছিল না,আমি কোনমতে আম্মুকে বললাম আম্মু,তুমি খাও,আমি এখনি বইমেলাতে যাচ্ছি,লিটা আপু এসেছে।তখন ঘড়িতে ঠিক ৩ টা ৪৬ বাজে।এক দৌড়ে বেসিনের সামনে গিয়ে তিনদিনের শেভ ছাড়া গালে ফোম দেয়ার সাথে সাথেই রেজার দিয়ে দিলাম টান আর ঠিক একই সাথে গালে চড়চড় শব্দ শুনে বুঝতে পারলাম আমি পানি দিয়ে গাল ধুয়ার কথা ভুলে গেছি।তাই মরিচ মাখানি গাল জ্বলা নিয়ে দুই মিনিটের মাথাতে কাপড় চেঞ্জ করে ঠিক ৩ টা ৫৩ তে বাসা থেকে বের হয়ে দৌড় দিলাম রিকশার দিকে...............
আজকে বাসের ড্রাইভারকে কতবার যে বাস তারাতারি চালানোর কথা বলেছি সেটার হিসেব আমি নিজেও ঠিক মতো জানিনা।উত্তরা থেকে বাংলামটর পর্যন্ত আসতে আমার সাড়ে ৫টা বেজে গেছে।শেরাটনের সামনে থেকে তিন নাম্বার বাস তো জ্যামের চোটে আর সামনে যাচ্ছেনা।মেজাজ এতোই খারাপ হয়ে গেছে ততক্ষণে,ট্রেন মিস করার মতো অস্থিরতা নিয়ে পা নাচাচ্ছি সীটের নিচে।২ মিনিট দেরি আমার কেন জানি সহ্য হচ্ছেনা,তাই নামলাম বাস থেকে।এবং দিলাম হাজারো মানুষের চিপাচাপা দিয়ে পকেটমার স্টাইলে দৌড়।শ্রদ্ধেয় পল ওয়াকার স্যার,আপনার প্রতি স্রদ্ধা রেখেই বলছি,ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াসে আপনার ডাউনটাউন চেসিং আমার এই দৌড়ের কাছে কিছু না।এক দৌড়ে আমি বইমেলার গেটের কাছে,উদ্যানের ভিতরে এসে গেছি,এরপরে ভিড়ের কারনে স্লো হতে হয়েছে আমাকে.........
বিশাল এক জনসমুদ্র পার হয়ে আস্তে আস্তে যখন আদি প্রকাশনীর দিকে ধীরে ধীরে যাচ্ছি,তখন কেমন জানি অস্বস্তি লাগা শুরু হয়ে গেছে।যেই মানুষটার কারনে আজকে একটা গোছানো ফেসবুক চালাই,যেই কবির কবিতা পড়ে সেটা বুঝার চেষ্টা করি,যার কারনে জীবনে রক্তদানের মতো মহৎ কাজ শুরু করেছি,যার অনুপ্রেরণাতে আমার ব্লগিং জীবন শুরু,সেই টেস্টিং সল্ট,সেই লিটা আপু আজকে এই আদি প্রকাশনীর সামনে!!!!ফেসবুকে বড়বোনের মতো স্নেহ করা এই আপু তো আমার ভার্চুয়াল লাইফের গাইডলাইন।অনলাইনের জগতে তিনি যতোই আন্তরিক থাকুক,বাস্তবে এই মানুষটার সামনে যাবো,এই বিশাল মনের মানুষটা বাস্তবে কেমন সেটা দেখবো-আমার প্রচণ্ড অস্বস্তি লাগছিল এবং আজকে বেশ লজ্জা পাচ্ছিলাম এই ভেবে যে বাস্তবে লিটা আপু কি আমাকে চিনতে পারবে?পরিচয় কিভাবে দিবো নিজের?আমি কি বলবো-"আপু,আপনি লিটা আপু না?আমি আপন,ঐযে আপনার সাথে জন্মদিন শেয়ার করি,আপু চিনতে পারলেন না?ঐযে মাসুদ রানা পেজে ট্রিপল এ নামে লিখি,আপনিই তো আমাকে ব্লগ লিখতে বলেছিলেন,আপনার কারনেই রক্তদান করা হয়েছে"-এইরকম অনেক কথা মাথাতে আসছে।কিভাবে পরিচয় দিবো?
এর মধ্যে আদি প্রকাশনীর সামনে এসে পড়েছি।ভিড়ের মাঝে লিটা আপুকে তো দেখা যাচ্ছে না,কই লিটা আপু?খুজতে খুজতে মার্জিয়া মিথিলা আপুকে হটাত চোখে পড়ে গেলো।এইতো পাইলাম আমার প্রিয় বার্সা প্রেমি মিথিলা আপুকে।চিন্তা করছি মিথিলা আপুকে গিয়ে ভদ্র করে জিগ্যেস করি যে লিটা আপু কি এসেছে?এখন উনিও তো আমাকে ঠিক চিনে না।কিভাবে জিগ্যেস করি?মাইন্ড করলে তো আবার সমস্যা।ঠিক সেই মুহূর্তটাতেই আমার চোখে পড়ে গেলো লিটা আপুকে............
আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না আমার সেই মুহূর্তে কি করা উচিত।আমি এতোটা নার্ভাস কখনো হই নাই।জাফর ইকবাল স্যারের সাথে দেখা করার সময় আমি কনফিডেন্ট ছিলাম,আব্দুল্লাহ নূর তুষারের কর্মশালাতে আমি আত্মবিশ্বাসী চিলাম,কিন্তু এইটা তো লিটা আপু!!!!আমার সামনে আমার কবি,আমার বড় বোন,আমার অসাধারন একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড,আমার ভাম্পায়ার আপু,আমার ফেসবুক গাইডলাইন-পরিচয়ের তো শেষ নাই।কিন্তু লিটা আপু তো আমাকে সামনা সামনি কখনো দেখেনাই।এখন কিভাবে গিয়ে পরিচয় হই?সমস্ত স্ক্রিপ্ট ভুলে জাচ্ছিলাম মনে হয় তখন,নিজেকেই নিজে ধমক দিচ্ছিলাম যে দুই পয়সার বিতার্কিক হয়েছ আপন তুমি,কারন তুমি এখনো ভয় পাও............
এর মাঝে লিটা আপু ঘুরে ঘুরে সবার সাথে কথা বলছে,একবার অন্যমনস্ক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ অন্যদিকে নিয়ে মনে হয় রাজ আজাদ ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। হটাত করে লিটা আপু আমার দিকে তাকিয়ে এমনভাবে চোখ ছোট করে তাকালো যেন আপুর চোখে রোদ পড়েছে,ঠিক সাথে সাথেই আপন বলে একটা চিৎকার দিয়ে আমার দিকে জাস্ট রেসিং কারের মতো ছুটে আসা শুরু করলো।ঠিক সেই মুহূর্ততে আমি অনেক বড় একটা নিশ্বাস ছাড়ার চেষ্টা করছি যে অন্তত লিটা আপু আমাকে চিনতে পেরেছে কিন্তু আমাকে দেখে লিটা আপুর প্রতিক্রিয়া এইরকম হবে সেটা আমি কল্পনা করার ধৃষ্টতাও করিনাই!!!!লিটা আপু আমাকে সম্ভবত এসে আমার কাঁধে হাত রেখে কিছু জিগ্যেস করছিল কিন্তু তখন আমার কান দিয়ে কিছুই ঢুকছিল না তবে সম্ভবত আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আমি সত্যি সত্যিই আপন কিনা!!!!!!!!!
পরের আধাঘণ্টা আমার জন্য আসলেই বিশ্বয়কর ভাবে অবাস্তব ছিল কারন আমার সামনে আমি পেয়েছি নাজিম ভাইকে!!!!এই অসম্ভব মেধাবী লেখকটা আমার থ্রিলার লেখার সংগ্রহে একের পর এক অসাধারন লেখা দিয়ে গেছেন।উনার লেখা ফলো করার জন্য সামুতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিয়েছি আমি,উনার লেখাকে ব্যাবচ্ছেদ করেছি অংশ থেকে অংশ।আজকে আমি যেরকমই লিখিনা কেন,নাজিম ভাইয়ের লেখার ছাপ এবং অনুপ্রেরণা আমার লেখাকে অনেক গভীরে গিয়ে প্রভাবিত করেছে।কিন্তু আমি এইভাবে লিখছি বা ভাবছি কেন?উনি আমাকে যেইভাবে সময় দিলো,আমার স্কুল,কলেজ,ব্যান্ড,ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার সাথে যেভাবে কথা বললো,আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম যে উনি আমাকে আসলে কতদিন ধরে চিনে?
মিথিলা আপুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়াটা আমার জন্য ছিল একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার কারন আমি আজ পর্যন্ত সত্যিকারের বার্সা সাপোর্টারদের মাঝে দুই কি তিনজনের তালিকা করলে তার মাঝে মিথিলা আপুর নাম থাকবে।প্রচণ্ড হাসিখুশি এই মানুষটার চেহারাই মন ভালো করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।কবে যেন শুনেছিলাম মিথিলা আপু গীটার বাজাতে পারে।আজকে কেন জানি এই কথাটা জিগ্যেস করতে ভুলে গেলাম আপুকে।যাই হোক,আজকে মিথিলা আপুকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম উনার ক্যামেরার জন্য।এই অসাধারন মানুষটার জন্যই আমার কিছু পরাবাস্তব অভিজ্ঞতা ফ্রেমবন্দি হয়েছে.........
বইমেলা থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে অনেকেই আলাদা হয়ে যাচ্ছিল,তবে পথের শেষ পর্যন্ত লিটা আপু আমাদের সাথে ছিল।আপু বাসার দিকে চলে যাওয়ার পরে নাজিম ভাই আর রাজ আজাদ ভাইয়ের সাথে আরও অসাধারন কিছু সময় কাটানো আমার জন্য ছিল খুবই আনন্দের এবং আমার লেখালেখির লেভেলটাকে আরও এক ধাপ উন্নত করার জন্য নাজিম ভাইয়ের কিছু মারভেলাস টিপস তো ছিল সুপার বোনাস!!!!!!!!!
আমি জানিনা আমি লিটা আপুকে এতোটা পছন্দ করি কেন।সত্যিকার সেলিব্রিটিদের ব্যাপারে আমার একটা ধারনা আছে যে তারা বাস্তবে খুব নাক উঁচা হয়ে থাকে।কিন্তু হাজার হাজার ফলোয়ার,শত শত ফ্রেন্ড,অসম্ভব কাজের চাপ,অফিসের ঝামেলা,লেখালেখি,ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে যোগাযোগ রাখা,প্রুফ করা,কবিতা লেখা,গল্প সৃষ্টি করা-এতো কিছুর পরেও আমার এই কবি আপুটা মনে রেখেছে আমার সম্পর্কে খুঁটিনাটি প্রায় সব তথ্য যেখানে আজ পর্যন্ত লিটা আপু আমাকে দেখেনাই পর্যন্ত।ফেসবুকে আমার লাস্ট নিজের ছবি দুই বছর আগে তোলা।এই ছবি দেখে লিটা আপু আমাকে এক সেকেন্ডের মাঝে চিনে ফেলেছে,এটা আমার জন্য একটা নিউক্লিয়ার ব্লাস্টের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না।এমনকি বাসাতে পৌঁছে পিসি ছেড়ে দেখি আমার টাইমলাইনে লিটা আপুর একটা পোস্ট,"ঠিক ভাবে পৌঁছেছিস?"
আমি নিজেকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার অনেক চেষ্টা করি,সাধারনের মাঝেও আরও সাধারন হয়ে থাকার চেষ্টা করি।কিন্তু আজকে অসাধারন কয়েকজন লেখক,একজন লিটা আপু,একজন অসম্ভব প্রিয় বার্সাভক্ত মানুষের কাছে আমি এতোটা স্নেহ পেয়েছি,যা আমি এখনো কল্পনা করতে পারছিনা।আম্মু,তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।তুমি যদি আমাকে আজকে না ডাক দিতে,আমি এই অসাধারন একটা সময় পেতাম না।মিথিলা আপু,আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ফ্রেমবন্দি মুহূর্তগুলো তৈরির জন্য।নাজিম ভাই,আপনাকে কি আর বলবো?আপনি আজকে আমাকে এইভাবে আপন করে নিবেন,ভাবতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।আসলেই আপনি একজন লেখক...............
পরিশেষে লিটা আপু,তোমাকে অনেক ধন্যবাদ এতোটা স্নেহ দেখানোর জন্য।আমি তোমাকে যতোটা প্রিয় ভাবতাম,আজকের পর থেকে তুমি তার চেয়ে কমপক্ষে এক হাজার গুন বেশি প্রিয় হয়ে গেছো আমার কাছে।আমার মনেই হচ্ছেনা যে তোমার সাথে আমি ফেসবুকের মাধ্যমে দেখা করতে পেরেছি,কেন জানি বড় বোন বড় বোন মনে হচ্ছে তোমাকে,সত্যিকার বড়বোন............
©somewhere in net ltd.